বিলুপ্তির পথে জাতীয় ফুল শাপলা
ইমরান হোসেন,পটুয়াখালী থেকে: বাংলাদেশের জাতীয় ফুল শাপলা। অতীতে গ্রামবাংলার বিলে-ঝিলে ও ডোবা-নালায় শাপলা ফুলের সমারোহ ছিল চোখে পড়ার মতো। বর্ষা থেকে শরতের শেষ পর্যন্ত নদী-নালা, খাল-বিল, জলাশয়ের নিচু জমিতে এমনিতেই জন্মাত প্রচুর শাপলা-শালুক ও ঢ্যাপ। শিশুরা তো বটেই সব বয়সের মানুষ রঙ-বেরঙের শাপলার বাহারি রুপ দেখে মুগ্ধ হতেন। শাপলা ভরা বিলের মনমাতানো সৌন্দর্যে চোখের পলক ফেলা মুশকিল ছিল।
দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন জলাশয় থেকে বিলুপ্ত প্রায় শাপলা ফুল। নয়নাভিরাম মনোমুগ্ধকর শাপলার প্রতি আকর্ষণ সবার বেশি। বর্ষা মওসুমের শুরুতে এ ফুল ফোটে। খাল-বিল-জলাশয় ও নিচু জমিতে প্রাকৃতিকভাবেই জন্ম নেয় শাপলা। আবহমান কাল থেকে শাপলা মানুষের খাদ্য তালিকায় সবজি হিসেবে অন্তরভূক্ত ছিল। আর শিশুদের ছিল খেলার উপকরণ।
পটুয়াখালীর বিভিন্ন বিলে অপরিকল্পিতভাবে অতিরিক্ত পুকুর খনন, কৃষি জমিতে স্থাপনা নির্মাণের ফলে শাপলা ফুল আজ বিলুপ্তির পথে। বিভিন্ন বিল ও জলাশয় গুলোতে প্রাকৃতিকভাবে মাছ পাওয়া যেত সেগুলো এখন পরিকল্পিতভাবে মাছ চাষের আওতায় নিয়ে আসার কারণে সেখানে আর শাপলা ফুল জন্মাতে পারে না। প্রাচীনকাল থেকেই শাপলার ফল (ঢ্যাপ) দিয়ে চমৎকার সুস্বাদু খৈ তৈরি হয়।
মাটির নিচের মূল অংশকে শালুক বলে। শাপলা আসলে প্রাকৃতিকভাবে জন্ম নেয়া ফুল, কোনো রকম পরিচর্যা ছাড়াই বিলে ঝিলে জন্ম নেয় অপরুপ সৌন্দর্যময় এই শুভ্র ফুলটি। শাপলা আসলে কয়েক প্রকারের হয়ে থাকে, যার মধ্যে সাদা ফুল বিশিষ্ট শাপলাটি অনেকেই সবজি হিসেবে খেয়ে থাকে। জাতীয় ফুল শাপলা সাধারণত আবদ্ধ অগভীর জলাশয়, খাল-বিলে জন্মে থাকে।
পটুয়াখালীর স্থানীয় কবি মো সিয়াম হোসেন বলেন, শাপলা যেন ফুলের সেরা, নামটি তাহার মধুয় ভরা। তাহার ছোঁয়ায় আসলে যেন হয়ে যাই পাগল পারা। শাপলা যেন দেশের প্রাণ, নদীর মাঝে বিরাজমান। বাঙালি জাতি দিয়েছে তাহার জাতীয় ফুলের সু-সম্মান।
ফুল প্রেমি লিমন সিকদার বলেন, বর্ষার শুরুতে সকালে বিভিন্ন স্থানে শাপলার বাহারী রূপ দেখে চোখ জুড়িয়ে যেত। এসব দৃশ্য চোখে না দেখলে বোঝানো যাবে না। অনেকে আবার শাপলা বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করতেন। স্থানীয়ভাবে সহজলভ্য হওয়ায় এলাকার লোকজন শাপলা তুলে খাদ্য হিসেবে ব্যবহার করে বিক্রি করতেন।
সাংবাদিক আব্দুল কাইউম বলেন, বর্তমান সভ্যতায় বাড়তি জনগণের চাপের কারণে আবাদি জমি ভরাট করে বাড়ি, পুকুর, মাছের ঘের বানানোর ফলে বিল ও জলাশয়ের পরিমাণ কমে যাচ্ছে। যার কারণে শাপলা জন্মানোর জায়গাও কমে আসছে।
পটুয়াখালীর ফোকাস ডায়াগনেস্টিক সেন্টারের পরিচালক মেহেদী হাসান শিবলী বলেন, শাপলা খুব পুষ্টি সমৃদ্ধ সবজি ও ঔষধি কাজে ব্যবহৃত হয়।
আব্দুল করিম মৃধা কলেজের অধ্যক্ষ স্যার মোঃ গোলামা কিবরিয়া বলেন, শাপলা ফুল বাংলার সাংস্কৃতিতে এক অনন্য রুপ। শাপলাকে রক্ষা করা বাঙ্গালী হিসেবে আমাদের নৈতিক দ্বায়িত্ব।
আরও পড়ুন
- সর্বশেষ খবর
- সর্বাধিক পঠিত