বন্ধু ইহাতে শিক্ষা আছে!
একটা মঞ্চে একজন নেতা তাদের মহান নেত্রীকে নিয়ে হেন-তেন প্রশংসা করতে লাগল। দলের কর্মীরা বারবার হাততালি দিয়ে বক্তাকে সাপোর্ট দিচ্ছে। এক সময় নেতা বলে উঠল আজকের নেত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশের মানুষের ভোটের অধিকার অধিকার নিশ্চত করেছে, একথা বলার সাথে সাথেই সবাই হট্টগোল শুরু করে দিল। একজন বক্তাবে রাজাকারের ভাতিজা, অনুপ্রবেশকারী কয়েবজন নেশা করে বক্তৃতা করছেন বলেই আক্রমণ করল। লোকটি বুঝে গেল তার ভোটের অধিকার নিয়ে কথা বলা ভুল হয়ে গেছে সে তৎক্ষনাত বলে উঠল এবার নেত্রী ভাতের অধিকার নিশ্চিত করবে। শেখ হাসিনার ভোটের সিস্টেম আজ তার দলের কাছেও কমেডি।
স্বৈরাচার এরশাদ সরকারের সময় নারায়নগঞ্জের একজন জাতীয় পার্টির এমপি প্রার্থী তার নির্বাচনী জনসভায় জনতার উদ্দেশ্যে বলেছেন, আপনারা কি মনে করেছেন আপনাদের কাছে আজ ভোট চাওয়ার জন্য ডেকেছি? না- না আমার কোন ভোটের দরকার নাই, আপনাদের ভাবী যদি আমাকে একটা ভোট দেয় তাহলেই আমি বপুল ভোটে পাশ করব।
তাহলে কি দাঁড়াল? স্বৈরাচার এরশাদের ভোট ডাকাতির আমলে এমপি হতে অন্তত ভাবীর ভোট লাগত কিন্ত এখন হাসিনার ডিজিটাল ভোটে অটো পাস করতে ভাবির ভোটটাও লাগে না। লাইনে কুত্ত দাড়িয়ে থাকলেই ভোটের বাক্স ভরে যায়। বর্তমান প্রধান নির্বাচন কমিশনার একটি অনুষ্ঠানে বললেন আর রাতের ভোট হবে না। ভোট দিনেই হবে, পাশ থেকে একজন বলে উঠল সবাই মিলে হাত লাগালে দিনের কাজ দিনেই শেষ করতে পারব। রাত পর্যন্ত লাগবে না।
এবার আসি বাংলাদেশের গণতন্ত্র হত্যা এবং নির্বাচনী ব্যবস্থা ধ্বংস করার পদ্ধতিতে কাল লাভ হয়েছে? ভারতের তৎকালীন পররাষ্ট্র সচিব সুজাতা সিং, ইন্ডিয়ান কংগ্রেস কিংবা তাদের নেতৃত্বের, আওয়ামী লীগের হতভাগা সাধারণ কর্মীদের, নেতাদের শেখ হাসিনার, জয়ের নাকি আওয়ামী লীগের?
