27 C
Dhaka
সোমবার, মে ২৯, ২০২৩

প্রেমিকার স্বামীকে টুকরো টুকরো করে ট্যাংকে ফেলেন মসজিদের ইমাম

রাজধানীর দক্ষিণখান সরদারবাড়ি জামে মসজিদের সেপটিক ট্যাংক থেকে আজহারুল ইসলাম (৪০) নামে এক গার্মেন্টকর্মীর লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। মঙ্গলবার ভোরে পুলিশ তার লাশ উদ্ধার করে।

এ ঘটনায় র‌্যাব মসজিদের ইমাম আব্দুর রহমানকে গ্রেফতার করেছে। তদন্ত সংশ্লিষ্টরা জানান, বাসায় আসা-যাওয়ার সূত্র ধরে আজহারুলের স্ত্রীর সঙ্গে আব্দুর রহমানের ঘনিষ্ঠতা তৈরি হয়। এ বিষয়ে জিজ্ঞাসা করতে ২০ মে মসজিদে ইমামের কক্ষে গিয়ে খুন হন তিনি। পরে তার লাশ গুম করতে সাত টুকরা করে সেপটিক ট্যাংকে লুকিয়ে রাখা হয়।

র‌্যাবের জিজ্ঞাসাবাদে ইমাম আব্দুর রহমান হত্যার কথা স্বীকার করলেও পরকীয়া সম্পর্কের বিষয়টি অস্বীকার করেছেন। ইমামের দাবি, আজহারুল তাকে সন্দেহ করত। এই সন্দেহ থেকেই ঘটনার দিন রাতে মসজিদে তদের মধ্যে কথা কাটাকাটি হয়। একপর্যায়ে তিনি ক্ষিপ্ত হয়ে ধারালো অস্ত্র দিয়ে আজহারুলের গলায় আঘাত করেন। আজহারুল ঘটনাস্থলেই মারা যান। ঘটনাটি ঘটেছে এশার নামাজের পর। পরে তিনি রাতভর লাশের বিভিন্ন অঙ্গ কেটে আলাদা করে সেপটিক ট্যাংকে ফেলেন। কাজ শেষে তিনি গোসল করেন এবং ফজরের নামাজ পড়ান। ধারালো অস্ত্রের বিষয়ে ইমাম বলেছেন, কুরবানির পশু জবাই করার জন্য তিনি এগুলো রাখতেন।

এদিকে আব্দুর রহমানকে গ্রেফতারের বিষয়ে মঙ্গলবার বিকালে রাজধানীর কারওয়ানবাজারে র‌্যাবের মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে র‌্যাব।

সংবাদ সম্মেলনে র‌্যাব-১-এর অধিনায়ক লে. কর্নেল আব্দুল মোত্তাকীম জানান, সোমবার রাতে র‌্যাবের গোয়েন্দা দল খবর পায় সরদারবাড়ি জামে মসজিদের সিঁড়িতে রক্তের দাগ এবং সেপটিক ট্যাংক থেকে তীব্র গন্ধ ছড়াচ্ছে। এই তথ্যের ভিত্তিতে র‌্যাব-১ ছায়া তদন্ত শুরু করে। তখন জানা যায়, আজহারুল নিখোঁজ রয়েছেন। এ ঘটনার তদন্তের একপর্যায়ে দক্ষিণখানের মাদ্রাসাতুর রহমান আল আরাবিয়া থেকে আব্দুর রহমানকে গ্রেফতার করা হয়। তার কাছ থেকে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত ৩টি চাকু ও একটি মোবাইল ফোন উদ্ধার করা হয়। পরে তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে সরদারবাড়ি জামে মসজিদের সেপটিক ট্যাংক থেকে আজহারুলের লাশ উদ্ধার করা হয়।

