বাড্ডায় বাসায় জাল নোটের কারখানা, স্বামী-স্ত্রী গ্রেফতার
রাজধানীর বাড্ডায় একটি বাসায় জাল নোট তৈরির কারখানা পেয়েছে গোয়েন্দা পুলিশ। কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে কয়েক কোটি টাকার জাল নোট বাজারে ছাড়ার প্রস্তুতি চলছিল ঢাকার ভাটারায় নুরের চালার একটি বাড়িতে। দীর্ঘ দশ বছর ধরে এমন জাল টাকা তৈরি করে সারাদেশে ছড়িয়ে দিত আব্দুর রহিম ও ফাতেমা দম্পতি। কয়েক হাত ঘুরে ভোক্তা পর্যায়ে এসব জাল নোট ছড়িয়ে দিতে দেশজুড়ে ছিল ডিলার।
সোমবার (১২ জুলাই) ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) গুলশান বিভাগ অভিযান চালায় বাসাটিতে। অভিযানে গ্রেপ্তার পাঁচজনের মধ্যে রয়েছেন- রহিম শেখ ও তার স্ত্রী ফাতেমা বেগম এবং তাদের সহযোগী হেলাল খান, আনোয়ার হোসেন ও ইসরাফিল আমিন।
আব্দুর রহিম ও ফাতেমা দম্পতি মিলে সেখানে মাসে কোটি কোটি টাকা মূল্যের নোট তৈরি করতেন। এক লাখ টাকার জাল নোট পাইকারিতে ১২-১৫ হাজার টাকায় বিক্রি করতেন তারা।
বেশির ভাগ সময়েই ভেতর থেকে বন্ধ থাকত বাসাটি। ডিবি পুলিশের অভিযানে দেখা যায়, স্বামী-স্ত্রী মিলে সেখানে টাকা বানানোর রীতিমতো টাঁকশাল খুলে বসেছেন। খাটের নিচ থেকে শুরু করে পুরো বাসায় থরে থরে সাজানো নতুন টাকার বান্ডিল। টাকা তৈরির কাগজ, প্রিন্টার, কালি, নিরাপত্তা সুতা- সবই আছে সেখানে। যার সবই জাল।
জাল টাকা তৈরির এ কারখানা থেকে ১০০০ টাকা ও ৫০০ টাকা মূল্যমানের প্রায় ৪৩ লাখ জাল টাকা, একটি ল্যাপটপ, দুটি কালার প্রিন্টার, আঠা ও আইকা, বিভিন্ন ধরনের রং, কাগজ, নিরাপত্তা সুতার বান্ডিল, লেমিনেটিং মেশিন, কাটার, টাকায় ব্যবহূত বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতি ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের লোগোযুক্ত বিশেষ কাগজ জব্দ করা হয়েছে। এসব উপকরণ দিয়ে কয়েক কোটি টাকার জাল নোট তৈরি করা সম্ভব।
গোয়েন্দা পুলিশের গুলশান বিভাগের উপ-কমিশনার মশিউর রহমান বলেন, এই কারখানাটি থেকে প্রায় ৪৩ লাখ টাকার জাল নোট ও এসব নোট তৈরির প্রচুর পরিমাণ উপকরণ মিলেছে। রোয়া ওই কারখাটির মালিক রহিম ও ফাতেমা মাসে কোটি কোটি টাকার জাল নোট তৈরি করত। ফাতিমা ২০১৯ সালে হাতিরঝিল এলাকার একটি বাসায় জাল নোট তৈরির সময় অপর সহযোগীসহ হাতেনাতে ধরা পড়লেও তার স্বামী রহিম পালিয়ে গিয়েছিল। এরা সবাই জাল নোট তৈরি ও মাদককের কারবারে জড়িত থাকার অভিযোগে গ্রেপ্তার হয়েছিল বলে মশিউর জানান।
তিনি বলেন, দীর্ঘদিন ধরে জাল নোট ‘খুচরা এবং পাইকারি বিক্রি করার’ পাশাপাশি গত তিন বছর ধরে ঈদসহ অন্যান্য উৎসবের আগে আগে জাল নোট তৈরি করে বাজারে ছাড়ার কথা তারা ‘প্রাথমিকভাবে স্বীকার’ করেছে। হেলাল খান একসময় গার্মেন্টস পণ্যের ব্যবসা করলেও ইয়াবার নেশা ও কারবার করে লোকসানের শিকার হন। এখন কক্সবাজার-টেকনাফ থেকে ইয়াবা ব্যবসার পাশাপাশি জাল টাকা তৈরিতে যুক্ত। ডিসি মশিউর বলেন, একহাজার টাকার ১০০ জাল নোট তৈরিতে সাত থেকে আট হাজার টাকা খরচ হয়। তাই এরা একহাজার টাকার ১০০টির বান্ডেল পাইকারিতে ১২ থেকে ১৫ হাজার টাকায় বিক্রি করে বলে জানিয়েছে।
গ্রেপ্তার আব্দুর রহিম জানান, ২০১০ সালে তিনি এই পেশায় আসেন। তখন জাল টাকা কিনে দোকানে দোকানে ভাঙাতেন। কিন্তু ওই পেশায় তেমন লাভ হতো না। পরে মাসে ৫০ হাজার টাকা বেতনের আশ্বাসে বরিশালের বাউফলের সোহাগ নামে একজনের সঙ্গে কাজ শুরু করেন। ছয় মাস তার কাছ থেকে জাল টাকা তৈরির শিখে নিজে আলাদাভাবে টাকা বানানোর কাজ শুরু করেন। জাল টাকা তৈরির জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের হাতে দুইবার ধরা পড়ে জেলেও খেটেছেন।
কোরবানির হাটে কীভাবে জাল টাকা সরবরাহ করা হতো জানতে চাইলে আব্দুর রহিম বলেন, জাল নোট নিয়ে আমাদের লোকজন ক্রেতা সেজে বাজারে যায়। এরপর গরুর মালিকের সঙ্গে দরদাম করে। পরে সব জাল নোট ওই গরুর মালিককে দেয়া হয়। ওই গরুর মালিক বয়স্ক বা সহজ সরল কি-না তা দেখা হয়। গ্রামের বা সহজ সরল মানুষের কাছে টাকা দিলে তারা এসব না দেখে পকেটে রেখে দেয়। নতুন টাকা ভেবে দেশে চলে যায়।
ডিবি কর্মকর্তা মশিউর রহমান বলেন, গ্রেপ্তার পাঁচজনের বিরুদ্ধে বিশেষ ক্ষমতা আইনে মামলা করা হয়েছে। তাদের রিমান্ডে নিয়ে জাল টাকার পাইকার ও খুচরা বিক্রেতাদের বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।
আরও পড়ুন
- সর্বশেষ খবর
- সর্বাধিক পঠিত