রাশেদ খাঁন ও নুরুল হক নুরের দ্বন্দ্ব: ক্ষমা চাইলেন রাশেদ খাঁন

| আপডেট :  ০৪ জুলাই ২০২১, ০৫:৫০  | প্রকাশিত :  ০৪ জুলাই ২০২১, ০৫:৫০

সরকারি চাকরির কোটা সংরক্ষণের বিরোধিতায় গড়ে ওঠা বাংলাদেশ ছাত্র অধিকার পরিষদের নেতা রাশেদ খান তার নিজের ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে ক্ষমা চেয়েছেন। রবিবার (৪ জুলাই) বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে এ স্ট্যাটাস দিয়েছেন।

পাঠকদের জন্য স্ট্যাটাসটি হুবহু তুলে ধরা হল:

দেশের মানুষের কাছে দুঃখ প্রকাশ করছি। আমরা বয়সে তরুণ যে কারণে মাঝেমাঝে বক্তব্য, কথা, কাজের মধ্যে ভুল করে বসি।
নুর ও আমার মধ্যে যে ভুলবোঝাবুঝি হয়েছিলো, সেটা আলোচনার মাধ্যমে সুন্দর সমাধান হয়েছে।

আশা করি, ভবিষ্যতে নিজেরা চলার পথে আরও বেশি সতর্ক থাকবো। নুর ও আমার মধ্যে কোটা সংস্কার আন্দোলনের শুরুর দিন থেকে সুসম্পর্ক ছিলো, ভবিষ্যতেও সম্পর্ক ধরে রেখে নিজেরা ঐক্যবদ্ধ থাকার সর্বোচ্চ চেষ্টা করবো, ইনশাআল্লাহ।

দেশের মানুষকে আমরা অভিভাবক মনে করি। আমাদের ভুল হলে অবশ্যই সমালোচনা করবেন, পরামর্শ দিবেন, যাতে শুধরিয়ে নিয়ে নিজেদের পরিপক্ব হিসেবে গড়ে তুলতে পারি।

সবার কাছে আবারও ক্ষমা প্রার্থনা করছি…….

এর আগে, সরকারি চাকরির কোটা সংরক্ষণের বিরোধিতায় গড়ে ওঠা বাংলাদেশ ছাত্র অধিকার পরিষদে ফের ভাঙন শুরু হয়েছে। শুধু তাই নয়, সংগঠনটির দুই যুগ্ম আহ্বায়ক মোহাম্মদ রাশেদ খাঁন ও নুরুল হক নুরের দ্বন্দ্বও প্রকাশ্যে চলে এসেছে।

জানা গেছে, ছাত্র অধিকার পরিষদের আহ্বায়ক মুহাম্মদ রাশেদ খাঁন ও যুগ্ম আহ্বায়ক মো. সোহরাব হোসেনের বিরুদ্ধে ‘সাংগঠনিক শৃঙ্খলা ভঙ্গের’ অভিযোগ এনে কেন্দ্রীয় কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করেছেন সংগঠনটির যুগ্ম আহ্বায়ক ও ডাকসুর সাবেক ভিপি নুরুল হক নুর।

অন্যদিকে নূরের ওই ঘোষণাকে ‘চরম অসাংগঠনিক কার্যকলাপ’ আখ্যায়িত করেছেন রাশেদ। সেই সঙ্গে নুরকে কারণ দর্শানোর নোটিস দেয়ার কথা জানিয়েছেন তিনি।

পাল্টাপাল্টি এমন ঘোষণার মধ্যে দিয়ে কার্যত নতুন করে ভাঙনের মুখে পড়ল সংগঠনটি।

শনিবার মধ্যরাতে ফেসবুকে একটি বিজ্ঞপ্তিতে প্রকাশ করেন নুরুল হক নুর। সেখানে তিনি নিজেকে ছাত্র, যুব ও শ্রমিক অধিকার পরিষদের ‘সমন্বয়ক’ দাবি করেন।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, গত ২ জুলাই বাংলাদেশ ছাত্র, যুব ও শ্রমিক অধিকার পরিষদের এক যৌথ সভায় কমিটি বিলুপ্তি সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে। একইসঙ্গে ৩০ জুলাইয়ের মধ্যে ‘গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে’ কমিটি গঠন করতে নির্বাচন কমিশন গঠন করা হয়েছে।

