দুমকিতে নির্মাণাধীন সেতু ভেঙ্গে পড়ায় বিচ্ছিন্ন দুই ইউনিয়ন, চরম দুর্ভোগে শিক্ষার্থীরা
কাজী জুবায়ের ইসলাম, দুমকি থেকে: পটুয়াখালীর দুমকি উপজেলার মুরাদিয়া ও শ্রীরামপুর ইউনিয়নের মধ্য দিয়ে বয়ে যাওয়া মুরাদিয়া শাখা নদীর একটি সেতু নির্মাণ কাজ চার মাস ধরে বন্ধ রয়েছে। এই সেতুটি নির্মাণ না হওয়ায় দুইটি ইউনিয়ন বিচ্ছিন্ন রয়েছে। সবচেয়ে বেশি দূর্ভোগে পড়েছে সেতু এলাকার শিক্ষার্থীরা। সেতু নির্মাণ কাজ বন্ধ থাকায় স্থানীয় ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পক্ষ থেকে বাঁশ ও সুপাড়িগাছ দিয়ে সাঁকো বানানো হলেও জোয়ারের সময় তা তলিয়ে যাওয়ায় শিক্ষার্থীদের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। পটুয়াখালীর দুমকি উপজেলার মুরাদিয়া ও শ্রীরামপুর ইউনিয়ন বিচ্ছিন্ন করে রেখেছে একটি ছোট নদী। খরস্রোতা এই শাখা নদীটি মুরাদিয়া শাখা নদী নামে পরিচিত।
২০২০-২০২১ অর্থ বছরে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি)ওই নদীর ওপর একটি সেতু নির্মানের উদ্যোগ নেয়। ২৪মিটার দৈর্ঘ্যে এবং ৫ দশমিক ৫ মিটার প্রস্থের আর সিসি গার্ডার এই সেতুটি নির্মাণ ব্যয় ধরা হয় দুই কোটি টাকা।
স্থানীয়রা জানায়, ওই শাখা নদীর উপর আগে একটি লোহার সেতু ছিল। তবে নতুন সেতু নির্মাণকালে পুরোনো লোহার সেতুটি অন্যত্র সরিয়ে নিয়ে সেখানে আর সিসি গার্ডার এই সেতু নির্মাণ কাজ শুরু করে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান। সেতু নির্মাণ কাজ করতে গিয়ে ছোট ওই নদীর দুই দিকে বাঁধ দেওয়া হয়। এর পর সেতুর দুই পাড়ের অবকাঠামো নির্মাণ শেষ করে মে মাসে মূল সেতু নির্মাণ শুরু করে। দুই পাশে বাঁধ দেওয়া স্থানের মাটি ফেলে ভরাট করে সেতুর নির্মাণে সেন্টারিংএর কাজও শেষ করে। শুধু বাকি থাকে আরসিসি ঢালাই। এদিকে মে মাসের শেষ দিকে ঘূর্নিঝড় ইয়াসের প্রভাবে নদ-নদীর অধিক উচ্চতর জোয়ারের আঘাতে নদীর সেতু স্থানের দুই পাশের বাঁধের মাটি সরে গিয়ে পানির চাপে নির্মাণাধীণ সেতুর অবকাঠামো (সেন্টারিং ও ওপরে বাঁধানো রড ) ভেঙ্গে নদীতে পরে যায়।
এরপর থেকে সেতু নির্মাণ কাজ বন্ধ রয়েছে। এদিকে রোববার সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, সেতু নির্মাণস্থান এলাকা জোয়ারের পানিতে ডুবে গেছে। শাখা নদীর পূর্ব পাড়ে মুরাদিয়া ইউনিয়নের দক্ষিন মুরাদিয়া মহিলা ফাজিল মাদরাসার প্রিন্সিপ্যাল মাওলানা শাহজালাল কাজী বলেন, তার মাদরাসায় ছাত্রী সংখ্যা ৩২৫ জন। এর মধ্যে ১৫০ জন ছাত্রীই নদীর পশ্চিম পাড়ের শ্রীরামপুর ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকা থেকে আসে। সেতু নির্মাণ কাজ বন্ধ থাকলেও দুই পাড়ের বাসিন্দাদের চলাচলের জন্য ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান থেকে কোন ব্যবস্থা করেনি।
সরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ার পর মেয়েরা মাদরাসায় আসা-যাওয়ায় দুর্ভোগ দেখে স্থানীয়দের সহায়তায় বাঁধ ও সুপাড়িগাছ দিয়ে সাঁকো বানানো হয়েছে। তবে বর্তমানে জোয়ারের সময় পানি বাড়লেই সাঁকো ডুবে যাচ্ছে, চরম দুর্ভোগে পড়ছে শিক্ষার্থী মেয়েরা।
