হোটেল-রেস্তোরাঁ খুলতে চায় মালিক সমিতি
করোনা সংক্রমণ রোধে কঠোর লকডাউনে হোটেল-রেস্তোরাঁ বন্ধ রয়েছে। দীর্ঘদিন বন্ধের কারণে টিকে থাকার লড়াইয়ে হিমশিম খাচ্ছেন ব্যবসায়ী ও সংশ্লিষ্টরা। আগামী ৫ আগস্টের পর স্বাস্থ্যবিধি মেনে, হোটেল-রেস্তোরাঁ স্বাভাবিক নিয়মে খোলা রাখতে চান মালিকরা। তা যদি সম্ভব না হলেও অন্তত অর্ধেক আসনে বসিয়ে হোটেল-রেস্তোরাঁ চালুর দাবি জানিয়েছেন তারা।
আজ সোমবার (২ আগস্ট) বেলা সাড়ে ১১টায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) নসরুল হামিদ মিলনায়তনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ রেস্তোরাঁ মালিক সমিতি এ দাবি জানায়। এ পরিস্থিতিতে প্রধানমন্ত্রীর কাছে হোটেল-রেস্তোরাঁ খুলে দেয়ার পাশাপাশি অন্যান্য প্রস্তাবনা তুলে ধরেছেন তারা।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন সমিতির মহাসচিব ইমরান হাসান। তিনি বলেন, মহামারি করোনাভাইরাসের আঘাতে রেস্তোরাঁ সেক্টর সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তিনি আরও বলেন, এখন পর্যন্ত করোনার কারণে সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী কখনো অর্ধেক আসনে বসিয়ে আবার কখনো শুধু অনলাইন/টেকওয়ের মাধ্যমে আমাদের ব্যবসা সীমিত রেখেছি। কিন্তু টেকওয়ে দিয়ে ব্যবসা চালানো সম্ভব নয়। রেস্তোরাঁ মালিক সমিতি এই নেতা আরও বলেন হয়, এখন শুধু টেকওয়ে চলছে। তাতে বিক্রি হচ্ছে না। রেস্তোরাঁ ব্যবসায়ীরা আজ দিশাহারা ও বর্তমানে নানাবিধ সমস্যায় জর্জরিত।
ইমরান হাসান বলেন, বর্তমানে শুধু অনলাইন ডেলিভারির সুযোগ দিয়ে রেস্তোরাঁ বন্ধ রাখার ঘোষণাটি দুরভিসন্ধিমূলক। এতে দেশীয় ব্যবসায়ীদের কোণঠাসা করা হচ্ছে। এখানে দেশি-বিদেশি স্বার্থান্বেষী মহলের হাত রয়েছে। যারা টেকওয়ে ব্যবসা জনপ্রিয় করতে চাচ্ছে। তাদের হাতে ব্যবসা নিতে চাচ্ছে।
রেস্তোরাঁ মালিক সমিতি জানায়, সারা দেশে ৬০ হাজার রেস্তোরাঁয় ৩০ লাখ কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং প্রায় দুই কোটি মানুষ প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত রয়েছে। তারা এখন মানবেতর জীবন-যাপন করছে। সারা দেশে শতকরা ৮০ ভাগ রেস্তোরাঁ বন্ধ রয়েছে। বর্তমানে টেকওয়ে, পার্সেল ও অনলাইন ডেলিভারি করছে এমন প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা মাত্র ২ থেকে ৩ শতাংশ।
প্রধানমন্ত্রীর কাছে রেস্তোরাঁ খুলে দেওয়ার পাশাপাশি অন্যান্য প্রস্তাবনায় বলা হয়, হোটেল-রেস্তোরাঁ ব্যবসাকে চলমান রাখার জন্য রানিং ক্যাপিটাল হিসেবে এসএমই খাত থেকে এই সেক্টরে ২০ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ প্রদান করুন। যা সহজশর্তে, স্বল্পসুদে জামানতবিহীন এবং দীর্ঘমেয়াদি ঋণ হবে।
এ ছাড়া যেহেতু রেস্তোরাঁ খাতটি একটি সেবা খাত, সেহেতু মালিক-শ্রমিকদের অগ্রাধিকার ভিত্তিতে করোনার টিকা প্রদান করা জরুরি। এ বিষয়ে সুদৃষ্টি দেবেন এটাই আমাদের দাবি। সমিতির পক্ষ থেকে বলা হয়, হোটেল-রেস্তোরাঁ খাতে কর্মরত শ্রমিকদের প্রণোদনা প্রদান করতে হবে। এ ছাড়া ই-কমার্স টেকওয়ে, পার্সেল ও অনলাইন ডেলিভারির ক্ষেত্রে বহির্বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে সর্বোচ্চ ১০ শতাংশ কমিশন করা ও একটি সুষ্ঠু নীতিমালা প্রণয়ন করে বিষয়টি নিয়ন্ত্রণ করা প্রয়োজন।
