আসছে ছাত্রদলের পূর্ণাঙ্গ কমিটি
চলতি মাসেই (১৯ সেপ্টেম্বর) ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সংসদের মেয়াদ শেষ হয়েছে। ২০১৯ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর সারা বাংলাদেশের কাউন্সিলরদের প্রত্যক্ষ ভোটে নির্বাচিত হয় বর্তমান কমিটির সভাপতি ফজলুর রহমান খোকন এবং ইকবাল হোসেন শ্যামল সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। এর দুই মাস পরে ৬০ সদস্যদের আংশিক কমিটি গঠন করা হয়। এই কমিটির মেয়াদ দুই বছর পূর্ণ হলেও করতে পারেনি পূর্ণাঙ্গ কমিটি। তবে এই পূর্ণাঙ্গ কমিটি না দেওয়ার জন্য নিজেদের ব্যর্থতা ঢাকতে করোনা মহামারিকে দায়ী করছেন বর্তমান কমিটি। নিজের কমিটি পূর্ণাঙ্গ না করতে পারলেও এ সময়ের মধ্যে নেতারা সারাদেশে তৃণমূল পর্যায়ে বেশিরভাগ কমিটি গঠন সম্পন্ন করেছেন।
ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সংসদের কয়েকজন নেতার সাথে আলাপকালে জানা গেছে আংশিক কমিটির টার্গেট এখন মেয়াদ দীর্ঘায়িত করা। আর এজন্যই থেমে আছে পূর্ণাঙ্গ কমিটি করা এবং গুরুত্বপূর্ণ বিশ্ববিদ্যালয় ও ঢাকার মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ ইউনিট- ঢাকা কলেজ, তিতুমীর কলেজ, সরকারি কবি নজরুল কলেজ, বাঙলা কলেজ, তেজগাঁও কলেজ। এ ছাড়া জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, শের-ই-বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ইউনিটের কমিটি গঠন।
ঢাকা বিভাগীয় সাংগঠনিক টিমের কয়েকজনের সাথে কথা হয় এই প্রতিবেদকের। তারা জানান দীর্ঘ ১০ মাস পূর্বে মতামত দিলেও এখনও এসব কমিটিগুলো দিতে পারেনি সংগঠনের শীর্ষ নেতৃত্ব। অভিযোগ রয়েছে শীর্ষ নেতৃত্বে যারা রয়েছেন তাদের কাছের লোকজন মতামতের মধ্যে না থাকায় এই গুরুত্বপূর্ণ ইউনিটগুলো এখনও কমিটি ঘোষণা করা হচ্ছে না।
সূত্র জানায়, বিএনপির ধারাবাহিক বৈঠকে দলটির নেতারা অঙ্গ সহযোগী সংগঠনের কমিটি ভেঙে নতুন কমিটির দাবি জানায়। এ বিষয়টি আমলে নিয়ে কাজ করার জন্য তাগিদ দিয়েছে হাইকমান্ড। তবে যে সকল কমিটির মেয়াদ শেষ হয়েছে তা ভেঙে পূর্ণাঙ্গ এবং যে সকল কমিটি আংশিক রয়েছে তা পূর্ণাঙ্গ করার কথা বলা হয়েছে হাইকমান্ড থেকে। সূত্র জানায়, শিগগিরই ঘোষণা হতে পারে কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের পূর্ণাঙ্গ কমিটি। তার পূর্বেই ঢাকার মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ ইউনিটগুলো ঘোষণা করার কথা রয়েছে। আগামী মাসেই ছাত্রদল কেন্দ্রীয় সংসদের ১৫১ অথবা ২০১ সদস্যের পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করা হবে বলে জানা গেছে।
পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে আলোচনায় রয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়সহ ঢাকার ৫ কলেজ ও ঢাকা মহানগরের বর্তমান ও সদ্য বিদায়ী কমিটির নেতারা। মেয়াদউত্তীর্ন ছাত্রদলের আংশিক কমিটির বাহিরের বিরাট একটি অংশ চায় বর্তমান কমিটি স্বল্প সময়ের জন্য হলে পূর্নাঙ্গ করা হোক।এর মাধ্যমে বিরাট একটি অংশের রাজনৈতিক স্বীকৃতি হবে। নিয়মের বেড়াজালে ইউনিট কমিটি গুলোতো বাদ পড়া ছাত্রনেতাদের পরিচয় মিলবে এই কমিটিতে।এই অংশের নেতারাও দফায় দফায় নিজেদের মধ্যে মিটিং করছেন।অতীতে তারা পার্টি অফিসে অনশন কর্মসূচিও পালন করেন যা সিনিয়র নেতৃবৃন্দের হস্তক্ষেপে স্থগিত হয়।সুতরাং নানা জটিলতায় আর সমীকরণে হাইকমান্ড সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগছেন করোনা মহামারীর কারনে এই কমিটি বড় একটা সময় লকডাউনের ভেতর পার করেছে।
ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সংসদের যুগ্ম সম্পাদক তানজিক হাসান বলেন, ছাত্রদলের কমিটির যেহেতু মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে তাই আমাদের অভিভাবক তারেক রহমান কমিটির বিষয়ে যেই সিদ্ধান্ত নেন আমরা তাই মেনে নেব। বর্তমান কমিটির যেহেতু মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে তাই অতিদ্রুত পূর্ণাঙ্গ কমিটি দিয়ে দেওয়া উচিত বলে মনে করেন তিনি।
ঢাকার মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ ইউনিট এবং কেন্দ্রীয় পূর্ণাঙ্গ কমিটির বিষয়ে জানতে চাইলে কুমিল্লা বিভাগীয় সাংগঠনিক টিমের প্রধান ও ছাত্রদলের সহ-সভাপতি জাকিরুল ইসলাম জাকির বলেন, বর্তমান কমিটির সবচেয়ে বড়ো ব্যর্থতা হচ্ছে ঢাকার মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ ইউনিটগুলো কমিটি দিতে না পারা। পাশাপাশি কেন্দ্রীয় পূর্ণাঙ্গ কমিটি দিতে না পারা। তিনি বলেন, দ্রুত পূর্ণাঙ্গ কমিটি দিয়ে দেওয়া উচিত। যারা পদ ছাড়া দীর্ঘ দিন ঘুরে বেড়াচ্ছে তাদের তো একটা পরিচয় দরকার।
মেয়াদউত্তীর্ন ছাত্রদলের এখন কি করনীয় এমন প্রশ্নের জবাবে সংগঠনের বর্তমান সিনিয়র সহ-সভাপতি কাজী রওনকুল ইসলাম শ্রাবন বলেন, সাংগঠনিক অভিভাবক যে সিদ্ধান্ত নিবেন, অবশ্যই সেটা সংগঠনের ভালোর জন্য নিবেন,সংগঠনের দায়িত্বশীল নেতৃত্বরা অনেক সময় নিজেদের স্বার্থে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে,কিন্তু একমাত্র সাংগঠনিক অভিভাবক সংগঠনের স্বার্থে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। বর্তমান পরিস্থিতিতে উনার সিদ্ধান্তের দিকে তাকিয়ে আছে ছাত্রদল,বর্তমান যে অস্বস্তিকর পরিস্থিতি একমাত্র সাংগঠনিক অভিভাবকের সিদ্ধান্তই পারে সকল কে ঐক্যবদ্ধ করতে।
তিনি বলেন, আমি যেহেতু সংগঠনের দায়িত্বশীল পদে আছি, আমি অবশ্যই দাবি করবো,বর্তমান কমিটি অতীতের সকল কমিটি থেকে সফল,কিন্তু দল যখন আন্দোলনের ডাক দিবে,তখনই সফলতা বা ব্যর্থতা দৃশ্যমান হবে। তবে দীর্ঘদিনের তৃণমূলের কমিটির যে সেশনজট ছিল,আমরা সেই সেশনজট কাটিয়ে উঠতে সাহায্য করেছি,তবে কেন্দ্রীয় কমিটি পূর্ণাঙ্গ না করতে পারা এবং ঢাকা মহানগরের সকল দায়িত্বশীল ইউনিট শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কমিটি এখনো গঠন করতে না পারা, সমালোচকেরা ব্যর্থতা বলে দাবি করেন।
সংগঠনের সিনিয়র যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক আমিনুর রহমান আমিন বলেন, বর্তমান কমিটি স্বল্প সময়ের জন্য হলেও আগে পূর্নাঙ্গ করা জরুরী বলে আমি মনে করি।কারন আমরা যাদের সাথে দীর্ঘদিন এই স্বৈরাচার সরকারের বিরুদ্ধে রাজপথে আন্দোলন সংগ্রাম করে আসছি তাদের অনেকেই এখনও পদ ছাড়া পরিচয় হীন ঘুরছেন।তাদের একটি রাজনৈতিক পরিচয় হওয়া দরকার।তারপরও আমাদের সাংগঠনিক অভিভাবক তারেক রহমান যে সিদ্ধান্ত নিবেন আমরা সেই সিদ্ধান্তের প্রতি আস্থাশীল।
আরও পড়ুন
- সর্বশেষ খবর
- সর্বাধিক পঠিত