নিহত চিকিৎসক সাবিরাকে নিয়ে যা বললেন তার স্বামী
রাজধানীর কলাবাগানে নিহত চিকিৎসক ডা. সাবিরা রহমান দুটি বিয়ে করেছিলেন। তার প্রথম স্বামী চিকিৎসক ছিলেন। তিনি একটি সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যান। পরে সাবিরা দ্বিতীয় বিয়ে করেন। সাবিরার দ্বিতীয় স্বামী সামসুদ্দিন আজাদ, তিনি ন্যাশনাল ব্যাংকের ভাইস প্রেসিডেন্ট। তবে দ্বিতীয় স্বামীর সঙ্গে বনিবনা ছিল না তার।
সাবিরার ঘরে দুটি সন্তান রয়েছে। তার আগের স্বামীর ঘরে একটি ছেলে এবং দ্বিতীয় স্বামীর ঘরে ৯ বছরের একটি মেয়ে। ছেলেটি বিবিএ’তে অধ্যয়নরত। মেয়েকে নিয়ে কলাবাগানের ওই ফ্ল্যাটে থাকতেন সাবিরা। রবিবার রাতে মেয়েটিকে গ্রিন রোডে নানীর বাসায় রেখে এসেছিলেন তিনি। রাতে বাসায় একা ছিলেন সাবিরা।
ডা. সাবিরার দ্বিতীয় স্বামী সামসুদ্দিন আজাদ বলেন, বেলা ১১ টার দিকে শাশুড়ি (ডা. সাবিরার মা) ফোন করে কাঁদতে কাঁদতে আমাকে বলেন, লিপি হয়তো বেঁচে নেই, তুমি একটু ঘটনাস্থলে যাও। এরপর বাসায় ছুটে আসি। তবে প্রথমে পুলিশ আমাকে ঘরের ভেতরে প্রবেশ করতে দেয়নি। দুপুর আড়াইটার দিকে ঘরে প্রবেশ করে বিছানার ওপর স্ত্রীকে রক্তাক্ত অবস্থায় দেখতে পাই।’
তিনি বলেন, ‘আমার স্ত্রীকে নিঃসন্দেহে হত্যা করা হয়েছে। হয়তো খুনিরা হত্যার মোটিভ ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার জন্য আগুন লাগিয়ে থাকতে পারে। আমি মনে করি, এটি একটি হত্যাকাণ্ড। এ হত্যাকাণ্ডের দৃষ্টান্তমূলক তদন্ত ও দোষীদের বিচার হবে।’
স্ত্রীর সঙ্গে না থেকে কেন তিনি আলাদা বাসায় থাকেন- জানতে চাইলে সামসুদ্দিন আজাদ বলেন, ‘তার ১১ বছরের মেয়ে কলাবাগানের একটি স্কুলে পড়াশোনা করে। আমার বৃদ্ধা শাশুড়িকে দেখভালের সুবিধার্থে লিপি কলাবাগানের ওই বাসায় থাকতেন।’
নিষ্ঠুরভাবে হত্যা করা হয়েছে:
হত্যাকাণ্ডের পরপরই ঘটনাস্থলে যায় সিআইডির ক্রাইম সিন ইউনিট। ক্রাইম সিন জানায়, সাবিরাকে নিষ্ঠুরভাবে হত্যা (ব্রুটালি কিল্ড) করা হয়েছে। ধারালো অস্ত্র দিয়ে আঘাতের পরেই সাবিরার তোষকে আগুন ধরিয়ে দেয়া হয়। তবে দাহ্য পদার্থ না থাকায় আগুন তেমন ছড়াতে পারেনি। তবে সাবিরার দেহের কিছু অংশ পুড়েছে।
সিআইডির ক্রাইম সিন ইউনিটের পরিদর্শক শেখ রাসেল কবির বলেন, ধারালো অস্ত্র দিয়ে সাবিরার শ্বাসনালী কেটে ফেলা হয়েছে। তার দেহে রক্ত ও পোড়া ক্ষত ছিল। তবে আমরা নিশ্চিত হয়েছি যে, এটি একটি হত্যাকাণ্ড। আলামত দেখে মনে হয়েছে মধ্যরাত থেকে ভোর পর্যন্ত যে কোন সময় এই হত্যাকাণ্ড সংগঠিত হয়েছে।
ফায়ার সার্ভিসের বক্তব্য ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স সদর দফতরের কন্ট্রোল রুমের ডিউটি অফিসার লিমা খানম বলেন, ‘আমরা সকাল ১০টা ২৫ মিনিটে ওই বাসায় একটি আগুনের সংবাদ পাই। সেখানে গিয়ে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা ধোঁয়া দেখতে পান। ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তারা সেখান থেকে একটি দগ্ধ মরদেহ উদ্ধার করেন। মরদেহটির গলা ও পায়ের সামনের অংশ দগ্ধ ছিল। পেটসহ অন্যান্য অংশ দগ্ধ ছিল না। ঘরের তোশক পুড়ে গিয়েছিল। তবে মরদেহের বিভিন্নস্থানে আঘাতের চিহ্ন দেখে ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা পুলিশে খবর দিতে বলেন। পরে পুলিশ এসে মরদেহ উদ্ধার করে।
এদিকে, বিকালে কলাবাগান থানা পুলিশ লাশের সুরতহাল রিপোর্ট তৈরি করে ময়নাতদন্তের জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ মর্গে পাঠিয়ে দেয়। কলাবাগান থানার ওসি পরিতোষ চন্দ্র বলেন, প্রাথমিকভাবে পুলিশের ধারণা এটি একটি হত্যাকাণ্ড। তবে তা নিশ্চিত হওয়ার জন্য বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে চিকিৎসক সাবিরার মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ মর্গে পাঠানো হয়েছে।
আরও পড়ুন
- সর্বশেষ খবর
- সর্বাধিক পঠিত