সরকারি কর্মচারীদের বেতন বাড়বে ন্যূনতম এক হাজার টাকা
চলতি জুলাই মাস থেকে সরকারি কর্মচারীরা মূল বেতনের ৫ শতাংশ যে বাড়তি প্রণোদনা পাবেন তাতে দশম গ্রেড থেকে ২০তম গ্রেডের কর্মচারীদের বেতন বাড়ে মাত্র ৪১২ টাকা থেকে ৮০০ টাকা। কিন্তু সম্প্রতিক সময়ের মূল্যস্ফীতির বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে ন্যূনতম এক হাজার টাকা প্রণোদনা দেওয়ার জন্য অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ সম্প্রতি একটি প্রস্তাব দিয়েছে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে।
প্রস্তাবে আরও বলা হয়েছে, শুধু চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জন্য নয়, পরের অর্থবছরগুলোতেও এ প্রণোদনা অব্যাহত থাকবে। সরকারি কর্মচারীদের পাশাপাশি রাষ্ট্রমালিকানাধীন ব্যাংক, স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান ও এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারীরা এ প্রণোদনা পাবেন। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় অনুমোদন দিলেই এ বিষয়ে নতুন প্রজ্ঞাপন জারি করা হবে বলে অর্থ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে।
সরকারি কর্মচারীরা জাতীয় বেতন কাঠামো ২০১৫ অনুযায়ী বেতন-ভাতা পান, যে কাঠামো কার্যকর রয়েছে ২০১৫ সালের ১ জুলাই থেকে। সরকারি চাকরিতে ২০টি ধাপ (গ্রেড) রয়েছে। প্রথম ধাপে বেতন-ভাতা পান সচিবেরা। তাঁদের মূল বেতন নির্ধারিত ৭৮ হাজার টাকা। আর শেষ অর্থাৎ ২০তম ধাপের মূল বেতন আট হাজার ২৫০ টাকা।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত ২৫ জুন জাতীয় সংসদে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটের ওপর বক্তব্য দেওয়ার সময় সরকারি কর্মচারীদের জন্য ৫ শতাংশ হারে প্রণোদনা দেওয়ার কথা জানান। প্রধানমন্ত্রী ওই দিন বলেন, ‘সরকারি কর্মচারী যাঁরা আছেন, তাঁদের বিশেষ বেতন হিসেবে মূল বেতনের ৫ শতাংশ আপৎকালীন সময়ে দেওয়ার বিষয়টি বিবেচনা করার জন্য অর্থমন্ত্রীকে অনুরোধ জানাচ্ছি।’
প্রধানমন্ত্রী ঘোষণা দেওয়ায় ৫ শতাংশ বাড়তি প্রণোদনা হিসেবে সরকারি কর্মচারীরা বেতনের সঙ্গে মাসে মাসে এ অর্থ পাবেন। অর্থ বিভাগের চেষ্টা রয়েছে জুলাই মাস শেষে যে বেতন-ভাতা পাবেন সরকারি কর্মচারীরা, তার সঙ্গেই বাড়তি প্রণোদনার অংশ দেওয়ার। প্রণোদনার বাইরে বিদ্যমান বেতন কাঠামো অনুযায়ী ৫ শতাংশ বার্ষিক বেতন বৃদ্ধি (ইনক্রিমেন্ট) হয়ে আসছে অবশ্য ২০১৬ সালের ১ জুলাই থেকেই।
প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য অনুযায়ী মূল বেতনকে ভিত্তি ধরে হিসাব করে দেখা যায় অনেকের প্রণোদনাই উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বাড়ে না। প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণাকে হুবহু অনুসরণ করলে শুরুর মূল বেতন অনুযায়ী দশম গ্রেডে ৮০০ টাকা, একাদশ ধাপে ৬২৫ টাকা, দ্বাদশ ধাপে ৫৬৫, ত্রয়োদশ ধাপে ৫৫০, চতুর্দশ ধাপে ৫১০, পঞ্চদশ ধাপে ৪৮৫, ষষ্ঠদশ ধাপে ৪৬৫, সপ্তদশ ধাপে ৪৫০, অষ্টাদশ ধাপে ৪৪০, ১৯তম ধাপে ৪২৫ টাকা এবং শেষ, অর্থাৎ ২০তম ধাপে ৪১২ টাকা ৫০ পয়সা প্রণোদনা হয়।
অর্থ বিভাগ প্রণোদনার কম পরিমাণের বিষয়টিকে বিবেচনায় নিয়েই প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে প্রস্তাব দিয়েছে ৫ শতাংশ প্রণোদনা ঠিক থাকবে, তবে কারও প্রণোদনাই যেন এক হাজার টাকার কম না হয়। দশম থেকে ২০তম ধাপের কর্মচারীদের কথা মাথায় রেখে এমন প্রস্তাবনা দেওয়া হয়েছে বলে জানান অর্থ বিভাগের একজন শীর্ষ পর্যায়ের কর্মকর্তা।
প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা অনুযায়ী প্রথম ধাপের সরকারি কর্মচারীর জন্য ৭৮ হাজার টাকার ৫ শতাংশ হিসেবে বাড়তি প্রণোদনা যোগ হবে তিন হাজার ৯০০ টাকা। দ্বিতীয় ধাপের মূল বেতন শুরু হয় ৬৬ হাজার টাকা দিয়ে। এ ধাপে চাকরি করতে করতে প্রতিবছর ৫ শতাংশ বার্ষিক বেতন বৃদ্ধির শেষ মূল বেতন দাঁড়ায় ৭৬ হাজার ৪৯০ টাকা। শুরুর মূল বেতনকে ভিত্তি করলে প্রণোদনা পাওয়া যাবে তিন হাজার ৩০০ টাকা। আর শেষ মূল বেতনকে ভিত্তি ধরলে প্রণোদনা যোগ হবে তিন হাজার ৮২৫ টাকা।
এ ছাড়া তৃতীয় ধাপের শুরুর মূল বেতন ৫৬ হাজার ৫০০ টাকা অনুযায়ী প্রণোদনা পাওয়া যাবে দুই হাজার ৮২৫ টাকা। ঠিক এভাবে শুরুর মূল বেতন ধরে হিসাব করে দেখা যায়, চতুর্থ ধাপে দুই হাজার ৫০০ টাকা, পঞ্চম ধাপে দুই হাজার ১৫০, ষষ্ঠ ধাপে এক হাজার ৭৭৫, সপ্তম ধাপে এক হাজার ৪৫০, অষ্টম ধাপে এক হাজার ১৫০, নবম ধাপে এক হাজার ১০০ টাকা বাড়বে।
আরও পড়ুন
- সর্বশেষ খবর
- সর্বাধিক পঠিত