27 C
Dhaka
সোমবার, মে ২৯, ২০২৩

সাবেক সাংসদ আউয়াল রিমান্ডে

রাজধানীর পল্লবী এলাকার যুবক সাহিনুদ্দিন (৩৩) খান হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার লক্ষ্মীপুর-১ আসনের সাবেক সাংসদ ও তরীকত ফেডারেশনের সাবেক মহাসচিব এম এ আউয়ালসহ তিনজনকে চার দিন রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করার অনুমতি দিয়েছেন আদালত। পুলিশের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের ম্যাজিস্ট্রেট নিবানা খায়ের জেসী আজ শুক্রবার এই আদেশ দেন।

এর আগে, ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) সাবেক সাংসদ আউয়ালসহ তিনজনকে আদালতে হাজির করে ১০ দিন রিমান্ডে নেওয়ার আবেদন করে। উভয় পক্ষের শুনানি নিয়ে আদালত আউয়ালসহ তিনজনের চার দিন রিমান্ড মঞ্জুর করেন। রিমান্ডপ্রাপ্ত অন্য দুই আসামি হলেন নূর মোহাম্মাদ হাসান (১৯) ও জহিরুল ইসলাম ওরফে বাবু (২৭)।

সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজে দেখা যায়, গত রোববার বিকেলে রাজধানীর পল্লবীর ডি–ব্লকের ৩১ নম্বর রোডে দুই তরুণ দুই পাশ থেকে এক ব্যক্তিকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কোপাচ্ছেন। একপর্যায়ে ওই ব্যক্তি মাটিতে লুটে পড়েন। এরপর হামলাকারীদের একজন চলে যান। অন্যজন ওই ব্যক্তির ঘাড়ে কোপাতে থাকেন মৃত্যু হওয়া পর্যন্ত। নিহত ব্যক্তি পল্লবী এলাকার যুবক সাহিনুদ্দিন।

র‍্যাব বলছে, এ খুনের মূল পরিকল্পনাকারী লক্ষ্মীপুর-১ আসনের সাবেক সাংসদ ও তরীকত ফেডারেশনের সাবেক মহাসচিব এম এ আউয়াল। তাঁর নির্দেশে স্থানীয় সন্ত্রাসী মনির, মানিক, সুমন ব্যাপারী, হাসানসহ অন্যরা ৫ থেকে ৭ মিনিটের মধ্যে রামদা ও চাপাতি দিয়ে কুপিয়ে সাহিনুদ্দিনকে হত্যা করেন। এরপর সুমন মুঠোফোনে সাবেক সাংসদ আউয়ালকে জানান, ‘স্যার, ফিনিশ।’ মুঠোফোনের কলরেকর্ড পরীক্ষা করে র‍্যাব এ তথ্য পেয়েছে বলে বৃহস্পতিবার সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়।

র‌্যাব গত বুধবার গভীর রাতে নরসিংদীর ভৈরবে অভিযান চালিয়ে সাবেক সাংসদ আউয়ালকে (৫০) গ্রেপ্তার করে। এর আগের রাতে চাঁদপুরের হাইমচর থেকে নূর মোহাম্মাদ হাসান (১৯) ও পটুয়াখালীর বাউফল থেকে জহিরুল ইসলাম ওরফে বাবুকে (২৭) গ্রেপ্তার করে। সুমন ব্যাপারীসহ দুজনকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ (ডিবি)। এ নিয়ে ওই হত্যায় সাতজনকে গ্রেপ্তার করা হয়।

র‍্যাব বলছে, পল্লবী এলাকায় আউয়ালের আবাসন ও জমির ব্যবসা রয়েছে। সাহিনুদ্দিনের জমি দখল নিতে না পেরে তাঁকে ভাড়াটে খুনি দিয়ে হত্যা করা হয়।
এম এ আউয়াল তরীকত ফেডারেশনের মহাসচিব থাকাকালে ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে ১৪-দলীয় জোটের প্রার্থী হিসেবে লক্ষ্মীপুর-১ আসনে নৌকা প্রতীকে সাংসদ হন। ২০১৮ সালে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে তাঁকে তরীকত ফেডারেশনের মহাসচিব পদ থেকে অব্যাহতি দিলে তিনি ইসলামী গণতান্ত্রিক পার্টি নামে নতুন রাজনৈতিক দল গঠন করেন। তিনি এর চেয়ারম্যান।

খুনের কারণ:

