প্রধানমন্ত্রীকে ৪র্থ শ্রেণির শিক্ষার্থীর চিঠি, বাস্তবে রূপ নিচ্ছে সেই সেতু

ইমরান হোসেন,পটুয়াখালী থেকে: পায়রা নদীর উপর সেতু নির্মানের দাবী জানিয়ে প্রধানমন্ত্রীর কাছে চিঠি লিখেছিল পটুয়াখালীর চতুর্থ শ্রেণির স্কুল শিক্ষার্থী শীর্ষেন্দু বিশ্বাস। তার স্বপ্নের সেই সেতু অবশেষে বাস্তবে রূপ নিতে যাচ্ছে। খুব শীঘ্রই এ সেতুর অবকাঠামো নির্মান কাজ শুরু হবে বলে সেতু বিভাগের সচিব এবং সেতু কর্তৃপক্ষের নির্বাহী পরিচালক আবু বকর সিদ্দিক বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
বুধবার (২৯ সেপ্টেম্বর) বিকেলে পটুয়াখালীর কচুয়া-বেতাগি সেতু এলাকা পরিদর্শনেকালে বাংলাদেশ সেতু কতৃপক্ষের নির্বাহী পরিচালক ও সেতু বিভাগের সচিব মো. আবু বকর ছিদ্দীক বলেন,এটি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নিজস্ব উপহার। একজন স্কুল ছাত্রের চিঠিতে তিনি প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আমাদের সে মোতাবেক নির্দেশনা দিয়েছেন। তখনই আমরা কাজ শুরু করেছি। জমি অধিগ্রহণ শেষে মূল কনস্ট্রাকশনের কাজ শুরু হবে। এসময় জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তা, সেতু কতৃপক্ষ ও সেতু বিভাগের কর্মকর্তাসহ সংশ্লিষ্টরা উপস্থিত ছিলেন। এরআগে গত বছর মার্চ মাসে সেতুর স্থান সমীক্ষা পরিদর্শন সম্পন্ন করেছেন সেতু বিভাগের প্রতিনিধি দল।
পটুয়াখালী সরকারি জুবিলি উচ্চ বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণির ছাত্র শীর্ষেন্দু বিশ্বাস বাবা-মায়ের চাকুরির সুবাদে পটুয়াখালী শহরে বসবাস করে। তাদের গ্রামের বাড়ি ঝালকাঠির ছয়আনি গ্রামে। সেখান থেকে পটুয়াখালী জেলা শহরে যেতে জেলার মির্জাগঞ্জ উপজেলার পায়রা নদী পাড়ি দিতে হয় ট্রলার বা নৌকায়। যেকারণে প্রায়ই সেখানে দূর্ঘটনা ঘটে। এতে ওই নদীর ওপর একটি সেতু নির্মাণের জন্য ২০১৬ সালের ১৫ আগস্ট প্রধানমন্ত্রীর কাছে একটি চিঠি লিখে দেশব্যপী আলোচনায় আসেন শিক্ষার্থী শীর্ষেন্দু বিশ্বাস।
পরবর্তিতে ওই নদীর উপর একটি সেতু নির্মাণ করা হবে বলে আশ্বস্থ করে শীর্ষেন্দুকে পাল্টা চিঠি দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী ২০১৬ সালের ৮ই সেপ্টেম্বর। যে চিঠিটি শীর্ষেন্দুর কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে হস্তান্তর করা হয় ২৬ সেপ্টেম্বর। তারপরই বাস্তবে রুপ নিতে যাচ্ছে শীর্ষেন্দুর সেই চিঠির প্রেক্ষিতে পায়রা নদীর উপর সেতু। এতে আনন্দিত স্কুল ছাত্র শীর্ষেন্দু বিশ্বাস ও পরিবার এবং স্থানীয়রা।
