ভারতীয় সিনেমা আমদানির দাবিতে যা বললেন তথ্যমন্ত্রী

| আপডেট :  ১৩ মে ২০২২, ১২:৪৩  | প্রকাশিত :  ১৩ মে ২০২২, ১২:৪৩

কোটি টাকা ঋণ নিয়ে সিনেমা হল সংস্কার এবং নতুন সিনেমা হল নির্মাণ করলেও হলে চালানোর মতো সিনেমা না থাকায় লোকসানের শঙ্কার কথা জানিয়ে ভারতীয় সিনেমা আমদানির দাবি তুলেছেন প্রেক্ষাগৃহ মালিকরা; সংকট নিরসনের জন্য তাদের সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছেন তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ।

বৃহস্পতিবার (১২ মে) ঢাকায় তথ্য ও প্রকাশনা অধিদপ্তরে মন্ত্রীর সঙ্গে এক মতবিনিময় সভায় সারা দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে যোগ দেয়া শতাধিক সিনেমা হল মালিকরা এমন দাবি উত্থাপন করেন।

মন্ত্রী বলেছেন, সরকারি অনুদানে দেশে বাণিজ্যিক সিনেমার সংখ্যা বাড়ানো হয়েছে; পাশাপাশি সীমিত সময়ের জন্য ভারতীয় সিনেমাও আমদানি করা যেতে পারে।

বক্তৃতায় ড. হাছান মাহমুদ বলেন, সহজ শর্তে এই ঋণ সুবিধা নিয়ে প্রতি জেলা ও উপজেলায় সিনেপ্লেক্স ও হল নির্মাণের মধ্য দিয়ে আগামী দেড়-দুই বছরের মধ্যে সারা দেশে কয়েকশত সিনেমা হল চালু হওয়া সম্ভব। আমরা চাই আমাদের সিনেমা শিল্প বিশ্ব অঙ্গণে জায়গা করে নেবে।

হল মালিক সমিতি প্রধান উপদেষ্টা সুদীপ্ত কুমার দাস সভায় বলেন, হল মালিকরা ঋণ নিতে খুবই আগ্রহী। কিন্তু ঋণ নিয়ে টাকাটা সুদসহ ফেরত দিতে গেলে ছবি চালিয়েই ফেরত দিতে হবে। এখন দেশে যে ছবিগুলো হচ্ছে, সেই ছবি চালিয়ে ঋণের টাকা ফেরত দেয়ার সম্ভবনা নাই। সেই কারণেই হল মালিকরা দোদুল্যমান অবস্থায় আছে।

সেই সংকট নিরসনে সীমিত সময়ের জন্য ভারতীয় সিনেমা দেশের সিনেমা হলে মুক্তির অনুমতি দেয়ার দাবি তুলেছেন সুদীপ্ত।

কয়েক বছর ধরেই এ দাবি জানিয়ে এসেছেন তিনি। তার ভাষ্যে, সিনেমা হলে দর্শক ফিরলে হল মালিকদের ঋণ পরিশোধে কোনো জটিলতা হবে না; অন্যরাও সিনেমায় হল নির্মাণে আগ্রহী হবেন।

মতবিনিময় সভায় সুদীপ্ত কুমার দাস ছাড়াও সাথী সিনেমা হলের কর্ণধার মিয়া আলাউদ্দিন, অভিসার সিনেমা হলের মালিক সফর আলী ভুঁইয়াস, প্রযোজক ও প্রদর্শক কামাল মোহাম্মদ কিবরিয়া লিপু, ঝুমুর সিনেমা হলের কর্ণধার শরফুদ্দিন এলাহী সম্রাট, পান্না সিনেমা হলের কর্ণধার আজগর হোসেন, উলকা সিনেমা হলের রফিকউদ্দিন, নি নিউ গুলশানের কর্ণধার আমির হামজাসহ দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের সিনেমা হল মালিকগণ সিনেমা হলের নির্মাণ বাড়ানোর পাশাপাশি ভারতীয় সিনেমা আমদানির দাবি তোলেন।

দাবির বিষয়ে সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে হাছান মাহমুদ বলছেন, চলচ্চিত্র তথা সিনেমা হলের বিকাশ সমাজকে বিপথগামিতা থেকে রক্ষায় সহায়ক। তরুণ সমাজকে মাদকাসক্তি ও জঙ্গিবাদ থেকে রক্ষা করার ক্ষেত্রেও সিনেমা শিল্প বড় ভূমিকা রাখতে পারে, উল্লেখ করেন তিনি।

