বৃহস্পতিবার থেকে পর্যটকদের জন্য খুলে দেওয়া হচ্ছে কুয়াকাটা

| আপডেট :  ১৮ আগস্ট ২০২১, ০৪:৪২  | প্রকাশিত :  ১৮ আগস্ট ২০২১, ০৪:৪২

ইমরান হোসেন,পটুয়াখালী থেকে: কুয়াকাটা পর্যটকদের জন্য খুলে দেওয়া হচ্ছে। তাই ব্যবসায়ীরাও দোকানপাট সাজাতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন। গত শনিবার কুয়াকাটা জিরো পয়েন্ট এলাকার ঝিনুক মার্কেটে কুয়াকাটা পর্যটকদের জন্য খুলে দেওয়া হচ্ছে। তাই ব্যবসায়ীরাও দোকানপাট সাজাতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন। টানা ১৩৯ দিন বন্ধ থাকার পর আগামীকাল বৃহস্পতিবার খুলে যাবে পর্যটনকেন্দ্র কুয়াকাটা। এত দিন নিষেধাজ্ঞা থাকার কারণে সাগরকন্যার অপরূপ সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারেননি পর্যটকেরা। সীমিত পরিসরে পর্যটনকেন্দ্র খুলে দেওয়ার ঘোষণায় যেন হোটেল-মোটেলগুলোতে ঝাড়পোছ শুরু হয়ে গেছে। যেন নতুন করে প্রাণ ফিরে পেয়েছেন কুয়াকাটার পর্যটন ব্যবসায়ীরা। নিষেধাজ্ঞাকালের ক্ষতি পোষানোর আশা করছেন তাঁরা।

সাগরকন্যা কুয়াকাটার সৌন্দর্য উপভোগ করতে প্রতিবছর লাখ লাখ পর্যটক ছুটে আসেন কুয়াকাটায়। কিন্তু করোনার সংক্রমণ ঠেকাতে গত ১ এপ্রিল থেকে কুয়াকাটায় পর্যটকদের সমাগম নিষিদ্ধ করে জেলা প্রশাসন। টানা ১৩৯ দিন বন্ধের পর খুলছে হোটেল-মোটেলগুলো। পর্যটকসহ সৈকতের ব্যবসায়ীরাও ঢুকতে পারবেন সৈকত এলাকায়।

পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার সর্বদক্ষিণে বঙ্গোপসাগরের কোল ঘেঁষে ১৮ কিলোমিটার দীর্ঘ কুয়াকাটা সমুদ্রসৈকত। ঋতু পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে এ সৈকতও রূপ বদলায়। শীতের কুয়াকাটা শান্ত, বর্ষায় তা উত্তাল। পর্যটকদের কাছে এর আলাদা আবেদন রয়েছে। কারণ, এই সৈকত থেকে সূর্যোদয় ও সূর্যাস্ত দেখা যায়। তাই কুয়াকাটা সারা বছরই দেশি-বিদেশি পর্যটকদের পদচারণে মুখরিত থাকে।

করোনার সংক্রমণ ঠেকাতে ১ এপ্রিল থেকে কুয়াকাটায় পর্যটকদের সমাগম নিষিদ্ধ করে জেলা প্রশাসন। ১৩৯ দিন বন্ধের পর খুলছে হোটেল-মোটেলগুলো।

এদিকে সরকারি প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী আগামীকাল বৃহস্পতিবার খুলে দেওয়া হবে পর্যটনকেন্দ্রগুলো। তাই এখন পর্যটন ব্যবসায়ীরা সবাই পর্যটকদের বরণ করতে প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে। কুয়াকাটার সৈকতের চেয়ার-ছাতা ভাড়া দেওয়া ব্যক্তি ও ফটোগ্রাফাররা আবার নতুন উদ্যোগে প্রস্তুতি নিচ্ছেন। এদিকে দীর্ঘদিন দোকান বন্ধ থাকায় যে ক্ষতি হয়েছে, তা পুষিয়ে নেওয়ার আশা করছেন স্থানীয় তাঁতশিল্পী ও ব্যবসায়ীরা। আর পর্যটকদের বরণ করতে প্রস্তুতি নিচ্ছেন হোটেলমালিকেরাও।

