27 C
Dhaka
সোমবার, মে ২৯, ২০২৩

খালেদার বিদেশযাত্রায় বাধা প্রবেশ নিষেধাজ্ঞাও

নভেল করোনাভাইরাস (কভিড-১৯) মহামারির কারণে বাংলাদেশ থেকে যাত্রী প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে রেখেছে যুক্তরাজ্য। এ ক্ষেত্রে কভিড পরীক্ষা ও কোয়ারেন্টিনের শর্তে ছাড় পাচ্ছে শুধু ব্রিটিশ ও আইরিশ এবং যুক্তরাজ্যে বসবাসের অধিকার আছে (রেসিডেন্স রাইটস) এমন তৃতীয় কোনো দেশের নাগরিকরা। শুধু যুক্তরাজ্য নয়, বাংলাদেশ থেকে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে ইতালি, ওমান, সিঙ্গাপুর ও মালয়েশিয়াও। এমন প্রেক্ষাপটে উন্নত চিকিৎসার জন্য সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে ওই দেশগুলোর কোনো একটিতে যেতে হলে বিশেষ ব্যবস্থা ছাড়া বিকল্প নেই বলে কূটনৈতিক সূত্রগুলো নিশ্চিত করেছে। খালেদা জিয়ার পরিবার তাঁকে যুক্তরাজ্যের লন্ডন বা সিঙ্গাপুর নিতে চায়।

খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা আগের দিনের মতো গতকালও স্থিতিশীল ছিল। তাঁর চিকিৎসক অধ্যাপক এ জেড এম জাহিদ হোসেন গত রাতে হাসপাতালের সামনে সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান।

তিনি বলেন, খালেদা জিয়ার অবস্থা অপরিবর্তিত। বিদেশে নিতে সরকারের অনুমতি পেলে বিমান ভ্রমণের মতো শারীরিক অবস্থা বিএনপি চেয়ারপারসনের আছে কি না—এই প্রশ্ন করা হলে অধ্যাপক জাহিদ বলেন, সরকারের অনুমতির পরেই এ বিষয়ে মেডিক্যাল বোর্ড পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেবে।

যুক্তরাজ্য ৯ এপ্রিল থেকে যে নিয়ম অনুসরণ করছে তাতে যাত্রার আগের ১০ দিনের মধ্যে বাংলাদেশে অবস্থান বা ট্রানজিট করলে কোনো যাত্রীর যুক্তরাজ্যে প্রবেশের সুযোগ নেই। ব্রিটিশ, আইরিশ ও রেসিডেন্স রাইটস যাদের আছে তারা বাংলাদেশ থেকে যুক্তরাজ্যের ইংল্যান্ডে গেলে যাত্রা শুরুর আগে পরীক্ষাসহ সেখানে প্রবেশের পর সরকার অনুমোদিত হোটেলে ১০ দিনের কোয়ারেন্টিনে থাকতে হবে। ওই যাত্রীদের ক্ষেত্রে স্কটল্যান্ড, ওয়েলস ও নর্দার্ন আয়ারল্যান্ডে প্রবেশে আলাদা নিয়ম প্রযোজ্য হবে।

বাংলাদেশে যুক্তরাজ্যের ভিসা আবেদন গ্রহণকারী প্রতিষ্ঠান ভিএফএস গ্লোবাল গত ৪ মে এক ঘোষণায় বলেছে, ইউকে (যুক্তরাজ্য) ভিসা ও ইমিগ্রেশন বিভাগ ভিজিট ভিসা নয় এমন আবেদনগুলোর প্রসেস অব্যাহত রাখবে। তারা সব আবেদনপত্র গ্রহণ করবে। তবে ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা অব্যাহত থাকার সময় ভিজিট ও ট্রানজিট ভিসা ইস্যু করা থেকে বিরত থাকবে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, খালেদা জিয়ার পক্ষ থেকে এখনো কোনো দেশে ভিসার আবেদন করা হয়নি। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন কর্মকর্তা বলেছেন, বিদেশে যাওয়ার আগে সরকারের অনুমতি ও পাসপোর্ট থাকতে হবে। সেগুলো পাওয়ার পর সংশ্লিষ্ট দূতাবাস ও সরকার এ ভিসার বিষয়ে বিবেচনা করতে পারে।

কূটনৈতিক একটি সূত্র জানিয়েছে, বাংলাদেশ থেকে বর্তমানে যুক্তরাজ্যে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা চলছে, এটি ঠিক। তবে ব্যতিক্রমী ঘটনাগুলোর ক্ষেত্রে ওই নিষেধাজ্ঞা থেকে অব্যাহতি পাওয়ারও সুযোগ আছে।

ব্যক্তি খালেদা জিয়ার ভিসা আবেদনের ক্ষেত্রে কী হতে পারে, সে বিষয়ে সূত্রগুলো কোনো মন্তব্য করেনি। তবে যুক্তরাজ্যের সঙ্গে খালেদা জিয়ার ‘ফ্যামিলি লিংক’ (পারিবারিক যোগসূত্র) আছে।

সিঙ্গাপুর সরকারও গত ৩০ এপ্রিল বাংলাদেশসহ বেশ কয়েকটি দেশ থেকে যাত্রীদের প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। গত ২ মে থেকে সেই নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হয়েছে। এর ফলে সিঙ্গাপুরেও বিশেষ অনুমতি বা ব্যবস্থা ছাড়া খালেদা জিয়ার যাওয়ার সুযোগ নেই।

বাংলাদেশে যুক্তরাজ্য ও সিঙ্গাপুরের ভিসা ‘প্রসেস’কারী প্রতিষ্ঠান ভিএফএস গ্লোবালের কার্যক্রম আবারও শুরু করতে গত বৃহস্পতিবার পররাষ্ট্রমন্ত্রী নির্দেশনা দিয়েছেন। আগামীকাল রবিবার বা পরশু সোমবারের মধ্যে ওই সেবা চালু হতে পারে।

