অপারেশনের প্রায় দুই বছর পর পেটে মিললো কেঁচি
বাদল সাহা, গোপালগঞ্জ প্রতিনিধি: প্রায় দুই বছর আগে পেটে ব্যাথার জন্য মনিরা খাতুনের (১৭) করা হয় অপারেশন। হঠাৎ করে আবারো পেটে ব্যাথা হলে এক্সে করার পর তার পেটে মেলে একটি ঝকঝকে কাঁচি। আর এমন অভিযোগ উঠেছে ফরিদপুরের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের এক চিকিৎসকের বিরুদ্ধে। পেটে কাচি থাকা মনিরা খাতুন মুকসুদপুর উপজেলার বাঁশবাড়িয়া ইউনিয়নের ঝুটিগ্রামের খাইরুল মিয়ার মেয়ে।
অপারেশনের বিষয়টি ফরিদপুরের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সহকারী রেজিস্টারের স্বাক্ষরিত ছাড়পত্র অনুযায়ী বিষয়টি নিশ্চিত হওয়ায় গেছে।
এদিকে, শুক্রবার (১০ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় তরুণীর পরিবার মানবিক সহযোগিতা চেয়ে ফরিদপুরের পুলিশ সুপার আলিমুজ্জামানের সাথে দেখা করতে যান। পুলিশ সুপার তাৎক্ষণিক তরুণীকে বঙ্গবন্ধু মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করার ব্যবস্থা করেন।
ভুক্তভোগী পরিবার সূত্রে জানাগেছে, গোপালগঞ্জের মুকসুদপুর উপজেলার বাঁশবাড়ীয়া ইউনিয়নের ঝুটিগ্রামের খাইরুল মিয়ার মেয়ে মনিরা খাতুন (১৭) প্রায় ২ বছর আগে ২০২০ সালের মার্চ মাসে পেটে ব্যাথার জন্য ফরিদপুরের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হন। সেখানে চিকিৎসা শেষে পেটে ব্যাথার জন্য একটি অপারেশন করেন চিকিৎসকরা।
এ অপারেশনের কয়েকদিন পরেই মনিরার নগরকান্দা উপজেলার পৈলানপট্টি গ্রামে বিবাহ হয়। বিয়ের পর থেকে পেটে ব্যাথা শুরু হলেও সে অন্ত:সত্তা হয়ে পড়েন। পরে মনিরার বাচ্চাটি নষ্ট হলে তাকে বাবা বাড়িতে পাঠিয়ে দেয় স্বামী। এরপর বিভিন্ন গ্রাম্য চিকিৎসা করালেও তার পেট ব্যাথা না কমায় বিভিন্ন ব্যাথানাশক ওষুধ খেয়ে প্রায় ২ বছর যাবৎ ব্যাথা চাপিয়ে রাখে।
কিন্তু গত দু’দিন আগে তার পেটে অসহনীয় ব্যাথা উঠলে মুকসুদপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লক্সের চিকিৎসার জন্য যান মনিরা। পরে চিকিৎসকরা এক্সেরের মাধ্যমে দেখতে পান মনিরার পেটের মাঝে একটি ঝকঝকে কাঁচি রয়েছে।
পরে এ বিষয়টি নিশ্চিত হওয়ার জন্য মুকসুদপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লক্সের কয়েকজন চিকিৎসকের সাথে আলাপকাপ করা হয়। বিষয়টি আবারো নিশ্চিত হবার জন্য আরো একটি এক্সেরে করলে সেই রির্পোটেও মনিরার পেটে কাঁচি থাকার বিষয়টি নিশ্চিত হন।
মুকসুদপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লক্সের চিকিৎসক ডা: মনিরুজ্জামান জানান, পেটে ব্যাথার অপারেশনের সময় ভুলে তার পেটের ভেতরে এই কাঁচিটি রেখে দেওয়া হয়েছিল। কাঁচি হাতলে সামান্য মরচে পড়েছে এবং ওই যুবতীর পেটের ভেতরের অঙ্গ প্রত্যঙ্গের সাথে জড়িয়ে গেছে। দ্রুত অপারেশন করে কাঁচিটি না বের করা হলে রোগীর জীবন সংকটে পড়বে। তিনি ওই রোগীর অপারেশ করবেন বলে জানান।
ওই তরুনীর খালু ঘুনষী গ্রামের শহীদুল ইসলাম মুঠোফোনে জানায়, আর্থিক সমস্যর কারনে অপারেশন করাতে দেরি হবে। আমরা এ ঘটনাটি তদন্ত করে শাস্তির দাবী জানাচ্ছি।
ওই তরুনীর ভাই কাইয়ুম কথা বলতে রাজি না হলেও তিনি বলেন, যে ডাক্তার অপারেশন করেছিলেন সেই ডাক্তার আবারও অপারেশন করে দিতে চেয়েছেন।
এ বিষয়ে ফরিদপুর বঙ্গবন্ধু মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের রেসিডেন্সিয়াল মেডিকেল অফিসার মোহাম্মাদ আসাদ উল্লাহ সুমন বলেন, আগে আমাদের নিশ্চিত হতে হবে ঘটনাটি এই হাসপাতালে ঘটেছে কি না। যদি রোগীর কাছে কোনো ডকুমেন্ট থাকে, তাহলে সেই কাগজপত্রসহ একটি আবেদন প্রশাসনিক ভবনে দিলে, হাসপাতাল প্রশাসন সার্জারি বিভাগের কাছে এই বিষয়ে জানতে চাইবে। তবে ওই তরুণীর পরিবার এখনও তাদের হাসপাতালে যোগাযোগ করেনি বলে জানানো হয়েছে।
আরও পড়ুন
- সর্বশেষ খবর
- সর্বাধিক পঠিত