আজ ঐতিহাসিক ভয়ানক ৮ ই ফেব্রুয়ারী: শাহিন রেজা (শিশির)
ছাত্রদলের সক্রিয় কর্মী হিসাবে আমি গর্বিত আমি অনুপ্রেরণিত। এমন মিছিলই কর্মীদের জন্য হতে পারে অনুপ্রেরণার উৎস,এমন মিছিলই যোগাতে পারে কর্মীদের শরীরে শক্তি সাহস বল। কিছু নেতা থাকে ইতিহাসের পাতায় চিরন্তন স্মৃতি হয়ে,কিছু মিছিল হয়ে উঠে ইতিহাসের জিবন্ত অধ্যায়।
২০১৮ সালের ৮ ই ফেব্রুয়ারী তৎকালীন ছাত্রদল কেন্দ্রীয় সভাপতি জনাব রাজিব আহসানের নেতৃত্ব দেওয়া মিছিলটা তারই জীবন্ত প্রতিচ্ছবি। ইতিহাস বিপ্লবীদের সৃষ্টি করেননি, বিপ্লবীরাই ইতিহাস সৃষ্টি করেছেন।
কিছু জলন্ত বিপ্লবীদের পৃথিবীর ইতিহাস থেকে নিঃশেষ করা চিরদিনই অসম্ভব যেমন ফিদেল কাস্ত্রো, চে গুয়েভারা,বালক ক্ষুদিরাম বসু,প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার ইত্যাদি অন্যতম।রাষ্ট্রের বিভিন্ন প্রেক্ষাপটে সুদৃঢ় এ বিপ্লবীদের সৃষ্টি হয়। বাংলাদেশেও হয়েছিল এক বিপ্লবী নারীর সৃষ্টি যার নাম বেগম খালেদা জিয়া। পৃথিবীর ইতিহাসে যত নারী নেতৃত্ব রয়েছে যেমন,মার্গারেট থ্যাচার, ক্যারোলিন কেনেডি, ইন্দিরা গান্ধী, মেরি রানী অফ স্কটিশ, ক্লিওপ্রেট্রা বা মহারানী ভিক্টোরিয়া ইত্যাদি বিশ্ব যত নারী নেতৃত্ব ছিল বা এখনো বিদ্যমান এদের পাশাপাশি বেগম খালেদা জিয়া’র নামটিও ইতিহাসের পাতায় চিরন্তন যোগসুত্র স্থাপন করেছে।
১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধের মধ্যে দিয়েই এই মহীয়সী নারীর সংগ্রামী জিবনের সুত্রপাত হয়। সেদিন তার দুই অবুঝ শিশু তারেক রহমান(পিনু) ও আরাফাত রহমান কোকো সহ পাক আর্মিদের হাতে তিনি বন্দী হন। স্বাধীন জাতি হিসাবে অবশ্যই আমরা তা শ্রদ্ধার সাথে স্বরন করি।
১৯৮১ সালের ৩০ মে বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদের জনক ,বহুদলীয় গনতন্ত্রের প্রবক্তা এবং বাংলাদেশের প্রথম নির্বাচিত রাষ্ট্রপতি বিএনপি’র প্রতিষ্ঠা চেয়ারম্যান জেড ফোর্সের অধিনায়ক মেজর জিয়াউর রহমান বীর(উত্তম) দেশী ও বিদেশি ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে শহীদ হলে গৃহবধূ থেকে ধীরে ধীরে রাজনীতিতে আসেন এই মহীয়সী নারী। মূলত শহীদ জিয়াউর রহমানের সপ্নকে বাস্তবায়ন করতে দেশের জনগণের আহবানেই তার রাজনীতিতে আসা।
