ষড়যন্ত্রের পিছন থেকে যারা জড়িত ছিল তাদেরকে বিচার করেতে কমিশন গঠন করা উচিত: ফারুক খান
বাদল সাহা, গোপালগঞ্জ থেকে: কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য লে: কর্ণেল (অব:) ফারুক খান বলেছেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুকে হত্যার করার পিছনে যে যড়যন্ত্র হয়েছিল, সেই ষড়যন্ত্রের পিছন থেকে যারা জড়িত ছিল তাদেরকে বের করে উপযুক্ত শাস্তির ব্যবস্থা করার মাধ্যমে বাঙ্গলী জাতিকে কলঙ্ক মুক্ত করতে কমিশন গঠন করা উচিত। আমি প্রধানমন্ত্রীর কাছে সেই দাবী করছি।
আর কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারন সম্পাদক, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাসিম বলেছেন, বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বঙ্গবন্ধুর খুনিদের বিচার করার সুযোগ সৃস্টি হয়েছে, তাদের বিচার করা হয়েছে। কিন্তু খুনি মুশতাক-জিয়াগংদেরকে বিচার করা যায়নি। এই খুনিরদের আগেই মৃত্যু হয়েছে।
আজ রোববার (১৫ আগস্ট) সকাল ১১টা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৪৬-তম শাহাদাত বার্ষিকীতে বঙ্গবন্ধুর সমাধিতে শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দ এসব কথা বলেন।
কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য লে: কর্ণেল (অব:) ফারুক খান আরো বলেন, শোক দিবস শুধু বাংলাদেশেই নয় সারা বিশ্বে পালিত হচ্ছে। পৃথিবীতে অন্য কোন নেতা নেই যার শোক দিবসে সারা বিশ্বে পালিত হয়। বাংলাদেশসহ বিশ্বের এক লক্ষ স্থানে বঙ্গবন্ধুর শাহাদত বার্ষিকী পালিত হচ্ছে।
কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারন সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাসিম আরো বলেন, খুনি মোশতাক-জিয়াগংরাই হলো প্রকৃত খুনি এবং তাদের বিচারটি যদি প্রচলিত আইনে করা যেত তাহলে বাঙ্গলী জাতি খুশি হতো। ১৫ আগষ্টের হত্যাকান্ডের খুনিদের সাথে যে সকল ষড়যন্ত্রকারীরা জড়িত ছিল, যে সমস্ত কুশিলবরা এই অমানবিক হত্যাকান্ডের পথ তৈরী করেছে, বা পটভূমি সৃস্টি করেছে এবং পরবর্তী সময়ে বিভিন্ন পয্যায়ে তাদের যে অপরাজনীতি, সেই অপরাজনতি বন্ধের জন্য রাজনীতি থেকে চির নির্বাসন করতে হবে। স্বাভাবিক ধারার রাজনীতি এবং শান্তি সম্প্রতি-অসাম্প্রাদায়িক বাংলাদেশ বিনির্মানের মধ্যে দিয়ে এইসব কুশিলবদেরকে, খুনিদেরকে রাজনীতি থেকে চির নির্বাসন ঘটিয়ে শান্তি বাংলাদেশ আমরা প্রতিষ্ঠা করবো।
এর আগে গত বছরের মত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা করোনার কারনে টুঙ্গিপাড়ায় আসতে না পারলেও জাতীয় শোক দিবসে সকাল ১০টায় টুঙ্গিপাড়ায় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সমাধিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষে পুস্পস্তবক অর্পন করে শ্রদ্ধা জানান সামরিক সচিব মেজর জেনারেল নকিব আহমদ চৌধুরী। এ সময় তিন বাহিনীর একটি চৌকস দল গার্ড অব অনার প্রদান করেন। তখন বেজে ওঠে বিগউলের করুন সুর। পরে বঙ্গবন্ধু ও তাঁর পরিবারের শহীদ সদস্যদের রুহের মাগফেরাত কামনা করে ফাতেহাপাঠ ও বিশেষ মোনাজাতে অংশ নেন।
পরে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য লে: কর্ণেল (অব:) ফারুক খানের নেতৃত্বে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে শ্রদ্ধা জানায় নেতৃবৃন্দ। পরে বঙ্গবন্ধু সমাধি সৌধ কমপ্লেক্স মসজিদে মিলাদ মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়। এতে কেন্দ্রী ও স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ অংশ নেন।
