মধুমতি নদী গর্ভে বিলীন ২৫টি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান
বাদল সাহা, গোপালগঞ্জ প্রতিনিধি: গোপালগঞ্জের কশিয়ানী উপজেলার ভাটিয়াপাড়া বাজারে মধুমতি নদীতে দেখা দিয়েছে ভয়াবহ নদী ভাংঙ্গন। ইতিমধ্যে মধুমতি নদী রক্ষা বাঁধের আধা কিলোমিটার এলাকা ও অন্তত ২৫টি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। নিরাপত্তা ও ভাঙ্গনরোধে কাজ করছে স্থানীয় উপজেলা ও পুলিশ প্রশাসন এবং পানি উন্নয়ন বোর্ড।
তবে ক্ষতিগ্রস্থ ব্যবসায়ী ও এলাকাবাসীর অভিযোগ স্থানীয় পানি উন্নয়ন বোর্ডের গাফিলতি কারনে নদী ভাঙ্গন হয়েছে এবং ব্যবসায়ীদের কোটি কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। ব্যবসায়ী ও স্থানীয়রা শত চেষ্টা করেও ভাঙনরোধ করতে পারছেন না। ফলে ব্যাপক লোকসানের মুখে পড়েছেন দোকান মালিকরা।
এখন পযর্ন্ত ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নিরূপণ করতে পারেনি প্রশাসন। তবে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের দাবী, নদী ভাঙ্গনে প্রায় ১০ কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।
সরেজমিনে গিয়ে জানাগেছে, বিট্রিশ আমল থেকে গোপালগঞ্জের কাশিয়ানী উপজেলার ভাটিয়াপাড়ায় গড়ে ওঠে বাজার। নদী বন্দরের হিসাবে ব্যবহারিত হয়ে আসছে বাজারটি। এ বাজারে ভূষি মাল, পশু খাদ্য, পাটের গুদাম, রাখি মালের গুদাম, মিষ্টির দোকান, মোবাইলের দোকান, ওষুধের দো্কানসহ বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এসব ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে পাইকারী মালামাল বিক্রি করা হয়। প্রতিদিনই গোপালগঞ্জসহ আশপাশের জেলার কয়েক’শ ব্যবসায়ীরা এখানে কেনাবেচা করতে আসেন।
এর আগে বেশ কয়েকবার ভাঙনের শিকার হয়েছেন এ বাজারের ব্যবসায়ীরা। বিগত ১৯৯৬ সালে ভাঙনকবলিত এলাকায় নদীর পাড় ব্লক দিয়ে বাঁধাই করা হয়। কিন্তু হঠাত করেই ভাটিয়াপাড়া বাজারের পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া মধুমতি নদীতে দেখা দেয় তীব্র নদী ভাঙ্গান। চোখের পলকেই বাজারের ২৫টি দোকান-পাট ও জায়গা নদী গর্ভে বিলীন হয়ে যায়। ভাঙ্গন আতংকে অন্য যেসব ব্যবসা প্রতিষ্ঠান রয়েছে সেসব প্রতিষ্ঠা সড়িয়ে নিচ্ছে ব্যবসায়ীরা। অনেকই নিজেদের দোকানের মালামলা রক্ষা করতে ব্যস্ত রয়েছেন। নদী গর্ভে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বিলীন হয়ে যাওয়ায় নি:স্ব হয়ে পড়েছেন তারা। সম্প্রতি নদী থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের ফলে পুনরায় ভাঙ্গন শুরু হয়েছে বলে স্থানীয়দের ধারণা।
নদী ভাঙ্গনে ক্ষতিগ্রস্ত দোকান মালিকরা হলেন, শ্যামল কুমার সাহা, জিয়াউর রহমান জিয়া, আবির হোসেন, খোকন কাজী, হায়দার কাজী, হারুন কাজী, মো: শফিকুল ইসলাম, আশরাফউদ্দিন তারা মোল্লা, আবিবার কাজী, মো: মশিউর রহমান খান, সুশান্ত কুমার সাহা, আলতাফ চৌধুরী, দিলীপ কুমার সাহা, অভিজিৎ সাহা, জাকির মোল্লা, সোহেল মোল্লা, চাঁন মিয়া শরিফ, হিরণ কারিকর, শাহজাহান কাজী, রশিদ শেখ, রমিজ মোল্লা, বাবলু ঠাকুর।