তারই ধারাবাহিকতায় ১৯৮২ সালের জানুয়ারি মাসের তিন তারিখে দলের প্রাথমিক সদস্য পদ নিয়ে শুরু হয় তার রাজনৈতিক জিবন। ১৯৮২ সালের ২৪ মার্চ জেনারেল এরশাদ বিচারপতি আব্দুস সাত্তার কে ক্ষমতাচ্যুত করলে বেগম খালেদা জিয়া তার চরম বিরোধিতা করেন। ১৯৮৩ সালের মার্চ মাসে দলের সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান এবং বিচারপতি আব্দুস সাত্তার অসুস্থ হলে ১৯৮৩ সালের ১০ মে বি এন পি’র চেয়ারপার্সন নির্বাচিত হয়ে শুরু করেন স্বৈরাচার এরশাদের বিরুদ্ধে আন্দোলন।
তৎকালীন সময়ে আওয়ামীলীগ সহ সকল দল তার নেতৃত্বের ছায়াতলে চলে আসে।গড়ে তোলেন সাত দলীয় ঐক্যজোট। স্বৈরাচার এরশাদের বিরুদ্ধে যখন সারা বাংলাদেশে আন্দোলন বহমান ঠিক সেই সময়ে ১৯৮৬ সালের ২১ মার্চ স্বৈরাচার এরশাদের পাতানো নির্বাচনে অংশ গ্রহণ করার সিদ্ধান্ত নেয় হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামীলীগ। ফলে স্বৈরাচার এরশাদ বিরোধী আন্দোলন কিছুটা বাধাগ্রস্থ হলেও থেমে থাকেননি বেগম খালেদা জিয়া। দীর্ঘ আট বছর আন্দোলন সংগ্রাম করে এরশাদের পতন ঘটাতে সক্ষম হোন এবং ১৯৯১সালের ২৭ ফেব্রুয়ারী ৫ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী তথা মুসলিম বিশ্বের দ্বিতীয় নারী প্রধানমন্ত্রী হিসাবে দায়িত্ব লাভ করেন। এবং সেই নির্বাচনে বেগম খালেদা জিয়া ৫টি আসন থেকে নির্বাচন করলে ৫ টি আসন থেকেই জয়লাভ করেন।গনতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার আন্দোলনে স্বৈরাচার এরশাদের প্রশাসন দ্বারা
১৯৮৩ সালের ২৮ নভেম্বর, ১৯৮৪ সালের ৩ মে,
১৯৮৭ সামের ১১ নভেম্বর মোট তিন বার গ্রেফতার হয়েছিলেন।
১৯৯৬ সালের ১৫ ই ফেব্রুয়ারী ষষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বেগম খালেদা জিয়া দ্বিতীয় বার প্রধানমন্ত্রী হলে হাসিনা ও এরশাদ প্রেতাত্মারা জামায়াত কে সাথে নিয়ে এ নির্বাচন বিরোধী আন্দোলন করলে দেশ ও জনগনের কথা ভেবে আন্দোলন বন্ধের চিন্তা না করে ১৫ দিনের মাথায় তত্বাবধায়ক বিল পাস করে সংসদ ভেঙে দেন।২০০১ সালের ১ই অক্টোবর ৮ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দেশমাতা বেগম খালেদা জিয়া তৃতীয় বার প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হয়।
২০০৭ সালে ৩ সেপ্টেম্বরে মঈন উদ্দিন ও ফখরুদ্দিনের পেটুয়া বাহিনী কর্তৃক গ্রেফতার হলে সেদিন সে আপোষহীন ভাবে বলেছিলেন বিদেশে আমার কোন ঠিকানা নেই বাংলাদেশই আমার একমাত্র ঠিকানা।
