স্বাস্থ্যবিধিকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে লঞ্চ বোঝাই যাত্রী, ভাড়াও বেশি

৪৬ দিন পর চালু হয়েছে ঢাকা-বরিশাল নৌরুটসহ অভ্যন্তরীণ রুটে লঞ্চ চলাচল। ঢাকা ও বরিশাল দুই প্রান্ত থেকেই যাত্রীবহন করে প্রথম যাত্রা শুরু হয়েছে। গত রোববার আন্তঃমন্ত্রণালয়ের এক বৈঠকের পর লঞ্চ চলাচলের সিদ্ধান্ত হয়। চলাচলের শর্ত হিসেবে নির্দেশনা হচ্ছে- ধারণক্ষমতার অর্ধেক যাত্রী বহন করা এবং সব যাত্রী ও স্টাফদের মাস্ক পরিধান নিশ্চিত করা। তবে সরকারি নির্দেশনা মেনে যাত্রীদের গুনতে হচ্ছে ৬০ শতাংশ অতিরিক্ত ভাড়া। সেক্ষেত্রে ডেকের ভাড়া দাঁড়াবে ৪শ’ টাকার কিছু বেশি। তবে প্রথম শ্রেণি ও কেবিনের ভাড়া বৃদ্ধি পায়নি।
খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, লোকাল লঞ্চ নিয়ম অনুসারে চলাচল করলেও ঢাকার লঞ্চগুলো স্বাস্থ্যবিধিকে প্রথম দিনই বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়েছে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে যাত্রীরাই স্বাস্থ্যবিধি ভেঙেছে। মাস্ক পরতে সবার কেন যেন অনীহা লক্ষ্য করা গেছে।
এছাড়া ঢাকা-বরিশাল নৌরুটের প্রায় প্রতিটা লঞ্চে স্বাভাবিক সময়ে ২ থেকে ৩ হাজার যাত্রী পরিবহন করলেও সরকারের রাজস্ব ফাঁকি দিতে লঞ্চের ধারণক্ষমতা কমিয়ে সার্ভে করানো হয়েছে। যার কারণে দেড় হাজারের বেশি ধারণক্ষমতা নেই ঢাকা-বরিশাল রুটের কোনো লঞ্চের। আর সর্বনিম্ন রয়েছে ৭০০ জন। যার কারণে নির্দেশনা অনুযায়ী ৭০০ জনের বেশি যাত্রী পরিবহন করতে পারবে না কোনো লঞ্চ কোম্পানি।
কিন্তু সরেজমিন দেখা গেছে, প্রায় লঞ্চেই সহস্রাধিক যাত্রী নেয়া হয়েছে। যদিও লঞ্চ মালিকরা বলছেন সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী যাত্রী পরিবহন করানো হয়েছে।
এদিকে অনুমতি পাওয়ার পর থেকেই লঞ্চ চলাচল শুরু করেছে বরিশালের অভ্যন্তরীণ নৌরুটে। সোমবার সকাল ৬টা থেকে বরিশালের অভ্যন্তরীণ সব রুটে যাত্রী পরিবহন করছে ছোট লঞ্চগুলো।
এসব লঞ্চে যাত্রীদের মাস্ক পরিধান বাধ্যতামূলক করে মালিক-শ্রমিকদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন বরিশাল নদীবন্দর কর্মকর্তা ও বিআইডব্লিউটিএর উপ-পরিচালক মোস্তাফিজুর রহমান। তিনি জানান, আমরা এখন মাস্ক পরিধানের ওপর বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করছি। নদীবন্দরে যাত্রীদের স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণে উৎসাহিত করতে কাজ করছি।
নদীবন্দর ঘুরে দেখা গেছে, খুব সকাল থেকেই বিভিন্ন গন্তব্যে যাতায়াতের জন্য পন্টুনে ভিড় করছেন যাত্রীরা। এ সময় সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে দেখা যায়নি। যাত্রীরা পন্টুনে সামাজিক দূরত্ব এবং মাস্ক সঠিকভাবে না পরলেও লঞ্চে উঠার সময় মাস্ক পরে উঠছেন। আবার লঞ্চ ছেড়ে যাওয়ার পরে মাস্ক খুলে ফেলেন বলে একাধিক লোক জানিয়েছেন।