র‌্যাবের জিজ্ঞাসাবাদে আব্দুর রহমান জানান, তিনি সরদারবাড়ি জামে মসজিদে ৩৩ বছর ধরে ইমামের দায়িত্ব পালন করছেন। আজহারের চার বছর বয়সি শিশুসন্তান মসজিদের মক্তবে পড়ত। আজহারুল নিজেও তার কাছে কুরআন শিখত। এ কারণে তাদের মধ্যে পারিবারিক সম্পর্ক গড়ে উঠে।

পুলিশ জানায়, আজহারুল স্ত্রী-সন্তান নিয়ে দক্ষিণখানের মধুবাগ এলাকার ইউসুফ গাজীর ৩৯ নম্বর বাসায় ভাড়া থাকতেন। বাসায় আসা-যাওয়ার সূত্র ধরেই ইমামের সঙ্গে সম্পর্ক হয় আজহারুলের স্ত্রীর। এক বছর ধরে এই সম্পর্ক চলছিল। আজহারুল বিষয়টি টের পেয়ে পাঁচ মাস আগে বাসাও পরিবর্তন করেন। এতেও তাদের সম্পর্কে চির ধরেনি। নিয়মিত দেখা হতো তাদের। প্রায় ২০ দিন আগেও তাদের মধ্যে দেখা হয় বলে জানতে পারেন আজহারুল। এ কারণে তিনি স্ত্রী-সন্তানকে নিয়ে তার নিজ বাড়ি টাঙ্গাইলের কালিহাতীতে চলে যান। কালিহাতী থেকে ইমামকে ফোন করে ইমামের কাছে বিষয়টি জানতে চান তিনি। তখন বিষয়টি ইমাম অস্বীকার করে বলেন মসজিদে এসে কথা বলতে। ঘটনা জানতে ২০ মে দক্ষিণখানের সরদারবাড়ির মসজিদে গিয়েছিলেন আজহারুল। এরপর থেকেই নিখোঁজ ছিলেন তিনি। নিখোঁজের পাঁচদিন পর মঙ্গলবার দক্ষিণখানের ওই মসজিদের সেপটিক ট্যাংক থেকে তার সাত টুকরা লাশ উদ্ধার করা হয়।

পুলিশ কর্মকর্তাদের ধারণা, আজহারুলের স্ত্রী এবং ইমাম পরিকল্পনা করেই এ হত্যার ঘটনা ঘটিয়েছেন। ইমামকে রিমান্ডে নিয়ে আরও বিস্তারিত জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। তাছাড়া ইমামের বয়স বিবেচনায়, তার একার পক্ষে খুন করে লাশ গুম করা সম্ভব না-ও হতে পারে। এ বিষয়টিও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এমনও হতে পারে ইমাম আজহারুলকে নেশাজাতীয় দ্রব্য খাইয়ে অজ্ঞান করে হত্যার পর টুকরা করেছেন।

দক্ষিণখান থানার পরিদর্শক (তদন্ত) আজিজুল হক মিয়া বলেন, এ ঘটনায় পরকীয়ার বিষয়ে অনেক তথ্য পাওয়া গেছে। তবে তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত আমরা নিশ্চিত হয়ে কিছু বলতে পারব না। আসামি র‌্যাবের কাছে আছে। আসামিকে জিজ্ঞাসাবাদের পর হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে বিস্তারিত বলা যাবে।

তদন্তসংশ্লিষ্ট একজন কর্মকর্তা জানান, মসজিদ ভবনটি এখনো নির্মাণাধীন। মসজিদের ৯০ শতাংশ কাজ শেষ হলেও সেপটিক ট্যাংকসহ আরও বেশকিছু কাজ বাকি আছে। তদন্ত সংশ্লিষ্টদের ধারণা, সেপটিক ট্যাংকটির কাজ শেষ না হওয়ায় হত্যাকারী লাশের টুকরাগুলো এখানে ফেলে দেয়। লাশ যেন কেউ খুঁজে না পায়, সেজন্য সেখানে ঢালাই দেওয়ার পরিকল্পনা করছিলেন খুনি আব্দুর রহমান।

 

Related Articles

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Stay Connected

0FansLike
3,785FollowersFollow
0SubscribersSubscribe
- Advertisement -

Latest Articles