অগ্নিকাণ্ডে আহত শ্রমিকদের চিকিৎসা নিশ্চিত করতে বলেছেন হাইকোর্ট

| আপডেট :  ১১ জুলাই ২০২১, ০৬:৫২  | প্রকাশিত :  ১১ জুলাই ২০২১, ০৬:৫২

নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে হাসেম ফুডস কারখানায় অগ্নিকাণ্ডে আহত শ্রমিকদের চিকিৎসা নিশ্চিত করতে বলেছেন হাইকোর্ট। এ ব্যাপারে অ্যাটর্নি জেনারেলকে স্বাস্থ্য সচিব ও শ্রম সচিবের সঙ্গে কথা বলতে বলেছেন আদালত। একইসঙ্গে আহত, চিকিৎসাধীন শ্রমিকদের একটি তালিকা প্রকাশ করার কথাও বলেছেন আদালত । আজ রোববার (১১ জুলাই) বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিমের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ মন্তব্য করেন।

এদিন আদালত আহতদের তালিকা প্রকাশ করে সবার চিকিৎসার সুব্যবস্থার করতে এবং নিহতদের লাশ শনাক্তের পর ক্ষতিপূরণের বিষয়ে আবেদন করতে বলেন হাইকোর্ট। অগ্নিকাণ্ডে হতাহত শ্রমিকদের জন্য ক্ষতিপূরণ চেয়ে করা এক রিট আবেদনে আইনজীবী সারা হোসেন আদালতের অন্তর্বর্তী আদেশ চাইলে বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম রোববার রাষ্ট্রপক্ষকে এ নির্দেশ দেন। রিটের পক্ষে শুনানিতে ছিলেন আইনজীবী জেড আই খান পান্না, সারা হোসেন, অনীক আর হক, মো. শাহিনুজ্জামান। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল সমরেন্দ্রনাথ বিশ্বাস ও বিপুল বাগমার।

আইনজীবী সারা হোসেন শুনানিতে অগ্নিকাণ্ডে অর্ধশতাধিক মৃত্যুর তথ্য তুলে ধরে ক্ষতিপূরণের জন্য হাইকোর্টের অন্তর্বর্তীকালীন আদেশ চান। বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম তখন বলেন, আমার এখতিয়ার খুব সীমিত। একক বেঞ্চ হওয়ায় আমি তো কোনো রুল দিতে পারব না। রূপগঞ্জের ঘটনার প্রসঙ্গ ধরে বিচারক বলেন, খুবই দুঃখজনক ঘটনা ঘটেছে। সমস্ত জাতি আমরা শোকাহত। এরকম ঘটনা আমরা আশা করি না। এ ঘটনায় তো ইতোমধ্যে একটি ফৌজদারী মামলা হয়েছে। এ মামলায় মালিক পক্ষের প্রায় সবাই গ্রেপ্তারও হয়েছে। বিচার তো সময়সাপেক্ষ ব্যপার। এখন তদন্ত হবে।

ক্ষতিপূরণের নির্দেশনার ব্যাপারে বিচারপতি ইনায়েতুর রহিম বলেন, ঠিকই আছে, ক্ষতিপূরণের হকদার বটে। যতটুকু দেখেছি ঘটনার দিন আমাদের শ্রম প্রতিমন্ত্রী গিয়েছিলেন। উনারা আহতদের সরকারিভাবে ২ লাখ টাকা করে দেওয়ার কথা বলেছেন। আজকে সকালে পত্রিকায় দেখেছি শ্রম সচিব হাসপাতালে গিয়ে আহতদের কিছু ক্ষতিপূরণ দেওয়ার কথাও বলেছেন। সেটি পর্যাপ্ত কিনা জানি না। তিনি বলেন, আর একটা বিষয় হল, যে মৃত্যুগুলো হয়েছে, এখন পর্যন্ত ৫২টি লাশের মধ্যে মাত্র একটা লাশের পরিচয় নিশ্চিত হয়ে হস্তান্তর করতে পেরেছে। বাকি ৫১টি লাশ চিহ্নিত করাই সম্ভব হচ্ছে না।

