বেড়েছে পেঁয়াজ-রসুন, আলু ও ডিমের দাম, কমেছে মুরগি-সবজির
লকডাউনের মধ্যেই ঈদের পর নতুন করে আবারও বেড়েছে বেশ কয়েকটি নিত্যপণ্যের দাম। এর মধ্যে পেঁয়াজ-রসুন, আলু ও ডিমের দাম বেড়েছে। তবে কমেছে মুরগি, গরুর মাংস ও সবজির। এছাড়া সপ্তাহের ব্যবধানে পেঁয়াজের দাম বেড়েছে কেজিপ্রতি ৫ থেকে ১০ টাকা, রসুনের ৭ টাকা, আলুর ২ থেকে ৪ টাকা এবং হালিপ্রতি ডিমের দাম বেড়েছে ২ থেকে ৪ টাকা। শুক্রবার (২১ মে) রাজধানীর কারওয়ান বাজার, রামপুরা, মালিবাগ, শান্তিনগর এবং সেগুন বাগিচা কাঁচাবাজার, মিরপুরের মুসলিম বাজার, ১১ নম্বর বাজার, মিরপুর কালশী বাজার ও পল্লবী থেকে এসব তথ্য পাওয়া গেছে। একদিকে করোনা নিত্যপণ্যের দাম বৃদ্ধি হওয়ায় ক্রেতারা চরমভাবে হতাশ। তারা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন তারা।
কারওয়ান বাজারে পাইকারি দামে দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৪২ টাকা কেজিতে। আর আমদানি করা ভারতীয় পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৪০ টাকা কেজিতে। বাজারে সর্বনিন্ম ৫ কেজি দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ২১০ টাকায়। একইভাবে ২০০ টাকা পাল্লায় বিক্রি হচ্ছে ভারতীয় পেঁয়াজ।
হঠাৎ দাম বৃদ্ধির ব্যাপারে ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, পেঁয়াজ আমদানি বন্ধ থাকায় দাম বেড়েছে। রসুন, আলু এবং ডিমের সরবরাহ কম হওয়ায় আড়তদাররা দাম বাড়িয়েছেন।
অন্যদিকে চীন থেকে আমদানি করা রসুন রাজধানীর বাজারগুলোতে বিক্রি হচ্ছে ১১২ টাকা থেকে ১১৫ টাকা কেজিতে। অথচ দুদিন আগেও বিক্রি হয়েছে ১০৫ টাকা কেজিতে। তবে দেশি রসুন ৬০-৭০ টাকা দরেই বিক্রি হচ্ছে।
এছাড়াও গত সপ্তাহে ১৮০ টাকা পাল্লায় বিক্রি হওয়া সাদা আলু বিক্রি হচ্ছে ১৯০ থেকে ২০০ টাকা পাল্লায়। অর্থাৎ, সাদা আলুর পাইকারি দাম ১৯-২০ টাকা কেজি। আর খুচরা বিক্রি হচ্ছে ২২-২৫ টাকা কেজিতে। ব্রয়লার মুরগির ডিমের হালি পাইকারি বিক্রি হচ্ছে ৩০ টাকায়। আর খুচরা বিক্রি হচ্ছে ৩২ থেকে ৩৫ টাকা হালি। এছাড়া চড়া দামে দেশি হাঁসের ডিম বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকা হালি।
এ বিষয়ে কারওয়ান বাজারে পেঁয়াজ ব্যবসায়ী জুনায়েদ আহমেদ বলেন, ‘ভারতীয় পেঁয়াজ আনা বন্ধ এমন অজুহাতে দাম বাড়ছে। গত তিনদিন ধরেই ৪২ টাকা দরে পাইকারি বিক্রি করছি পেঁয়াজ।’
এনামুল হক নামের অপর এক ব্যবসায়ী বলেন, গত দুই-তিন দিন ধরে আগের বিক্রির চেয়ে ১-২ টাকা বেশি দরে পেঁয়াজ কিনতে হচ্ছে। ফলে ৪২ টাকা দরে বিক্রি করতে হচ্ছে।
মালিবাগ কাঁচাবাজারের খুচরা ব্যবসায়ী জয়নাল আহমেদ মন্টু জানান, পেঁয়াজের দাম কেজিতে বেড়েছে পাঁচ থেকে সাত টাকা। ঈদের আগে ভারতীয় পেঁয়াজ বিক্রি করেছি ৪০-৪২ টাকা কেজিতে। এখন সেই পেঁয়াজ বিক্রি করছি ৪৫ টাকা কেজিতে। দেশি পেঁয়াজ বিক্রি করছি ৫০ থেকে ৫২ টাকা কেজিতে। রামপুরা কাঁচাবাজারে বাছাই করা ভালো পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৫৫ টাকা কেজি দরে।
