ছাত্রদলের কাউন্সিলের গুঞ্জন, নতুন নেতৃত্বে আসছেন যারা
বিএনপির আন্দোলন সংগ্রামের ‘ভ্যানগার্ড’ খ্যাত বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল। আন্দোলন সংগ্রামের মূল ভুমিকা পালন করে থাকে ছাত্রদল। সংগঠনটির সেই সোনালি অতীত ঐতিহ্য যেন হারিয়ে ফেলেছেন এমন প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে খোদ সংগঠনটির নেতাকর্মীদের মধ্যে। দীর্ঘ ২৭ বছর পর ২০১৯ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর কাউন্সিলরদের সরাসরি ভোটে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের সভাপতি ফজলুর রহমান খোকন ও সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেন শ্যামল নির্বাচিত হন। নির্বাচিত কমিটির কর্মকাণ্ডেও সন্তুষ্ট নন কেন্দ্রীয় ও তৃণমূল পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ। বর্তমান কমিটি কর্মকাণ্ডে তেমন সফলতা দেখাতে পারেনি। ৬০ সদস্যবিশিষ্ট আংশিক কেন্দ্রীয় কমিটির প্রায় দুই বছর পেরিয়ে গেলেও পূর্ণাঙ্গ কমিটি দিতে সক্ষম হয়নি। এমনকি রাজধানীকে আন্দোলন সংগ্রামের জন্য সবচেয়ে বেশি ভুমিকা রাখে রাজধানী; এখানেও কমিটি দিতে পারেনি সংগঠনটি। এছাড়া কমিটির সদস্যদের বিরুদ্ধে রয়েছে নানা অভিযোগ।
জানা গেছে আন্দোলন সংগ্রামের প্রস্তুতি নিচ্ছে বিএনপি। এরই মধ্যে বিএনপি এবং এর অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনগুলো গুছাতে শুরু করেছে। এরই অংশ হিসেবে বিএনপির আন্দোলন সংগ্রামের ‘ভ্যানগার্ড’ নামে খ্যাত ছাত্রদলকেও ঢেলে সাজানোর প্রস্তুতি রয়েছে। চলতি কমিটির মেয়াদ শেষ হবে আগামী সেপ্টেম্বরে। অথচ এর মধ্যেই নতুন কমিটির দাবি উঠেছে সংগঠনটির ভেতরে। এ নিয়ে পদপ্রত্যাশীরাও দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছেন কাউন্সিলরদের দারে দারে।
সব অভিযোগ ও ব্যর্থতা থেকে ছাত্রদলকে মুক্তি দিতেই নতুন কমিটি চাচ্ছেন ছাত্রদলের নেতাকর্মী ও নীতিনির্ধারকরা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বর্তমানে পদপ্রত্যাশী একাধিক নেতা বলেন, বর্তমান সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক আগের সভাপতি ও সম্পাদক রাজীব-আকরামের মতো নিজের পদ দীর্ঘস্থায়ী করার চেষ্টা করার কারণেই দলীয় কর্মকাণ্ডকে গতিশীল করার বিপরীতে ধীরগতিতে নিয়ে গেছে। ফলে ২১ মাস পেরিয়ে গেলেও বর্তমান নেতৃত্ব কেন্দ্রের পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করতে ব্যর্থ হয়। ৬০ সদস্যের আংশিক কমিটি দিয়েই চলছে কেন্দ্র।
বর্তমান কমিটির বিভিন্ন সাংগঠনিক ইউনিটের কমিটি গঠনে ব্যর্থতা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্দেশে সারাদেশে ছাত্রদলের যোগ্য ও জনপ্রিয় নেতাদের খুঁজে বের করতে ১১টি সাংগঠনিক টিম গঠন করা হয়। এই টিমের কাজ হচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়, মহানগর, জেলা ও উপজেলায় গিয়ে খুঁজে খুঁজে যোগ্য নেতৃত্ব সুপারিশ করা। এরপর কেন্দ্র তার অনুমোদন দেবে। তবে রাজধানীকে কেন্দ্র করে আন্দোলন চাঙা হলেও গত ২১ মাসে রাজধানীর কোনো ইউনিট কমিটি গঠন করতে পারেনি বর্তমান কমিটি। তবে রাজিব-আকরামের কমিটির মেয়াদে গঠন হওয়া ঢাকা মহানগর দক্ষিণ কমিটিটি শুধুমাত্র পূর্ণাঙ্গ করা হয়েছে। এছাড়া জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়সহ, প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় এবং গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন কলেজ কমিটিও গঠন করা হয়নি।
