টিকার জন্য নিবন্ধনে বয়সসীমা কমছে
করোনাভাইরাসের টিকা নিতে ইচ্ছুক এমন ব্যক্তির নিবন্ধনের বয়সসীমা ৪০ থেকে কমিয়ে ৩৫ বছর করার চিন্তা করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক আবুল বাসার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম। আজ সোমবার (৫ জুলাই) সকালে অধিদপ্তরে অনুষ্ঠিত এক সভাশেষে সাংবাদিকদের তিনি এ কথা জানান।
তিনি বলেন, নিবন্ধন চালু করে সারাদেশে আবারও গণটিকাদান কার্যক্রম শুরু হচ্ছে। খুরশীদ আলম বলেন, দু-চার দিন পর নিবন্ধন শুরু হবে আবার। টিকা পেতে সর্বনিম্ন বয়সসীমা ৩৫ বছরে নামিয়ে আনার সিদ্ধান্ত হয়েছে। এর আগে টিকা পেতে সর্বনিম্ন বয়সসীমা ছিল ৪০। ইতোমধ্যে প্রবাসী কর্মী ও বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের অগ্রাধিকার তালিকায় রেখে টিকাদান কর্মসূচি চালু করার কথা জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। সম্প্রতি কোভ্যাক্সের পাঠানো মডার্নার ২৫ লাখ ও সিনোফার্মের ২০ লাখ ডোজ টিকা পেয়েছে বাংলাদেশ।
ডিসেম্বর নাগাদ বাংলাদেশ বিভিন্ন উৎস থেকে ১০ কোটি ডোজ টিকা পাবে বলে আশা করছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী। আগামী বছরের প্রথম তিন মাসের মধ্যে বা তার পরে জনজন অ্যান্ড জনসন থেকে আরও সাত কোটি ডোজ টিকা পাওয়ার কথাও জানিয়েছেন তিনি।
প্রসঙ্গত, ২০২০ সালের ৫ নভেম্বর দেশে সিরাম ইনস্টিটিউট অব ইন্ডিয়ার কাছ থেকে অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রেজেনেকার তিন কোটি ডোজ করোনা ভ্যাকসিন আনতে ত্রিপক্ষীয় সমঝোতা স্মারক সই হয়। বাংলাদেশ সরকার, বেসরকারি ফার্মাসিউটিক্যালস বেক্সিমকো ও ভারতের ভ্যাকসিন উৎপাদনকারী সিরামের সঙ্গে এই চুক্তি সই করা হয়। পরে ১৩ ডিসেম্বর এ সংক্রান্ত ক্রয়চুক্তি সই করে সিরাম ইনস্টিটিউটের কাছে পাঠানো হয়।
৫ জানুয়ারি বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রেজেনেকার ভ্যাকসিন কেনার জন্য ৫০৯ কোটি ৭০ লাখ টাকা দেওয়া হয়েছে ভারতের সিরাম ইনস্টিটিউটকে। চুক্তি অনুযায়ী ৫ জানুয়ারি আসে সিরামের কাছ থেকে সরকারের কেনা ভ্যাকসিনের প্রথম চালান। এই চালানে ভ্যাকসিন আসে ৫০ লাখ ডোজ। চুক্তি অনুযায়ী প্রতি মাসে ৫০ লাখ ডোজ করে ছয় মাসে তিন কোটি ডোজ ভ্যাকসিন বাংলাদেশের পাওয়ার কথা ছিল। তবে এরপরে ২২ ফেব্রুয়ারি রাতে ২০ লাখ ডোজ ভ্যাকসিন আসলেও সিরাম থেকে আর বাংলাদেশে ভ্যাকসিন পাঠানো হয়নি।
২১ জানুয়ারি সকাল ৮টা ২৮ মিনিটে মুম্বাই থেকে ঢাকার উদ্দেশ্যে ছেড়ে আসা এয়ার ইন্ডিয়ার এআই১২৩২ নম্বর ফ্লাইটে ২০ লাখ ৪ হাজার ডোজ ভ্যাকসিন সকাল ১১টা ২০ মিনিটে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে এসে পৌঁছায়। এগুলো ভারত সরকারের পক্ষ থেকে উপহার হিসেবে পাঠানো হয়। পরবর্তীতে আরও ৩২ লাখ ডোজ ভ্যাকসিন দেশে এসে পৌঁছায়।
এরপরে ২৭ জানুয়ারি কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে ২৬ জনকে পরীক্ষামূলকভাবে ভ্যাকসিন প্রয়োগ করা হয়। এদিন ভ্যাকসিন কার্যক্রমে নিবন্ধনের জন্য ওয়েব প্ল্যাটফর্ম ‘সুরক্ষা’ চালু করা হয়।
৭ ফেব্রুয়ারি শুরু হয় সারাদেশে ভ্যাকসিন প্রয়োগ কার্যক্রম। দেশে দ্বিতীয় ডোজের ভ্যাকসিন প্রয়োগ শুরু হয় ৮ এপ্রিল থেকে। তবে এ সময় ভারতে কোভিড-১৯ সংক্রমণ বাড়তে থাকে। এমন অবস্থায় নিজ দেশে ভ্যাকসিনের চাহিদা মেটাতে সে দেশের সরকার সিরাম ইন্টারন্যাশনালকে করোনার ভ্যাকসিন রফতানিতে নিষেধাজ্ঞা দেয়। এর ফলে বাংলাদেশের সঙ্গে চুক্তি করা ভ্যাকসিন আর তাদের কাছ থেকে পাওয়া যায়নি।
ভ্যাকসিন না আসার কারণে দেশে ২৬ এপ্রিল থেকে প্রথম ডোজ ভ্যাকসিন প্রয়োগ বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত জানায় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। পরবর্তীতে নিবন্ধনও বন্ধ রাখা হয়।
তবে ধীরে ধীরে ভ্যাকসিনের সংকট কাটতে শুরু করে। চীন থেকে ভ্যাকসিন আনার উদ্যোগ নেয় সরকার। একই সঙ্গে রাশিয়া থেকেও ভ্যাকসিন আনার উদ্যোগ নেয় সরকার। চীন সরকারের উপহার হিসেবে দেশে প্রায় ৩১ লাখ ভ্যাকসিন দেশে এসে পৌঁছায়। একই সঙ্গে কোভ্যাক্সের আওতায় দেশে ফাইজারের এক লাখ ৬০০ ডোজ ভ্যাকসিন আসে। সর্বশেষ কোভ্যাক্সের আওতায় মডার্নার ২৫ লাখ ডোজ ভ্যাকসিন দেশে এসে পৌঁছায়।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, সারাদেশে এ পর্যন্ত ৭২ লাখ ৮২ হাজার ৮৬৯ জন টিকার জন্য নিবন্ধন করেছেন।
আরও পড়ুন
- সর্বশেষ খবর
- সর্বাধিক পঠিত