একজন ক্রিকেটারের যেসব ধাপ পেরিয়ে জাতীয় দলে আসতে হয়
বিশ্বজুড়ে বর্তমান সময়ে অন্যতম জনপ্রিয় খেলা ক্রিকেট। দক্ষিণ এশিয়ার মানুষের কাছে প্রধান খেলায় রূপ নিয়েছে ইংরেজদের এই খেলাটি। নব্বইয়ের দশক থেকে বাংলাদেশেও জনপ্রিয় হয়ে উঠে এই খেলা। ধীরে ধীরে এই দেশের মানুষের প্রাণের খেলায় পরিণত হয়েছে ক্রিকেট। তাইতো অধিকাংশ পরিবারের চাওয়া তাদের সন্তানরা যেনো একজন ভালো ক্রিকেটার হয়।
বাংলাদেশের ক্রিকেট নিয়ন্ত্রণের সংস্থার নাম বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড বা বিসিবি। সংস্থাটির সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ না হলেও অন্তত ১২০জন ক্রিকেটার সরাসরি যুক্ত। যাদের নিয়ে দল গঠনসহ বিভিন্ন পর্যায়ের প্রতিযোগিতার জন্য ডাকে বিবিসি। মূল দলের কোনো ক্রিকেটার ইনজুরি কিংবা বাদ পড়লেই সবার আগে এই ১২০ জন ক্রিকেটারের নাম আসে সামনে।
দেশের শত শত ক্রিকেটারের মধ্যে এই ১২০ জনে জায়গা করে নিতে একেকজন ক্রিকেটার দীর্ঘ একটা পথ পাড়ি দিয়েছেন।
দেশের জনপ্রিয় একজন ক্রিকেট বিশ্লেষক সৈয়দ আবিদ হুসেইন সামি। একই সঙ্গে তিনি এখনো বাংলাদেশের ঘরোয়া ক্রিকেটের নথিভুক্ত ক্রিকেটার। প্রথম ডিভিশন লিগে খেলেন নিয়মিত। জাতীয় দল পর্যন্ত আসার যে রাস্তা সে অনুযায়ী এই পথকে দুই ভাগে ভাগ করেছেন সামি।
১) বয়সভিত্তিক
২) ঢাকা লিগ ভিত্তিক
দেশের গণমাধ্যমকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে সামি বলেন, ‘একটা হচ্ছে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড দ্বারা পরিচালিত। এই ঘরানায় ক্রিকেটাররা নির্দিষ্ট প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ ক্রীড়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে- বিকেএসপি থেকে বয়সভিত্তিক দলে আসেন।’
অনূর্ধ্ব ১৫, ১৭ ও ১৯ এর হয়ে সারা দেশব্যাপী ঢাকা মেট্রো এবং সাতটা বিভাগ ও বিকেএসপিতে ট্রায়াল হয়। ঢাকা মেট্রোর সঙ্গে বাকি বিভাগগুলো একটি করে এবং বিকেএসপি একটি করে দল গঠন করে। এই দলগুলো নিয়ে ন্যাশনাল চ্যাম্পিয়নশিপ হয়।
অনূর্ধ্ব ১৫ দল গঠন করে সেখানে যারা ভালো করে তাদের নিয়ে অনূর্ধ্ব ১৭ দল গঠন করা হয়, সেখান থেকে অনূর্ধ্ব ১৮ পর্যায়ের দল নিয়ে ওয়াইসিএল বা ইয়ুথ ক্রিকেট লিগ খেলা হয়। এই লিগ থেকে নির্বাচিত দলটি অনূর্ধ্ব ১৯ ক্রিকেট দলে সুযোগ পায়।
এই পদ্ধতির মাধ্যমে সাকিব আল হাসান, মুশফিকুর রহীম, মেহেদী হাসান মিরাজদের মতো ক্রিকেটার উঠে এসেছেন।
বাংলাদেশের এই পর্যায়ের ক্রিকেটারদের তত্ত্বাবধায়ন করতেন নাজমুল আবেদীন ফাহিম, যিনি একসময় গেম ডেভেলপমেন্টের ন্যাশনাল ম্যানেজার ছিলেন, তার অধীনে তামিম ইকবাল, সাকিব আল হাসানরা জাতীয় দলের জন্য তৈরি হয়েছেন। তিনি অনূর্ধ্ব ১৫, ১৭ দলগুলো নিয়ে বিদেশে সফরও করেছেন।
সেখানেই তিনি একেকজন ক্রিকেটারের মানসিক শক্তি, দক্ষতার জায়গা, ভবিষ্যৎ রূপরেখা সম্পর্কে ধারণা নিয়েছেন। এই পাইপলাইনই বাংলাদেশের জাতীয় দলে প্রচলিত ও জনপ্রিয়।
প্রক্রিয়া ১ : বয়সভিত্তিক বাছাই
