ডিএনএ পরীক্ষার রেজাল্টা পাওয়া আগেই যা জানালেন মরিয়ম
মরিয়ম বলেছেন, সন্তান কখনো মাকে চিনতে ভুলকরে না। মায়ের ছায়া দেখে সন্তানরা বলে দিতে পারে মায়ের কথা। এমনটাই বলছিলেন মা হারা মরিয়ম।
শনিবার (২৪ সেপ্টেম্বর) তার নিজের ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে আবারও নিশ্চিতভাবে প্রকাশ করেন যে, আমি যে লাশ পেয়েছি তা আমার মা’য়ের লাশ,আমার মা’য়ের ,আমার মা’য়ের!
মরিয়মের স্ট্যাটাসটি মুক্তকণ্ঠের পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলোঃ
মাকে চিনতে সন্তান কখনো ভুল করবে নাহ।মায়ের ছায়া দেখেও আমি আমার মা’কে চিনতে পারবো।
আমি যে লাশ পেয়েছি তা আমার মা’য়ের লাশ,আমার মা’য়ের ,আমার মা’য়ের!
দয়াকরে আপনারা প্রমান করুন সে আমার মা নয়,আমার থেকে খুশি পৃথিবীর আর কেউ থাকবে নাহ জানেন!
পৃথিবীর কোন মানুষের এমন মৃত্যু হতে পারেনা!আমার মায়ের কি অন্যায় ছিলো!আমার মায়ের অপরাধ কি ছিলো!আমার মা কি করেছিলো!
মা যখন অনেক ছোট আমার নানী মারা যায়, ভাইবোনদের মানুষ করতে করতে বড় হলো,এরপর বিয়ে,আমাদের মানুষ করতে যেয়ে নিজের সব ভালো লাগা, চাওয়া পাওয়া বিসর্জন দিলো!আর এখন?
যারা আমার ময়ের বস্তাবন্দি লাশটা খুলেছিলো,যারা প্রত্যক্ষদর্শী ছিলো,যারা আঞ্চলিক সাংবাদিক ছিলো সবার কাছে অনেক ছবি আছে,অনেক ভিডিও আছে।সব দেখেছি আমি!আমার মায়ের নাক থেকে মুখ থেকে পোকা বের হতে দেখেছি আমি! পঁচে গলে যাওয়া শরীর দেখেছি আমি আমার মা’য়ের!আমার মায়ের যন্ত্রণাময় চেহারার ছবি দেখে আসছি আমি!আমার অভাগী মা’কে দেখে আসছি আমি!
আমার মতো এত সাহস আর শক্তি যেন পৃথিবীর কারো নাহ হয়!পৃথিবীতে সাহসী হওয়া ভীষণ কঠিন,ভীষন যন্ত্রণার! এই যন্ত্রণা আর সহ্য হয়না আমার!
মা তুমি ঘুমাও !চির শান্তিতে ঘুমাও! আমিও একদিন তোমার কাছেই আসবো!আমি অপেক্ষা করছি শুধুই তোমার কাছে যাওয়ার!
এর আগে, ময়মনসিংহের ফুলপুর উপজেলার বওলা গ্রামের ঝোপ থেকে উদ্ধার হওয়া বস্তাবন্দি লাশটি খুলনার দৌলতপুর থেকে ২৭ আগস্ট রাতে নিখোঁজ রহিমা বেগমের (৫২) বলে দাবি করেছেন তাঁর মেয়ে মরিয়ম মান্নান। গত বৃহস্পতিবার রাতে ফেসবুক স্ট্যাটাসে তিনি এ দাবি করেন। গতকাল শুক্রবার সকালে তিনি ‘মায়ের লাশ’ শনাক্তে ফুলপুর থানায় যান। সেখানে আলামত (কামিজ) দেখে কান্নাজড়িত কণ্ঠে মরিয়ম বলেন, ‘এ লাশটি আমার মায়ের।
তাঁর সঙ্গে থাকা পরিবারের সদস্যরাও তা-ই বলেছেন। পরে মরিয়ম ফুলপুর থানায় ডিএনএ পরীক্ষার আবেদন করেছেন।
ফুলপুর থানার ওসি আবদুল্লাহ আল মামুন জানান, তাঁরা গত ১০ সেপ্টেম্বর সকালে বওলা গ্রামের একটি কবরস্থানের ঝোপ থেকে অজ্ঞাতপরিচয় এক নারীর বস্তাবন্দি লাশ উদ্ধার করে। লাশটি গলিত থাকায় এটির পরিচয় শনাক্ত করা যায়নি। ময়নাতদন্ত শেষে ১২ সেপ্টেম্বর লাশটি ফুলপুরের একটি কবরস্থানে দাফন করা হয়। ডিএনএ পরীক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় আলামতও সংরক্ষণ করা হয়।
তিনি বলেন, ‘মরিয়মসহ কয়েকজন এসে আলামত দেখে লাশটি তাঁর মায়ের বলে দাবি করছেন। এটি নিশ্চিত হতে আদালতের মাধ্যমে ডিএনএ পরীক্ষা করতে হবে। রবিবার আদালতে বিষয়টি তোলা হবে। ’
