‘এক ক্লিকে’ হাট থেকে বাসায় কোরবানির পশু
দেশে করোনা মহামারী প্রতিরোধে আসন্ন কোরবানিকে সামনে রেখে দ্বিতীয়বারের মতো চালু হওয়া ডিজিটাল হাট থেকে স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী তাজুল ইসলাম প্রথম ক্রেতা হিসেবে গরু কিনেছেন। আজ রোববার (৪ জুন) ভার্চুয়াল মাধ্যমে ডিজিটাল কোরবানি পশুর হাট (https://digitalhaat.net/) আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন স্থানীয় সরকার মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম। কোরবানির পশুর ডিজিটাল হাটের উদ্বোধন অনুষ্ঠানের সভাপতি ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আতিকুল ইসলাম এ সময় অনলাইন থেকে মন্ত্রীকে গরু কিনতে টেকনিক্যাল বিষয়ে সহযোগিতা করেন।
ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের অধীনে এবারের ডিজিটাল হাট বাস্তবায়ন করছে ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ই-ক্যাব) এবং বাংলাদেশ ডেইরি ফার্ম অ্যাসোসিয়েশন।
অনুষ্ঠানে মেয়র আতিকুল ইসলাম বলেন, এবারের ডিজিটাল হাটে এক লাখ গরু বিক্রির লক্ষ্য রাখা হয়েছে। এ হাটে যদি এক লাখ গরু বিক্রি করা সম্ভব হয় তাহলে প্রায় ৫ লাখ সংক্রমণের ঝুঁকি থেকে বাঁচবে। তিনি জানান, ডিজিটাল হাট থেকে পশু কিনে তা প্রসেস করে বাসা পর্যন্ত পৌঁছে দেওয়ার সেবা দেওয়া হবে। এক হাজার পশু ‘প্রসেস’ করে ক্রেতার বাসায় পৌঁছে দিতে সক্ষমতা রয়েছে আমাদের। তবে এই সেবা নিতে হলে ক্রেতাদের ১০ জুলাইয়ের মধ্যে অর্ডার দিতে হবে বলে তিনি জানান।
মেয়র বলেন, অনলাইনে যারা গরু কিনবেন তাদের কোনো হাসিল দিতে হবে না। কোরবানির পশুর চামড়া দান করার জন্য মানবসেবা নামে একটি প্ল্যাটফর্ম রয়েছে। গরু কেনায় প্রতারণা এড়ানোর বিষয়ে মেয়র আতিকুল ইসলাম বলেন, ডিএনসিসি ডিজিটাল হাট অত্যন্ত দূরহ ব্যাপার। এখানে অনেকগুলো চ্যালেঞ্জ এসছে। যেমন গতবার চ্যালেঞ্জ এসেছে টাকা দেওয়ার পর গরু যদি খারাপ হয় তাহলে কাকে ধরব? এটি নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে আমাদের কথা হয়েছে।
তারা আমাদের স্ক্রো পদ্ধতি দিয়েছে। স্ক্রো পদ্ধতি হলো আপনি গরু কিনবেন আপনার টাকা কিন্তু বিক্রেতা সরাসরি পাবে না। এটি বাংলাদেশ ব্যাংকের একটা অ্যাকাউন্টে যাবে। আপনি যখন নিশ্চিত করবেন আপনি গরুটা পেয়েছেন এবং গরু ঠিক আছে তারপরই টাকা ছাড় করবে। এই স্ক্রো পদ্ধতিতে নতুন প্লাটফর্মে কাজে লাগবে। কাজেই গরু কেনার পর ঠিক থাকবে না এটা আর হবে না এখন থেকে।
মন্ত্রী তাজুল ইসলাম বলেন, করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঊর্ধগতি থাকায় জনসমাগম পরিহার করতে জনসাধারণ যাতে হাটে না গিয়ে অনলাইনে কোরবানির পশু ক্রয় করে সেজন্য ইউনিয়ন পর্যায়েও ডিজিটাল প্লাটফর্মকে জনপ্রিয় করে তুলতে হবে। তিনি বলেন, ই-কমার্স দীর্ঘদিন ধরে সফলতার সঙ্গে কাজ করায় মানুষের আস্থা অর্জন করেছে। আর করোনাভাইরাস মহামারীকালে ই-কমার্সের গুরুত্ব আরো ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। ই-ক্যাবসহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠানসমূহ এগিয়ে আসায় দেশের করোনা পরিস্থিতি মোকাবেলা করা এবং ঘরবন্ধী মানুষের কাছে প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র সহজে পৌঁছে দেওয়া সম্ভব হচ্ছে।
তাজুল ইসলাম বলেন, গত বছরের তুলনায় এ বছর করোনাভাইরাস পরিস্থিতি আরো ভয়াবহ রূপ ধারণ করেছে। জনসমাগম পরিহার করতে আমাদের আরো বেশি সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। গত ঈদুল আযহায় পশুর হাট পরিচালনায় অনেক চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে হয়েছে। আমরা এ ব্যাপারে সফলও হয়েছি। এ বছরও সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় যে কোন ধরণের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে সমর্থ হবো।
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম বলেন, বর্তমানে দেশে ৪১ কোটি ২২ লাখ খাবার যোগ্য প্রাণী রয়েছে। ১ কোটি ১৯ লাখ কোরবানির জন্য পশু প্রস্তুত রয়েছে। দেশের বাইরে থেকে যেন এ সময়ে পশু আসতে না পারে সেজন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
ই-ক্যাবের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ আব্দুল ওয়াহেদ তমাল বলেন, এক ক্লিকেই হাট থেকে হাতে পশু পৌঁছে দিতে এবার এ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ২৩টি ই-ক্যাব কোম্পানি এবং ৬০টির বেশি মার্কেটপ্লেস এ হাটে যুক্ত আছে। দেশের প্রতিটি জেলা থেকে পশু বিক্রির অনলাইন লিংকগুলো এ হাট থেকে পাওয়া যাবে।
ক্রেতা যাতে কোনো ধরণের অসুবিধায় না পড়েন এজন্য সব ধরনের উদ্যেগ নেওয়া হয়েছে। কোন ধরণের মধ্যস্বত্বভোগী ছাড়াই বিক্রেতারা তাদের পশু বিক্রি করতে পারবে। গত বছর ডিজিটাল হাট থেকে ২৭ হাজারের বেশি কোরবানির পশু বিক্রি করা হয়েছিল বলে জানান ই-ক্যাব সভাপতি শমী কায়সার।
অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন এর নির্বাহী কর্মকর্তা সেলিম রেজা, অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন ই-ক্যাবর প্রেসিডেন্ট শমী কায়সার। ঈদুল আজহা উপলক্ষে রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে এবার কোরবানির পশুর ২৩টি অস্থায়ী হাট বসানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে। এর মধ্যে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে বসবে ১৩টি এবং ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনে বসবে ১০টি পশুর হাট।
আরও পড়ুন
- সর্বশেষ খবর
- সর্বাধিক পঠিত