অনিয়মে জড়িতরা অবসরে গেলেও ছাড় নয়: প্রধানমন্ত্রী

| আপডেট :  ০৬ অক্টোবর ২০২১, ০১:১২  | প্রকাশিত :  ০৬ অক্টোবর ২০২১, ০১:১২

অনিয়ম ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে আবারও সরকারের কঠোর অবস্থানের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, চাকরিকালে আর্থিক অনিয়মের কোনো রকম প্রমাণ পাওয়া গেলে অবসরে যাওয়া কর্মকর্তাও ছাড় পাবেন না। এ রকম ঘটনার প্রমাণ পাওয়া গেলে দায়ী কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশনা দিয়েছেন তিনি।

মঙ্গলবার জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী এ নির্দেশনা দেন। গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে যুক্ত হয়ে বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন তিনি। শেরেবাংলা নগরে এনইসি সম্মেলন কক্ষে একনেক বৈঠকের পর ব্রিফিংয়ে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান প্রধানমন্ত্রীর এ নির্দেশনা এবং বৈঠকের বিস্তারিত বিষয় গণমাধ্যমকর্মীদের কাছে তুলে ধরেন।

একনেকে কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল স্থাপন প্রকল্পের সংশোধন অনুমোদন সংক্রান্ত আলোচনায় এ নির্দেশনা দেন প্রধানমন্ত্রী। কুষ্টিয়া সদর উপজেলায় এ প্রকল্পটি নির্ধারিত মেয়াদের পর দুই দফা সময় বাড়ানোর পরও নির্মাণকাজ শেষ করা যায়নি। গত ৫ জানুয়ারি আবারও সময় ও ব্যয় বাড়ানোর জন্য একনেকে প্রকল্পটি উপস্থাপন করা হলে ক্ষুব্ধ হন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। অনুমোদন না করে অনিয়ম তদন্তের নির্দেশ দেন তিনি। এ পরিপ্রেক্ষিতে বাস্তবায়, পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) সচিব প্রদীপ রঞ্জন চক্রবর্তীর নেতৃত্বে একটি কমিটি হয়। এই কমিটি কয়েকজন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে দুর্নীতি এবং অনিয়েমের প্রমাণ পেয়েছে এবং সংশ্নিষ্ট কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করা হয়েছে।

২০১২ সালে প্রকল্পটির নির্মাণকাজ শুরু হয়। ২০১৪ সালে নির্মাণকাজ শেষ হওয়ার কথা। ২০১৫ সালে একবার, ২০১৬ সালে দ্বিতীয়বার ও ২০২০ সালে তৃতীয়বার এর মেয়াদ বাড়ানো হয়। সময়ের সঙ্গে ব্যয়ও বাড়তে থাকে। প্রকল্পের মূল নির্মাণ ব্যয় ধরা হয় ২৭৫ কোটি টাকা। দু’বার সংশোধনীতে ৬১১ এবং ৬৮২ কোটি টাকা বাড়ানো হয়। মঙ্গলবার তৃতীয়বারে ৭১ কোটি টাকা বাড়ানোর অনুমোদন করা হয়েছে।

এ-সংক্রান্ত এক প্রশ্নের জবাবে পরিকল্পনা কমিশনের আর্থসামাজিক অবকাঠামো বিভাগের সদস্য সরকারের সচিব মোসাম্মৎ নাসিমা বেগম সাংবাদিকদের বলেন, অবসরে যাওয়া দায়ী কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া যায় না। তবে পাবলিক প্রকিউরমেন্ট রুল (পিপিআর) অনুযায়ী অনিয়মে জড়িত কর্মকর্তারা অবসরে গেলেও তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার সুযোগ আছে।

প্রধানমন্ত্রীর অন্যান্য নির্দেশনা সম্পর্কে পরিকল্পনামন্ত্রী জানান, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ থেকে উন্নয়ন প্রকল্পে অর্থ ব্যয়ের কথা বলেছেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেছেন, উন্নয়ন সহযোগীদের কাছ থেকে অর্থ পেতে সমস্যা হলে প্রয়োজনে রিজার্ভ ব্যবহার করা যেতে পারে। এ ছাড়া শিল্পে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, নদীর ধারে শিল্পকারখানা গড়ে তোলার একটা প্রবণতা আছে। এতে শিল্প বর্জ্যে নদী দূষিত হয়। এই ক্ষতি থেকে সুরক্ষায় বর্জ্য শোধনাগার ( ইটিপি) এবং কেন্দ্রীয় বর্জ্য শোধনাগার (সিইটিপি) স্থাপনের ওপর জোর দিয়েছেন তিনি।

অনুমোদন পাওয়া প্রকল্প: একনেক বৈঠকে অনুমোদন পাওয়া ৯টি প্রকল্পে ব্যয় ধরা হয়েছে ৬ হাজার ৫৫১ কোটি টাকা। মোট ব্যয়ে সরকারি অর্থায়ন ৩ হাজার ৭৪২ কোটি টাকা এবং বিদেশি ঋণ ২ হাজার ৭৮২ কোটি টাকা। বাকি ২৬ কোটি টাকা বাস্তবায়নকারী সংস্থার নিজস্ব। অনুমোদিত প্রকল্পগুলোর মধ্যে আছে সায়দাবাদ পানি সরবরাহ প্রকল্প তৃতীয় পর্যায়ের প্রথম সংশোধনী। টাঙ্গাইল- দেলদুয়ার-লাউহাটি-সাটুরিয়া-কাওয়ালী পাড়া-কামালপুর বাসস্ট্যান্ড সড়ক উন্নয়ন। কৃষি আবহাওয়া তথ্য পদ্ধতি উন্নয়নকরণ। জগন্নাথপুর মোহনগঞ্জ দুটি কৃষি প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট স্থাপন। এ ছাড়া রংপুরের পীরগঞ্জ উপজেলার নদীতীর সংরক্ষণ। বড়পুকুরিয়ার-বগুড়া-কালিয়াকৈর ৪০০ কেভি বিদ্যুৎ লাইন নির্মাণ ও খুলনা থেকে মোংলা পোর্ট পর্যন্ত রেললাইন নির্মাণ।

 

আরও পড়ুন


  • সর্বশেষ খবর
  • সর্বাধিক পঠিত