ফুলপুর থানা সূত্র মতে, উদ্ধার হওয়া লাশের পোশাক ও আলামত সম্পর্কে মরিয়ম বৃহস্পতিবার রাতে ফুলপুর থানায় জানতে চান। পোশাক ও আলামতের কথা শুনে তিনি লাশটি তাঁর মায়ের বলে দাবি করেন। তবে উদ্ধার হওয়া লাশের বয়স ৩২ বছর হবে। আর মরিয়মের মায়ের বয়স ৫২ বছর বলেছে স্বজনরা। তা ছাড়া উদ্ধার করা লাশের পরনে গোলাপি রঙের সালোয়ার এবং সুতি ছাপা গোলাপি, কালো, বেগুনি ও কমলা রঙের কামিজ ছিল। গলায় পেঁচানো ছিল গোলাপি ওড়না।
গতকাল ঢাকা থেকে মরিয়ম, তাঁর দুই বোনসহ পরিবারের ছয় সদস্য এলে পুলিশের উপস্থিতিতে তাঁদের লাশের আলামত দেখান আলামত সংগ্রহে সহযোগিতাকারী ভ্যানচালক জামাল উদ্দিন। মরিয়ম মায়ের লম্বা চুলের বিবরণ শোনেন জামালের কাছ থেকে। তখন পরিবারের সবাই চিৎকার করে বলেন, এ লাশ আমাদের। তাঁরা জানান, লাশের সঙ্গে থাকা ওই ওড়না ও সালোয়ার মা রহিমার পরনে ছিল না। বাকি আলামত রহিমার। তাঁদের ধারণা, হত্যাকারীরা আলামত নষ্ট করেছে যাতে পরিচয় শনাক্ত না করা যায়।
মরিয়ম মান্নান জানান, তিনি ঢাকার তেজগাঁও কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞানের ছাত্রী। তাঁরা ছয় ভাই-বোন। বৃহস্পতিবার রাত পৌনে ১২টার দিকে মরিয়ম ফেসবুক পোস্টে লেখেন, ‘আমার মায়ের লাশ পেয়েছি এইমাত্র। ’ রাত ১২টার পর ফেসবুকে আরেক পোস্টে মরিয়ম লেখেন, ‘আর কারো কাছে আমি যাব না! কাউকে আর বলব না, আমার মা কোথায়! আমাকে একটু সহযোগিতা করুন! আমার মাকে একটু খুঁজে দেবেন! কাউকে আর বিরক্ত করব না! আমি আমার মাকে পেয়ে গেছি!’
গত ২৭ আগস্ট রাত ১০টার দিকে খুলনা নগরের দৌলতপুরের মহেশ্বরপাশা উত্তর বণিকপাড়ার বাসার উঠানের নলকূপে পানি আনতে যান রহিমা বেগম। এক ঘণ্টা পরও তিনি ঘরে না ফেরায় সন্তানরা খোঁজাখুঁজি শুরু করেন। তবে তাঁকে পাননি। নলকূপের পাশে মায়ের জুতা, ওড়না ও পানির পাত্র পড়ে ছিল। এ ঘটনায় রাতেই রহিমা বেগমের ছেলে দৌলতপুর থানায় একটি জিডি করেন। পরদিন তাঁর মেয়ে আদুরী আক্তার অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে দৌলতপুর থানায় অপহরণ মামলা করেন। বিষয়টি র্যাবকেও জানানো হয়। এ মামলায় রহিমা বেগমের দ্বিতীয় স্বামীসহ ছয়জনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। মায়ের সন্ধান চেয়ে খুলনা ও ঢাকায় মানববন্ধনের পাশাপাশি বিভিন্ন স্থানে দৌড়ঝাঁপ করে আসছেন সন্তানরা। মেয়ে মরিয়মের আকুতি ও কান্নার ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছিল।
১৪ সেপ্টেম্বর মামলাটি পিবিআইতে পাঠানোর আদেশ দেন আদালত। ১৭ সেপ্টেম্বর নথিপত্র বুঝে নেয় পিবিআই। তবে স্থানীয় থানা পুলিশের বিরুদ্ধে বরাবরই এই নিখোঁজের বিষয়টি যথেষ্ট গুরুত্ব না দেওয়ার অভিযোগ ছিল। নিখোঁজ নারীর স্বজনরা বলেছে, পুলিশ তদন্তের পরিবর্তে তাদের মা ও তাদের সম্পর্কে কুৎসিত অভিযোগ প্রচার করত। তাদের দাবি, তাদের সম্পত্তি নিয়ে প্রতিবেশীদের সঙ্গে বিরোধ ছিল। একাধিকজন ওই সম্পত্তি দখলে বা নামমাত্র মূল্যে কিনে নেওয়ার চেষ্টা করেছে। তাদের মধ্যেই এক বা একাধিক ব্যক্তি বা গোষ্ঠী এই নিখোঁজ ও হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে যুক্ত থাকতে পারে। তাদের সঙ্গেই পুলিশ যোগসাজশে কুৎসিত প্রচারণা চালায়।
আরও পড়ুন
- সর্বশেষ খবর
- সর্বাধিক পঠিত