সারাদেশে কমিটি গঠনের ক্ষেত্রে বিভিন্ন অভিযোগ রয়েছে। এছাড়া অভিযোগ রয়েছে আর্থিক লেনদেনের। অভিযোগ রয়েছে জনপ্রিয়তা যাচাই বাছাই না করে পছন্দের লোকদের দিয়ে কমিটি গঠন করার। এছাড়া যে কমিটি দেয়া হয়েছে তারমধ্যে বিবাহিত এবং ছাত্রলীগের কর্মীদের দিয়েও কমিটি গঠন করার অভিযোগ রয়েছে।
ছাত্রদলের একটি বিশ্বস্ত সূত্র জানায়, গঠনতন্ত্র ও শর্তের বেড়াজালে বর্তমান কমিটির সুপার ফাইভের সকলেই প্রার্থী হওয়ার যোগ্যতা হারিয়েছে। যারা আন্দোলন সংগ্রামের সামনের সারিতে সবসময় ছিলেন তাদেরকেই আগামী কাউন্সিলে প্রাধান্য দেয়া হবে। এছাড়া বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের আস্থাভাজন ও যাদের মধ্যে নেতৃত্বের গুণাবলি রয়েছে তাদেরকে বেশি প্রাধান্য দেয়া হবে। এছাড়া বিএনপির নীতিনির্ধারকেরা মনে করেন আগামীতে যে আন্দোলন সংগ্রাম আসছে তাতে সামনে সারিতে থেকে রাজপথে নেতৃত্ব দিতে পারবে এমন যোগ্য ব্যক্তিদের আগামী কাউন্সিলে নির্বাচিত করা হবে। এর মাধ্যমে ফিরে আসবে ছাত্রদলের হারানো ঐতিহ্য।
নতুন কমিটিতে যাদের নিয়ে আলোচনা চলছে-
সভাপতি পদে সবচেয়ে বেশি আলোচনায় রয়েছেন বর্তমান ছাত্রদলের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক তানজিন হাসান এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের আহ্বায়ক রাকিবুল হাসান রাকিব। তানজিল হাসান ঢাকা মহানগর টিমে কাজ করার ফলে ঢাকার শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গুলো এবং ঢাকার তৃণমূল পর্যায়ের নেতাকর্মীদের সাথে তার সুসম্পর্ক গড়ে ওঠেছে। অপর দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের আহ্বায়ক রাকিবুল ইসলাম রাকিব নিজের অনুসারীদের দিয়ে ঢাবি হল কমিটি করার ফলে বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীক তার একটি শক্তিশালী অবস্থান গড়ে ওঠেছে। দুজনই বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের আস্থাভাজন। সেই কারনেই ছাত্রদল নেতাকর্মীদের মাঝে গুঞ্জন রাকিব এবং আমান এদের মধ্যেই একজন হচ্ছেন ছাত্রদলের আগামী দিনের কান্ডারী। এছাড়া আলোচনায় রয়েছেন ছাত্রদল কেন্দ্রীয় সংসদের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক আরিফুল ইসলাম আরিফ। তিনি ফরিদপুর বিভাগীয় টিমের দায়িত্ব পালন করেছেন।
সাধারণ সম্পাদক পদে আলোচনায় রয়েছেন যারা- তাদের মধ্যে ঢাবির সদস্য সচিব আমান উল্লাহ আমান, সিনিয়র যুগ্ম-আহ্বয়ক আক্তার হোসেন, কেন্দ্রীয় যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক সম্পাদক নিজাম উদ্দীন রিপন খুলনা টিমে দায়িত্ব পানল করেছেন তিনি। এছাড়া রয়েছেন মাহবুব মিয়া তিনিও খুলনা বিভাগীয় টিমে দায়িত্ব পালন করেছেন। এছাড়া মারুফ এলাহী রনি ময়মনসিংহ বিভাগীয় টিমে দায়িত্ব পালন করেছেন। করিম প্রধান রনি তিনি দায়িত্ব পালন করেছেন রাজশাহী বিভাগীয় টিমে। এছাড়া আলোচনায় রয়েছেন শ্যামল মালুম তিনি সিলেট বিভাগীয় টিমে দায়িত্ব পালন করেছেন।
আরও পড়ুন
- সর্বশেষ খবর
- সর্বাধিক পঠিত