তিনি আরও বলেন, ডিএনএ টেস্ট হবে এবং এই প্রক্রিয়া ২১ দিনের আগে সম্পন্ন হবে না। মৃতদেহগুলো যতক্ষণ পর্যন্ত চিহ্নিত না হচ্ছে, যতক্ষণ লাশগুলো তাদের আত্মীয়-স্বজনদের কাছে না যাচ্ছে, ততক্ষণ পর্যন্ত কীভাবে ক্ষতিপূরণ নির্ণয় করা হবে। আপানাদের (রিট আবেদনকারীদের) একটু অপেক্ষা করা দরকার।

বিচারক বলেন, গত বছর ইউনাইটেড হাসপাতালের আগুন লাগার পর যেসব রোগীর মৃত্যু হয়েছিল, তাদের ক্ষতিপূরণের বিষয়ে রুল জারি না করে একটি অন্তর্বর্তীকালীন আদেশ দিয়েছিল হাই কোর্ট। পরে আপিল বিভাগে প্রশ্ন উঠেছিল, রুল জারি না করে টাকার পরিমাণ নির্ধারণ করে ক্ষতিপূরণ নির্ধারণ করতে পারি কিনা। পরে বোধ হয় নিয়মিত মামলা ফাইল করে রুল জারি করে তারপর সেটেল হয়েছে। এক্ষেত্রে কিন্তু আমাদের কোর্টের সীমাবদ্ধতা আছে। বিচারপতি ইনায়েতুর রহিম রিটকারীদের উদ্দেশে বলেন, আমার মনে হয় এটাই বোধয় প্রথম যে এরকম একটি ঘটনা ঘটার পর মালিকপক্ষকে খুব দ্রুত বিচারের আওতায় আইনের আওতায় নিয়ে আসা হয়েছে। কাজ হচ্ছে, দেখা যাক। ক্ষতিপূরণের বিষয়ে একটু সময় দেন, আমার মনে হয় যে নিয়মিত কোর্ট চালু হলে নিয়মিত মামলা ফাইল করেন।

আইনজীবী রেজাউল করিম এসময় বলেন, চিকিৎসার খরচ যেন কোম্পানি বহন করে এরকম একটা নির্দেশনা দেন। তাদের অবহেলাতেই এ দুর্ঘটনা ঘটেছে। বিচারক বলেন, কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালকসহ সবাই তো এখন জেলখানায়। আর কোম্পানি বিজ্ঞাপন দিয়ে বলেছে তারা খরচ দেবে। না দিলে আসবেন, বিষয়টা আমরা দেখব। একটু অপেক্ষা করেন। সময় যেতে দিন। আইনজীবী রেজাউল করিম বলেন, শ্রম আইনের ৩৪ ধারা অনুযায়ী শিশু এবং কিশোরদের নিয়োগই দেওয়া যায় না। তারা সেটি লঙ্ঘন করেছে।

এ ঘটনায় শনিবার পুলিশ বাদি হয়ে একটি হত্যা মামলা দায়ের করে। মামলায় হাসেম ফুডস লিমিটেডের মালিক মো. আবুল হাসেম ও তার চার ছেলেসহ আটজনকে গ্রেপ্তার করে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য রিমান্ডে পাঠানো হয়।

গত ৮ জুলাই বৃহস্পতিবার বিকেলে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে সজিব গ্রুপের হাসেম ফুডসের সেজান জুসের কারখানায় আগুন লেগে ব্যাপক ব্যাপক হতাহতের ঘটনা ঘটে। সেখান থেকে এখন পর্যন্ত ৫২ জন শ্রমিকের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। আহত হয়েছেন।

আরও পড়ুন


  • সর্বশেষ খবর
  • সর্বাধিক পঠিত