গ্রেফতার হওয়ায় ৫ আসামি নিয়ে যা বললেন পরীমনি
অভিনেত্রী পরীমনিকে ধর্ষণ ও হত্যাচেষ্টার অভিযোগে করা মামলার প্রধান আসামি নাছির ইউ মাহমুদ ও অমিসহ পাঁচজনকে গ্রেফতার করেছে গোয়েন্দা পুলিশ। আজ সোমবার (১৪ জুন) দুপুরে নাছির উদ্দিন নামে এই ব্যবসায়ী কে তার উত্তরার বাসা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
এ ঘটনায় স্বস্তি প্রকাশ করেছেন পরীমনি। তিনি গণমাধ্যমে আলাপকালে বলেন, এখন ভরসা পাচ্ছি। স্বস্তিতে নিশ্বাস নিতে পারছি। অভিযোগ প্রকাশ্যে আসার পর দ্রুত প্রধান আসামি গ্রেফতার হয়েছে। নিশ্চিন্ত হলাম যে বিচার পাবো। বাকি যারা অভিযুক্ত তাদেরও দ্রুত আইনের আওতায় আনা হোক।
অভিনেত্রী পরীমনির সঙ্গে ঘটে যাওয়া অন্যায়ের বিরুদ্ধে ফুঁসে উঠছেন শোবিজের মানুষ। নানা অঙ্গনের তারকারাও মুখ খুলছেন এই ইস্যুতে। তারা পরীকে সাহস দিচ্ছেন সমর্থন জুগিয়ে। কেউ কেউ প্রশংসাও করছেন ন্যায় পাওয়ার প্রত্যাশায় সাহসী হয়ে ওঠার জন্য।
এর আগে, সোমবার (১৪ জুন) সাভার থানায় নির্যাতন ও ধর্ষণচেষ্টার অভিযোগে ছয়জনের নামে বাদী হয়ে মামলা দায়ের করেন নায়িকা পরিমনি। মামলায় প্রধান আসামি করা হয়েছে উত্তরা ক্লাবের সাবেক সভাপতি ও ঢাকা বোট ক্লাবের কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য (বিনোদন ও সংস্কৃতি) নাসির উদ্দিন মাহমুদকে (৫০)। এজাহারে ২ নম্বর আসামি করা হয়েছে অমি নামে ৪০ বছর বয়সী একজনকে। বাকি চারজনকে এজাহারে দেখানো হয়েছে ‘অজ্ঞাতনামা’ হিসেবে, যারা প্রধান আসামিকে সহযোগিতা করেছেন বলে মামলায় অভিযোগ করা হয়েছে।
মামলার এজাহারে পরীমনি বলেন, গত ৮ জুন (মঙ্গলবার) রাত সাড়ে ১১টার দিকে তার বনানীর বাসা থেকে কস্টিউম ডিজাইনার জিমি (৩০), অমি (৪০) ও বনিসহ (২০) দুটি গাড়িযোগে উত্তরার উদ্দেশে রওনা হই। পথে অমি বেড়িবাঁধস্থ ঢাকা বোট ক্লাবে তার দুই মিনিটের কাজ আছে বলে জানায়। অমির কথামতো সবাই রাত আনুমানিক ১২টা ২০ মিনিটের দিকে ঢাকা বোট ক্লাবের সামনে গিয়ে গাড়ি দাঁড় করাই। কিন্তু বোট ক্লাব বন্ধ হয়ে যাওয়ায় অমি কোন এক ব্যক্তির সঙ্গে ফোনে কথা বলে। তখন ঢাকা বোট ক্লাবের সিকিউরিটি গার্ডরা গেট খুলে দেয়। পরে আমার ছোটবোন বনি প্রাকৃতিক ডাকে সাড়া দিতে বোট ক্লাবে প্রবেশ করে ও বারের কাছের টয়লেট ব্যবহার করে।