কার বেশি ক্ষতি হয়েছে? খালেদা জিয়া, তারেক রহমান, জামায়াত, বিএনপি কর্মীদের নাকি বিএনপির? খালেদা জিয়ার আপোশহীন নেত্রীত্তের অবস্থান কি কেউ টলাতে পেরেছে নাকি রাতের ভোটে আবারও প্রমাণ হয়েছে আওয়ামী লীগের অদীনে কখনও সুষ্ঠু নির্বাচন সম্বব নয়। এ কারণে ২০১৪ সালের তার নির্বাচন করার দুরদর্শী সঠিক সিদ্ধান্ত? তারেক রহমানের নেতৃত্বেরগুন নিয়ে যাদের চুলকানী ছিল তারাই আজ বলছে বাংলাদেশের গণতন্ত্রের দু:সময়ের কান্ডারী তারেক রহমানই আর কেউ নয়। রাজনীতির সামান্য জ্ঞান রাখেন এ রকম মানুষ কি ভুল করেও বললেন জামায়াতের সামর্থ কিংবা শক্তি কমেছে? বরং তাদের সিনিয়র নেতৃত্বের সাহাদাতের পেয়ালা হাসতে হাসতে পান করা দেখে তারা সর্বোচ্চ অনুপ্রাণিত, আর বিএনপি মজলুম কর্মীরা তো এক একটা বাংলাদেশ হয়ে গেছে আজ। ৫০ থেকে ১০০ মামলা এক একজন মোকাবেলা করে মামলা তাদের কাছে প্রতিবাদের আরেকটা ভাষা হয়ে গেছে। আর বিএনপি নামে দলটিকে এক সময় আতেলরা ক্ষমতা ছাড়া নাকি বিএনপি অসহায়। ১৬ বছরের জেল, জুলুম নির্যাতন গুলি, হামলা মামলা নিয়েও বিএনপি বিএনপি আজ জালিম সরকারের বিরুদ্ধে মানুষের একমাত্র ভরসা স্থল হয়ে উঠেছে। আজ সাধারন মানুষ বলছে বিএনপির শক্তি মানে দেশের শক্তি। বিএনপি দুর্বল হয়ে পড়লে দেশ দুর্বল হয়ে পরে, অসহায় হয়ে পরে সর্বোচ্চ আদালত থেকে সাধারণ মানুষ পর্যন্ত। তাই আজ বিএনপি মানেই বাংলাদেশ।
এবার বলি বাংলাদেশের গণতন্ত্র হত্যা এবং নির্বাচনী ব্যবস্থা ধ্বংস করার মাধ্যমে যারা নিজেদের অনেক লাভবান মনে করে ইতিহাসের আস্তাকুড়ে নিক্ষিপ্ত হয়েছেন, তাদের অন্যতম প্রধান কারিগর সুজাতা সিংয়ের অপমানজনক পরিণতির সময় অনেককে বলতে শোনা গেছে এটা বাংলাদেশের অভিশাপ। ইন্ডিয়ান কংগ্রেস নামের যে দলটি বাংলাদেশে শেখ হাসিনা নামর ক্ষমতা লিপ্সুকে নিয়ে সকল সভ্যতা ও নিয়ম নীতি ধ্বংস করে বাংলাদেশের নির্বাচন ব্যবস্থাকে নেই কংগ্রেস তখন পরপর দ্বিতীয়বার ইন্ডিয়ান রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার। কিন্তু কয়েক মাসের ব্যবধানে তাদের এতোই বিপরর্য্য় হলো যে তারা ১০% আসন পেলে বিরোধী দলের মর্জাদা পাওয়া যায় সংসদে ততটুকুও মানুষ তাদের দেয়নি। প্রত্যাখ্যান কিংবা ঘৃনার মন থেকে ছুড়ে ফেলার লজ্জা কি শতবর্ষ পরেও মুছতে পারবে কংগ্রেস? আমি নিশ্চত কোন না কোন দিন বিএনপিকে বাংলাদেশের মানুষ তাদের রাষ্ট্র ক্ষমতায় বসাবে কিন্তু সোনিয়া রাহুল গান্ধীর দল দ্বারা কোন কিছু পয়দা হবে না। তারা জনম জনম ভোগ করবে বাংলাদেশের মানুষের বুকফাটা আর্তনাতের অভিশাপ। বন্ধু ইহাতে শিক্ষা আছে!