তারপর নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মঈন উদ্দিন আর ফখরুদ্দিন মিলে দেশী বিদেশি ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে আওয়ামীলীগ ক্ষমতায় আসলে এদেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব ও গনতন্ত্র পুরোপুরি হুমকির মুখে পরে। দেশ বাঁচাও মানুষ বাঁচাও স্লোগান নিয়ে শুরু হয় খালেদা জিয়া’র আবারও সংগ্রাম। তিনি আপোষহীন ভাবে আওয়ামীদের একতরফা দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন প্রত্যাখান করেন।অবশেষে সংগ্রাম করতে করতে ২০১৮ সালের ৮ ই ফেব্রুয়ারী একটি মিথ্যা মামলায় তাকে সাজা দিয়ে একতরফা ভাবে আওয়ামীলীগ একদশ জাতীয় নির্বাচন করে সরকার গঠন করেন। মূলত দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন ২০১৪ সালের ৫ ই জানুয়ারী এবং একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিত হওয়া দলীয় সরকারের অধীনে একটা একতরফা নির্বাচন।
এ দুই নির্বাচনের মধ্যে দিয়েই আওয়ামীলীগ সেখ মুজিবের বাকশাল বা স্বৈরাচার এরশাদের পথেই নিজেদের অবতীর্ণ করছেন এবং আওয়ামী সভানেত্রী শ্রেষ্ঠ স্বৈরাচার উপাধিতে ভূষিত হয়েছেন। স্বৈরশাসকের বিরুদ্ধে আন্দোলন করা কত কঠিন যারা স্বৈরাচারের বাস্তব সম্মুখীন হয়েছেন তারা হয়ত বুজবেন। ৫২ এর ভাষ আন্দোলন দেখিনি, ৭১ এর পাক সেনাদের বর্বরতা দেখিনি, ৭৫ এর বাকশাল দেখিনি ৮২ এর স্বৈরাচার এরশাদ দেখিনি শুনেছি বা ইতিহাস থেকে জেনেছি এদের বর্বরোচিত পাশবিক নির্যাতনের কাণ্ড। হ্যাঁ আমি নিজেই অনেক রাজপথ কাঁপানো আন্দোলন সংগ্রামের সাক্ষী। সেই ১/১১ থেকে এই পর্যন্ত সর্বোচ্চ রাজপথে ছিলাম তাই আপনাদের মত আমারও জানার সুযোগ হয়েছে সেই ভয়াল ১/১১ থেকে এই পর্যন্ত সকল শাসন ব্যাবস্থা সম্পর্কে। এত গুম খুন মিথ্যা মামলায় রিমান্ডের নামে নির্যাতন এবং কথায় কথায় বৃষ্টির মত গুলি করা, ছাত্রলীগ যুবলীগের ধর্ষণের ইতিহাস, সরকারি প্রেতাত্মাদের টেন্ডার বাজি চাঁদা বাজি স্বৈরাচারের এই দুঃশাসন রানী ইসাবেলা বা অং সাং সূচিকেও কে হার মানিয়েছে। কিন্তু রুখতে পারেনি তারা বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদী সৈনিকদের।
কিভাবে পারবে জাতীয়তাবাদের আদর্শের প্রতিক শহীদ জিয়াউর রহমান। এই জাতীয়তাবাদের নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া,যিনি স্বৈরাচার এরশাদের বিরুদ্ধে রাজপথে থেকে লড়াই করেছেন। দেশের স্বার্থ বিরোধী কর্মকান্ডের বিরুদ্ধে তিনি ছিলেন এবং এখনো আছেন অত্যন্ত কঠোর অবস্থায়। তাইতো এদেশের মানুষ তাকে ভালবেসে বলে আপোষহীন নেত্রী কখনো বলেন দেশমাতা, কখনো বলেন “মা” আবার কখনও বলেন গনতন্ত্রের ” মা” গণতন্ত্রের জন্য ১৯৮২ সালের ৩ রা জানুয়ারি থেকে আমাদের আদর্শিক “মা” বেগম খালেদা জিয়া যে সংগ্রাম শুরু করেছেন সেই সংগ্রাম এখনো বহমান। তাইতো ২০১৮ সালে ৮ ফেব্রুয়ারী আজকের এই দিনে স্বৈরাচার ও বাকশালের উত্তরসূরী জাতীয় শ্রেষ্ঠ স্বৈরাচার হাসিনার গৃহপালিত আদালতের মাধ্যমে একটি মিথ্যা মামলায় তাকে বন্দি করা হল।
