সাবেক এমপি আউয়ালের নির্দেশেই সাহিনুদ্দীনকে খুন করা হয়

| আপডেট :  ২৪ মে ২০২১, ০৮:৫৯  | প্রকাশিত :  ২৪ মে ২০২১, ০৮:৫৯

রাজধানীর পল্লবীতে ছেলের সামনে সাহিনুদ্দীন (৩৩) নামে এক ব্যক্তিকে কুপিয়ে হত্যার মামলায় গ্রেফতার সুমন আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। সোমবার (২৪ মে) ঢাকা মহানগর হাকিম দেবদাস চন্দ্র অধিকারীর আদালতে তার জবানবন্দি গ্রহণের আবেদন করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ডিবি পুলিশের পরিদর্শক সৈয়দ ইফতেখার হোসেন। সুমন স্বেচ্ছায় হত্যাকাণ্ডের দায় স্বীকার করে জবানবন্দি দিতে সম্মত হওয়ায় তা রেকর্ডের আবেদন করেন আবেদনের প্রেক্ষিতে বিচারক তার জবানবন্দি রেকর্ড করেন। এরপর তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন আদালত।

গত ১৬ মে বিকেলে জমির বিরোধের মীমাংসার কথা বলে সাহিনুদ্দীনকে পল্লবী থানার ডি-ব্লকের সিরামিক রোডের একটি গ্যারেজের ভেতর নিয়ে ধারালো অস্ত্র দিয়ে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে হত্যা করা হয়। প্রকাশ্য দিবালোকে এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় ভুক্তভোগীর মা আকলিমা বেগম বাদি হয়ে আলীনগর আবাসিক এলাকার হ্যাভেলি প্রপার্টিজ ডেভেলপার লিমিটেডের এমডি এবং লক্ষ্মীপুর-১ আসনের সাবেক এমপি এম এ আউয়ালকে প্রধান আসামিসহ ২০ জনের নাম উল্লেখ করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। ঘটনার পরদিন পুলিশ দিপু ও মুরাদকে গ্রেফতার করে। মামলার তদন্তভার ডিবিতে স্থানান্তর করা হয়। ১৯ মে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ কিলার গ্রুপের প্রধান নেতা সুমন ব্যাপারী ও রকি তালুকদারকে গ্রেফতার করে। একই দিন র‌্যাব সাবেক সংসদ সদস্য এম.এ আউয়াল, হাসান ও জহিরুল হক বাবুকে গ্রেফতার করে। ২০ মে রাতে এজাহারভুক্ত পাঁচ নম্বর আসামি মানিক ওরফে চাপাতি মানিক পল্লবীর ইস্টার্ন হাউজিং এলাকায় র‍্যাবের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হন। ২২ মে রাতে এই মামলার আরেক আসামি চাপাতি মনির ডিবি পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হন।

স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে সুমন জানিয়েছেন, ঘটনার চার দিন আগে অর্থাৎ ১২ মে সাবেক এমপি এম এ আউয়ালের কলাবাগানের অফিসে মোহাম্মদ তাহের ও সুমন এই হত্যার পরিকল্পনা করেন। মাঠ পর্যায়ে হত্যার পরিকল্পনা বাস্তবায়নে সুমনকে দায়িত্ব দেওয়া হয়। এরপর সুমন সক্রিয়ভাবে কিলিং মিশনে অংশ নেয়। এ সময় বেশ কয়েকজন কিলিং মিশনে জড়িত ছিল। সুমন, বাবুসহ কয়েকজন একটা মিটিং করে। এরপর ঘটনার দিন তারা মীমাংসার অজুহাতে সাহিনুদ্দীনকে ঘটনাস্থলে ডেকে পাঠায়। এ সময় সাহিন তার সাত বছরের শিশু সন্তান মাশরাফিকে নিয়ে সেখানে যায়। যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই আগেই থেকে ওঁৎ পেতে থাকা সন্ত্রাসী সুমন, মানিক, হাসান, ইকবালসহ ১০/১২ জন সাহিনকে তার ছেলের সামনে কুপিয়ে মৃত্যু নিশ্চিত করে। প্রথম ধারোলো অস্ত্র দিয়ে সুমন কোপটি দেয়। এরপর মানিকসহ বাকিরা কোপাতে থাকে। মনির হাঁটুতে এবং মানিক উপর্যুপরি সাহিনের পুরো শরীর এবং গলায় কুপিয়ে জখম করতে থাকে। এ সময় বাবুসহ কয়েকজন বিভিন্ন সড়কে অবস্থান নিয়ে পাহারা দিতে থাকে। পাঁচ থেকে সাত মিনিটের মধ্যে পুরো কিলিং মিশনটি শেষ করে। ঘটনা শেষে সুমনসহ বাকিরা সেখান থেকে পালিয়ে যায়। এ সময় সুমন এক নম্বর আসামি আউয়লকে মোবাইলে জানায়- স্যার ফিনিশ। পরে সুমনকে ডিবি পুলিশ গ্রেফতার করে।

