গোপালগঞ্জে বাড়ী বাড়ী বিনামূল্যে অক্সিজেন সেবা

| আপডেট :  ০৩ আগস্ট ২০২১, ০৪:২২  | প্রকাশিত :  ০৩ আগস্ট ২০২১, ০৪:২২

বাদল সাহা, গোপালগঞ্জ থেকে: কোটালীপাড়া উপজেলার মাঝবাড়ি গ্রামের করোনা আক্রান্ত রোগী সালমা। হঠাৎ করেই দেখা দেয় তার শ্বাসকষ্ঠ। অক্সিজেন সেবা পেতে তারা বাবা মুক্তিযোদ্ধা আবুল কালাম আজাদ দাঁড়িয়া ফোন দেন “টিম লাইফ সাপোর্টকে”। তাৎক্ষতিক মোটর সাইকেলে করে অক্সিজেন সিলিন্ডার নিয়ে সেখানে ছুটে যান টিম লাইফ সাপোর্টের স্বেচ্ছাসেবীরা। অক্সিজেন সেবা পেয়ে সুস্থ হন সালমা।

সালমার বাবা মুক্তিযোদ্ধা আবুল কালাম আজাদ দাঁড়িয়া বলেন, আমার মেয়ে করোনা আক্রান্ত হয়ে বাড়িতে বসে চিকিৎসা নিচ্ছিল। হঠাৎ করেই তার তীব্র শ্বাসকষ্ট দেখা দিলে ‘টিম লাইফ সাপোর্ট” কে ফোন দিতেই দ্রুত তারা অক্সিজেন সিলিন্ডার নিয়ে আমার মেয়েকে অক্সিজেন সেবা দেয় এবং তার শ্বাসকষ্ট দূর হয়। যেখানে করোনা রোগীর কাছে মানুষ যেতে ভয় পায় সেখানে টিম লাইফ সাপোর্ট এর সদস্যরা করোনা রোগীর কাছে গিয়ে যেভাবে অক্সিজেন সেবা দিচ্ছে তা সত্যিই প্রশংসাযোগ্য।

আর এমনভাবেই এসব সেচ্ছাসেবীদের প্রশংসা করেন বিনামুল্য অক্সিজেন সেবা পাওয়া রোগী ও তাদের স্বজনরা।

এসব স্বেচ্ছাসেবীদের মোটর সাইকেলে করে ছুটে চলা আনন্দের জন্য নয়। কোভিট আক্রান্ত বা শ্বাসকষ্টের রোগীদের কথা শুনেই জীবনের ঝুঁকি নিয়ে মোটর সাইকেলে অক্সিজেন সিলিন্ডার নিয়ে ছুটে চলছে একদল স্বেচ্ছাসেবী।

সম্প্রতি সময়ে অক্সিজেনের অভাবে করোনা রোগী মারা যাওয়ায় ঘটনায় গোপালগঞ্জে কোভিড আক্রান্ত ও শ্বাসকষ্টের রোগীদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে বিনামূল্যে অক্সিজেন পৌঁছে দিচ্ছে গোপালগঞ্জের “উদীচি”, “প্রিয় গোপালগঞ্জ” কাশিযানী উপজেলার “মধুমতি অক্সিজেন ব্যাংক”, কোটালীপাড়া উপজেলার জ্ঞানের আলো পাঠাগারের সহযোগী সংগঠন ‘টিম লাইফ সাপোর্ট” ও টুঙ্গিপাড়া উপজেলার “নবধারা অক্সিজেন সেবা”সহ বেশ কয়েকটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন। এসব প্রান্তিক ও গবীর মানুষদের অক্সিজেন সেবা দিতে গিয়ে শুধু দিনের বেলায় নয় রাতেও অক্সিজেন সেবা দিতে জেলার ৫ উপজেলায় ছুটে চলছে স্বেচ্ছাসেবীরা। অক্সিমিটারের মাধ্যমে রোগীর অক্সিজেনের মাত্রা পরিমাপ করে অক্সিজেন সেবা দেন স্বেচ্ছাসেবীরা।

এসব সংগঠনের রয়েছে অন্তত ১০টি হেল্পলাইন নম্বর। শুধু ফোন নয় অনলাইন বা ফেসবুকের মাধ্যমে খবর ফেলে অক্সিজেন সেবা পৌঁছে দেয়া হচ্ছে। ইতিমধ্যে এসব সংগঠন শতাধিক অক্সিজেন সিলিন্ডারে মাধ্যমে কয়েকটি উপজেলার পাঁচ শতাধিক কারোনা ও শ্বাসকষ্ট রোগীদের অক্সিজেন সেবা দিয়েছেন। এছাড়া “উদীচী” ৫টি ও “প্রিয় গোপালগঞ্জ” একটি অক্সিজেন কনসেনট্রেটর মাধ্যেমে অক্সিজেন তৈরী করে সরাসরি সেবা দিচ্ছে।

কোটালীপাড়া উপজেলার হিরণ ইউনিয়নের তারাশী গ্রামের রোগী মোস্তাফিজুর রহমান (৪৫), গৃহবধু সালমা (৩০) বলেন, আমাদের স্বাসকষ্ঠ দেখা দিলে স্বোচ্ছাসেবীদের ফোন দিতেই তারা বাড়ীতে ছুতে আছে। বিনামূণ্যে অক্সিজেন দেবা দেয়ার পর আমরা সুস্থ রয়েছি।

