দুয়ারে কড়া নাড়ছে নির্বাচন: প্রচারণায় ব্যস্ত চাঁপাইনবাবগঞ্জ-২ আসনের মনোনয়ন প্রত্যাশীরা
সারওয়ার জাহান সুমন, গোমস্তাপুরঃ আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার দিনক্ষণ যত ঘনিয়ে আসছে মনোনয়ন প্রত্যাশী প্রার্থীদের নির্বাচনী তৎপরতা, উঠান বৈঠক, পথসভা, গণসংযোগ এবং লিফলেট বিতরণ ততই বেড়ে চলেছে। দিনের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে চাঁপাইনবাবগঞ্জ-২ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশীরা প্রচারণায় ব্যস্ত সময় পার করছেন। অন্যদিকে নীরব ভূমিকা পালন করছেন বিএনপি’র প্রার্থীরা।
অপরদিকে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর একক প্রার্থী ড. মিজানুর রহমান তিন উপজেলায় ডিজিটাল ব্যানার এর মাধ্যমে পরিচিতি মেলে ধরছেন।
নাচোল-গোমস্তাপুর-ভোলাহাট এই তিন উপজেলা নিয়ে গঠিত চাঁপাইনবাবগঞ্জ-২ সংসদীয় আসন। প্রায় ২৫ বছর এ আসনটি ছিল বিএনপি দখলে। কিন্তু ২০০৮ সালের নির্বাচনে বিএনপি’র দুর্গে আঘাত হানে আওয়ামীলীগ। বিএনপি’র প্রার্থী সৈয়দ মঞ্জুর হোসেনকে পরাজিত করে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন জিয়াউর রহমান। দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আবারও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী গোলাম মোস্তফা বিশ্বাস স্বতন্ত্র প্রার্থী খুরশিদ আলম বাচ্চু কে পরাজিত করে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। পরপর ১০ বছর চাঁপাইনবাবগঞ্জ-২ আসনটি আওয়ামী লীগের দখলে থাকার পর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী জিয়াউর রহমান কে পরাজিত করে বিএনপি’র আলহাজ্ব আমিনুল ইসলাম সংসদ সদস্য নির্বাচিত হলে আসনটি হাতছাড়া হয়ে যায়। একাদশ নির্বাচনে পরাজিত হয়েও দমে যাননি আওয়ামী লীগের হেভিওয়েট দুই নেতা জিয়াউর রহমান ও গোলাম মোস্তফা বিশ্বাস।
সরকারের উন্নয়নমূলক কাজের পাশাপাশি নিজেদের সময় উন্নয়নমূলক কাজ নিয়ে এলাকার সাধারণ মানুষের দ্বারে দ্বারে কর্মীদের নিয়ে সরব ছিলেন এই দুই নেতা। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে দলীয় সিদ্ধান্তের কারণে বিএনপি’র সংসদ সদস্য আলহাজ্ব আমিনুল ইসলাম পদত্যাগ করলে এই আসনটি শূণ্য হয়। বিএনপির সংসদ সদস্যের পদত্যাগের সঙ্গে সঙ্গেই উপ-নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার দৌড়ঝাঁপ শুরু হয়ে যায়। ১ ফেব্রুয়ারি উপ-নির্বাচনে আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন পেয়ে আসন টি পুনরুদ্ধার করেন তৎকালীন জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি জিয়াউর রহমান।
আসছে আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে মনোনয়ন প্রত্যাশী অনেকের নাম শোনা গেলেও মূলত দুই হেভিওয়েট প্রার্থী বর্তমান সংসদ সদস্য ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি জিয়াউর রহমান এবং সাবেক সংসদ সদস্য ও গোমস্তাপুর উপজেলা আওয়ামীলীগ সভাপতি গোলাম মোস্তফা বিশ্বাস সংসদীয় আসনের আনাচে-কানাচে প্রচারণায় ব্যস্ত সময় পার করছেন। