ডিসেম্বরের শুরুতে ঘূর্ণিঝড়ের শঙ্কা

| আপডেট :  ২৮ নভেম্বর ২০২১, ০১:৩২  | প্রকাশিত :  ২৮ নভেম্বর ২০২১, ০১:৩২

মধ্য নভেম্বরে ঘূর্ণিঝড়ের আশঙ্কার কথা জানিয়েছিল আবহাওয়া অধিদপ্তর। কিন্তু বঙ্গোপসাগর ও আন্দামান সাগরে চলতি মাসে দুটি লঘুচাপের সৃষ্টি হলেও কোনো ঘূর্ণিঝড় হয়নি। নভেম্বরের ওই দুটি লঘুচাপ নিম্নচাপে পরিণত হয়ে দুর্বল হলেও বঙ্গোপসাগরের আন্দামান দ্বীপপুঞ্জের কাছে নতুন একটি লঘুচাপ সৃষ্টির আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। ডিসেম্বরের শুরুতে লঘুচাপটি নিম্নচাপ হয়ে ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হতে পারে এবং তা ভারতের ওডিশা উপকূলের দিকে যেতে পারে। যাওয়ার সময় খুলনা–সাতক্ষীরা অঞ্চলে পড়তে পারে এর প্রভাব।

কানাডার সাসকাচুয়ান ইউনিভার্সিটির আবহাওয়া ও জলবায়ুবিষয়ক বাংলাদেশি পিএইচডি গবেষক মোস্তফা কামাল শনিবার সকালে বলেন, সামনের লঘুচাপটি থেকে নিম্নচাপ হয়ে শেষ পর্যন্ত ঘূর্ণিঝড় হলে এর উল্লেখযোগ্য অংশ বাংলাদেশের ওপর দিয়ে বয়ে যেতে পারে। মডেল পূর্বাভাসগুলো সে রকমই ইঙ্গিত দিচ্ছে। ঝড় হলে আগামী ৫ থেকে ৭ ডিসেম্বরের মধ্যে স্থলভাগে উঠে আসতে পারে। তবে ঘূর্ণিঝড় অথবা নিম্নচাপের কারণে ডিসেম্বরের ৪ থেকে বাংলাদেশের খুলনা ও বরিশাল বিভাগের জেলাগুলোতে এবং ৫, ৬ ও ৭ ডিসেম্বর পুরো দেশে মাঝারি থেকে ভারী বৃষ্টিপাত হওয়ার প্রবল সম্ভাবনা রয়েছে।

তিনি বলেন, সম্ভাব্য ঘূর্ণিঝড়টির ব্যাপারে আমেরিকা, কানাডা, ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) পূর্বাভাস কেন্দ্রগুলো ডিসেম্বরের ৫ থেকে ৭ তারিখের মধ্যে বাংলাদেশের ওপর দিয়ে প্রবাহিত হতে পারে বলে জানিয়েছে। এর আগে ১ থেকে ২ ডিসেম্বর বঙ্গোপসাগরে সুস্পষ্ট লঘুচাপ থেকে নিম্নচাপ হতে পারে। অন্যদিকে ডিসেম্বরের ৩ তারিখেই নিম্নচাপ থেকে ঘূর্ণিঝড় হয়ে যেতে পারে।

মডেল পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, ঘূর্ণিঝড় হলে ভারতের ওডিশা ও পশ্চিমবঙ্গের রাজ্যের সীমান্ত ঘেঁষে বাংলাদেশের উপকূলে আঘাত করতে পারে। ঘূর্ণিঝড়টির অর্ধেক বাংলাদেশে ও বাকি অর্ধেক ভারতীয় অংশে আঘাত করতে পারে ৫ ও ৬ ডিসেম্বর। শেষ পর্যন্ত ঘূর্ণিঝড়টি পুরোপুরি বাংলাদেশের ওপর দিয়ে ভারতের মেঘালয় ও ত্রিপুরা রাজ্যে পর্যন্ত যেতে পারে।

মোস্তফা কামাল বলেন, সম্ভাব্য এ ঘূর্ণিঝড়টির সৃষ্টি নিয়ে প্রায় সব আবহাওয়া পূর্বাভাস মডেল একই সম্ভাবনার কথা জানিয়েছে। একইসঙ্গে আমেরিকা, ইইউ ও কানাডার আবহাওয়া পূর্বাভাস মডেল নির্দেশ করছে যে, ঘূর্ণিঝড়টি স্থলভাগে প্রবেশ করার পরে সৃষ্ট ভারী বৃষ্টিপাতের মূল অংশ বাংলাদেশের ওপর দিয়ে ৬ ডিসেম্বরে খুলনা ও বরিশাল বিভাগের জেলাগুলোতে এবং ৫ থেকে ৭ ডিসেম্বর পুরো দেশে মাঝারি থেকে ভারী বৃষ্টিপাত ঘটাতে পারে।

ঘূর্ণিঝড় হলে ভূপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ১২ কিলোমিটার উচ্চতায় বায়ু পশ্চিম দিক থেকে পূর্ব দিকে প্রবাহিত হয়। বায়ুপ্রবাহের এই মান যদি বর্ণিত মডেল পূর্বাভাসের মতোই চলে তা হলে ঘূর্ণিঝড়টি বর্ণিত পথেই অগ্রসর হবে। কিন্তু বায়ুপ্রবাহের মান যদি একটু বৃদ্ধি পায়, তবে এ ঘূর্ণিঝড়টির কেন্দ্র খুলনা ও বরিশাল বিভাগের জেলাগুলোর ওপর দিয়ে প্রবেশ করে নোয়াখালী, ফেনী ও উত্তর চট্টগ্রামের ওপর দিয়ে ভারতে যেতে পারে বলে তিনি জানান।

এ দিকে শনিবার রাতে আবহাওয়া অধিদপ্তরও বঙ্গোপসাগরে লঘুচাপ সৃষ্টির মতো পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে বলে জানিয়েছে। তারা জানিয়েছে, নিম্নচাপটি ৩ থেকে ৪ ডিসেম্বরের মধ্যে ঘূর্ণিঝড় ‘জাওয়াদ’-এ রূপ নিতে পারে। নামটি সৌদি আরবের আবহাওয়াবিদদের দেওয়া।

আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ ওমর ফারুক বলেন, আবহাওয়ার বিভিন্ন গাণিতিক মডেল ব্যবহার করে তারা ধারণা করছেন লঘুচাপটি সৃষ্টি হওয়ার পর তা দ্রুত ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিতে পারে। তবে সেটি ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হবে কি না, তা শতভাগ নিশ্চিত হতে আরও দু–এক দিন লাগবে। এখন পর্যন্ত পাওয়া পূর্বাভাস অনুযায়ী তা ভারতের ওডিশা উপকূলে আঘাত হানার সম্ভাবনা বেশি।

 

আরও পড়ুন


  • সর্বশেষ খবর
  • সর্বাধিক পঠিত