স্থানীয় সূত্র জানায়, সেতুর পশ্চিম পাড়ে শ্রীরামপুর ইউনিয়নের জামলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, আব্দুল গণি দাখিল মাদ্রাসা, জামলা নুরানী মাদ্রাসা, ডাকঘরসহ বেশ কিছু শিক্ষা ও সামাজিক প্রতিষ্ঠান রয়েছে আর পূর্বপাড়ে মুরাদিয়া ইউনিয়নে দক্ষিণ মুরাদিয়া মহিলা ফাজিল মাদ্রাসা, পশ্চিম মুরাদিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, মধ্য মুরাদিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ বেশ কিছু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে।
এছাড়াও এ পথ দিয়ে মুরাদিয়া এলাকার বেশ কিছু শিক্ষার্থী দুমকি সৃজনী বিদ্যানিকেতন, দুমকি জনতা কলেজসহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যাতায়াত করে থাকে। সকলকেই অবর্ণনীয় দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। দক্ষিণ মুরাদিয়া মহিলা ফাজিল মাদ্রাসার আলিম ২য় বর্ষের শিক্ষার্থী সাবা মনি জানান, সেতুর কাজ অসমাপ্ত থাকায় পারাপারের জন্য যে সাঁকোটি নির্মাণ করা হয়েছে তা নড়বড়ে থাকায় ঝুঁকি নিয়ে তাদের মাদ্রাসায় যাতায়াত করতে হচ্ছে। তাছাড়া জোয়ারের সময় সাকো ও সংলগ্ন রাস্তাটি পানিতে তলিয়ে যায় এতে কাপড়-চোপড় ও বই পুস্তক ভিজে যায়।
অপর শিক্ষার্থী ফাজিল শ্রেনীর কুলসুম আক্তার জানান, করোনার কারনে দেড় বছর পর শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলেছে। আমাদের এখন নিয়মিত ক্লাসে আসতে হচ্ছে। কিন্তু সেতুর কাজ শেষ না হওয়ায় যাতায়াতের জন্য যেনতেনভাবে বিকল্প ব্যবস্থা হিসেবে একটি সাঁকো দেয়া হয়েছে। সেটি পারাপারে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। দ্রুত সেতু নির্মাণ কাজ শেষ হলে আমরা উপকৃত হতাম।
এলাকার বাসিন্দা পল্লী চিকিৎসক শাহীন মৃধা জানান, দুমকি উপজেলা শহরসহ পটুয়াখালী ও বরিশালের সাথে সহজ যোগাযোগের মাধ্যম হচ্ছে এই সেতুটি।লোকজনের যাতায়াতের জন্য বিকল্প হিসেবে একটি সাঁকো নির্মাণ করা হয়। তবে সেটিও খুই নড়বড়ে।
এলাকার বাসিন্দা সবুজ মৃধা জানান, এলাকার গুরুত্ব বিবেচনায় এলজিইডি মুরাদিয়া শাখা নদীর ওপর সেতু নির্মাণ শুরু করায় আমরা আশান্বিত হয়েছিলাম। কিন্তু গত এক বছরেও সেতু নির্মাণ কাজ শেষ হয়নি। আম্পানের পর চার মাস ধরে কাজ বন্ধ । এই অবস্থায় দুর্ভোগ আরও বেড়েছে।
ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান আজাদ ইন্টারপ্রাইজের পরিচালক আবুল কালাম আজাদ জানান, বর্তমানে জোয়ারের সময় পানি বাড়ছে এবং ওই খালে প্রবল স্রোতে থাকায় সেতু নির্মাণ কাজ শুরু করা যাচ্ছে না। তবে পানি কমলেই দ্রুত সেতু নির্মাণ কাজ শুরু হবে।
এলজিইডি, দুমকি উপজেলা প্রকৌশলী মো. আজিজুর রহমান বলেন, জোয়ারের সময় পানির উচ্চতা বাড়ছে। এছাড়ও মুরাদিয়া শাখা নদে পানির প্রবল স্রোত থাকায় সেতুর সেন্টরিং এর কাজ করা যাচ্ছে না। পানি কমলেই সেতু কাজ শুরু করা হবে এবং দ্রুত সেতু নির্মাণ কাজ শেষ হবে বলে জানান তিনি।
আরও পড়ুন
- সর্বশেষ খবর
- সর্বাধিক পঠিত