কেরানীগঞ্জে তিন খুন: ঋণের চাপ ও পারিবারিক কলহের বলি বিথী, শিশু রাফসান ও নুপুর

কেরানীগঞ্জ (ঢাকা) প্রতিনিধি: ঢাকার দক্ষিণ কেরানীগঞ্জে ঘটে গেল ভয়াবহ এক হত্যাকাণ্ড। ঋণের চাপ, পারিবারিক কলহ এবং পুনরায় বিয়ের জন্য সাবেক স্ত্রীর চাপ সহ্য করতে না পেরে শিমুল নামে এক ব্যক্তি নির্মমভাবে হত্যা করেছেন তার সাবেক স্ত্রী বিথী, চার বছরের শিশু পুত্র রাফসান এবং বাসার সাবলেট ভাড়াটিয়া নারী নুপুরকে। হত্যার পর মরদেহ তিনটি টুকরো করে তিনটি ভিন্ন ভিন্ন স্থানে ফেলে দেন তিনি।
সোমবার (২৮ এপ্রিল) দুপুরে দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানায় আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (কেরানীগঞ্জ সার্কেল) মো. জাহাঙ্গীর আলম।
পুলিশ সূত্রে জানা যায়, মীরেরবাগ এলাকার মানিক ব্যাপারীর বাড়িতে রমজান মাসে স্বামী-স্ত্রী পরিচয়ে ভাড়া নেন শিমুল ও বিথী। কিন্তু বিথী তার বর্তমান স্বামীর সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রাখছিলেন, যা নিয়ে শিমুলের মধ্যে তৈরি হয় তীব্র অসন্তোষ। এর পাশাপাশি ঋণের বোঝা এবং বিথীর পুনরায় বিয়ের জন্য চাপ শিমুলকে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত করে তোলে।
গত শুক্রবার রাতে প্রথমে বিথীকে গামছা পেঁচিয়ে হত্যা করেন শিমুল। এরপর বিথীর কান্নার শব্দে ঘুম ভেঙে যাওয়া শিশু রাফসানকেও হত্যা করেন। হত্যাকাণ্ডের সাক্ষী হয়ে পড়া সাবলেট ভাড়াটিয়া নারী নুপুরকে বাসা ছাড়ার নির্দেশ দিলেও তিনি চিৎকার শুরু করলে তাকেও শ্বাসরোধে হত্যা করেন শিমুল।
হত্যার পর মাত্র তিন ঘণ্টার মধ্যে মরদেহ তিনটি খণ্ডিত করে পৃথকভাবে ফেলে দেন তিনি। বিথী ও নুপুরের দেহাংশ ফেলা হয় বুড়িগঙ্গা নদী ও আগানগর এলাকায়, আর শিশুর দেহাংশ ফেলে আসেন জিগাতলা এলাকায়।
শুক্রবার রাতে আগানগর মাকসুদা গার্ডেন সিটির সামনে থেকে এক নারীর বস্তাবন্দি খণ্ডিত মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। পরে রোববার সদরঘাট বুড়িগঙ্গা নদী থেকে উদ্ধার করা হয় আরও দেহাংশ। তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় অভিযান চালিয়ে গ্রেপ্তার করা হয় শিমুলকে। তার দেওয়া স্বীকারোক্তির ভিত্তিতে উদ্ধার করা হয় শিশুর মরদেহের টুকরোগুলোও।
সংবাদ সম্মেলনে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, “শিমুল অত্যন্ত ঠান্ডা মাথায় এবং পরিকল্পিতভাবে এই নৃশংস হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে। তার বিরুদ্ধে দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানায় হত্যা মামলা রুজু করা হয়েছে। দ্রুত তদন্ত শেষে আদালতে অভিযোগপত্র (চার্জশিট) দাখিল করা হবে।”
ঘটনার পর কেরানীগঞ্জ ও আশপাশের এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। স্থানীয়রা দোষীর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন।
আরও পড়ুন
- সর্বশেষ খবর
- সর্বাধিক পঠিত