শ্রমিকদের কর্মস্থলে ফিরিয়ে আনতে পরিবহন ব্যবস্থার দাবি
চলমান লকডাউনের মধ্যেই কাল রবিবার ১ আগস্ট থেকে সারাদেশের রপ্তানিমুখী শিল্প কারখানাগুলো খুলে দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে সরকার। এর আগে শিগগিরই শিল্প কারখানা খুলে দিতে অনুরোধ জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী ও মন্ত্রিপরিষদ সচিব বরাবর দফায় দফায় চিঠি দিয়েছিল বিভিন্ন ব্যবসায়ী সংগঠন। সর্বশেষ গত বৃহস্পতিবার মন্ত্রিপরিষদ সচিবের সঙ্গে দেখা করেন ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই, বিজিএমইএসহ বেশ কয়েকটি সংগঠনের নেতারা। এরই পরিপ্রেক্ষিতে গতকাল শুক্রবার মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ এক প্রজ্ঞাপনে রপ্তানিমুখী কারখানাকে ১ আগস্ট সকাল ৬টা থেকে বিধিনিষেধের আওতাবহির্ভূত রাখার সিদ্ধান্ত জানায়।
এদিকে কারখানা খুলে দেওয়ার সিদ্ধান্তে সরকারের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়েছে মালিক-শ্রমিক উভয় পক্ষ। তবে লকডাউনের মধ্যে কারখানা খুলে দেওয়ায় বিপাকে পড়েছেন ঈদ করতে গ্রামে যাওয়া শ্রমিকরা। তাদের স্ব স্ব কর্মস্থলে ফিরিয়ে আনতে পরিবহন ব্যবস্থার দাবি জানিয়েছেন শ্রমিক নেতারা। তারা বলছেন, শিল্প বাঁচলে শ্রমিক বাঁচবে। শিল্পকে যেমন বাঁচাতে হবে, তেমনি শ্রমিকদেরও বাঁচাতে হবে। শ্রমিকদের কর্মস্থলে আনতে ব্যবস্থা করতে হবে পরিবহনের। পাশাপাশি কাজে যোগ দেওয়ার সাত দিনের মধ্যে সব শ্রমিককে টিকা দেওয়ার দাবিও জানিয়েছেন তারা।
তবে আপাতত কারখানার আশপাশের শ্রমিক নিয়েই ফ্যাক্টরি খুলতে চান শিল্প মালিকরা। তারা বলছেন, দেশের বিভিন্ন জায়গায় শিল্প কারখানা ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। শ্রমিকদের কাজে যোগ দিতে তেমন সমস্যা হবে না। ঈদের পর ইতোমধ্যে তাদের অনেকে নিজেদের বাসস্থলে চলে আসছে। যারা এখনো আসেনি তাদের লকডাউনের পর এসে কাজে যোগ দেওয়ার সুযোগ থাকবে। কারখানা মালিকরা আরও বলছেন, আন্তর্জাতিক বাজার হারানোর শঙ্কা, সরবরাহ শৃঙ্খল ভেঙে পড়া, বন্দরে জট, সার্বিক অর্থনীতিসহ সবকিছু বিবেচনায় নিয়েই তারা সরকারকে রপ্তানিমুখী শিল্প কারখানা খুলে দেওয়ার অনুরোধ জানাতে বাধ্য হয়েছেন।
করোনা ভাইরাসের উচ্চ সংক্রমণ হারের কারণে গত ঈদুল আজহার পরদিন ২৩ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত কঠোর লকডাউন ঘোষণা করে সরকার। এ সময় শিল্প কারখানা, সরকার-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানসহ সব ধরনের অফিস আদালত বন্ধ রাখা হয়। যদিও ঈদের আগের লকডাউনের মধ্যে শিল্প কারখানা চালু ছিল।