ভারতীয় সিনেমা আমদানিতেও কোনো অসুবিধা নেই বলে জানান তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী; তবে তার আগে চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্ট সব সংগঠনকে ঐকমত্যে পৌঁছানোর তাগিদ দেন তিনি।

“উপমহাদেশের সিনেমা আমদানি নিয়ে প্রদর্শক ও পরিচালকরা একমত হয়েছে। শিল্পী সমিতি এখনো একমত নয়। সবার সঙ্গে কথা বলে ১০-১২টার মতো উপমহাদেশের সিনেমা মুক্তি পেলে সিনেমা হলগুলোরও ভালো হবে।”

তথ্যমন্ত্রী বলেন, ভারত-পাকিস্তানের যুদ্ধের মধ্যেও পাকিস্তানে নিয়মিত ভারতের সিনেমা মুক্তি পায়। আগে মুক্তিতে বাধা ছিল, পরে সেই বাধা তুলে দেয়া হয়েছে। এখন তাদের (পাকিস্তানের) সিনেমার অবস্থা আগের তুলনায় অনেক ভালো।

ঋণ পরিশোধ নিয়ে হল মালিকদের শঙ্কার মধ্যে তথ্যমন্ত্রী বলছেন, সিনেমা হলের সঙ্গে বাণিজ্যিক ভবন নির্মাণ করে দোকান ভাড়া দিয়ে প্রাপ্ত আয় থেকেও চাইলে হল মালিকরা ঋণ পরিশোধের উদ্যোগী হতে পারেন।

তার ভাষ্য, সিনেপ্লেক্সের সঙ্গে ফুড কোর্ট ও মার্কেটসহ অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা থাকলে দর্শকরা যেমন সিনেমা দেখতে আগ্রহী হবেন তেমনি শুধু হলের ওপর নির্ভর না করে সেখান থেকে আয় থেকেও ঋণ পরিশোধ করতে পারবেন হল মালিকরা।

প্রদর্শক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আওলাদ হোসেন উজ্জল জানান, ইতোমধ্যে নতুন সিনেমা হল নির্মাণ ও হল সংস্কারের জন্য ৫৩ হল মালিক আবেদন ব্যাংকে জমা দেয়া হয়েছে। এছাড়া আরও শতাধিক আবেদন জমা পড়েছে সেগুলো যাচাইবাছাই করা হচ্ছে।

তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. মকবুল হোসেনের সভাপতিত্বে অতিরিক্ত সচিব ফারুক আহমেদ, চলচ্চিত্র প্রদর্শক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আওলাদ হোসেন, চলচ্চিত্র উন্নয়ন কর্পোরেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক নুজহাত ইয়াসমিন, চলচ্চিত্র সেন্সর বোর্ডের ভাইস চেয়ারম্যান মুহাম্মদ সাইফুল্লাহ, বাংলাদেশ ব্যাংক ও সোনালী, রূপালী, অগ্রণী, জনতা, ইউসিবি, মেঘনা, বিডিবিএল ও ইউনিয়ন ব্যাংকের প্রতিনিধিবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

মতবিনিময়ে হল মালিকদের অনেকে ঋণের মেয়াদ এক বছরের গ্রেস পিরিয়ডসহ ৮ বছর থেকে আরও দুই বছর বাড়ানোর দাবি করেছেন; সেই সঙ্গে সুদের হার শহরের ৫% ও গ্রামের সাড়ে ৪% থেকে কমিয়ে আনারও দাবি করেছেন অনেকে।

বিষয়গুলোও গুরুত্বের সঙ্গে দেখার আশ্বাস দিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের মহাব্যবস্থাপক মাকসুদা বেগম।

উল্লেখ্য, প্রেক্ষাগৃহগুলো আধুনিক করার মাধ্যমে দেশের চলচ্চিত্রের হারানো অতীত ফিরিয়ে আনার লক্ষ্যে গত বছরের ১৪ ফেব্রুয়ারি হল মালিকদের স্বল্প সুদে ঋণ দিতে এক হাজার কোটি টাকার একটি পুনঃঅর্থায়ন তহবিল গঠন করে বাংলাদেশ ব্যাংক। যার আওতায় সিনেমা হল নির্মাণে সর্বোচ্চ ১০ কোটি টাকা ঋণ পাচ্ছেন হল মালিকরা। এ তহবিল থেকে স্বল্প সুদে ঋণ নিতে আবেদনের সময় নির্ধারিত ছিল গত ৩১ মার্চ; সেই সময়সীমা আগামী ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে।

আরও পড়ুন


  • সর্বশেষ খবর
  • সর্বাধিক পঠিত