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পাওয়ার প্রত্যাশায় বেশ কিছুদিন পূর্ব থেকেই তিন উপজেলার মহল্লা ও হাট বাজারে সরকারের উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড তুলে ধরে উঠান বৈঠক সহ গণসংযোগ করছেন গোলাম মোস্তফা বিশ্বাস। বর্তমান সংসদ সদস্য জিয়াউর রহমানও সংসদীয় আসনে বিভিন্ন উন্নয়নমূলক অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করে সরকারের উন্নয়নমূলক চিত্র তুলে ধরার পাশাপাশি ৫ অক্টোবর বৃহস্পতিবার থেকে লিফলেট বিতরণ, পথসভা ও গণসংযোগ শুরু করেছেন। আওয়ামী লীগের মনোনয়ন দৌঁড়ে বর্তমান সংসদ সদস্য জিয়াউর রহমান, সাবেক সংসদ সদস্য গোলাম মোস্তফা বিশ্বাস এর পাশাপাশি গোমস্তাপুর উপজেলা চেয়ারম্যান হুমায়ূন রেজা, নাচোল উপজেলা চেয়ারম্যান আব্দুল কাদের, গোমস্তাপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও গোমস্তাপুর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান জামাল উদ্দিন মন্ডল, জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য আনোয়ারুল ইসলাম, কেন্দ্রীয় আওয়ামী যুবলীগের যুগ্ম- সম্পাদক সৈকত জোয়ারদার, চিত্র নায়িকা মাহিয়া মাহি, ভোলাহাটের বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুস সামাদ, কেন্দ্রীয় আওয়ামী যুবলীগের সহ-সম্পাদক কামরুল হাসান লিংকনের নাম শোনা যাচ্ছে।
এদিকে আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা ভোটের প্রচারণায় নির্ঘুম সময় পার করলেও উল্টো চিত্র বিএনপি’র প্রার্থীদের মধ্যে। বিএনপির একাধিক নেতাদের সাথে যোগাযোগ করে জানা যায়, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) বর্তমান সরকারের অধীনে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে না। তাদের দাবি একটাই নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন। এই এক দফা দাবিতে বিএনপি সংগ্রাম করছে। তবে রাজনীতি প্রেক্ষাপট পরিবর্তন হলে দলের প্রার্থীর কোন সংকট হবে না। কেননা, বিএনপি জনবান্ধব দল। বিএনপি থেকে যারা আগামী নির্বাচনে দলের কাছে মনোনয়ন চাইবেন তাদের মধ্যে সাবেক সংসদ সদস্য আলহাজ্ব আমিনুল ইসলাম, গোমস্তাপুর উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান বাইরুল ইসলাম, সাবেক জেলা যুবদল সভাপতি আসাদুল্লাহ আহমদ, উপজেলা বিএনপি’র সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট নুরুল ইসলাম সেন্টু, রহনপুর পৌর বিএনপির আহবায়ক এনায়েত করিম তৌকি, সাবেক পৌর মেয়র তারেক আহমদ, গোমস্তাপুর উপজেলা বিএনপির সিনিয়র যুগ্ন- আহবায়ক ও পার্বতীপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোয়াজ্জেম হোসেন, চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা জাতীয়তাবাদী মহিলা দলের সাধারণ সম্পাদক মাসউদা আফরোজ হক শুচি’র নাম শোনা যাচ্ছে। অন্যদিকে জামাতের একক প্রার্থী হিসেবে ড.মিজানুর রহমান তিন উপজেলার মানুষের সাথে যোগাযোগ অব্যাহত রেখেছেন। সাধারণ মানুষের ধারণা অতীত কর্মকান্ড পর্যালোচনা ও বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট, দলীয় কর্মকাণ্ড এবং স্বচ্ছতা যাচাই বাছাই সহ সামগ্রিক রীতিনীতি বিচার-বিশ্লেষণ ও নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয় লাভ করে যে বিজয় ছিনিয়ে আনতে পারবে এমন প্রার্থীকে মনোনয়ন প্রদানের আশা দলীয় সমর্থকদের।
আরও পড়ুন
- সর্বশেষ খবর
- সর্বাধিক পঠিত