এরপর জেলা ও পুলিশ প্রশাসন, মুক্তিযোদ্ধা ইউনিট কমান্ড, উপজেলা প্রশাসন, জেলা আওয়ামী লীগ, টুঙ্গিপাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগ, কেন্দ্রীীয় স্বেচ্ছাসেবক লীগ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, ছাত্রলীগ, যুবলীগ, মহিলা আওয়ামী লীগ, স্বেচ্ছাসেবকলীগ, উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন সংগঠন বঙ্গবন্ধুর সমাধিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানায়। এরপর সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে বিভিন্ন জেলা জেলা আগত বিভিন্ন শ্রেণী ও পেশার মানুষকে শ্রদ্ধা জানাতে বঙ্গবন্ধু সমাধি সৌধ কমপ্লেক্স উন্মুক্ত করে দেয়া হয়। সমাধিস্থল ফুলে ফুলে ভরে যায় বঙ্গবন্ধু প্রেমিদের ভালবাসায়।
এসময় কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান নিজের জীবন বিলেয়ে দিয়েছেন দেশের জন্য, দু:খী মানুষের জন্য। ১৫ আগস্ট জাতির পিতাকে যারা হত্যা করেছিল, সেই সব খুনিদের বিচার বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা করেছেন।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে এম আব্দুল মোমেন বলেছেন, বঙ্গবন্ধুর খুনীদের মধ্যে অনেককেই শাস্তি দেয়া হয়েছে। পলাতক ৫ খুনীর মধ্যে দুইজনের ঠিকানা পাওয়া গেছে। একজন আমেরিকায় ও অপরজন কানাডায় রয়েছে। আমাদের বিশ্বাস আমেরিকায় যে খুনি পলাতক রয়েছে তাকে স্বদেশে এনে বিচারের সম্মুখিন করতে পারবো। তাকে ফিরিয়ে আনতে সব ধরনের প্রচেষ্ঠা করা হচ্ছে। তবে বাকী তিনজনের সঠিক কোন ঠিকানা পাওয়া যায় নি। দেশবাসী ও প্রবাসীদের কাছে আমাদের আবেদন যে এই খুনিদের খোঁজ দিতে যে পারবে তাকে আমরা পুরস্কৃত করবো।
টুঙ্গিপাড়ার রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠানে প্রেসিডিয়াম সদস্য লে: কর্ণেল (অব:) ফারুক খান এমপি, পররাষ্ট্র মন্ত্রী এ কে এম আব্দুল মোমেন, শাজাহান খান এমপি, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাসিম, মির্জা আজম এমপি, এস এম কামাল হোসেন, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি চৌধুরী এমদাদুল হক, সাধারন সম্পাদক মাহাবুব আলী খান, টুঙ্গিপাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবুল বাশার খায়ের, সাধারন সম্পাদক মো: বাবুল শেখসহ দলীয় নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।
এদিকে, বঙ্গবন্ধুর ৪৬ তম শাহাদাত বার্ষিকীতে গোপালগঞ্জ জেলার ৫ উপজেলায় জেলা ও উপজেলা আওয়ামী লীগ, সহযোগী সংগঠন এবং ব্যক্তিগতভাবে ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড পর্যায়ে কাঙ্গালী ভোজের আয়োজন করা হয়েছে। মসজিদ, মন্দির ও গির্জায় দোয়া মাহফিল ও প্রার্থনার আয়োজন করা হয়। সকালে জেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলন করা হয়। পরে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা জানানো হয়। শোক দিবস উপলক্ষে গোপালগঞ্জসহ টুঙ্গিপাড়া উপজেলার বিভিন্ন বাসা-বাড়ী ও দোকানে কালো পতাকা টাঙ্গিয়ে এবং গোপালগঞ্জ-টুঙ্গিপাড়া সড়ক ও ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের গোপালগঞ্জ থেকে মুকসুদপুর পর্যন্ত তোড়ণ নির্মন করে শোকের আবহ সৃষ্টি করা হয়।
আরও পড়ুন
- সর্বশেষ খবর
- সর্বাধিক পঠিত