এবার আসি সাধারণ হতভাগ্য আওয়ামী লীগের কর্মীদের কথায়। হতভাগ্য বললাম এই কারণে বাংলাদেশে এতোদিন অন্তত মিটিং মিছিল এবং নির্বাচনের সময়ে কর্মীদের ব্যাপক দাম নেতা কিংবা এমপির কাছে। কিন্তু শেখ হাসিনার বিনাভোটের পুলিশি নির্বাচনের কারণে মিটিং মিছিল দূরে থাক ভোটের আগের রাতেও কর্মীদের খোজ নেন না নেতারা কিংবা এমপিরা। যার ফলে কর্মীর তাদের মনের রাগ এবং গালিগালাজ নিজ জিম্মায় নেতা, এমপি থেকে শেখ হাসিনা সর্বশেষ মরহুম শেখ সাহেবকেও পৌঁছে দেন। এমপিরা তাদের চেহারা মুবারক দেখাতে চান না ভাবেন ২০ কোটি টাকা দিয়ে এমপি হয়েছি তোদেরকে পুষব কেন? হতবাগারা তখন এমপিদের বাসায় পিয়ন, দাড়োয়ান, আয়া, বুয়া কে টাকা খাইয়ে নিজেদের সুপারিশ কিংবা এমপির নেক নজরে আসার চেষ্টা করেন।
এবার বলি এই চিচিং ফাক নির্বাচনী ব্যবস্থায় শেখ হাসিনার কি লাভ হয়েছে। যে নেত্রীকে শেখের বেটি, গণতন্ত্রের মানস কন্যা বলে সাধারণ ভোটাররা তাকে নিয়ে গর্ব করত। নামাজ পড়ে দোয়া করত, রোজা রাখত তারা আজ তাকে গণতন্ত্র হত্যাকারী ইন্ডিয়র দালাল হিসেবে ঘুণা করে। যে লোকটি শেখ হাসিনার উপর গ্রেনেড হামলা হবার জন্য রোজা রেখেছিল সে কি আজ তার কোন বিপদে আল্লাহর কাছে হাত তুলবে> রোজা রাখবে? আচ্ছা যে লোকটি ৯০ দশকে শেখ হাসিনার অজান্তে তাকে তার শেষ সম্বল জমিটুকু লিখে দিয়ে গিয়েছিল আজকে কি তাকে ঐ রকম ভালোবাসা দিয়ে তার শেষ সম্বল শেখ হাসিনার নামে লিকে দিবে? অর্থাৎ নির্বাচন ব্যবস্থা, গণতন্ত্র, ধ্বংস, বিএনপি জামায়াতের নেতা কর্মীদের হত্যা করে তিনি আজ মানুষের কাছে বাংলাদেশের সবচেয়ে ঘৃনিত এবং অভিশাপের পাত্রী হয়ে গেছেন এই অভিশাপ কি তার পরিবারে গজব আকারে পড়ছে না? তার ছেলে মেয়েদের সংসার দেখলে কি তা মনে হয় না? বন্ধু ইহাতে শিক্ষা আছে!
সব শেষে বলি জয়ের কথা। ৭৫ পরবর্তী সময়ের শেখ হাসিনার ভাই শেখ রাসেলকে ভালোবেসে কয়েক হাজার মানুষ তার সন্তানের নাম রেখেছে রাসেল। রাজনীতির বাইরেও মানুষ রাসেলকে ভালোবেসে মনে রেখেছে। আচ্ছা জয়ের এতো অর্থ লোভ, ক্ষমতার লোক কি তাকে মানুষের ভালোবাসার উল্টোদিকে দাড় করিয়ে দিয়েছে না? অনেকে বলে জয় তো টাকার ডিজিটের নিচে চাপা পড়ে মারা যাবে।
বাংলাদেশের নির্বাচনী ব্যবস্থা অন্যতম রপকার জয়ের নাম কি কেউ ভালোবেসে তার সন্তানের নাম রাখবে। বঙ্গবন্ধুর বড় নাতিকে তো মানুষ ভালোবাসার মনিকোঠায় রাখার কথা কিন্তু তার মুখের কথা শুনলে মনে হয় অহংকারে পরিপূর্ণ ধ্বংসের শেষ প্রান্তে চলে আসা একটা আহাম্মক। জয় কি পেল এই ভূয়া নির্বাচনের ব্যবস্থা করে এই ভূয়া ক্ষমতায়? বন্ধু ইহাতে শিক্ষা আছে। জল অনেকদূর গড়িয়েছে। তবুও বলব, ক্ষমা চাও জাতির কাছে। আত্মসমর্পন কর আর্লাহর কাছে। নিশ্চয়ই তিনি ক্ষমাশীল এবং অতি দয়ালু।
অন্যথায় আমাদের নুরা পাগলায় কয়- পাঠারে বলি দেয়, পাঠিয়ে হাসে পাঠা বলে হাসিসনারে পাঠি, তোর জন্যেও কুরবানির ঈদ আসে।
মো: আবু তালেব সবুজ
লেখক- সাংবাদিক, কলামিষ্ট।
আরও পড়ুন
- সর্বশেষ খবর
- সর্বাধিক পঠিত