মেয়েটিকে টিকটকের লোভ দেখিয়ে ভারতে নিয়ে যায় হৃদয় বাবু

| আপডেট :  ২৮ মে ২০২১, ০১:৩২  | প্রকাশিত :  ২৮ মে ২০২১, ০১:৩২

ভারতের কেরালায় এক বাংলাদেশি তরুণীকে বিবস্ত্র করে যৌন নির্যাতনের ভিডিও ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে। কয়েকজন যুবক ও এক নারী ওই তরুণীকে নির্যাতন করেন। ১৫-১৬ দিন আগের ভিডিও এটি। যৌন নির্যাতনকারীদের মধ্যে একজনের সঙ্গে ঢাকার মগবাজারের এক তরুণের ফেসবুক আইডিতে পোস্ট করা ছবির মিল পাওয়া যায়। তদন্ত করে তার আসল নাম-ঠিকানা শনাক্ত করেছে পুলিশ। তার নাম রিফাতুল ইসলাম হৃদয় ওরফে টিকটক হৃদয়।

টিকটক ভিডিও করেই দিন কাটত হৃদয়ের। পিছনে চলত নারী পাচার। সেই সূত্রে বাংলাদেশ থেকে এক কিশোরীকে পাচার করে ভারতে পাঠায়। অভিযুক্ত নাম রিফাজুল ইসলাম হৃদয় ওরফে টিকটক হৃদয়।

বাংলাদেশি কিশোরীকে ভারতের কেরল রাজ্যে পাচার করে টিকটক হৃদয় গ্যাং। শুরু হয় দৈহিক ও মানসিক নির্যাতন। ওই কিশোরীকে টিকটক ভিডিও দেখিয়ে প্রেমে ফুঁসলিয়ে পাচার করা হয়েছিল।

কেরল থেকে ওই কিশোরীকে কর্নাটকের একটি পতিতাপল্লীতে পাচার করা হয়। সেখানে নির্যাতনের ভিডিও আপলোড করেই নিজেদের চিহ্নিত করেছিল হৃদয়। ভিডিও ভাইরাল হয়। বাংলাদেশে এই ভিডিও ছড়াতেই কিশোরী ও নির্যাতনকারীদের পরিচয় নিয়ে সোশ্যাল সাইটে লেখালেখি শুরু হয়।ঢাকা মহানগর পুলিশের সাইবার সেল তদন্তে নামে। হাতে আসে টিকটক হৃদয়ের বিবরণ। সেই সূত্র ধরে ভারত সরকারের কাছে তথ্য পাঠানো হয়।

ভারতে যৌন নির্যাতনের শিকার ওপর কিশেরীর বাড়ি কিশোরগঞ্জে। ২০১৪ সালে কুয়েত থাকা এক যুবকের সঙ্গে তার বিয়ে হয়। সেই বিয়ে শ্বশুরবাড়ির কেউ মেনে নেয়নি। বিয়ের পর তাকে শ্বশুরবাড়ির কেউ মেনে নেয়নি। প্রায় ৫ বছর পর পর্যন্ত বাপের বাড়ি কিশোরঞ্জেই ছিল। সৌদি আরবে কাজের জন্য দালাল চক্রকে টাকা দেওয়ার নাম করে ঢাকা থেকে নিখোঁজ হয় সেই কিশোরী।

তদন্তে উঠে এসেছে ঢাকায় আসার পরেই কিশোরীর সঙ্গে যোগাযোগ হয় টিকটক হৃদয় গ্যাংয়ের সঙ্গে। তাকে প্রেমে ফুঁসলিয়ে ভারতে নিয়ে গিয়ে পতিতাপল্লীতে বিক্রি করা হয়। তার আগে গণধর্ষিতা হয় কিশোরী। ভারতে ধরা পড়া অভিযুক্ত ও কিশোরীকে বাংলাদেশে দ্রুত আনার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। এই বিষয়ে ঢাকা ও নয়াদিল্লির মধ্যে আলোচনা হবে। সাহায্য নেওয়া হচ্ছে ইন্টারপোলের।

বৃহস্পতিবার দুপুরে সংবাদ সম্মেলনে তেজগাঁও বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) মো. শহিদুল্লাহ বলেন, এরপর ছেলেটির মা ও মামাকে ভিডিওটি দেখানো হয়। প্রথমে অস্বীকার করলেও পরবর্তীতে মা স্বীকার করেন ভিডিওতে তার ছেলে রিফাতুল ইসলাম হৃদয় রয়েছে। স্থানীয়রাও হৃদয়কে শনাক্ত করে। স্থানীয়ভাবে তিনি টিকটক হৃদয় নামে পরিচিত। তার বয়স ২৬ বছর। উচ্ছৃঙ্খল কর্মকাণ্ডের কারণে চার মাস আগে তাকে বাসা থেকে বের করে দেওয়া হয়। তারপর থেকে বাসার কারো সংগে তার যোগাযোগ ছিলো না বলে পুলিশকে জানান হৃদয়ের মা ও মামা।

হৃদয়ের বাসা তল্লাশি করে তার জাতীয় পরিচয়পত্র, জেএসসি পরীক্ষার এডমিট কার্ড, রেজিস্ট্রেশন কার্ড ও রমনা থানায় তার নামে দায়েরকৃত একটি ডাকাতি প্রস্তুতি মামলার এজাহার ও এফআইআর কপি জব্দ করা হয়েছে বলেও জানান তিনি।

তিনি বলেন, কৌশলে হৃদয়ের মামার হোয়াটসঅ্যাপ থেকে তার ভারতীয় নম্বরে যোগাযোগ করে পুলিশ। সে জানায়, তিন মাস আগে ভারতে গেছে। যৌন নির্যাতনের যে ভিডিও ভাইরাল হয়েছে, সেই ঘটনা ১৫ থেকে ১৬ দিন আগের। ভিডিওর ভিকটিম বাংলাদেশি তরুণী এবং ঢাকার বাসিন্দা। বয়স ২০-২২ বছর।

ওই তরুণীর আরও পরিচয় জানতে চাওয়া হলে হৃদয় হোয়াটসঅ্যাপে ভিক্টিমের একটি ভারতীয় পরিচয়পত্র আধার কার্ড পাঠায় বলে জানান তেজগাঁও বিভাগের ডিসি মো. শহিদুল্লাহ। তিনি বলেন, হৃদয় জানিয়েছে যৌন নির্যাতনের ঘটনায় তার কয়েকজন বন্ধুও জড়িত ছিল। ভারতের কেরালায় ওই ঘটনা ঘটে। ওই তরুণীর সঙ্গে আগে থেকেই তার পরিচয় ছিল।

তেজগাঁও বিভাগের উপ-কমিশনার আরও বলেন, হৃদয়ের দেওয়া তথ্যমতে তরুণীর পরিবারের সন্ধান পেয়েছি। পরিবারের সঙ্গে মেয়েটির গত দুই বছর ধরে কোনো যোগাযোগ ছিল না।

ডিএমপির কর্মকর্তা বলেন, মেয়েটির বাবা-মা আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার পরে আমরা দ্রুত মেয়েটিকে ফেরত এনে চিকিৎসার ব্যবস্থাসহ আইনানুগ ব্যবস্থা নেবো। মেয়েটিকে উদ্ধার ও যারা তাকে যৌন নির্যাতন করেছে তাদেরকে ভারতীয় পুলিশ ও ইন্টারপোলের সহযোগিতায় গ্রেফতার করা হবে।

  • সর্বশেষ খবর
  • সর্বাধিক পঠিত