তৈরি পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর সভাপতি ফারুক হাসান আমাদের সময়কে বলেন, ‘আপাতত শিল্প কারখানার আশপাশের শ্রমিক নিয়ে কারখানা চালু হবে। তাদের কাজে যোগ দিতে সমস্যা হবে না। তাদের দিয়ে আপাতত কাজ চালিয়ে নেওয়া হবে। সব শ্রমিক তো শহরমুখী নয়। এখন দেশের বিভিন্ন জায়গায় শিল্প কারখানা হয়েছে। তারা তাদের মতো করে আসবে।’ এক প্রশ্নের জবাবে ফারুক হাসান বলেন, ‘আপাতত আমরা কোনো পরিবহনের ব্যবস্থা করছি না। কারণ সরকার লকডাউনে জরুরি সেবা ছাড়া অফিস আদালত, পরিবহন সবকিছু এখনো সরকার বন্ধ রেখেছে। রপ্তানিমুখী শিল্প কারখানা কেবল খোলার অনুমতি দিয়েছে, সেখানে আগ বাড়িয়ে আমরা এ চিন্তা করব না।’
রপ্তানিকারক শিল্প মালিকদের সংগঠন ইএবি সভাপতি ও সংসদ সদস্য আবদুস সালাম মুর্শেদী বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শিল্পবান্ধব মানুষ। তিনি দেশের অর্থনীতি, মানুষের জীবন-জীবিকার কথা চিন্তা করে শিল্প কারখানা খুলে দেওয়ার অনুমতি দিয়েছেন। আমরা তার কাছে কৃতজ্ঞ। শিল্প না বাঁচলে শ্রমিক বাঁচবে না। দেশের অর্থনীতি অচল হয়ে পড়বে।’ নিট পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিকেএমইএ সহসভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, অল্প সংখ্যক শ্রমিক নিয়ে সীমিত আকারে কাজ শুরু করি। তবে অনেক শ্রমিক ইতোমধ্যে কারখানার আশপাশে চলে এসেছে।
জাতীয় গার্মেন্টস শ্রমিক কর্মচারী লীগের সভাপতি সিরাজুল ইসলাম রনি বলেন, ‘শিল্প কারখানা খুলে দেওয়ায় সরকারকে ধন্যবাদ জানাই। সরকার শ্রমিকদের কষ্টের কথা চিন্তা করেছেন। বাস্তবে শ্রমিকরা অনেক কষ্টে আছেন। কাজ না থাকলে শ্রমিকরা কী করে খাবে? দেশের অর্থনীতির জন্য শিল্প কারখানা যেমন খোলা রাখা প্রয়োজন, তেমনি লাখ লাখ শ্রমিকের জীবন বাঁচাতেও তা দরকার। তবে অবশ্যই কঠোরভাবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে কারখানা চালাতে হবে। শ্রমিকদের স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করতে হবে।’
শ্রমিক নেতা অ্যাডভোকেট মন্টু ঘোষ বলেন, ‘শ্রমিকদের জন্য পরিবহন ব্যবস্থা করতে হবে। অন্তত যেসব এলাকায় শ্রমিক বেশি থাকে, সেসব এলাকা থেকে তাদের নিয়ে আসতে হবে। পাশাপাশি সব শ্রমিককে টিকা দেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে।
এ বিষয়ে বিজিএমইএ সভাপতি ফারুক হাসান বলেন, কারখানার আশপাশে বসবাসকারী শ্রমিকদের দিয়েই ১ আগস্ট উৎপাদন কার্যক্রম চালু করা হবে। এ সময়ের মধ্যে যেসব শ্রমিক কাজে যোগ দিতে পারবেন না তাদের চাকরি থেকে ছাটাই করা হবে না। কঠোর বিধিনিষেধ শেষ হলে (৫ আগস্টের পর) পর্যায়ক্রমে ঈদের ছুটিতে গ্রামে যাওয়া শ্রমিকরা কারখানার কাজে যোগ দিতে পারবেন।
আরও পড়ুন
- সর্বশেষ খবর
- সর্বাধিক পঠিত