নিজেদের ভবিষ্যৎ নির্ধারণে সিদ্ধান্ত নিতে হবে আফগানদেরই: বাইডেন

| আপডেট :  ২৭ জুন ২০২১, ০১:২০  | প্রকাশিত :  ২৭ জুন ২০২১, ০১:২০

আফগানিস্তানের প্রেসিডেন্ট আশরাফ গনি ও তাঁর সাবেক রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ আবদুল্লাহ আবদুল্লাহর সঙ্গে হোয়াইট হাউসে বৈঠক করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। এ সময় তিনি আফগানদের তাদের দেশের ভবিষ্যৎ নির্ধারণের সিদ্ধান্ত নিজেদেরই নেওয়ার আহ্বান জানান। ২০ বছর ধরে আফগানিস্তানে যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে বহুজাতিক বাহিনীর কথিত সন্ত্রাসবিরোধী লড়াই শেষে সে দেশ থেকে সব মার্কিন সেনা প্রত্যাহার করে নেওয়া হচ্ছে। তবে এখন পর্যন্ত আফগানিস্তানে স্থিতিশীলতা ফেরেনি। যুক্তরাষ্ট্র, আফগান সরকার ও তালেবানের মধ্যে সই হওয়া ত্রিপক্ষীয় শান্তি চুক্তির আওতায় দেশটি থেকে মার্কিন সেনাদের উপস্থিতি গুটিয়ে নেওয়ার সময় ঘনিয়ে আসছে। ইতিমধ্যে তালেবান যোদ্ধারাও আফগানিস্তানে নিজেদের অবস্থান পাকাপোক্ত করেছেন। এমন প্রেক্ষাপটে হোয়াইট হাউসে ওই বৈঠক অনুষ্ঠিত হলো।

হোয়াইট হাউসের ওভাল অফিসে গনি ও আবদুল্লাহর পাশে বসে বৈঠক করেন বাইডেন। গনি ও আবদুল্লাহকে বাইডেন ‘দুই পুরোনো বন্ধু’ আখ্যায়িত করেন। তিনি বলেন, আফগানিস্তানের জন্য তাঁর দেশের সমর্থন শেষ হচ্ছে না। আফগানিস্তান থেকে মার্কিন সেনা প্রত্যাহার করে নেওয়া হলেও দেশটির প্রতি এ সমর্থন বজায় থাকবে।
বাইডেন বলেন, ‘এখন থেকে আফগানদেরই নিজেদের ভবিষ্যৎ নির্ধারণের সিদ্ধান্ত নিতে হবে। বন্ধ করতে হবে অহেতুক সহিংসতা।’

গনি বলেন, গত শুক্রবার আফগান নিরাপত্তা বাহিনী ছয় জেলার নিয়ন্ত্রণভার আবার গ্রহণ করেছে। তিনি বাইডেনের সিদ্ধান্ত এবং আফগানিস্তান–যুক্তরাষ্ট্রের অংশীদারি সম্পর্কে এক নতুন যুগের সূচনাকে স্বাগত জানান। তিনি আরও বলেন, ‘আমরা ঐক্য ও সংহতি প্রতিষ্ঠার ব্যাপারে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ।’

বৈঠক শেষে আফগান প্রেসিডেন্ট সাংবাদিকদের বলেন, আফগানিস্তান থেকে সেনা প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত যুক্তরাষ্ট্রের নিজস্ব। এখন তাঁর দেশের কাজ হবে, সেনা প্রত্যাহার–পরবর্তী পরিস্থিতির যথাযথ ব্যবস্থাপনা করা। তিনি বলেন, বাইডেন স্পষ্টভাবে জানিয়ে দিয়েছেন, আফগানিস্তানে মার্কিন দূতাবাস চালু থাকবে এবং যুক্তরাষ্ট্র তাঁর দেশকে নিরাপত্তা–সংক্রান্ত সহায়তা দিয়ে যাবে।

