‘যবুক বয়স থেকেই মধুমতি নদীতে ভাঙ্গন দেখছি’

| আপডেট :  ১৩ আগস্ট ২০২১, ০৪:৩৭  | প্রকাশিত :  ১৩ আগস্ট ২০২১, ০৪:৩৭

বাদল সাহা, গোপালগঞ্জ থেকে: গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার জালালাবাদ ইউনিয়নের ইছাখালি গ্রামের বৃদ্ধ নফের মোল্যা। বয়স এখন প্রায় ৮০। তার ৫ বিঘা ফসলি জমি, ভিটে মাটি আর বাড়ী চলে গেছে মধুমতি নদীর গর্ভে। এখন ৪ ছেলে, ৪ পুত্রবধূ আর ৬ নাতি নাতনীকে নিয়ে বাস করছেন পরের জমিতে।

বৃদ্ধ নফের মোল্যা বলেন, যবুক বয়স থেকেই মধুমতি নদীতে ভাঙ্গন দেখছি। তবে ৬ বছর ধরে মধুমতি নদীর ভাঙ্গন তীব্র আকার ধারন করেছে। সহায় সম্বল হারিয়ে এখন নি:স্ব। ছেলে মেয়ে নিয়ে এখন পরের জমিতে বাসবাস করতে হচ্ছে। স্থায়ী বাধ না দিলে আমার মত অবস্থা হবে নদী পারের বাসিন্দাদেরে।

শুধু নফের মোল্যা নয় তার মত একই অবস্থা গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার ইছাখালি, ডুবসি, চরঘোষাল, ঘাঘাধলইতলা, মধুপুর, গোবরা এবং কাশিয়ানী উপজেলার পারকরফা ও জয়বাংলা গ্রামের কয়েক’শ পরিবারের।

বৃহস্পতিবার (০৫ আগস্ট) বিকালে সদর উপজেলা ইছাখালি গ্রামে গিয়ে দেখা গেছে, এ গ্রামে মধুমতি নদীতে ভাঙ্গন চলছে প্রায় ৫০ বছর ধরে। এ গ্রামের অর্ধেক জায়গা এথন নদীর গর্ভে। তবে বিগত ৬ বছর ধরে চলছে মধুমতি নদীর তীব্র ভাঙ্গন। ইতিমধ্যে মধুমতি নদীর গর্ভে বিলিন হয়েছে হাজার হাজার একর ফসলি জমি, কয়েকশ বাড়িঘর আর বসত ভিটা। ফলে আতংকে রাত কাটে নদী পাড়ের এসব বাসিন্দাদের। কয়েকশ পরিবার স্বর্বস্ব হারিয়ে নি:স্ব হয়ে বসবাস করছেন খোলা আকাশের নিচে ও পরের জমিতে। বসত ভিটা বাঁচাতে অন্যত্র সরেছে অন্ততঃ এক হাজার পরিবার।

সদর ও কাশিয়ানী দুই উপজেলার মধুমতি নদীর অন্তত: ১০ পয়েন্টে রয়েছে তীব্র ভাঙ্গন। ভাঙ্গনের কবলে পড়ে বসত ঘর ও মালামাল বাঁচাতে অন্যত্র সরিয়ে নিচ্ছেন নদী পাড়ের বাসিন্দারা। কিছু এলাকায় পানি উন্নয়ন বোর্ড জিও ব্যাগ ফেলে ভাঙ্গন প্রতিরোধের ব্যবস্থা করলেও তা কোন কাজেই আসছে না। এতে হুমকির মুখে রয়েছে আরো বসত রাস্তাসহ বিভিন্ন স্থাপনা।

ইছাখালি গ্রামের মো: ইউনুস মোল্যা (৮০) বলেন, দীর্ঘ দিন ধরে মধুমতি নদীতে তীব্র ভাঙ্গন হচ্ছে। বাড়ী-ঘর, ফসলি জমি সব নদী গর্ভে চলে যাচ্ছে। এখন খোলা আকাশে নিচে বাস করতে হচ্ছে।

একই গ্রামের মক্তিযোদ্ধা মো: ইসুব আলী বলেন, ফসলি জমি যা ছিল সবই এখন মধুমতি নদীর মধ্যে চলে গেছে। বিভিন্ন সময় পানি উন্নয়ন বোর্ড জিও ব্যাগ ফেললেও কাজ কাজে আসছে না। স্থায়ী বাঁধ না হলে এই স্থান থেকে চলে যেতে হবে আমাদের।

একই গ্রামের হেমেলা খান (৬৫) ও লাইলী বেগম (৫৫) বলেন, দীর্ঘদিন ধরে স্বামীর জায়গার উপর বসবাস করে আসছিলাম। কিন্তু হঠাত করেই নদীর মধ্যে সব চলে গেছে। এখন ছেলে মেয়ে নিয়ে অন্যের জমিতে বাস করতে হচ্ছে।

ক্ষতিগ্রস্থ বাদশা সিকদার ও সুজন মাহমুদ বলেন, এ এলাকায় নদী ভাঙ্গনের কোন স্থায়ী সমাধান নেয় হয়নি। পানি উন্নয়ন বোর্ড কিছু জায়গায় জিও ব্যাগ ফেলে ভাঙ্গনরোধের চেষ্ঠা করছেন। কিন্তু এতে কোন কাজ হচ্ছে না। প্রতিনিয়ত নদী ভাঙ্গন হচ্ছে। এভাবে চলতে থাকলে একদিন ইছাখালি গ্রামটি হারিয়ে যাবে।

সদর উপজেলার জালালাবাদ ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান সুপারুল আলম টিকে বলেন, এ এলাকার তিন দিকেই মধুমতি নদী। প্রতি বছর মধুমতি নদীর ভাঙ্গনের কবলে পড়ে ইছাখালী, ডুবসীসহ কয়েকটি গ্রামের বাড়ি ঘর, ফসলি জমি নদীতে চলে যাচ্ছে। দ্রুত স্থায়ী বাঁধ নির্মাণ না হলে আরো পরিবার নদীর ভাঙ্গনের শিকার হবে।

গোপালগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী ফায়জুর রহমান জানান, জেলার নদী ভাঙ্গনরোধে ১১টি প্যাকেজের সমন্বয়ে প্রকল্প অনুমোদনের জন্য পাঠানো হয়েছিল। এর মধ্যে ৬টি প্যাকেজের ডিজাইন পাওয়া গেছে। চুড়ান্ত অনুমোদন পেলে দরপত্র আহবান করা হবে।

তিনি আরো বলেন, নদী ভাঙ্গনরোধে জরুরী ভিত্তিতে ভাঙ্গণ এলাকায় জিও ব্যাগ ফেলা হচ্ছে। এছাড়া খুব তারাতারি ৫’শ কোটি টাকার একটি ডিপিও পাওয়া যাচ্ছে। ডিপিওটি পাওয়া গেলে দ্রুত নদী ভাঙ্গনের স্থায়ী কাজ শুরু করা হবে।

আরও পড়ুন


  • সর্বশেষ খবর
  • সর্বাধিক পঠিত