কূটনৈতিক সূত্রগুলো বলছে, সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার বিষয়টি ব্যতিক্রমী হতে পারে। কূটনৈতিক বা ব্যতিক্রমী আবেদনগুলোর ক্ষেত্রে প্রক্রিয়াগত ছাড় দেওয়ার সুযোগ আছে।

গতকাল শুক্রবার পাসপোর্ট অফিসে জরুরি ভিত্তিতে খালেদা জিয়ার পাসপোর্ট ইস্যুর কাজ করেছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। জানা গেছে, পাসপোর্ট তৈরি করে দেওয়ার জন্য তাঁরা প্রস্তুতি নিয়েছেন। এখন সরকারের তরফ থেকে নির্দেশ যাওয়ার পরপরই পাসপোর্ট মিলবে খালেদা জিয়ার। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, নিয়ম অনুযায়ী পাসপোর্টের জন্য সশরীরে উপস্থিত থেকে ফিঙ্গারপ্রিন্ট ও আবেদনপত্রে স্বাক্ষর দেওয়ার নিয়ম থাকলেও খালেদা জিয়ার ক্ষেত্রে সেই শর্ত শিথিল করে পাসপোর্ট করে দেওয়া হচ্ছে। গত বৃহস্পতিবার ফি জমা দিয়ে সন্ধ্যার পর পাসপোর্টের আবেদন আগারগাঁওয়ের পাসপোর্ট অফিসে জমা দেওয়া হয়।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, পাসপোর্ট অফিস খালেদা জিয়ার পাসপোর্ট করে দেওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছে। সরকারের নির্দেশ পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তাঁর পাসপোর্ট করে দেওয়া হবে বলে সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা কালের কণ্ঠকে জানান। বিএনপির একটি সূত্র জানায়, পাসপোর্ট নেওয়ার বিষয় নিয়ে পাসপোর্ট অফিসের সঙ্গে তাঁদের যোগাযোগ রয়েছে। ২০১৯ সালে খালেদা জিয়ার পাসপোর্টের মেয়াদ শেষ হয়েছে বলে জানা গেছে। একটি সূত্রের দাবি, গতকালই খালেদা জিয়ার পাসপোর্ট সরবরাহ করা হয়েছে।

জানা যায়, খালেদা জিয়ার পরিবার তাঁকে বিদেশ নেওয়ার অনুমতি পেতে সরকারের উচ্চ পর্যায়ে যোগাযোগ করে। সরকারের সবুজ সংকেত পাওয়ার পর বুধবার রাতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে আবেদন জমা দেন খালেদা জিয়ার ভাই শামীম এস্কান্দার। পরে আবেদনপত্রটি পর্যালোচনার জন্য আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। গতকাল শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত আইন মন্ত্রণালয় থেকে মতামত স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়নি। সে কারণে বিএনপি চেয়ারপারসনের বিদেশযাত্রার বিষয়টি আজ শনিবার নিষ্পত্তি হতে পারে। এর পরই বিএনপি চূড়ান্ত প্রস্তুতি শুরু করতে পারে। পরিবারের পক্ষ থেকে লন্ডন ও সিঙ্গাপুরে নেওয়ার চেষ্টা হলেও বিএনপি তাঁকে লন্ডনে নেওয়ার পক্ষে। কারণ সেখানে তাঁর পরিবারের সদস্যরা রয়েছেন। খালেদা জিয়ার সঙ্গে তাঁর গৃহকর্মী ফাতেমা, পরিবারের দুজন সদস্য ও চিকিৎসকরা যাবেন বলে জানা গেছে।

বিএনপির পক্ষ থেকে খালেদা জিয়াকে বিদেশ নিতে চার্টার্ড বিমানের ব্যবস্থা করার চেষ্টা চলছে। সেটি সম্ভব না হলে এয়ার অ্যাম্বুল্যান্স ভাড়া করা হবে। এ জন্য কয়েকটি জায়গায় এরই মধ্যে যোগাযোগ করা হয়েছে। তবে সরকার তাঁকে লন্ডনে যেতে দেবে কি না, সেটি নিশ্চিত নয়। সে কারণে বিএনপি চূড়ান্ত প্রস্তুতি নিতে পারছে না। জানতে চাইলে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক কালের কণ্ঠকে বলেন, খালেদা জিয়ার বিদেশযাত্রার বিষয়টি আজ (শনিবার) নিষ্পত্তি করা হবে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সিদ্ধান্ত কী, তা বিএনপিকে জানিয়ে দেওয়া হবে।

করোনা সংক্রমণ ধরা পড়ার পর গত ১১ এপ্রিল থেকে গুলশানের ভাড়া বাসা ‘ফিরোজা’য় ব্যক্তিগত চিকিৎসক দলের তত্ত্বাবধানে চিকিৎসা নিচ্ছিলেন খালেদা জিয়া। ১৪ দিন পর আবার পরীক্ষা করা হলে তখনো তাঁর করোনা পজিটিভ আসে। এরপর স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য ২৭ এপ্রিল রাতে তাঁকে এভারকেয়ার হাসপাতালে নেওয়া হয়। কয়েকটি পরীক্ষার পর সেই রাতেই তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করে নেওয়া হয়। গত মঙ্গলবার সকালের দিকে শ্বাসকষ্ট অনুভব করলে চিকিৎসকরা বিকেলে খালেদা জিয়াকে সিসিইউতে স্থানান্তর করেন।

 

Related Articles

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Stay Connected

0FansLike
3,785FollowersFollow
0SubscribersSubscribe
- Advertisement -

Latest Articles