অন্যদিকে বৈঠক শেষে বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে আবদুল্লাহ বলেন, সহিংসতার অবসান না ঘটা পর্যন্ত আফগানিস্তানে রাজনৈতিক সমঝোতা প্রতিষ্ঠায় বিভিন্ন পক্ষের মধ্যে আলোচনা চালিয়ে যাওয়া প্রয়োজন। তিনি বলেন, ‘তালেবান পুরোপুরি বন্ধ না করা পর্যন্ত সমঝোতার দরজা বন্ধ করা উচিত হবে না বলে মনে করি আমি। আলোচনায় তেমন অগ্রগতি না হলেও বা সহিংসতা চলতে থাকলেও আমরা আলোচনাকে নাকচ করতে পারি না।’

মার্কিন কর্মকর্তারা পরিষ্কার করে জানিয়ে দিয়েছেন, বাইডেন আফগানিস্তান থেকে মার্কিন সেনা প্রত্যাহারের চলমান কাজ থামাবেন না। আগামী কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই প্রত্যাহারের কাজটি শেষ হতে পারে। তালেবানের অগ্রযাত্রা সত্ত্বেও দেশটিতে সম্ভবত নতুন করে কোনো সামরিক সহায়তার বিষয়ে অনুমোদন দেবেন না তিনি। তবে আফগান সরকারকে পরামর্শ, গোয়েন্দা তথ্য ও উড়োজাহাজ ব্যবস্থাপনায় সহায়তাদানের মতো বিষয় এর বাইরে থাকবে।

বাইডেনের সঙ্গে বৈঠকের আগে ক্যাপিটল হিলে দ্বিতীয় দিনের মতো আলোচনায় বসেন আফগান নেতারা। সেখানে নেতাদের অনেকে আফগানিস্তান থেকে পুরোপুরি মার্কিন সেনা প্রত্যাহারের সিদ্ধান্তে আপত্তির কথা জানান।

আফগানিস্তানে শান্তি প্রতিষ্ঠার প্রক্রিয়া স্থবির হয়ে পড়া ও সহিংসতা বেড়ে যাওয়ার মধ্যে আশরাফ গনি ও আবদুল্লাহ আবদুল্লাহর এ যুক্তরাষ্ট্র সফর অনুষ্ঠিত হচ্ছে।
মার্কিন গোয়েন্দা তৎপরতার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কিছু সূত্র জানিয়েছে, বর্তমানে আফগানিস্তানের পরিস্থিতি ভালো নয়। এ অবস্থায় প্রেসিডেন্ট গনি তালেবানের ওপর চাপ বাড়াতে আরও বেশি পদক্ষেপ নিতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি অনুরোধ জানিয়েছেন।

তালেবানের হুঁশিয়ারি
আল–জাজিরা জানিয়েছে, বাইডেনের সঙ্গে আফগান নেতাদের বৈঠকের প্রতিক্রিয়ায় তালেবানের মুখপাত্র সুহাইল শাহিন কাতারভিত্তিক টেলিভিশন চ্যানেলটিকে বলেছেন, চুক্তি মোতাবেক আগামী ১১ সেপ্টেম্বরের নির্ধারিত সময়সীমার মধ্যে ওয়াশিংটন আফগানিস্তান থেকে সব সেনা সরিয়ে না নিলে তা হবে চুক্তির ‘সুস্পষ্ট লঙ্ঘন’।

এক একান্ত সাক্ষাৎকারে তালেবান মুখপাত্র বলেন, নির্ধারিত সময়ের পরও যুক্তরাষ্ট্র তার সাড়ে ছয় শর মতো সেনা আফগানিস্তানে মোতায়েন রাখলে তার প্রতিক্রিয়া দেখানোর অধিকার তাঁদের সশস্ত্র সংগঠনের রয়েছে।

মার্কিন কর্মকর্তারা বার্তা সংস্থা অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসকে গত বৃহস্পতিবার বলেছেন, আফগানিস্তান থেকে মার্কিন সামরিক বাহিনীর উপস্থিতি সরিয়ে নেওয়া হলেও দেশটিতে কূটনীতিকদের নিরাপত্তায় কমবেশি ৬৫০ জন সেনা থেকে যেতে পারেন।

 

আরও পড়ুন


  • সর্বশেষ খবর
  • সর্বাধিক পঠিত