এমসি কলেজের অধ্যক্ষ-হোস্টেল সুপারের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নিতে রায়
সিলেটের এমসি কলেজ ছাত্রাবাসে তরুণীকে গণধর্ষণের ঘটনায় কলেজের অধ্যক্ষ ও হোস্টেল সুপারের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। সেই সাথে এই পদক্ষেপের অংশ হিসেবে এদেরকে সাময়িক বরখাস্ত করতে বলা হয়েছে। ওই ঘটনার প্রেক্ষাপটে জারি করা রুল আংশিক মঞ্জুর করে বুধবার বিচারপতি মো. মজিবুর রহমান মিয়া ও বিচারপতি কামরুল হোসেন মোল্লার ভার্চুয়াল হাইকোর্ট বেঞ্চ এই রায় দেন। রায়ে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ও রেজিস্ট্রারের প্রতি নির্দেশ দেওয়া হয়।
আদালত রায়ের পর্যবেক্ষণে বলেন, ‘ন্যক্কারজনক ওই ঘটনায় ভিকটিমের রাইট টু লাইফ এবং রাইট টু পার্সোনাল লিবার্টি পুরোপুরি লংঘিত হয়েছে। কারণ, কলেজ ক্যাম্পাসে ভিকটিমের নিরাপত্তা পাবার অধিকার ছিল। আর যেহেতু ঘটনার সময় হোস্টেল সুপার ছুটিতে ছিলেন না সেহেতু সে এবং কলেজের অধ্যক্ষ দায় এড়াতে পারেন না। ‘
আদালতে আজ রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল নওরোজ মো. রাসেল চৌধুরী। আর অপরদিকে ছিলেন গণধর্ষণের ঘটনার সংবাদটি হাইকোর্টের নজরে আনা আইনজীবী মোহাম্মদ মিসবাহ উদ্দিন।
গত বছরের ২৫ সেপ্টেম্বর রাতে সিলেট নগরীর টিলাগড় এলাকা থেকে স্বামীসহ এক তরুণীকে তুলে নিয়ে এমসি কলেজ ছাত্রাবাসে ধর্ষণের অভিযোগ ওঠে ছাত্রলীগের একদল কর্মীর বিরুদ্ধে। ওই তরুণীর স্বামী এ ঘটনায় ছয়জনের নাম উল্লেখ করে মোট নয়জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন। করোনা পরিস্থিতির মধ্যে বন্ধ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছাত্রাবাস দখল করে জঘন্য এ ঘটনায় দেশে ও বিদেশে প্রতিবাদের ঝড় ওঠে। পরে একে একে আসামিরা গ্রেপ্তার হন।
গণধর্ষণের ওই ঘটনার পর বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবর গত সেপ্টেম্বরে আদালতের নজরে আনেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মোহাম্মদ মিসবাহ উদ্দিন। এরপর এবিষয়ে শুনানি নিয়ে গত ২৯ সেপ্টেম্বর বিচারপতি মো. মজিবুর রহমান মিয়া ও বিচারপতি মহি উদ্দিন শামীমের হাইকোর্ট বেঞ্চ স্বতঃপ্রণোদিত রুলসহ আদেশ দেন। রুলে ধর্ষণের শিকার তরুণীকে রক্ষায় অবহেলা ও অছাত্রদের কলেজে অবস্থানে নীরবতায় অধ্যক্ষ ও হোস্টেল সুপারের বিরুদ্ধে কেন আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে না, তা জানতে চাওয়া হয়। শিক্ষাসচিব, স্বরাষ্ট্রসচিব, আইনসচিব, এমসি কলেজের অধ্যক্ষ, হোস্টেল সুপারসহ বিবাদীদের ওই রুলের জবাব দিতে বলা হয়। এছাড়া এমসি কলেজ ছাত্রাবাসে তরুণী ধর্ষণের ঘটনায় কলেজ কর্তৃপক্ষের অবহেলা নিরূপণে চার সদস্যের কমিটি গঠন করে দিয়ে তা অনুসন্ধান করতে নির্দেশ দেওয়া হয়। কমিটিকে ১৫ কার্যদিবসের মধ্যে হাইকোর্ট বিভাগের রেজিস্ট্রারের মাধ্যমে অনুসন্ধান প্রতিবেদন দিতে বলা হয়। সিলেটের জেলা ও দায়রা জজ মো. বজলুর রহমান, অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ মমিনুন নেসা, চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো. আবুল কাশেম ও সিলেটের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) শারমিন সুলতানার সমন্বয়ে গঠিত কমিটি গত ২০ অক্টোবর হাইকোর্টে প্রতিবেদন জমা দেয়।
সেই প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘ঘটনার সময় কলেজ বন্ধ থাকার পরও কয়েকজন ছাত্র ও প্রাক্তন ছাত্র হোস্টেলে অবস্থান করেন। একজন প্রাক্তন ছাত্র ৫ নম্বর ব্লকের হোস্টেল সুপারের বাসভবন দখল করে থাকেন। প্রাক্তন ওই ছাত্ররা অবৈধভাবে কলেজে হোস্টেলের সিট দখল করে থাকার কারণে এবং প্রাক্তন ছাত্র সাইফুর রহমান কর্তৃক হোস্টেল সুপারের বাসভবন জোর করে দখল করে থাকার কারণেই তারা কলেজের হোস্টেল এলাকায় গণধর্ষণের মতো জঘন্য অপরাধ করার সাহস পান। ফলে ঘটনার তারিখে হোস্টেল ক্যাম্পাসে ওই ঘটনার নেপথ্যে মূলত হোস্টেল সুপারদের তদারকির ঘাটতি ও দায়িত্বে অবহেলাই দায়ী। তবে প্রতিষ্ঠান প্রধান হিসেবে কলেজের অধ্যক্ষের ওপরও এ দায়ভার চলে আসে।’
হাইকোর্টে দাখিল করা প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, ‘সাক্ষী, পরীক্ষা ও সামগ্রিক বক্তব্য পর্যালোচনা করে কমিটির সর্বসম্মত মতামত হলো, গত ২৫ সেপ্টেম্বর রাতে সিলেটের এমসি কলেজের ছাত্রাবাসে গণধর্ষণের পেছনে মূলত হোস্টেলের বর্তমান তত্ত্বাবধায়কেরা, হোস্টেলের মূল গেটের ডে গার্ড, ৫ নম্বর ব্লকের ডে গার্ড ও নাইট গার্ড (নৈশপ্রহরী) এবং ৭ নম্বর ব্লকের ডে গার্ড ও নাইট গার্ডের দায়িত্বে অবহেলা ছিল।’
আরও পড়ুন
- সর্বশেষ খবর
- সর্বাধিক পঠিত