এরপর পাল্টা এক বিজ্ঞপ্তিতে মুহাম্মদ রাশেদ খাঁন বলেন, ‘যুগ্ম আহ্বায়ক হিসেবে নুরুল হক নুরের কেন্দ্রীয় কমিটি বিলুপ্ত করার এখতিয়ার নেই। ছাত্র, যুব ও শ্রমিক অধিকার পরিষদের ‘সমন্বয়ক’ পদবি ব্যবহার করায় নুরের বিরুদ্ধে কেন ব্যবস্থা নেওয়া হবে না, এই মর্মে ৭ কার্যদিবসের মধ্যে কারণ দর্শানোর জন্য নির্দেশ দেয়া হলো।’

রাশেদ আরও বলেন, ২ জুলাইয়ের সেই যৌথ সভায় তিনি নিজে এবং কেন্দ্রীয় কমিটির ‘অনেকে’ উপস্থিত ছিলেন না।

তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ ছাত্র অধিকার পরিষদ, কেন্দ্রীয় কমিটির পক্ষ থেকে জানাতে চাই, এমন যৌথ আলোচনা সভায় যুগ্ম-আহ্বায়ক ফারুক হাসান, মশিউর রহমান, মো. সোহরাব হোসেন, মাহফুজুর রহমান খান, তারিকুল ইসলাম এবং সদস্য আরিফুল ইসলাম সহ অনেকেই উপস্থিত ছিলেন না। এমতাবস্থায় কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দদের অনুপস্থিতিতে খোদ কেন্দ্রীয় কমিটি বিলুপ্ত করার এখতিয়ার কারো নেই।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে নুরুল হক নুর গণমাধ্যমকে বলেন, ‘কেন্দ্রীয় কমিটির আহ্বায়কসহ বেশ কয়েকজন নেতার সাংগঠনিক শৃঙ্খভঙ্গের কারণে ছাত্র, যুব ও শ্রমিক অধিকার পরিষদের যৌথ সভায় এ সিদ্ধান্ত হয়েছে। তাছাড়া গত তিন বছর ধরে এই কমিটি দিয়ে চলছে সংগঠন। গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় নতুন নেতৃত্ব বাছাই করতে নির্বাচন কমিশন গঠন করা হয়েছে।

তিনি বলেন, আমরা এখন আর ছাত্র অধিকার পরিষদের মধ্যে সীমাবদ্ধ নই। মোদীবিরোধী আন্দোলনসহ বেশ কয়েকটি আন্দোলন ও বিভিন্ন প্রোগ্রামে আমি ছাত্র, যুব ও শ্রমিক অধিকার পরিষদের সমন্বয়ক হিসেবে দ্বায়িত্ব পালন করেছি। তারা আমাকে সেই দায়িত্ব দিয়েছে।

রাশেদসহ অন্যরা কীভাবে সাংগঠনিক শৃঙ্খলাভঙ্গ করেছেন জানতে চাইলে নুর বলেন, ‘ফেসবুক মেসেঞ্জারে একটি চ্যাট গ্রুপে আমাদের কেন্দ্রীয় কমিটির বেশ কয়েকজন নেতা, বিশেষ করে আহ্বায়ক মুহাম্মদ রাশেদ খাঁন ও যুগ্ম আহ্বায়ক মো. সোহরাব হোসেন কিছু স্পর্শকাতর কথা বলেছে। যেখানে দলে ভাঙন সৃষ্টি ও পারস্পারিক দ্বন্দ্ব তৈরির চেষ্টা করা হয়েছিল। সেগুলো আবার সোশাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়ে। আমরা বিষয়টি তদন্ত করে সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’

যৌথসভায় কেন্দ্রীয় কমিটির অধিকাংশ নেতার অনুপস্থিতির বিষয়ে প্রশ্ন করলে নুর বলেন, ‘আহ্বায়ক ছিল না, ঠিক আছে। কিন্তু অধিকাংশ নেতাই ছিল। আর রাজনৈতিক সংগঠনের সভায় সব নেতা থাকতে হবে, এমন কোনো কথা নেই। মেজরিটি যে সিদ্ধান্ত নেয়, সেটাই চূড়ান্ত।’

অভিযোগের বিষয়ে মুহাম্মদ রাশেদ বলেছেন, ‘এটা ভিত্তিহীন অভিযোগ। আমরা মনে করছি, এটা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। আর চ্যাটিংয়ের জন্য কমিটি বিলুপ্ত করা সিদ্ধান্ত অযৌক্তিক। আমরা আমাদের সাংগঠনিক কাজ চালিয়ে যাব। নুরের কথায় বিভ্রান্ত না হতে অনুরোধ করছি।’

 

 

 

আরও পড়ুন


  • সর্বশেষ খবর
  • সর্বাধিক পঠিত