হাসপাতালে ফিরছেন না, রাতে রাস্তায় থাকছেন আহতরা

দাবি অনুযায়ী উপদেষ্টারা না আসায় মধ্যরাতেও সড়কে অবস্থান নিয়ে আছেন ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আহত ব্যক্তিরা। সরকারের ভূমিকায় ক্ষুব্ধ হয়ে বুধবার দিবাগত রাত সাড়ে ১২টার পর বিছানাপত্র নিয়ে এসে রাজধানীর জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠানের (পঙ্গু হাসপাতাল) সামনের সড়কে অবস্থান করার ঘোষণা দেন তারা। এই বিক্ষুব্ধ ব্যক্তিদের কারও এক পা নেই, কেউ কেউ হুইলচেয়ারে, আবার কারও চোখে ব্যান্ডেজ রয়েছে।
আহতদের দাবি, চিকিৎসায় নানা দিক থেকে অবহেলার শিকার হচ্ছেন তারা। অন্তর্বর্তী সরকারের চারজন উপদেষ্টা এসে তাদের সঙ্গে কথা বলে সুচিকিৎসার আশ্বাস না দেয়া পর্যন্ত তারা অবস্থান কর্মসূচি পালন করবেন। এ সময় দাবি আদায় না হলে কঠোর কর্মসূচির হুঁশিয়ারিও দেন তারা।
এক পর্যায়ে রাত ১২টার দিকে সেখানে দ্বিতীয় দফায় যান বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আবদুল্লাহ। তিনি বলেন, আন্দোলনকারীরা যে চারজন উপদেষ্টাকে এখানে আসার দাবি জানিয়েছেন, তাদের মধ্যে দুজন ঢাকার বাইরে, একজন বিদেশে ও আরেকজন ক্যানসারের রোগী। তারা চাইলে সদ্য নিয়োগপ্রাপ্ত স্বাস্থ্য উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী এখানে আসতে পারেন। আর তা না হলে বৃহস্পতিবার বেলা দুইটা পর্যন্ত সময় দেয়া যায়, তখন উপদেষ্টাদের সঙ্গে বসা যাবে।
এ সময় বিক্ষুব্ধ আন্দোলনকারীদের পক্ষ থেকে সালমান নামের একজন বলেন, ‘আমরা হাসনাত ভাইয়ের সঙ্গে একমত। কালকে চার উপদেষ্টা আসা পর্যন্ত আমরা এখানে অবস্থান করব।’ হাসপাতাল থেকে বিছানাপত্র নিয়ে এসে সবাই সড়কে অবস্থান করবেন বলে ঘোষণা দেন তিনি। সরকারকে হুঁশিয়ারি দিয়ে সালমান বলেন, ‘এই সরকার আমাদের সঙ্গে যেভাবে তামাশা করছে, তাতে হাসিনা সরকারকে যেভাবে হটিয়েছি, সেভাবে এদেরকে সরাতে আমাদের সময় লাগবে না।’
প্রত্যক্ষদর্শী, পুলিশ ও হাসপাতাল সূত্র জানায়, স্বাস্থ্য উপদেষ্টা বেলা ১১টার দিকে পঙ্গু হাসপাতালে যান। ওই হাসপাতালের তৃতীয় ও চতুর্থ তলায় দুটি ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন জুলাই-আগস্টে আহত ব্যক্তিরা। স্বাস্থ্য উপদেষ্টা চতুর্থ তলায় থাকা আহত কয়েকজনের খোঁজখবর নিয়ে হাসপাতালের পরিচালক ও চিকিৎসকদের সঙ্গে বৈঠক করতে যান।
স্বাস্থ্য উপদেষ্টা হাসপাতালে এসেছেন—এমন খবর ছড়িয়ে পড়লে পঙ্গু হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আহত ব্যক্তিরা উপদেষ্টার গাড়ির পথ আটকে দাঁড়ান। কেউ গাড়ির সামনে শুয়ে পড়েন। দু-একজনকে স্বাস্থ্য উপদেষ্টার গাড়ির ওপর উঠে প্রতিবাদ জানাতে দেখা যায়। এ অবস্থায় স্বাস্থ্য উপদেষ্টা নুরজাহান বেগম অন্য একটি গাড়িতে চড়ে চলে যান। ব্রিটিশ হাইকমিশনার সারাহ কুককে আরেকটি গাড়িতে সরিয়ে নেওয়া হয়। ঘটনাস্থলে উপস্থিত পুলিশ সদস্যরা বিক্ষোভকারীদের থামাতে ব্যর্থ হন।
স্বাস্থ্য উপদেষ্টা চলে যাওয়ার পর আহত ব্যক্তিরা পঙ্গু হাসপাতালের সামনের আগারগাঁও-শ্যামলী সড়কে অবস্থান নেন। এ খবর ছড়িয়ে পড়লে পাশের জাতীয় চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল থেকে আন্দোলনে চোখে আঘাত পাওয়া ব্যক্তিরা এসে যোগ দেন। এ সময় ওই সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে আসেন সেনাসদস্যরা। তাঁরা আহত ব্যক্তিদের হাসপাতালে ফেরত যেতে অনুরোধ করেন; কিন্তু তাঁরা যাননি।
বেলা দুইটার পর আন্দোলনকারীদের পক্ষ থেকে আহত মো. মাসুম হুইলচেয়ারে বসে বলেন, স্বাস্থ্য উপদেষ্টা হাসপাতালের চতুর্থ তলায় গেলেও তাঁদের দেখতে তিনতলায় যাননি। উপদেষ্টা তিন মাস পর হাসপাতালে এসেছেন; কিন্তু আহত ব্যক্তিদের উপেক্ষা করেছেন। তিনি বলেন, ‘আমাদের রক্তের ওপর দিয়ে তিনি উপদেষ্টা হয়েছেন।’ মাসুম আরও বলেন, জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশন থেকে আহত ব্যক্তিদের এক লাখ টাকা করে দেওয়ার কথা থাকলেও এখনো বেশির ভাগই তা হাতে পাননি।
চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউট থেকে রাস্তা অবরোধে আসা আল মিরাজ নামের এক আহত শিক্ষার্থী বলেন, গুলিতে তাঁর ডান চোখের রেটিনা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। চিকিৎসকেরা বলেছেন, এই দেশে তাঁর চিকিৎসা সম্ভব নয়। তাই তাঁকে বিদেশে পাঠিয়ে চিকিৎসা করানোর দাবি জানান তিনি। আল মিরাজ বলেন, স্বাস্থ্য উপদেষ্টা পঙ্গু হাসপাতালে আহত ব্যক্তিদের খোঁজ নিতে এলেও তিনি চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউটে চিকিৎসাধীন চোখে আঘাত পাওয়া ব্যক্তিদের খোঁজ নিতে আসেননি।
আরও পড়ুন
- সর্বশেষ খবর
- সর্বাধিক পঠিত