নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে অবৈধ ড্রেজার বসিয়ে বালু উত্তোলন
ইমরান হোসেন,পটুয়াখালী থেকে: পটুয়াখালীতে খালে ড্রেজার মেশিন বসিয়ে প্রভাবশালীরা অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করে বিক্রির অভিযোগ অভিযোগ উঠেছে। এমন অভিযোগ পেয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ঘটনাস্থলে গিয়ে তা বন্ধ করে দিয়েছেন। কিন্তু উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ঘটনাস্থল ত্যাগ করার পরই নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে ফের বালু তোলা শুরু করেছে প্রভাবশালীরা।
গলাচিপা উপজেলার আমখোলা ইউনিয়নের বাউরিয়া গ্রামের ভদ্রা নদী ও সিপাইর হাট খাল থেকে অনেকদিন ধরে ড্রেজার মেশিন বসিয়ে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করে বিক্রি করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে ড্রেজার মেশিন মালিক মোঃ শাহাবুদ্দিন ও প্রভাবশালীদের বিরুদ্ধে। ওই নদী ও খাল থেকে বালু উত্তোলন কারায় তীরবর্তী আবাদি জমি এবং বাড়িঘর ধসে বিলীন হওয়ার আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা। এ ব্যাপারে প্রতিকার পেতে ভুক্তভোগীরা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, উপজেলা মৎস কর্মকর্তা, কমিশনার (ভুমি) ও গলাচিপা থানায় অভিযোগ করেছেন।
অভিযোগে জানা গেছে, দুইমাস আগে সিপাইর হাটের বদ্ধ খাল হতে বালি তোলার জন্য ড্রেজার মেশিন বসায়। ওই খালের পশ্চিম পাড় হিন্দু সম্প্রদায় ও পূর্ব পাড় মুসলিম সম্প্রদায়ের বসবাস। দুই পাড়েন মানুষ জানতে চায় তাদের বালি তোলার অনুমতি আছে কিনা তারা জানায় এসব খাল থেকে বালি তোলার অনুমতি লাগেনা । বদ্ধ খালে বালি তুললে পাড় ভাঙ্গবে এবং খালের মাঝখানে একাধিক গর্তের সৃষ্ঠি হবে বলে দুই পাড়ের মানুষ বালি উত্তোলনে নিষেধ করেন। তারা উত্তোলন বন্ধ করে চলে যায়। পরবর্তীতে স্থানীয় প্রভাবশালী কয়েকজন ও বহিরাগত কিছু সন্ত্রাসী এসে আমাদেরকে বিভিন্ন ধরনের ভয়ভীতি দেখায়। বিভিন্ন ধরনের হুমকি দিয়ে এলাকায় আতঙ্ক সৃষ্টি করে এবং জোর করে বালি উত্তোলন করবে বলে জানায়। বর্তমানে উক্ত খাল হতে বালি উত্তোলন করলে আমাদের খালের দুই পাড় ভেঙ্গে পড়বে যার মধ্যে পূর্ব পাড় ঘেষে গ্রামের মানুষের চলাচলের কাচা মাটির রাস্তা। এই কাচামাটির রাস্তাটিও বর্তমানে বিভিন্ন জায়গায় ভাঙ্গে খালে পরে গেছে। উল্লেখ্য উক্ত খাল উপজেলা জলমহল ইজারা প্রাপ্ত সমিতি চারিআনি বাউরিয়া মৎস্যজীবী সমবায় সমিতি লিঃ এর মাছ চাষ প্রকল্পের অধিনে আছে। খালে বর্তমানে বিভিন্ন প্রজাতির লক্ষাধিক টাকার মাছ রয়েছে। কিন্তু বালি উত্তোলনের কারনে খালের মাছের ব্যাপক ক্ষতি হবে ও সৃষ্ঠ গর্তের কারনে খালের চাষকৃত মাছ জাল দিয়ে ধরার আর ব্যবস্থা থাকবেনা।
ঘটনা স্থলে গিয়ে দেখা জানা যায়, ড্রেজার মেশিন মালিক মো. শাহাবুদ্দিন ও প্রভাবশালীরা মিলি খাল থেকে বালু উত্তোলন করছেন। এ বালু গজালিয়া ইউনিয়নের সাবেক ইউপি সদস্য ঠিকাদার মিজান মেম্বারের কাছে বিক্রি করছেন।