এখনো মা বন্দী আছে তাই বলে আমরা হেরে যায়নি। ভুলে যায়নি সেদিনের কথা, সেদিন ১৪৪ ধারা ভেঙে ছাত্রদল মাঠে নেমেছিল। সেদিন প্রধান বিচারপতির বাসার সামনে মায়ের গাড়ি বহরে বৃষ্টির মত গুলি বর্ষন করা হয়েছিল কিন্তু ছাত্রদলকে রুখতে পারেনি কেউ। সেদিন বকশী বাজারে লক্ষ লক্ষ নেতা কর্মীদের উপর বৃষ্টির মত গুলি ও টিয়ারগ্যাস নিক্ষেপ করেও ছাত্রদল কে কিন্তু দমানো যায়নি। সারা ঢাকা শহরে সেদিন ছাত্রলীগ,যুবলীগ, সরকারে নিযুক্ত প্রশাসনের সকল প্রেতাত্মা দিয়েও ছাত্রদল দমানো যায়নি। ছাত্রদল রাজপথে ঠিকই নেমেছিল, সেই মিছিলের নেতৃত্ব দিয়েছিল ছাত্রদলের সভাপতি জনাব রাজিব আহসান। সেদিন আপোষহীন মায়ের আপোষহীন সন্তান জনাব রাজিব আহসান ভাই রাজপথ থেকে গ্রেফতার হলো।
ঢাকার পরিবেশ সেদিন এতই বিপদজনক ছিল মায়ের রায় হওয়ার পর রাস্তায় দাঁড়ানোর মত কোন অবস্থা ছিলনা। কিন্তু শুধু ছাত্রদলের সৈনিকরা জনাব রাজিব আহসানের নেতৃত্বে মাঠে নেমেছিল আর কাউকে কিন্তু ঢাকার রাজপথে দেখা যায়নি।
তাই আমি গর্বিত ছাত্রদলের একজন সক্রিয় কর্মী হয়ে। যুগ-যুগান্তরে বেঁচে থাকুন জনাব রাজিব আহসানের মত সাহসী নেতৃত্ব। যে গণতন্ত্রের জন্য আমাদের আর্দশের “মা” আজকের এই দিনে বন্দী হয়েছিলেন এবং মায়ের মুক্তির জন্য তৎকালীন ছাত্রদল সভাপতি জনাব রাজিব আহসান বন্দী হয়েছিলেন সেই আজকের এই দিনেই আমাদের আদর্শিক “মা” বেগম খালেদা জিয়া ক্যানাডিয়ান হিউম্যান রাইটস ইন্টারন্যাশনাল অর্গানাইজেশন কর্তৃক মাদার অব ডেমোক্রেসী এ্যাওয়ার্ডে ভূষিত হওয়া এটা বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদের জন্য অবশ্যই গর্ব এবং অহংকারের।
জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল তার গর্বিত অংশীদার।গাদ্দাফি,মুসোলিনী, হিটলার ইত্যাদি কোন স্বৈরাচারই টিকতে পারিনি। এই হাসিনা স্বৈরাচারও টিকবে না। দেশনায়ক জনাব তারেক রহমানের নেতৃত্বে খুব শিগ্রই এই দেশদ্রোহী বিশ্বাসঘাতক ভোটচোর মাদার অব মাফিয়া নামে খ্যাত হাসিনা সরকারের পতন হবে, ইনশাআল্লাহ।
লেখক: মোঃ শাহিন রেজা (শিশির)
আহবায়ক পদপ্রার্থী
ঢাকা কলেজ ছাত্রদল।
আরও পড়ুন
- সর্বশেষ খবর
- সর্বাধিক পঠিত