সাহিনুদ্দিন গত রোববার বিকেলে ৭ বছরের ছেলে নিয়ে মোটরসাইকেলে ঘুরতে বের হন। তাঁর পূর্বপরিচিত সুমন ব্যাপারী ও টিটু মুঠোফোনে সাহিনুদ্দিনকে পল্লবীর ডি–ব্লকে ডাকেন জমিজমা নিয়ে বিবাদ মীমাংসার জন্য। সাহিনুদ্দিন সেখানে গেলে সুমন ব্যাপারী লাথি মেরে মোটরসাইকেল থেকে তাঁকে ফেলে দেন। এরপর ছেলের সামনেই তাঁকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়।

এ ঘটনায় সাহিনুদ্দিনের মা আকলিমা বেগম বাদী হয়ে সাবেক সাংসদ আউয়ালসহ ২০ জনের নাম উল্লেখ করে পল্লবী থানায় হত্যা মামলা করেন। মামলাটি বুধবার ডিবিতে স্থানান্তর করা হয়।

সাহিনুদ্দিনের মা আকলিমা বেগম বলেন, পল্লবীর ১২ নম্বর সেকশনের বুড়িরটেকে (আলীনগর) তাঁর ও তাঁদের স্বজনদের ১০ একর জমি রয়েছে। আশপাশের কিছু জমি দখল করে সেখানে হ্যাভেলি প্রোপার্টিজ ডেভেলপার লিমিটেড নামের আবাসন প্রকল্প গড়ে তোলেন আউয়াল।

আকলিমা বেগমের অভিযোগ, তাঁদের জমি জবরদখলে ব্যর্থ হয়ে আউয়াল ভাড়াটে সন্ত্রাসী দিয়ে সাহিনুদ্দিনকে কুপিয়ে হত্যা করেছেন। তিনি বলেন, গত বছরের নভেম্বরেও সন্ত্রাসীরা সাহিনকে কুপিয়ে আহত করেছিল। সেই ঘটনায় করা মামলায় পুলিশ কাউকে গ্রেপ্তার করেনি। উল্টো আউয়ালের দেওয়া মিথ্যা মামলায় সাহিনুদ্দিনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। সপ্তাহখানেক আগে সাহিনুদ্দিন জামিনে মুক্তি পান।

র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন সাংবাদিকদের বলেন, সাহিনুদ্দিনদের জমি দখলে ব্যর্থ হয়ে সাবেক সাংসদ আউয়ালের নির্দেশ ও পরিকল্পনায় এ খুনের ঘটনা ঘটে। ঘটনার চার-পাঁচ দিন আগে আউয়ালের কলাবাগানের অফিসে আসামি তাহের ও সুমন চূড়ান্ত পরিকল্পনা করেন। পল্লবী এলাকার সন্ত্রাসী সুমনের নেতৃত্বে ১০-১২ জন হত্যাকাণ্ডে অংশ নেন। তাঁদের সহযোগী হিসেবে আরও কয়েকজন ছিলেন।

র‍্যাবের এই মুখপাত্র বলেন, আউয়াল জমি বেচাকেনা করতেন। সুমনের নেতৃত্বাধীন সন্ত্রাসী গ্রুপ দিয়ে তিনি জমি দখল ও আধিপত্য বিস্তার করতেন। সুমন আউয়ালের কাছ থেকে প্রতি মাসে ১০-১২ হাজার টাকা পেতেন। ক্ষেত্রবিশেষে কাজ অনুযায়ী অতিরিক্ত টাকা পেতেন। সুমন এলাকায় চাঁদাবাজি, ছিনতাই, রিকশা টোকেন–বাণিজ্য, মাদক, জুয়াসহ অন্যান্য অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড চালাতেন। তাঁর বিরুদ্ধে মাদকদ্রব্য আইনে পল্লবী থানায় অন্তত ছয়টি মামলা রয়েছে।

আউয়াল কেন সাহিনুদ্দিনকে হত্যা করিয়েছেন, এ প্রশ্নের জবাবে র‍্যাবের মুখপাত্র বলেন, আউয়ালের সঙ্গে সাহিনুদ্দিনের জমি নিয়ে বনিবনা হচ্ছিল না। এদিকে সাহিনুদ্দিনের পরিবারের অভিযোগ, এ হত্যার জন্য সন্ত্রাসীদের সঙ্গে ৩০ লাখ টাকা চুক্তি করেছেন আউয়াল।

Related Articles

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Stay Connected

0FansLike
3,785FollowersFollow
0SubscribersSubscribe
- Advertisement -

Latest Articles