ম্যাচের আগেই ‘ম্যান অব দ্য ম্যাচ’

| আপডেট :  ২৩ মার্চ ২০২২, ১২:৪৪  | প্রকাশিত :  ২৩ মার্চ ২০২২, ১২:৪৪

এক ফ্রেমে শুধু দু’জনকে আটকে শেষ কবে কোন ছবি তুলেছেন? মিরপুর শেরেবাংলায় নিয়মিত যাতায়াত আছে এমন এক ফটোগ্রাফার প্রশ্ন শুনে যেন আকাশ থেকে পড়লেন! ‘কত ছবিই তো আছে দু’জনের। কোনটা দরকার বলুন’-, প্রচণ্ড আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে কথাটি জানালেন। শেষ পর্যন্ত তিনি যে ছবিটি মেইল করলেন, সেটা প্রায় বছর তিনেক আগের একটা ফ্রেম। যেখানে মিরপুরে অনুশীলনের ফাঁকে ছাতার নিচে সাকিব আর তামিম পাশাপাশি বসে আছেন। গুগলে দু’জনের নাম লিখে সার্চ করলেও ওই পুরোনো ছবিটিই সবার আগে দেখাবে। তাহলে দু’জনের একসঙ্গে হাস্যোজ্জ্বল ফ্রেমের কি নতুন কোনো ছবি নেই? গত কয়েক বছরে দু’জনের সম্পর্ক যে শীতল হতে হতে বরফখণ্ডের মতো শক্ত হয়ে আছে, সেটা বাংলাদেশ ক্রিকেটের একটু ভেতরে গিয়ে যারা খোঁজখবর নেন, তারা সবাই জানেন।

দু’জনই পেশাদার ক্রিকেটার, আর এই পেশাদারিত্বের খাতিরেই মাঠে দু’জনই দু’জনের দায়িত্ব পালন করে থাকেন নিষ্ঠার সঙ্গে। আর এজন্যই মিডিয়া অতিকৌতূহল হয়ে এর বাইরে গিয়ে সাকিব-তামিমের মাঠের বাইরের সম্পর্ককে ওভাবে সামনে আনেন না। সাকিব কিংবা তামিম- তারা নিজেরাও এসব নিয়ে খুব একটা গায়ে মাখেন না। তবে এবার সাকিব কিছুটা মনঃক্ষুণ্ণ হয়েছেন অধিনায়ক তামিমের কিছু কার্পণ্য দেখে। সেদিন সেঞ্চুরিয়ানে ঐতিহাসিক জয়ে ৭৭ রান করে ম্যাচসেরা হয়েছিলেন সাকিব আল হাসান। অথচ ম্যাচের পর সংবাদ সম্মেলনে অধিনায়ক ঘোষণা দিয়েছিলেন তার চোখে ম্যাচসেরা ছিলেন মেহেদী হাসান মিরাজ- ‘সে আমার কাছে ম্যান অব দ্য ম্যাচ ছিল।’ নবাগত ইয়াসিরের ইনিংস নিয়েও অনেক কথা বলেছিলেন। অথচ ম্যাচসেরা সাকিবকে নিয়ে একটি বাক্যও বলেননি। টিম ম্যানেজমেন্ট সূত্রের খবর, ওই ঘটনায় প্রচণ্ড আহত হয়েছেন সাকিব। প্রশ্ন তুলেছেন পেশাদারিত্বের জায়গা থেকেও অধিনায়কের আরও উদার হওয়া উচিত ছিল।

দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে শেষ যে দুটি ওয়ানডে ম্যাচ জিতেছে বাংলাদেশ (বিশ্বকাপে এবং এই সিরিজে) তার দুটোতেই ম্যাচসেরা ছিলেন সাকিব। যাতে করে অন্তত এটা প্রমাণিত হয় যে, প্রোটিয়াদের বিপক্ষে সাকিবের পারফরম্যান্স কতটা উজ্জ্বল। এটা সাকিব নিজেও জানেন এবং বিশ্বাস করেন। অন্তত সেই কারণে পরিবারের অনেকে অসুস্থ হলেও তিনি দেশে না ফিরে আজকের ম্যাচ খেলতে নামছেন।

তিনি এটাও জানতেন, আজকের ম্যাচটি না খেললে হয়তো দলের মধ্যেই কথা উঠত- সিরিজ জয়ের এমন সুযোগের ম্যাচে সাকিব দলকে বিপদে ফেলে চলে গেছেন। কেউ কেউ হয়তো এমনও বলতেন- আমি তো আগেই বলেছিলাম! ইদানীং বাংলাদেশ দল নিয়ে ‘আগেই জানতাম বা আগেই তো বলেছিলাম’ বলার লোকের সংখ্যা বাড়ছে। তাই সাকিব চাননি দলের মধ্যে এসব কানাঘুষা চলুক।

তা ছাড়া অনেক জলঘোলা করে এই সফরে আসা তার। সেখানে সিরিজ জয়ের সুযোগটি তিনিও হাতছাড়া করতে চান না। প্রায় এক যুগের বেশি সময় ধরে দক্ষিণ আফ্রিকা সফর করছেন সাকিব। চার বছর পর হয়তো ফের এমন কোনো দ্বিপক্ষীয় সিরিজ খেলার সুযোগ আসবে বাংলাদেশের দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে। তখন সাকিব-তামিম-মুশফিককদের ক’জন থাকবেন, সেটাও অনিশ্চিত। সব মিলিয়ে এখনই সময় যুদ্ধ জেতার, তাই আজকের ম্যাচে সাকিব তার পেশাদারিত্ব এবং দক্ষতার সবটুকু দিয়ে খেলতে নামবেন নিশ্চিত।

আগের ম্যাচে রাবাদার বলে ফ্লিক করতে গিয়ে শূন্য রানে আউট হয়েছিলেন। এই রাবাদার সঙ্গে তার হিসাবটাও তো বাকি আছে কিছু। পরিবারের বেশকিছু সদস্যকে হাসপাতালে রেখে সাকিব আজ দেশের জার্সি গায়ে জড়িয়ে যে লক্ষ্যে মাঠে নামছেন তার এই লড়াইটিকে অন্তত সম্মান করুক সবাই। অসুস্থ ছেলের মুখচ্ছবি ঢেকে যিনি কিনা আজ রাবাদাদের মুখোমুখি হচ্ছেন, সেই ত্যাগটুকুকে অন্তত শ্রদ্ধা করি সবাই।

তাতে কি খুব বেশি পিছিয়ে যাবে কেউ সাকিবের চেয়ে? যদি সাকিবের জন্য দুটো প্রশংসাস্তুতি কেউ বলে, সেটা কি পেশাদারিত্বের বাইরে অসৌজন্যতা হবে? বোধহয় না। কেননা আজকের ম্যাচটি খেলব- এ কথা বলেই যে কোটি ভক্তের চোখে ‘ম্যান অব দ্য ম্যাচ’ হয়ে গেছেন সাকিব।

আরও পড়ুন


  • সর্বশেষ খবর
  • সর্বাধিক পঠিত