চিহ্নিত রাজাকারের সন্তানদের সরকারী চাকরিতে নিষিদ্ধের প্রস্তাব
বীর মুক্তিযোদ্ধাদের গার্ড অব অনার দেওয়ার ক্ষেত্রে নারী ইউএনওদের বিকল্প খুঁজতে বলেছে সংসদীয় কমিটি। কমিটির বৈঠকে মহান মুক্তিযুদ্ধে বিরোধীতাকারী চিহ্নিত রাজাকারের সন্তানদের সরকারী চাকরিতে নিষিদ্ধের প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা শেষে মন্ত্রণালয়কে ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে। এছাড়া চট্টগ্রাম সার্কিট হাউজে জিয়া শিশুপার্কের স্থানে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণের সুপারিশ করা হয়েছে।
রবিবার জাতীয় সংসদ ভবনে অনুষ্ঠিত মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে এই সুপারিশ করা হয়েছে। কমিটির সভাপতি শাহাজান খানের সভাপতিত্বে বৈঠকে কমিটির সদস্য মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক, রাজি উদ্দিন আহমেদ, মেজর (অব.) রফিকুল ইসলাম বীর উত্তম, কাজী ফিরোজ রশীদ, ওয়ারেসাত হোসেন বেলাল ও মোছলেম উদ্দিন আহমদ এবং সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
কমিটি সূত্র জানায়, বৈঠকে কমিটির সভাপতি নিজেই চিহ্নিত রাজাকারের সন্তানদের সরকারী চাকুরিতে নিষিদ্ধের প্রস্তাব উত্থাপন করেন। বিষয়টি নিয়ে আলোচনাকালে কমিটির সদস্যরা বিশ্বের বিভিন্ন দেশে যুদ্ধাপরাধীদের পরিবারের সদস্যদের জন্য সরকারী চাকুরি নিষিদ্ধের বিষয়টি তুলে ধরেন। বিশেষ করে ভিয়েতনামের মতো দেশে যুদ্ধাপরাধীদের তিন প্রজন্ম নিষিদ্ধ সে বিষয়টি উল্লেখ করেন। আলোচনা শেষে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ থেকে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সংজ্ঞা সংগ্রহ ও চিহ্নিত রাজাকারের পরবর্তী প্রজন্মকে সরকারী চাকুরী প্রদানের ক্ষেত্রে বৈঠকে আন্তর্জাতিক নীতিমালা অনুসরণের সুপারিশ করা হয়। এছাড়া শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধাদের গার্ড অব অনার প্রদানের ক্ষেত্রে দিনের বেলায় আয়োজন ও মহিলা ইউএনও’র বিকল্প ব্যক্তি নির্ধারণে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বলা হয়।
বৈঠক শেষে কমিটির সভাপতি শাহাজান খান সাংবাদিকদের বলেন, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে যুদ্ধাপরাধীদের পরিবারের সদস্যদের সেই দেশে সরকারী চাকুরি করার সুযোগ নেই। চিহ্নিত রাজাকারদের বিষয়ে সেই বিষয়টি যাচাই-বাছাই করে মন্ত্রণালয়কে ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে। তিনি আরো বলেন, মহিলারা তো জানাজায় থাকতে পারেন না। তাই মহিলা ইউএনও গার্ড অব অনার দিতে গেলে স্থানীয় পর্যায়ে অনেকে প্রশ্ন তোলেন। তাই মহিলার বিকল্প একজন পুরুষকে দিয়ে গার্ড অব অনার দেওয়ার প্রস্তাব এসেছে। আমরা মন্ত্রণালয়কে এটা পরীক্ষা করে দেখতে বলেছি।
প্রসঙ্গত ; সরকারের নীতিমালা অনুযায়ী, কোনো বীর মুক্তিযোদ্ধা মারা যাওয়ার পর তাকে রাষ্ট্রীয় সম্মান জানায় সংশ্লিষ্ট জেলা বা উপজেলা প্রশাসন। জেলা প্রশাসক (ডিসি) বা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সরকারের প্রতিনিধি হিসেবে সেখানে থাকেন। কফিনে সরকারের প্রতিনিধিত্বকারী কর্মকর্তা ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান। অনেক স্থানে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার দায়িত্বে নারী কর্মকর্তারা রয়েছেন। বিষয়টি নিয়ে সংসদীয় কমিটির বৈঠকে আলোচনার পর গার্ড অব অনার দেওয়ার ক্ষেত্রে নারী ইউএনওদের বিকল্প খুঁজতে বলা হয়েছে।
এদিকে চট্টগ্রাম সার্কিট হাউজে জিয়া শিশুপার্কের স্থানে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণের সুপারিশ করা হয়েছে জানিয়ে
কমিটির সভাপতি শাজাহান খান বলেন, সার্কিট হাউজেরর সামনের যে জায়গাটিতে পাকিস্তানি বাহিনী আত্মসমর্পণ করেছিল, সেখানে জিয়াউর রহমান শিশু পার্ক করা হয়েছে। সেখানে আত্মসমর্পণের স্মৃতি রক্ষার্থে একটি স্মৃতিস্তম্ভ স্থাপনের সুপারিশ করেছে সংসদীয় কমিটি। আমরা বলেছি, সেখানে যে কক্ষটিকে জিয়াউর রহমাকে হত্যা করা হয়েছে, সেটা সংরক্ষিত থাকবে, কিন্তু শিশু পার্কের স্থলে স্মৃতিস্তম্ভ হবে। বৈঠকে মুক্তিযোদ্ধাদের পূর্ণাঙ্গ তালিকা দ্রুত সম্পন্ন করার পাশাপাশি রাজাকারদের তালিকা প্রকাশের সুপারিশ করা হয়েছে বলে তিনি জানান।
আরও পড়ুন
- সর্বশেষ খবর
- সর্বাধিক পঠিত