লকডাউনে ‘নৌকাবিলাসে’ গিয়ে সমালোচনার মুখে ইউএনও রোমানা

| আপডেট :  ২৫ জুলাই ২০২১, ০৬:৫০  | প্রকাশিত :  ২৫ জুলাই ২০২১, ০৬:৫০

ঈদের পর সারা দেশে চলমান কঠোর লকডাউনে বাইরে ঘোরাঘুরি ও জনসমাগমে নিষেধাজ্ঞা ঘোষণা করেছে সরকার। লকডাউনের প্রথম দিন ছিল গত শুক্রবার। সরকার ঘোষিত লকডাউনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) রোমানা আক্তার তিতাস নদীতে তার পরিবার নিয়ে যান নৌকা ভ্রমণে। যোগদানের প্রথম মাসেই বিতর্কে পড়লেন ইউএনও। সমালোচনা হচ্ছে পুরো উপজেলাজুড়ে। জনমনে প্রশ্ন, নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কঠোর লকডাউন নিয়ন্ত্রণ করবেন, তা না করে তিনি নিজেই লকডাউন অমান্য করে ‘নৌকাবিলাস’ গেলেন!

তাও আবার শুধু ইউএনওর পরিবার নয়, তাদের সঙ্গে স্থানীয় এক ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানের পরিবারও ছিল। তাদের এ নৌ-বিলাসের আয়োজক ছিলেন উপজেলার উত্তর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল হান্নান ভূঁইয়া স্বপন।

অবশ্য সড়ক বন্ধ করে ইউএনও’র গাড়ি রাখার ঘটনাকে কেন্দ্র করে বিষয়টি সহজেই জানাজানি হয়ে যায়। বিষয়টি নিয়ে আখাউড়া সচেতন মহলে ব্যাপক সমালোচনা শুরু হয়েছে।

পরিবার নিয়ে নৌকা ভ্রমণের কথা স্বীকার করেছেন ইউএনও রুমানা আক্তার। যদিও তার দাবি, জাইকার একটা প্রজেক্ট দেখতে গিয়েছিলেন। ঈদ উপলক্ষে পরিবারের সদস্যরা তার কাছে থাকায় তাদেরও সঙ্গে নিয়ে যান তিনি।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত শুক্রবার দুপুরের পর ইউএনওর সরকারি গাড়ি ও একটি প্রাইভেটকারে করে কয়েকজন আজমপুরের নৌঘাট (খেয়াঘাট) এলাকায় যান। পরে ইউএনও রুমানা আক্তারসহ তার পরিবারের লোকজন ও উত্তর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আব্দুল হান্নান ভূঁইয়া স্বপনের পরিবারের লোকজন একটি নৌকায় করে ভ্রমণে যান।

নৌকার একটি ভিডিও ক্লিপে দেখা যায়, নারী ও শিশুসহ অন্তত ১৫ জন ওই নৌকার ছাউনিতে বসে আছেন। তারা একে অপরের সঙ্গে গল্পে মশগুল। একজন নৌকা থেকেই সবার বসে থাকার দৃশ্য ধারণ করেছেন। নৌকাটি ঘাট থেকে ছেড়ে যাওয়ার দৃশ্যও ধারণ করেন স্থানীয় লোকজন।

নৌকায় উঠার সময় ইউএনওর সরকারি গাড়িসহ দুটি গাড়ি সড়কে রাখা হয়। এতে করে যান চলাচলে বিঘ্ন ঘটে।

আজমপুরের কাজী শরীফ নামে এক যুবক মোটরসাইকেল নিয়ে যেতে পারছিলেন না বলে গাড়ি সরাতে অনুরোধ করেন। একটি ভিডিও ক্লিপে দেখা যায়, ওই যুবক বলছেন যে তিনি সড়কের মাঝে রেখে দেয়া গাড়ি সরানোর কথা বললে উল্টো হুমকি দেয়া হয়- যতক্ষণ পর্যন্ত ইউএনওর গাড়ি রাস্তায় থাকবে ততক্ষণ পর্যন্ত যেতে পারবেন না।

উত্তর ইউনিয়ন পরিষদের মেম্বার কাজী ইউসুফ বলেন, আমি যেটুকু শুনেছি রাস্তার মধ্যে ইউএনওর গাড়ি রাখা নিয়ে চেয়ারম্যানের সঙ্গে আমার ভাতিজাসহ এলাকার ছেলেদের তর্কবিতর্ক হয়। গাড়ি রাস্তায় রাখার কারণে মোটরসাইকেল আনতে সমস্যা হচ্ছিল বলে এমনটা হয়।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, কোনো প্রজেক্টের কাজে ইউএনও আসছিলেন কি-না সেটা আমার জানা নেই। তবে মনে হচ্ছে চেয়ারম্যান দাওয়াত দিয়ে ওনাকে এনেছেন। ইউএনও এবং চেয়ারম্যানের পরিবারের লোকজন এ সময় উপস্থিত ছিলেন বলে তিনি জানান।

উত্তর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মো. আব্দুল হান্নান ভূঁইয়া স্বপন সাংবাদিকদের বলেন, আমাদের এলাকার খেয়াঘাটে ইরিগেশন প্রকল্প দেখতে এসেছিলেন ইউএনও স্যার। পরে এখানে একটি বিনোদন স্পট করা যায় কি-না সেটি দেখানোর জন্য ইউএনওকে নিয়ে যাওয়া হয়। পরে অনতিদূরেই থাকা বিজয়নগর উপজেলা চেয়ারম্যানের একটি মাছের প্রজেক্ট দেখতে নৌকায় উঠা হয়। আমি বলেছিলাম যে ওই প্রজেক্ট দেখে এলে আমাদের এখানেও একটি প্রজেক্ট করা যাবে। পরিবারের লোকজন কেনো এতে ছিল- এমন প্রশ্নের জবাব এড়িয়ে গিয়ে ফোনে কথা বুঝা যাচ্ছে না বলে সরাসরি কথা বলবেন বলে ফোন রেখে দেন।

এ বিষয়ে আখাউড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) রুমানা আক্তারকে সরকারি মোবাইল ফোন নম্বরে কল করা হলে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, জাইকার একটি প্রজেক্ট দেখতে আমি সেখানে যাই। যেহেতু আমার পরিবারের লোকজন ঈদ উপলক্ষে আমার এখানে ছিলেন সেহেতু তাদের সঙ্গে নিয়ে গেছি।

 

আরও পড়ুন


  • সর্বশেষ খবর
  • সর্বাধিক পঠিত