মেয়েদের জানতে হবে সম্পর্কে কোথায় দাগ টানা দরকার

| আপডেট :  ২৯ ডিসেম্বর ২০২১, ০৫:০৭  | প্রকাশিত :  ২৯ ডিসেম্বর ২০২১, ০৫:০৭

কীভাবে যৌন হেনস্থা এড়ানো সম্ভব, তা নিয়ে শিক্ষার্থীদের পরামর্শ দিতে ভারতের জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরীণ অভিযোগ কমিটি (আইসিসি) জানুয়ারি মাসে একটি কাউন্সেলিং সেশন করবে। সেই উদ্দেশ্যে একটি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে ওই কমিটি। ওই বিজ্ঞপ্তি নিয়ে সৃষ্টি হয়েছে বিতর্ক।

ওই বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ‘ছেলেরা সাধারণত বন্ধুত্বপূর্ণ আড্ডা এবং যৌন হয়রানির মধ্যে যে সূক্ষ্ম রেখা রয়েছে তাকে অতিক্রম করে ফেলে (কখনও কখনও অসতর্ক ভাবে, কখনও কখনও অসাবধানতাবশত)। মেয়েদেরও জানতে হবে, এই ধরনের হয়রানি এড়াতে কীভাবে একটি রেখা টানতে হয় (তাদের এবং তাদের পুরুষ বন্ধুদের মধ্যে)।’

ভারতীয় গণমাধ্যম ’ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস’-এর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরীণ অভিযোগ কমিটির মতে, যৌন হেনস্থা এড়াতে এগিয়ে আসতে হবে মেয়েদেরকেই। পুরুষ বন্ধুর সঙ্গে সম্পর্কে কখন রেখা টানতে হবে, তা মেয়েদেরকেই জানতে হবে। তাহলেই এড়ানো যাবে যৌন হেনস্থা।

কমিটির এই পরামর্শ শুনে ক্ষোভ প্রকাশ করেছে জেএনইউ’র ছাত্র সংগঠনগুলো। তাদের অভিযোগ যৌন হেনস্থার দায় প্রকান্তরে মেয়েদের ঘাড়েই চাপিয়ে দেয়া হয়েছে। মেয়েরাই সবচেয়ে বেশি যৌন হেনস্থার শিকার হয়, তাদেরকেই দায় দেয়ার ব্যাপারটি তারা মানতে পারছে না।

আগামী ২২ জানুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম কাউন্সিলিং সেশন হবে। মূলত যৌন হেনস্থা এড়ানোর লক্ষ্যে এই কাউন্সিলিং সেশনে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলোচনা করা হবে। এ বিষয়ে একটি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে কমিটি।

এর প্রতিবাদ জানিয়ে বাম ছাত্র সংগঠন আইসা বিবৃতি দিয়েছে। বিবৃতিতে বলেছে, আইসিসি আসলে ভুক্তভোগীর ওপরই দায় চাপিয়েছে। এই কাউন্সিলিং সেশনটি জেএনইউ-তে নারীদের জন্য নিরাপত্তাহীনতা বাড়াবে।

ইউনিভার্সিটির ওয়েব সাইটে ওই সার্কুলার আপলোড করেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের ইন্টারনাল কমপ্লেইনটস কমিটি। তাতে জানানো হয়েছে, জানুয়ারি থেকে প্রতি মাসে যৌন হেনস্থা নিয়ে কাউন্সিলিং হবে। সার্কুলারে একটি পরিচ্ছদের শিরোনাম দেওয়া হয়েছে ‘কেন এই কাউন্সেলিং সেশন প্রয়োজনীয়’। একইসঙ্গে বলা হয়েছে, ছাত্রছাত্রীদের ওরিয়েন্টেশন প্রোগ্রামের সময় এবং প্রতিটি অ্যাকাডেমিক ইয়ারের শুরুতেও ওই ধরনের কাউন্সেলিং করা হবে।

সার্কুলারে বলা হয়েছে, “আইসিসি জানতে পেরেছে, বহু ক্ষেত্রে ছাত্রীরা যৌন হেনস্থার জন্য ঘনিষ্ঠ বন্ধুদের নামে অভিযোগ করেছেন। ছাত্ররা অনেক সময় বন্ধুসুলভ মজা করা এবং যৌন হেনস্থার তফাৎ বোঝে না। মেয়েদের বুঝতে হবে পুরুষ ও নারী বন্ধুদের মধ্যে পার্থক্য আছে। তবেই এই ধরনের হেনস্থা এড়ানো যাবে।” শেষে বলা হয়েছে, যৌন হেনস্থার ঘটনায় ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি নিয়ে চলবে বিশ্ববিদ্যালয়।

সার্কুলারে দাবি করা হয়েছে, চলতি অ্যাকাডেমিক ইয়ারে বেশ কয়েকটি যৌন হেনস্থার মামলায় দোষীরা শাস্তি পেয়েছে। যে ছাত্রছাত্রীরা জানতে চায়, যৌন হেনস্থার ব্যাপারে কী করা উচিত ও কী করা উচিত নয়, তাদের জন্য কাউন্সেলিং সেশনের আয়োজন করা হয়েছে। ছাত্রছাত্রীদের জানা উচিত, যৌন হেনস্থা কাকে বলে। তার কী প্রভাব পড়ে। জেএনইউ-এর আশা, ওই ধরনের কাউন্সেলিং-এর ফলে বিশ্ববিদ্যালয়ে যৌন হেনস্থার ঘটনা অনেক কমবে।

জওহরলাল নেহরু ইউনিভার্সিটি স্টুডেন্টস ইউনিয়নের সভানেত্রী ঐশী ঘোষ বলেন, “জেএনইউ-এর ইন্টারনাল কমপ্লেইনটস কমিটি যৌন হেনস্থার জন্য মেয়েদেরই দোষ দিতে চায়। তাই তাদের বলা হয়েছে, পুরুষ বন্ধু ও নারী বন্ধুদের মধ্যে পার্থক্য জানতে হবে।”

সর্বভারতীয় ছাত্র সংগঠনের সেক্রেটারি মধুরিমা কুণ্ড বলেছেন, “জওহরলাল নেহরু ইউনিভার্সিটি বরাবরই তাদের রিপোর্টে ভুক্তভোগীকেই দায়ী করেছে। এখন তারা ভুক্তভোগীকেই বলছেন বিপরীত লিঙ্গের প্রতি সংবেদনশীলতার উপর কাউন্সেলিং নিতে।”

  • সর্বশেষ খবর
  • সর্বাধিক পঠিত