বয়সভিত্তিক বাছাই প্রকিয়াকে সনাতন বলছেন ক্রিকেট বিশ্লেষক সৈয়দ আবিদ হুসেইন সামি। তিনি বলেন, ‘যারা এখানে কোচ থাকেন তারা অনেক সময়ই এক বল দুই বল দেখেই একটা মূল্যায়ন দিয়ে দেন। যেখানে অনেক ক্রিকেটারের অঙ্কুরেই বিনাশ ঘটার সম্ভাবনা থাকে।’
এখানে কিছু সমস্যা থাকে বলে মনে করেন তিনি। সামি বলেন, ‘আর একবার একজন ক্রিকেটার সেখানে বাদ পড়লে সে কিন্তু সেবার অনূর্ধ্ব ১৪ তে সুযোগ পেল না, এই ক্রিকেটার পরের বার বয়সের জন্য বাদ পড়ে যাবেন। আবার সেই ক্রিকেটার চর্চার অভাবে বা নির্দেশনার অভাবে অনূর্ধ্ব ১৬ পর্যন্তও যেতে পারে না।’
এটাকে একটা সামগ্রিক ব্যবস্থা বলেই মনে করেন বিশ্লেষকরা। তাই তিনি যুক্ত করেন, ‘ভালো ক্রিকেটার পেতে ভালো কোচ প্রয়োজন।’
সামি ক্রিকেট বিশ্লেষনের পাশাপাশি দীর্ঘ দিন ধরে ক্রিকেট খেলে আসছেন। তিনি তার ক্রিকেট খেলার অভিজ্ঞতা থেকে লেন, ‘এখন অনেকেই নেটে হয়তো যথাযথ বেসিক মেনে খেলেন না, কিন্তু ম্যাচে তার প্রভাব থাকে।’
তবে এতো সীমাবদ্ধতা মাঝেও বাংলাদেশের ক্রিকেটার সিলেকশনের যে প্রক্রিয়া তা এখনও পর্যন্ত মানসম্মত বলে মনে করেন তিনি।
এই জায়গাটায় তিনি পেশাদারিত্ব নিয়ে আসার কথা বলেছেন আলাদা করে। সামি বলেন, ‘অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপে বাংলাদেশ চ্যাম্পিয়ন হয়েছে, এই পর্যায় পর্যন্ত আসার আগে কোনো বেতন আসে না। অথবা একটা নির্দিষ্ট মৌসুমে হচ্ছে, পুরো বছরজুড়েই হওয়া দরকার।’
প্রক্রিয়া ২ : ঢাকা লিগ ভিত্তিক ক্রিকেট
ঢাকা লিগ ভিত্তিক ক্রিকেট প্রক্রিয়া নিয়ে সামি বলেন, আরও একটা প্রক্রিয়া আছে সেটা হচ্ছে ঢাকার ক্রিকেট লিগ। এখানে কয়েকটা ডিভিশনে ক্রিকেটটা খেলা হয়। এই ডিভিশনের ক্রিকেটেও ক্রিকেটারদের নিজেদের প্রমাণ করার উপায় থাকে এবং এটা অনেক ক্রিকেটারের জন্য আয়ের উৎস।
বাংলাদেশে জনপ্রিয় টি-টোয়েন্টি লিগ বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগে অনেক ক্রিকেটার সাধারণ মানুষ বা সমর্থকদের চোখে নজর কাড়লেও তারা অনেক আগে থেকেই বাংলাদেশের ক্রিকেটের দৃশ্যপটে থাকেন।
সেই খেয়াল রাখেন খালেদ মাহমুদ সুজন, মোহাম্মদ সালাউদ্দিনের মতো কোচরা। খালেদ মাহমুদ সুজন বাংলাদেশের জাতীয় পুরুষ দলের টিম ডিরেক্টরের ভূমিকা পালন করেন। একই সঙ্গে তিনি আবাহনী ও বিপিএল দলগুলোতেও কোচের ভূমিকায় থাকেন।
দেশের বিভিন্ন পর্যায়ের তরুণ ক্রিকেটারদের তদারকি করেন তিনি।
যেমন আফগানিস্তানের বিপক্ষে ব্যাট হাতে ওপেন করা মুনিম শাহরিয়ার খালেদ মাহমুদ সুজনের সুনজরে আসার পর বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগে ভালো পারফর্ম করে জাতীয় দলেও সুযোগ পেয়েছেন।
এমন করে শেখ মেহেদী হাসান বাংলাদেশের টি-টোয়েন্টি দলের এই নিয়মিত ক্রিকেটার ছিলেন মোহাম্মদ সালাউদ্দিনের ছাত্র। কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের হয়ে খেলেন শেখ মেহেদী কোচ সালাউদ্দিনের অধীনে।
তাকেই বলা হয়, স্বাভাবিক সিস্টেমের বাইরের ক্রিকেটার। সূত্র : বিসিবি
আরও পড়ুন
- সর্বশেষ খবর
- সর্বাধিক পঠিত