কারওয়ান বাজারের আদা-রসুনের ব্যবসায়ী গোলাম মোহাম্মদ রমিজ উদ্দিন জানান, আদা ও দেশি রসুনের দাম ঠিক থাকলেও আজ (শুক্রবার) সকাল থেকে চায়না রসুনের দাম বেড়েছে ৫ টাকা। ফলে গতকালও ১০৫ টাকা কেজিতে বিক্রি করা চায়না রসুন আজ বিক্রি করছি ১১৩ টাকায়। তিনি বলেন, কী কারণে বাড়লো তা তো আড়ৎদাররা বলতে পারবে। আমরা বেশি দামে কিনেছি তাই বেশি দামে বিক্রি করছি।
কারওয়ান বাজারে খুরচার ডিম বিক্রেতা শহিদ মিয়া জানান, পাইকারি ডিমের ডজন ৯০ টাকা। অথচ ঈদের আগে এই ডিম বিক্রি হয়েছে ৮৫ টাকা ডজন। তবে রামপুরা, মালিবাগের বাজারে ডিমের ডজন বিক্রি হচ্ছে ৯৫-১০০ টাকা ডজন।
ঈদের পরপরই চড়া দামে বিক্রি হওয়া সবজির দাম কেজিপ্রতি ৫ থেকে ১০ টাকা কমেছে। গত তিনদিন আগেও ৬০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হওয়া করলা, পটল, বরবটি, ধুন্দল, ঝিঙে, চিচিংগা, কাঁকরোল এবং শসার কেজি বিক্রি হচ্ছে ৪৫-৫৫ টাকা কেজি দরে। আর ঢ্যাঁড়স, বেগুন, পেঁপে এবং টমেটো বিক্রি হচ্ছে ৩০-৪০ টাকা কেজিতে।
কারওয়ান বাজারে আসা ক্রেতা আনিসুর রহমান বলেন, আজ সবজির দাম অনেকটা বেশি মনে হচ্ছে। অন্যান্য সবজির পাশাপাশি লাউ এবং জালি কুমরা বিক্রি হচ্ছে ৩৫-৪৫ টাকা পিস। তবে একটু বড় ও ভালো মানের লাউ বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকা পিস। এছাড়াও পাটশাক, পুঁইশাক বিক্রি হচ্ছে ১০-১৫ টাকা আটি।
এদিকে ঈদকে কেন্দ্র করে হঠাৎ বেড়ে যাওয়া গরুর মাংস ও মুরগির দাম কিছুটা কমেছে। ৬০০ থেকে ৬৩০ টাকা কেজিতে বিক্রি হওয়া গরুর মাংস বিক্রি হচ্ছে আজ ৫৮০-৬০০ টাকা কেজিতে। খাসির মাংস বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ৮৫০-৯০০ টাকায়। ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হচ্ছে ১৩০-১৩৫ টাকা কেজিতে। ২৭০ টাকা কেজির পাকিস্তানি লাল কক বিক্রি হচ্ছে ২৩০-৪০ টাকা কেজিতে।
মিরপুর-১১ নম্বর বাজারের মুরগি বিক্রেতা মো. রুবেল জানান, বাজারে মুরগির দাম কম থাকলেও ক্রেতার সংখ্যা অনেক কম। তবে প্রতিকেজিতে ৪০ টাকা দাম কমে সোনালি (কক) মুরগি বিক্রি হচ্ছে ২৩০ টাকা। ব্রয়লার মুরগি কেজিতে ৩০ টাকা কমে বিক্রি হচ্ছে ১৩০ থেকে ১৩৫ টাকায়। লেয়ার মুরগি প্রতিকেজি বিক্রি হচ্ছে ২৩০ থেকে ২৪০ টাকায়।
বাজারে ছোট দানার মসুর ডালের কেজি ১০০ টাকা এবং মোটা দানার মসুর ডাল ৭০ টাকা, মুগ ডালের কেজি ১২০ টাকা, মটর ডাল ১০০ টাকা, ছোলা ৬০ থেকে ৭০ টাকা আর খেসারি ৭৫ টাকা, ডাবলি ৪৫ থেকে ৫০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। আর অ্যাংকর ডালের বেসন কেজিপ্রতি ৬০ টাকা, বুটের ডালের বেসন ১০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
এদিকে রামপুরায় বাজার করতে আসা গার্মেন্টস শ্রমিক মন্টু ঘোষ বলেন, ঈদের আগেও ১৮ টাকা কেজিতে আলু কিনেছি। আজ ২২ টাকা কেজি। তিন দোকান ঘুরে ২০ টাকা কেজি দরে কিনেছি, দোকানদার বলছে কাল থেকে ২২ টাকা কেজি দরে কিনতে হবে।
আরও পড়ুন
- সর্বশেষ খবর
- সর্বাধিক পঠিত