‘খালেদা জিয়ার উন্নত চিকিৎসার জন্য যা যা প্রয়োজন সরকার তা করবে’
হাসপাতালের আইসিইউতে চিকিৎসাধীন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে সরকার তিলে তিলে শেষ করে দিচ্ছে বলে প্রতিনিয়ত অভিযোগ করে আসছেন দলটির নেতারা।বিএনপির পক্ষ থেকে বারবার দাবি তোলা হচ্ছে, খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নিয়ে যাওয়ার।দলটি দফায় দফায় বিভিন্ন আন্দোলন কর্মসূচিও পালন করছে।
এ অবস্থায় আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এবং তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, খালেদা জিয়া দেশে ভালো চিকিৎসা পাচ্ছেন। তার উন্নত চিকিৎসার জন্য যা যা প্রয়োজন সরকার তা করবে।
রাজধানীর মিন্টো রোডের সরকারি বাসভবনে সাংবাদিকরা বিএনপির সাম্প্রতিক মশাল মিছিল নিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাব দিতে গিয়ে তিনি একথা বলেন।
ড. হাছান মাহমুদ বলেন, ‘বিএনপি যখন মশাল মিছিল বের করে তখন জনগণ আতঙ্কিত হয় এই ভেবে যে, তারা আবার কীসে আগুন দেয়। কারণ বিএনপি বাসে, গাড়িতে, মানুষের সম্পত্তিতে আগুন দেওয়ার ও অগ্নিসন্ত্রাসের রাজনীতি করে।’
আসলে বিএনপি আন্দোলনের নানা ইস্যু খুঁজছে উল্লেখ করে ড. হাছান বলেন, তারা ভেবেছিল খালেদা জিয়ার ইস্যুতে তাদের কর্মীদের মাঠে নামাতে পারবে। কিন্তু বাস্তবে তা পারেনি। তারা খালেদা জিয়ার অসুস্থতাকে অতিরঞ্জিত করে যে ইস্যু তৈরির চেষ্টা করেছিল, সেটিও ঘটেনি। কারণ খালেদা জিয়া এখানে ভালো চিকিৎসা পাচ্ছেন এবং আরও উন্নত চিকিৎসার জন্য যা যা প্রয়োজন তার চিকিৎসকরা যেভাবে চায় সরকার তা করতে বদ্ধপরিকর।
তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘কিন্তু বিএনপি খালেদা জিয়ার সুস্থতা চায় না। তারা চায় তিনি হাসপাতালে থাকুন, তাহলে তাদের রাজনীতি করতে সুবিধা হবে।’
বিএনপি পরগাছার মতো আচরণ করছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, তারা কখনো ছাত্র আন্দোলন, কখনো গার্মেন্টস শ্রমিকদের ওপর ভর করে দেশে বিশৃঙ্খলার অপচেষ্টা করছে।
‘সরকার স্বাস্থ্য ব্যবস্থা ধ্বংস করছে’ বিএনপির এই মন্তব্যের প্রসঙ্গে অপর এক প্রশ্নের উত্তরে হাছান মাহমুদ বলেন, খালেদা জিয়ার হাঁটুর ব্যথা আর পেটের অসুখ দেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থার সূচক নয়। করোনা মহামারি নিয়ন্ত্রণে বহু উন্নত দেশের তুলনায় আমাদের সক্ষমতা এর অন্যতম সূচক।’
‘দেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা যে কত ভালো করোনার মধ্যে তা প্রমাণিত হয়েছে’ উল্লেখ করে তথ্যমন্ত্রী বলেন, অনেক উন্নত দেশ যেভাবে সামাল দিতে পারেনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ অনেক ভালোভাবে সামাল দিতে সক্ষম হয়েছে। আমাদের সীমাবদ্ধতা থাকা সত্ত্বেও চিকিৎসকরা ও স্বাস্থ্য ব্যবস্থা কত ভালো কাজ করছে এ থেকেই তা প্রমাণিত।
৭৬ বছর বয়সী সাবেক এ প্রধানমন্ত্রী বহু বছর ধরে আর্থ্রারাইটিস, ডায়াবেটিস, কিডনি, ফুসফুস, চোখের সমস্যাসহ নানা জটিলতায় ভুগছেন। অসুস্থতার জন্য টানা ২৬ দিন ওই হাসপাতালে চিকিৎসা শেষে ৭ নভেম্বর বাসায় ফেরেন তিনি। এর ছয়দিনের ব্যবধানে খালেদা জিয়াকে আবার ঢাকায় একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তির পর ১৪ নভেম্বর দিবাগত রাত থেকে নিবিড় পর্যবেক্ষণে সিসিইউতে রাখা হয়েছে। তার পরিপাকতন্ত্রে ‘রক্তক্ষরণ হচ্ছে’ জানিয়ে দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, তাকে বিদেশে নেওয়া এখন অতি জরুরি।
এর আগে এপ্রিলে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হন খালেদা জিয়া। পরে করোনা পরবর্তী জটিলতায় ২৭ এপ্রিল হাসপাতালে ভর্তি হন। সে সময় এক মাসের বেশি সময় হাসপাতালের সিসিইউতে ভর্তি ছিলেন। শারীরিক অবস্থার উন্নতি হলে ১৯ জুন বাসায় ফেরেন। পরে করোনার টিকা নিতে তিনি দুই দফায় মহাখালীর শেখ রাসেল ন্যাশনাল গ্যাস্ট্রোলিভার ইনস্টিটিউট অ্যান্ড হাসপাতালে যান।
উল্লেখ্য, দুর্নীতির মামলায় দণ্ডিত হয়ে খালেদা জিয়া ২০০৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি কারাগারে যান। করোনা মহামারির প্রেক্ষাপটে গত বছরের ২৫ মার্চ সরকার শর্তসাপেক্ষে তাকে সাময়িক মুক্তি দেয়। এ পর্যন্ত তিন দফায় খালেদা জিয়ার মুক্তির মেয়াদ বাড়ানো হয়। তবে বিএনপির নেতারা খালেদা জিয়ার শর্তসাপেক্ষে এ মুক্তিকে ‘গৃহবন্দি’ বলছেন। উন্নত চিকিৎসার জন্য পরিবারের পক্ষ থেকে বারবার আবেদন করা হলেও সরকার তা নাকচ করে দেয়। তাকে দেশে থেকেই চিকিৎসা নিতে হবে বলে শর্তও দেওয়া হয়েছে।
আরও পড়ুন
- সর্বশেষ খবর
- সর্বাধিক পঠিত