দখলবাজির স্বর্গরাজ্য আলীনগর আবাসিক এলাকা: পল্লবীর বুড়িরটেকের আলীনগর আবাসিক এলাকায় জমি দখলবাজির স্বর্গরাজ্যে পরিণত হয়েছে। সাবেক এমপি এম এ আউয়ালের সঙ্গে জমি সংক্রান্ত বিরোধের জেরে ভাড়া করা স্থানীয় সন্ত্রাসীরা সাহিনুদ্দীনকে হত্যা করেছে বলে অভিযোগ নিহতের মা আকলিমা বেগমের। আলীনগরে সাহিনুদ্দীনের মালিকানাধীন ১০ একর জমি জবরদখল করতে চাইছিলেন এম এ আউয়াল। আলী নগরের একদিকে পল্লবীর মিরপুর সিরামিকস, অন্যদিকে মিরপুর ডিওএইচএস। সরকারি কর্মকর্তাদের জন্য নির্মাণাধীন আবাসন প্রকল্প ন্যাশনাল হাউজিং রয়েছে অন্যপাশে। মিরপুর সিরামিকস রোড দিয়ে আলী নগরে যেতে হয়। রাতের বেলা সিরামিকসের ফটকগুলো বন্ধ হলে একরকম অবরুদ্ধ হয়ে পড়েন এখানকার বাসিন্দারা। তবে বিকল্প রাস্তা চেয়েছেন ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের কাছে। বাউনিয়া মৌজায় ঢাকা জেলা প্রশাসনের অধিগ্রহণকৃত ১৬৮ একর জমির একটি অংশে জবরদখল করে গড়ে তোলা আবাসন প্রকল্প হ্যাভেলি প্রপার্টিজ নামের প্রতিষ্ঠানটি আউয়ালের মালিকানাধীন। ১৬৮ একর জমির মধ্যে ৪০ একর জমি ১৯৭৫ পূর্ববর্তী সময়ে তৎকালীন বঙ্গবন্ধু সরকার একটি সংস্থার জন্য অধিগ্রহণ করার নির্দেশ দিয়েছিলেন। এই ৪০ একর জমিতেই এম এ আউয়ালের দখলবাজি। এম এ আউয়াল স্থানীয়ভাবে কিবরিয়া গ্রুপ ও আবু তাহের গ্রুপকে দিয়ে দখলবাজি নিয়ন্ত্রণ করেন। তার সঙ্গে স্থানীয় দুইজন ওয়ার্ড কাউন্সিলরের সম্পৃক্ততা রয়েছে। আউয়াল গ্রেফতার হওয়ায় তার গ্যাং বাহিনী এলাকা ছেড়ে পালিয়েছে। গতকাল পর্যন্ত ওই দুই ওয়ার্ড কাউন্সিলর আত্মগোপন করেছেন।

আরও পড়ুন


  • সর্বশেষ খবর
  • সর্বাধিক পঠিত