কালিগঞ্জ গ্রামের ধেনু হালদার (৭৫), ভূয়ারপাড় গ্রামের স্বপ্না (২২) বলেন, আমাদের শ্বাসকষ্ট দেখা দিলে স্বজনরা অতংকিত হয়ে ওঠেন। কোথায় গিয়ে অক্সিজেন দিবেন এমন চিন্তায় দিক বিদিক ছোটাচুটি করতে থাকেন। এসময় তারা স্বেচ্ছাসেবীদের হেল্পলাইনে ফোন করলে অক্সিজেন সিলিন্ডার নিয়ে স্বেচ্ছাসেবীরা বাড়ীতে এসে অক্সিজেন সেবা দেন। এ সেবা পেয়ে আমরা এখন সুস্থ। দোয়া করি আল্লাহ যেন তাদের ভাল করে।

স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন “নবধানা অক্সিজেন সেবার সদস্য” মেহেদী হাসান বলেন, আমরা গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়া ও বাগেরহাটের চিতলমারীতে অক্সিজেন সেবা পৌঁছে দিচ্ছি। ফোন পেলেই অক্সিজেন নিয়ে ছুটে যাচ্ছে আমাদের স্বেচ্ছাসেবীরা।

স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন জ্ঞানের আলো পাঠাগারের সহযোগী সংগঠন “টিম লাইফ সাপোর্ট অক্সিজেন ব্যাংক” কোটালীপাড়ার পরিচালক সুশান্ত মন্ডল বলেন, কোটালীপাড়া উপজেলার ১১ টি ইউনিয়ন ও ১ টি পৌরসভার করোনা আক্রান্ত রোগীদের অক্সিজেন সেবা দিচ্ছে টিম লাইফ সাপোর্ট। আমাদের কাছে ২৪টি সিলিন্ডার রয়েছে। ১২টি টিমে ৬০ জন স্বেচ্ছাসেবক কাজ করছে টিম লাইফ সাপোর্ট অক্সিজেন ব্যাংক কোটালীপাড়ায়। দিনদিন এই উপজেলায় করোনা রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। সুষ্ঠভাবে আমাদের কার্য ক্রম চালানোর জন্য আরো অক্সিজেন সিলিন্ডার প্রয়োজন। তাছাড়া স্বেচ্ছাসেবীদের জন্য পিপিইসহ সুরক্ষাসামগ্রী দরকার।

স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন “প্রিয় গোপালগঞ্জ” এর পরিচালক সুব্রত সাহা বাপী বলেন, প্রিয় গোপালগঞ্জ সাধারন মানুষকে অক্সিজেন সেবা দিতে দিন রাত কাজ করে যাচ্ছে। ৩৮ সিলিন্ডারে মাধ্যমে এ পযর্ন্ত ২৫০জন রোগকে সেবা দেয়া হয়েছে। কারোনা কালীন সময়ে আমাদের এ সেবা অব্যাহত থাকবে।

স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন “মধুমতি অক্সিজেন ব্যাংক” এর উদ্যোক্তা ডিএমপি এডিসি জামাল আল নাসের শামিল বলেন, কারোনাকালীন সময়ে যাতে কেউ অক্সিজেনের অভাবে না পড়ে সেজন্য আমি ফেসবুকে সকলকে এগিয়ে আসার জন্য একটি পোষ্ট দিয়েছিলোম। এ পোস্টের আহবানে সাড়া দিয়ে অনেকেই এগিয়ে এসেছেন। বর্তমানে ২৪টি সিলিন্ডারের মাধ্যমে দেড় শতাধিক রোগীকে সেবা দেয়া হয়েছে। একাজে সমাজের সকালেই এগিয়ে আসবে এমনটিই প্রত্যাশা আমার।

এসব সংগঠনকে সাধুবাদ জানিয়ে গোপালগঞ্জের জেলা প্রশাসক শাহিদা সুলতানা বলেন, বিভিন্ন সংগঠন অনুদান বা নিজ খরচে অক্সিজেন সিলিন্ডার কিনে যাদের অক্সিজেন দরকার তাদেরকে বাড়ীতে গিয়ে সেবা দিচ্ছেন। এর মাধ্যমে যাদের অক্সিজেনের জন্য হাসপাতালে আসতে হতো তাদেরকে আসতে হচ্ছে না। নি:সন্দেহে এমন উদ্যোগকে আমরা স্বাগত জানাই।

তিনি আরো বলেন, যে কোন বিপদের মুহূর্তে মানুষের পাঁশে দাঁড়ানো মানুষের জন্য প্রকৃত একটি শিক্ষা। মানবিকতার চর্চার জায়গাটা পূর্ণ হচ্ছে। প্রথম থেকেই আমরা সব ধরনের সহযোগীতা করে আসছি। আগামীতের তাদের যে কোন ধরনের সহযোগীতা প্রয়োজন হলে আমাদের পক্ষ থেকে সেই সহযোগীতা অব্যাহত থাকবে।

আরও পড়ুন


  • সর্বশেষ খবর
  • সর্বাধিক পঠিত