প্রধানমন্ত্রীর কাছে রেস্তোরাঁ মালিক সমিতির দাবি-
১. পচনশীল (পেরিশেবল) পণ্য বিক্রি করার ক্ষেত্রে লোন দেওয়া যাবে না বলে বাংলাদেশ ব্যাংকের লোন দেওয়ার নির্দেশনা রয়েছে। তাই কোনো ব্যাংক-ই হোটেল-রেস্তোরাঁ খাতে লোন দিচ্ছে না।
২. জাতীয় রাজস্ব খাতে রেস্তোরাঁ সেক্টরের অনেক অংশীদারিত্ব এবং পর্যটন শিল্পের প্রধান নিয়ামক শক্তি হওয়া সত্ত্বেও শিল্পের মর্যাদা পাওয়া যাচ্ছে না।
৩. হোটেল রেস্তোরাঁ ব্যবসাকে চলমান রাখার জন্য রানিং ক্যাপিটাল হিসেবে এসএমই খাত থেকে এই সেক্টরে ২০ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়ে সহজ শর্তে, স্বল্প সুদে জামানত বিহীন এবং দীর্ঘমেয়াদি ঋণ দিতে হবে।
৪. যেহেতু রেস্তোরাঁ খাতটি একটি সেবা খাত, সেহেতু হোটেল-রেস্তোরাঁ মালিক-শ্রমিকদের অগ্রাধিকার ভিত্তিতে করোনার টিকা দেওয়া জরুরি। এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় সু-দৃষ্টি দেবেন, এটি আমাদের প্রাণের দাবি।
৫. হোটেল-রেস্তোরাঁ খাতে কর্মরত শ্রমিকদের প্রণোদনা দিতে হবে। এক্ষেত্রে শ্রমিকদের মোবাইলের মাধ্যমে নগদ অর্থ অথবা নির্দিষ্ট কার্ড দেওয়ার মাধ্যমে মাসিকভাবে খাদ্য সাহায্য দেওয়া যেতে পারে।
৬. হোটেল-রেস্তোরাঁ খাতকে শিল্পের মর্যাদা দিতে হবে। যেহেতু হোটেল-রেস্তোরাঁ খাতটি পর্যটন শিল্পের প্রধান নিয়ামক শক্তি। এছাড়া ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প কারখানা পরিচালনা করতে যে পরিমাণ নিয়মনীতি বাস্তবায়ন প্রয়োজন তার চেয়ে অধিক নিয়মনীতি বাস্তবায়ন হয়ে থাকে হোটেল-রেস্তোরাঁ খাতে।
৭. হোটেল-রেস্তোরাঁ খাতকে একাধিক মন্ত্রণালয়ের অধীনে না রেখে একটি নির্দিষ্ট মন্ত্রণালয়ের অধীনে নিয়ে শিল্পের মর্যাদা দিতে হবে ও মনিটরিং ব্যবস্থা চালু করতে হবে।
৮. চালু করা ই-কমার্স টেকএওয়ে, পার্সেল ও অনলাইন ডেলিভারির ক্ষেত্রে বহির্বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে সর্বোচ্চ ১০ শতাংশ কমিশন করা ও একটি সুষ্ঠু নীতিমালা প্রণয়ন করে তাদের নিয়ন্ত্রণ করা। বর্তমানে ডেলিভারি কোম্পানিগুলো স্বেচ্ছাচারীভাবে ব্যবসা পরিচালনার মাধ্যমে নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করছে, যা আমাদের ব্যবসায়িক স্বাধীনতার স্বকীয়তা বিনষ্ট করছে এবং আমরা মনে করি, এতে সার্বভৌমত্ব ভূলুণ্ঠিত হচ্ছে বা করছে। যেটিকে ইস্ট ইন্ডিয়ার নীল চাষের সঙ্গে তুলনা করা যেতে পারে। ইতোমধ্যে অনলাইনে পণ্য ডেলিভারির ক্ষেত্রে সরকার একটি নির্দেশনা দিয়েছে, যা অতি জরুরি ছিল। সে অনুযায়ী হোটেল-রেস্তোরাঁর ই-ফুড ডেলিভারির ক্ষেত্রেও সু-নির্দিষ্ট নীতিমালা দেওয়া জরুরি ও মনিটরিং ব্যবস্থা জোরালোভাবে করতে হবে, যাতে উভয়পক্ষের স্বার্থ সংরক্ষিত হয়।
আরও পড়ুন
- সর্বশেষ খবর
- সর্বাধিক পঠিত