দশমিনার ইউএনওর হস্তক্ষেপে বন্ধ হলো ৫টি বাল্য বিয়ে
পটুয়াখালী প্রতিনিধি: পটুয়াখালীর দশমিনায় মঙ্গলবার গভীর রাতে অভিযান চালিয়ে ৮ম শ্রেণীর এক ছাত্রীর বাল্যবিয়ে বন্ধ করে দিয়েছে উপজেলা প্রশাসন। এ নিয়ে চলতি মে মাসে ৫টি বাল্য বিয়ে বন্ধ করেছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও ভ্রাম্যমান আদালতের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মোঃ মহিউদ্দিন আল হেলাল।
বাল্যবিবাহের হাত থেকে বেঁচে যাওয়া অপ্রাপ্তবয়স্ক মেয়েদের মধ্যে ৫জনই বিদ্যালয়ে পড়ুয়া ছাত্রী। এদের মধ্যে দুজন অষ্টম শ্রেণির একজন ৬ষ্ঠ শ্রেণির দুইজন ৯ম শ্রেণির ছাত্রী। দশমিনা উপজেলা প্রশাসন।
সূত্রে জানা গেছে, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ মহিউদ্দিন আল হেলালের নেতৃত্বে এসব অভিযান পরিচালিত হয়। ৫টি বাল্যবিবাহের আয়োজনের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে সাবেক ইউপি সদস্য, মসজিদের ইমাম সহ ১৮ জনকে আটক করে জরিমানা করা হয়েছে।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, ৭মে উপজেলার বেতাগী সানকিপুর ইউনিয়নের ৯ম শ্রেণির ছাত্রীর সঙ্গে একই ইউনিয়ন নিবাসী মোঃ ফারুক হোসেনের ১৭ বছরের ছেলে মোঃ হামিম হোসেনের ঠাকুরের হাট এলাকায় গভীর রাতে বাল্যবিবাহের সময় মেয়েটির বয়স ১৮ বছর পূর্ণ না হওয়ায় প্রশাসনের হস্তক্ষেপে বিয়েটি বন্ধ হয়ে যায় । এসময় বাল্যবিয়ে সংশ্লিষ্ট অনুষ্ঠানে উপস্থিত মেয়ের মামা, চাচা ও ভগ্নিপতি সহ ৪ জনকে বাল্যবিবাহ নিরোধ আইন ২১৭ ধারায় ৩৫ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।
একই ভাবে ১৪ মে গভীর রাতে উপজেলার রনগোপালদী ইউনিয়নের দুর্গম আউলিয়াপুর গ্রামে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপহারের ঘরে ৬ষ্ঠ শ্রেণির ছাত্রীকে জোর করে বাল্য বিবাহ দেয়ার প্রস্ততির সময় সাবেক ইউপি সদস্য সহ চার জনকে ২৮ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। ১৯ মে উপজেলার আলিপুর ইউনিয়নে ৯ম শ্রেনীর ছাত্রীর বাল্য বিয়ে বন্ধ করে দেন উপজেলা প্রশাসন এ সময় বর-কনের অভিভাবকের মুচলেকা আদায় করা হয়। ২১ মে দশমিনা সদর ইউনিয়নের পুজাখোলা জামে মসজিদে বাল্য বিয়ের আয়োজন পন্ড করে ৪জনকে ২৩ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। সর্বশেষ ২৪ মে মঙ্গলবার গভীর রাতে উপজেলার বহরমপুর ইউনিয়ন এর দক্ষিন আদমপুর গ্রামে প্রশাসনের হস্তক্ষেপে ৮ শ্রেণির এক ছাত্রীর বাল্যবিবাহ বন্ধ হয়ে যায়। এ সময় বর-কনের অভিভাবকের জরিমানা ও মুচলেকাও আদায় করা হয়েছে।
ইউএনও মোঃ মহিউদ্দিন আল হেলাল জানান, ‘আমি যখন যেখানে বাল্যবিবাহের খবর পাচ্ছি, সেখানে নিজে ছুটে যাচ্ছি। বিয়ের অনুষ্ঠানে গিয়ে আমরা ছেলে ও মেয়ের সঙ্গে কথা বলেছি। কম বয়সে বিয়ের পরিণতি সম্পর্কে তাদের বুঝিয়ে বলেছি। মেয়ের বয়স কম ছিল বলেই ৫টি বিয়ে বন্ধ করেছি। প্রত্যেক ক্ষেত্রেই ছেলেমেয়ের অভিভাবককে জরিমানা করেছি। এর মধ্যে তিনটি বিয়ের ঘটনায় বিয়ে করতে আসা ছেলেদের কে জরিমানা করা হয়েছে।
তিনি আরও জানান, পরিণত বয়সে না পৌঁছানো পর্যন্ত মেয়েদের বিয়ে না দিতে অভিভাবকের কাছ থেকে মুচলেকা নেওয়া হয়েছে। কম বয়সে মেয়ের বিয়ে না দেওয়াার বিষয়ে অভিভাবকেরা ও সম্মতি জানিয়েছেন। পাশাপাশি অপ্রাপ্তবয়স্ক মেয়েদের বয়স বাড়িয়ে জন্মসনদ যেন দেওয়া না হয়, সে ব্যাপারে ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও সচিবদের সতর্ক করা হয়েছে।
এছাড়াও জানান, এ ব্যাপারে খুব শিগগির কাজি ও ইমামদের নিয়ে সচেতনতামূলক সভার আয়োজন করা হব।
আরও পড়ুন
- সর্বশেষ খবর
- সর্বাধিক পঠিত