সরেজমিনে দেখা যায়, কুয়াকাটার মিস্ত্রিপাড়ায় রাখাইন নারীরা তাঁদের হস্তচালিত তাঁত পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করছেন। তাঁদের হাতে তৈরি তাঁতপণ্য বিক্রির জন্য মার্কেটে তাঁদের দোকানগুলো পরিষ্কার করা হচ্ছে। সৈকতে চেয়ার-ছাতা বসানোর কাজ করছেন ব্যবসায়ীরা। আর সৈকতের ফটোগ্রাফাররা আবার হলুদ পোশাক পরে ক্যামেরা কাঁধে ঝুলিয়ে সৈকতের আশপাশে ঘুরছেন।

সৈকতের ফটোগ্রাফার সমিতির সভাপতি মো. তৈয়বুর রহমান বলেন, পর্যটকদের আগমনই তাঁদের বেঁচে থাকার সম্বল। পর্যটক না আসায় এ কয়েক মাস মানবেতর জীবন যাপন করতে হয়েছে তাঁদের। সৈকতে ফটোগ্রাফির সঙ্গে তিন শতাধিক মানুষ জড়িত। পর্যটকেরা আসবেন, তাই তাঁরা আবার নতুন করে আশার আলো দেখছেন।

কুয়াকাটার ব্যবসায়ী মো. খাইরুল ইসলামের জিরো পয়েন্টে একটি ঝিনুকের দোকান রয়েছে। তিনি তাঁর দোকানটি পরিষ্কার করার ফাঁকে জানান, করোনায় তাঁদের এমন পরিস্থিতিতে পড়তে হবে, তা তাঁরা বুঝতে পারেননি। পর্যটনকেন্দ্র বন্ধ করার ফলে কয়েক মাস ধরে দোকানের মালামাল যে অবস্থায় ছিল, সে অবস্থায়ই পড়ে আছে। এখন দোকান পরিষ্কার করে নতুন করে সাজাব।

কুয়াকাটার রেস্তোরাঁ ‘খাবার ঘর’-এর মালিক মো. সেলিম জানান, তাঁর রেস্তোরাঁয় দৈনিক ২০-২৫ হাজার টাকার বেচাকেনা হতো। হোটেল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় কর্মচারীদের ছুটি দিয়েছিলেন। কর্মচারীরা করোনাকালে অন্য কাজে সম্পৃক্ত হয়ে পড়েছেন। এখন হোটেল চালানোর জন্য কর্মচারী–সংকটে পড়েছেন। তারপরও ঝাড়ামোছা করে প্রস্তুতি নিচ্ছেন।

কুয়াকাটা ট্যুরিস্ট সেন্টারের ব্যবস্থাপনা পরিচালক রুমান ইমতিয়াজ তুষার বলেন, কুয়াকাটার সৌন্দর্যই পর্যটকদের কুয়াকাটায় টেনে নিয়ে আসে। তবে পর্যটকদের অনুপস্থিতি ও সবকিছু বন্ধ থাকায় কুয়াকাটার ট্যুরিজম ব্যবসায়ীদের নানা ধরনের সংকটে পড়তে হয়েছে। এখন পর্যটনের দ্বার খুলছে শুনে সবাই যে যাঁর মতো করে গুছিয়ে ব্যবসা চাঙা করার পরিকল্পনা করছেন।

কুয়াকাটা হোটেল-মোটেল ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মোতালেব শরীফ বলেন, কুয়াকাটায় ১৬০টির মতো আবাসিক হোটেল-মোটেল রয়েছে। করোনার কারণে পর্যটনকেন্দ্র বন্ধ থাকায় প্রতিটি হোটেলের মালিকই বড় রকমের আর্থিক ক্ষতির মধ্যে পড়েছেন। তারপরও পর্যটনের দ্বার উন্মুক্ত হচ্ছে। পর্যটকদের বরণ করে নিতে তাঁরাও প্রস্তুত হয়ে আছেন। তবে সরকারের নির্দেশনা ও স্বাস্থ্যবিধি মেনেই তাঁরা পর্যটকদের ব্যবস্থাপনা সাজাবেন।

কলাপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আবু হাসনাত মোহাম্মদ শহিদুল হক বলেন, হোটেল-মোটেল, রিসোর্ট ও বিনোদনকেন্দ্র আসনসংখ্যার ৫০ শতাংশ ব্যবহার করে চালু করতে হবে। করোনাকালে স্বাস্থ্যবিধি মানতে হবে। এর ব্যত্যয় যাঁরা করবেন, তাঁদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

আরও পড়ুন


  • সর্বশেষ খবর
  • সর্বাধিক পঠিত