টয়লেট হতে বের হতেই এক নম্বর বিবাদী নাসির উদ্দিন মাহমুদ আমাদেরকে ডেকে বারের ভেতরে বসার অনুরোধ করেন এবং কফি খাওয়ার প্রস্তাব দেন। আমরা বিষয়টি এড়িয়ে যেতে চাইলে অমিসহ এক নম্বর আসামি মদ্যপানের জন্য জোর করেন। আমি মদ্যপান করতে না চাইলে এক নম্বর আসামি জোর করে আমার মুখে মদের বোতল প্রবেশ করিয়ে মদ খাওয়ানোর চেষ্টা করে। এতে আমার সামনের দাঁতে ও ঠোঁটে আঘাত পাই।
এরপর নাসির উদ্দিন মাহমুদ আমাকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে এবং আমার শরীরের বিভিন্ন স্পর্শকাতর স্থানে স্পর্শ করে এবং আমাকে জোর করে ধর্ষণের চেষ্টা করে। সে উত্তেজিত হয়ে টেবিলে থাকা গ্লাস ও মদের বোতল ভাঙচুর করে আমার গায়ে ছুঁড়ে মারে। তখন কস্টিউম ডিজাইনার জিমি নাসির মাহমুদকে বাধা দিতে গেলে তাকেও মারধর করে জখম করে।
পরীমনি আরও জানান, আমি প্রথমে জাতীয় জরুরি সেবা-৯৯৯ নম্বরে ফোন দিতে গেলে আমার ফোনটি ফেলে দেওয়া হয়। এসময় দুই নম্বর আসামিসহ অজ্ঞাতনামা চারজন এক নম্বর আসামিকে ঘটনা ঘটাতে সহযোগিতা করে। আমি অজ্ঞাতনামা আসামিদের দেখলে শনাক্ত করতে পারবো। এজাহারে তিনি আরও উল্লেখ করেন, দুই নম্বর আসামি অমি পরিকল্পিতভাবে আমাকে বর্তমান বাসা থেকে ঢাকা বোট ক্লাবে নিয়ে যায়। সে অজ্ঞাতনামা চারজন আসামি ও নাসির উদ্দিন মাহমুদ আমার শরীরের বিভিন্ন স্পর্শকাতর স্থানে স্পর্শ করে এবং জোরপূর্বক আমাকে ধর্ষণের চেষ্টা করে। আমি আমার সঙ্গীদের সহায়তায় ধর্ষণের হাত থেকে রক্ষা পাই। রাত আনুমানিক ৩টার সময় আমি আমার গাড়িযোগে প্রায় অচেতন অবস্থায় অপর সঙ্গীদের সহায়তায় বাসায় ফিরে আসি।
উত্তরা ক্লাবের সাবেক সভাপতি নাসির উদ্দিন মাহমুদ (৫০) ধর্ষণ ও হত্যার চেষ্টা করে বলে রোববার (১৩ জুন) সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করেন পরীমনি। সংবাদ সম্মেলনের পর রাত থেকেই নিরাপত্তা জোরদার করা হয় চিত্রনায়িকা পরীমনির বাসার সামনে। পুলিশ জানায়, নির্দেশনা অনুযায়ী পরীমনির নিরাপত্তা নিশ্চিত করতেই তাদের এই অবস্থান। যতদিন প্রয়োজন, এই নিরাপত্তা ব্যবস্থা বহাল থাকবে বলেও জানায় পুলিশ। তার আগে, রোববার সন্ধ্যায় ফেসবুক পোস্টে হত্যা ও ধর্ষণচেষ্টার ঘটনায় প্রধানমন্ত্রীর সাহায্য কামনা করেন পরীমনি। ফেসবুক পোস্ট দেওয়ার দুই ঘণ্টার মাথায় রাত সাড়ে ১০টার দিকে নিজ বাসায় সংবাদ সম্মেলনে ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে বার বার কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি।
আরও পড়ুন
- সর্বশেষ খবর
- সর্বাধিক পঠিত