বর্তমানে ডিপিপি অনুসারে ১০ একর জমি অধিগ্রহণের প্রশাসনিক অনুমোদন শেষে অধিগ্রহণ কার্যক্রম চলমান রয়েছে। অতিরিক্ত জমি ডিপিপি সংশোধনপূর্বক অধিগ্রহণ করা হবে। গত ১২ আগস্ট ঠিকাদার নিয়োগের দরপত্র জমা নেওয়া হয়েছে। বর্তমানে দরপত্র মূল্যায়ন চলমান রয়েছে।
কচুয়া-বেতাগী-পটুয়াখালী-লোহালিয়া-কালাইয়া সড়কের ১৭ তম কিলোমিটা (জেড ৮০৫২) পায়রা নদীর উপর পায়রাকুঞ্জ নামক স্থানে ১৬৯০.০০ মিঃ দীর্ঘ সেতু নির্মাণের মাধ্যমে মির্জাগঞ্জ উপজেলার সাথে পটুয়াখালী সদর এবং ঢাকার সরাসরি ও নিরবচ্ছিন্ন এবং ব্যয় সাশ্রয়ী সড়ক যোগাযোগ প্রতিষ্ঠা করা।
পায়রা নদীর উপর প্রস্তাবিত সেতুটি নির্মিত হলে মির্জাগঞ্জ উপজেলার সাথে পটুয়াখালী সদরের ভ্রমণ সময় প্রায় দেড় ঘন্টা হ্রাস পাবে এবং লেবুখালী ও পদ্মা সেতুর মাধ্যমে মির্জাগঞ্জ উপজেলার সাথে ঢাকার সরাসরি ও নিরবচ্ছিন্ন সড়ক যোগাযোগ প্রতিষ্ঠিত হবে।
সেতুর প্রাথমিক ডিজাইন অনুযায়ী BIWTA এর শ্রেণীবিন্যাস অনুযায়ী এই রুটটি ১ম শ্রেণীর হওয়ায় নৌযান চলাচলের সুবিধার্থে সেতুর vertical clearance ধরা হয়েছে ১৮.৩ মিটার। সেতুর মোট দৈর্ঘ্য ১৬৯০ মিটার। এর মধ্যে মাঝের ১০০ মিটার দৈর্ঘ্যের ৯ টি স্প্যান এবং উভয় প্রান্তে ৫০ মিটার দৈর্ঘ্যের ২টি স্প্যান ও ৩০ মিটার দৈর্ঘ্যের ২৩ টি স্প্যান। সেতুটি নির্মাণে প্রাথমিক ব্যয় ধরা হয়েছে এক হাজার ৪২ কোটি টাকা।
প্রকল্প বাস্তবায়নকালীন প্রকল্প এলাকার জনগণের কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হবে। তাছাড়া নির্মাণ কাজ শেষ হওয়ার পরও সেতুর রক্ষণাবেক্ষণেও নতুন কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হবে। উক্ত এলাকায় নতুন নতুন শিল্প কারখানা প্রতিষ্ঠিত হবে। এতে কর্মসংস্থান সৃষ্টিসহ ঐ এলাকার জনগণের আয় বৃদ্ধি পাবে। যা জিডিপিতে অবদান রাখবে।
সেতু বিভাগের তথ্য মতে, পায়রা নদীর উপর সেতু নির্মাণে প্রকল্পের ডিপিপি ২০২০ সালে মার্চে একনেক সভায় অনুমোদিত হয়। প্রকল্পটির ব্যয় ধরা হয়েছে এক হাজা ৪২ কোটি টাকা। ২০২৫ সালের মধ্যে সেতুটির নির্মানকাজ শেষ হবার কথা রয়েছে। শীর্ষেন্দু বর্তমানে সরকারি জুবিলী উচ্চ বিদ্যালয়ের ব্যবসায় শিক্ষায় নবম শ্রেণি অধ্যয়রত আছেন।
আরও পড়ুন
- সর্বশেষ খবর
- সর্বাধিক পঠিত