জালাল হোসেন নামে ভোলাগামী এক যাত্রী বলেন, চেষ্টা করি মাস্ক পরতে। কিন্তু মাস্ক পরলে নি:শ্বাস নিতে কষ্ট হয়। সেজন্য লঞ্চে উঠার সময় মাস্ক পরি। পরে খুলে রেখেছি।
পাতারহাটগামী আরেক যাত্রী হারুন তালুকদার বলেন, জনগণের জন্যই এ লকডাউন দিতে হয়েছে। জনগণ যদি মাস্ক পরতেন, দূরত্ব বজায় রেখে চলতেন তাহলে এসবের কিছুই লাগত না। অনেক দিন পর লঞ্চ চলাচল শুরু করছে, এখন অন্তত ‘বেশি বোঝা’ মানুষগুলোর উচিত হবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলাচল করা।
ঢাকার লঞ্চ এমভি মানামীর মাস্টার আসাদুজ্জামান আসাদ বলেন, নির্দেশনা পাওয়ার পর লঞ্চ ধুয়ে-মুছে প্রস্তুত করা হয়েছে। সন্ধ্যায় যাত্রী নিয়ে ঢাকার উদ্দেশে যাত্রা করছি আমরা।
তিনি বলেন, সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী অর্ধেক যাত্রী নিয়ে যাতায়াত করবে লঞ্চগুলো। পূর্বে ডেকে জনপ্রতি ভাড়া ছিল ২০০ টাকা; যা বর্তমানে ৪০০ টাকা করে নেওয়া হচ্ছে। তবে কেবিনের ভাড়া আগের মতোই থাকবে। বরিশাল থেকে ঢাকার উদ্দেশে এমভি পারাবত ১০, সুন্দরবন ১০, সুরভী ৯, কীর্তনখোলা ১০ এবং মানামী যাত্রী নিয়ে যাবে। সরকারি সক নির্দেশনা অনুসরণ করেই যাত্রী পরিবহন করা হচ্ছে।
বাংলাদেশ নৌযান শ্রমিক ফেডারেশনের বরিশাল অঞ্চলের সভাপতি শেখ আবুল হাশেম বলেন, সকাল থেকেই বরিশাল, লক্ষ্মীপুর, মেহেন্দীগঞ্জ, হিজলা, কালীগঞ্জ, লালমোহন, চরকলমি, বোরহানউদ্দিন, বাহেরচর রুটে লঞ্চ চলাচল করছে। স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে আজ যাত্রীদের অবস্থা পর্যবেক্ষণ করছি। যদি তারা স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে অনিচ্ছুক হয় তাহলে প্রশাসনের সহায়তায় আমরা তাদের স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণে কাজ করব।
বাংলাদেশে অভ্যন্তরীণ নৌ চলাচল (যাত্রী পরিবহন) সংস্থার সহ-সভাপতি ও সুন্দরবন নেভিগেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সাইদুর রহমান রিন্টু বলেন, নির্দেশনা অনুযায়ী আমরা যাত্রী পরিবহন করছি।
তিনি বলেন, সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী ডেকের যাত্রীদের ভাড়া হয় ৪১২ টাকা কিন্তু ৪শ’ টাকা নেয়া হচ্ছে; আর কেবিনের পূর্বের ভাড়াই নেওয়া হবে। স্বাস্থ্যবিধির কথা চিন্তা করে মাস্ক পরিধান নিশ্চিতের পাশাপাশি ডেকের যাত্রীদের স্থান নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে।
প্রসঙ্গত, গত দুই মাস ধরে করোনা সংক্রমণের কারণে বন্ধ ছিল ঢাকা-বরিশাল নৌরুটে লঞ্চ চলাচল। গত ২২ মার্চ চলাচলের দাবিতে সংবাদ সম্মেলন করেছিল লঞ্চ মালিকরা। এর একদিন পরই সরকারের পক্ষ থেকে লঞ্চ চলাচলের ঘোষণা আসে।
আরও পড়ুন
- সর্বশেষ খবর
- সর্বাধিক পঠিত