ওই খালের পাড়ের বাসিন্দা আবু তালেব জানায়, ‘এমনিতেই রাস্তা ভেঙ্গে খালে পড়ে যাইতেছে। তাই আমরা বালু উত্তোলনে বাধা দিছি। তারা জোর করে বালু উত্তোলন করতেছে। বাধা দেয়ায় আমাদেরকে নানান ধরনের হুমকি-ধামকি দেখাচ্ছে। গতকাল রাতে হিন্দু পাড়ায় অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে অনেকের কাছ থেকে দস্তগাত নিয়েছে। বালু উত্তোলন বন্ধ করতে বিভিন্ন জায়গায় আমরা অভিযোগ করছি এতে কোন লাভ হয়নি। ইউএনও এসে নিষেধ করলে দুই ঘন্টার মতো বালু উত্তলন বন্ধ ছিলো তারপরে যেই সেই।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে খাল পাড়ের অন্য এক নিন্দু বাসিন্দা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘আমাদের আর কোন উপায় নেই দ্যাশের এই প্রভাবশালীরা যা কইতে আছে তাই বধ্য হয়ে হোনতে অইবে। মাইর দেলেও খাইতে হইবে । দেহেন তো ইউএনও আইয়া এই ড্রেজার বন্ধ করতে পারছে পরে নাই। তারা ইউএনও এর কথাই শোনেনা, আমরা তো সাধারণ মানুষ তাদের বুহুদ অত্যাচার ও নির্যাতন সহ্য করতে অয়। গতকাল রাতে লাডি-ঠেঙ্গা লইয়া আইছে কি ব্যাপার তারা বলে এহানে স্বাক্ষর দেন, দিয়া দিছি। দেহিও নাই কিতে স্বাক্ষর দিছি। এই খাল হইতে বালু উডাইলে আমাদের যে কি সমস্যা অইবে তা তো অন্য কেউ বুঝবেনা। তবুও মোহে লাগাম দিয়ে বসে থাহা ছাড়া কোন উপায় নাই।
ড্রেজার মেশিনের মালিক মোঃ শাহাবুদ্দিন বলেন, ‘ উপজেলার আওয়ামীলীগের নেতারা, উপজেলার চেয়ারম্যান ও রহিম হাওলাদার বালু উঠাইতে বলছে তাই আমি বালু উঠাইতেছি। ওই খাল থেকে অল্প কিছু বালু উঠাইলে সমস্যা হবেনা।
ঠিকাদার মোঃ মিজান মেম্বার বলেন, আমি শাহাবুদ্দিন এর কাছ থেকে বালু ক্রায় করেছি সে কোন জায়গা থেকে বালু দিবে সেটা তার ব্যাপার। কিন্তু যে রাস্তায় কাজ চলছে সেখানে অন্য জায়গা থেকে বালু নিতে অনেক কষ্ট হচ্ছে তাই ওই খাল থেকে বালু উঠিয়ে দেয়ার কথা ছিলো।
আমখোলা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মোঃ কামরুজ্জামান মনির বলেন, সকালে বালু উত্তোলন বন্ধ করতে ঘটনাস্থলে ইউএনও স্যারে আসছেন। আমি সারাদিন ব্যস্ত ছিলাম তাই খোঁজখবর নিতে পারিনি। কিন্তু ব্যাপারটা আমি শুনছি বর্তমানে বালু উত্তোলন বন্ধ রয়েছে।
এবিষয় জানতে গলাচিপা উপজেলা চেয়ারম্যান মুহাম্মদ শাহীন শাহের মুঠোফোনে একাধিকবার কল দিয়েও পাওয়া যায়নি।
গলাচিপা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আশিষ কুমার জানায়, একদিন আগে অভিযোগ পেয়ে ড্রেজার বন্ধ করে করে দেয়া হয় ওই দিন ড্রেজার চলেনি। আজকে সকালে ওই এলাকা থেকে আমাকে জানায় ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। এতে ঘটনাস্থলে গিয়ে ড্রেজার মেশিন বন্ধ করে দিয়েছি।এই আপনার মাধ্যমে জানতে পাড়লাম তারা পুনরায় বালু উত্তোলন করতেছে। আমি এখনি বন্ধ করার ব্যবস্থা করতেছি।
এবিষয় পটুয়াখালী জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ কামাল হোসেন বলেন,কোন জায়গা থেকে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে ঠিকানা দেন। তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
আরও পড়ুন
- সর্বশেষ খবর
- সর্বাধিক পঠিত