ক্ষতিগ্রস্থ ব্যবসায়ী শ্যামল কুমার সাহা বলেন, হঠাত করে মধুমতি নদীতে ভাঙ্গন শুরু হয়। চোখের পলকে আমার দোকান নদী গর্ভে চলে যায়। কিছুই রক্ষা করতে পারেননি। ব্যবস্যা প্রতিষ্ঠান নদীতে চলে যাওয়া এখন নি:স্ব হয়ে পড়েছি।
ক্ষতিগ্রস্থ বীজ ব্যবসায়ী রমিজ মোল্লা বলেন, আমার দোকানে ৫ বস্তা ধুনিয়া বীজ, ২ মন খেসারি কলাই বীজ, ২ মন মুশুরি ডাল বীজ, মাষ কলাই, কালোজিরা ও শস্য বীজ নদীতে ভেসে গেছে। এতে আমার দুই লক্ষাধিক টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।
ভাটিয়াপাড়া বাজার সমিতির সাধারন সম্পাদক খোকন কাজী বলেন, গভীর রাতে হঠাৎ করে মধুমতি নদীতে তীব্র ভাঙ্গন দেখা দেয়। মসজিদে মাইকে নদী ভাঙ্গনে কথা বললে রাতে মালামাল সড়তে আছি। কিন্তু বাজারে এসেও কিছুই রক্ষা করতে পারিনি। মুহুর্তের মধ্যে অন্তত ২৫টি দোকানঘর নদী গর্ভে বিলিন হয়ে গেছে। এ ভাঙ্গনে দোকান ঘর, মালামাল ও জমিসহ অন্তত ২০ কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। অনেক ব্যবসায়ী সব কিছু হারিয়ে সর্বস্বান্ত হয়ে গেছে।
তিনি আরো অভিযোগ করেন বলেন, পানি উন্নয়ন বোর্ডের এই বাজার রক্ষা বাঁধটি প্রতি বছরই রক্ষণাবেক্ষণ করার কথা। আর এর জন্য বরাদ্দও রয়েছে। বাঁধটি আগে থেকে ঝুঁকিপূর্ণ থাকলে পানি উন্নয়ন বোর্ড থেকে এখানে কোন রক্ষণাবেক্ষণ কাজই করেনি। আগে থেকে ব্যবস্থা নিলে এমন ক্ষয়ক্ষতি হতো না।
কাশিয়ানী সদর ইনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো: মশিউর রহমান খান বলেন, নদী ভাঙ্গনে এ বাজারে ব্যবসায়ীরা নি:স্ব হয়ে পড়েছেন। বিষয়টি স্থানীয় সংসদ সদস্যকে জানানো হয়েছে। তিনি খোঁজ খবর নিয়েছেন। ক্ষতিগ্রস্থদের অর্থিক সহায়তা করা হবে।
কাশিয়ানী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রথীন্দ্র নাথ রায় বলেন, ভাটিয়াপাড়া বাজারের নদী সংক্ষরণ বাঁধে ভাঙ্গন শুরু হয়েছে। এতে ২০ থেকে ২৫টি দোকান নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। একটি মসজিদসহ আরো বেশ কিছু দোকানঘর ভাঙ্গনের মুখে রয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড ভাঙ্গন রোধে জিও ব্যাগ ফেলছে। আমরা চেষ্টা করছি ভাঙ্গন রোধে। ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা ও ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নির্ণয়ে কাজ করা হচ্ছে।
গোপালগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো: ফইজুর রহমান বলেন, ভাটিয়াপাড়া বাজার রক্ষা বাঁধের আনুমানিক আধা কিলোমিটার এলাকার আকস্মিকভাবে প্রবল ভাঙ্গন শুর হয়েছে। ভাঙ্গনরোধে জিও ব্যাগ ফেলা হচ্ছে। আমরা চেষ্টা করছি আর কোন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান যেন নদী গ্রাস না করতে পারে। তার জন্য যা যা করার তা করা হবে বলেও তিনি জানান।
আরও পড়ুন
- সর্বশেষ খবর
- সর্বাধিক পঠিত