এক ডজন শীর্ষ সাইবার সন্ত্রাসীর ভয়ংকর অপতৎপরতা
যুদ্ধাপরাধী ও আগুন সন্ত্রাসের সিন্ডিকেট দেশে-বিদেশে বসে বাংলাদেশবিরোধী ভয়ংকর অপতত্পরতায় নেমেছে। দেশের উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত করা, দেশে প্রতিষ্ঠিত শিল্পপ্রতিষ্ঠান ধ্বংস করে দেশকে অকার্যকর ও ব্যর্থ রাষ্ট্র করার অশুভ প্রয়াস নিয়ে এই চক্রান্ত চালিয়ে যাচ্ছে স্বাধীনতাবিরোধী শক্তিশালী চক্র। এ জন্য তারা বিশাল অর্থ ব্যয়ে ভাড়া করেছে সাইবার সন্ত্রাসী গোষ্ঠী। তাঁদের কয়েকজন সেনানিবাসে অবাঞ্ছিত ও চাকরিচ্যুত সেনা কর্মকর্তা। কয়েকজন আছেন বিভিন্ন ফৌজদারি অপরাধের মামলায় আসামি হয়ে বিদেশে আত্মগোপন করা মুখোশধারী ও ভুঁইফোড় সাংবাদিক। আইন প্রয়োগকারী সংস্থা তাঁদের চিহ্নিত করার পরও দেশের বাইরে থাকায় প্রয়োজনীয় আইনি ব্যবস্থা নেওয়া যাচ্ছে না। এই সিন্ডিকেট প্রযুক্তির অপব্যবহার করে ফেসবুক, ইউটিউব, টুইটারসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বঙ্গবন্ধু পরিবার, সরকার, বিচার বিভাগ ও দেশের বিরুদ্ধে অপতত্পরতা চালাচ্ছে। কোনো ধরনের জবাবদিহি না থাকায় বেপরোয়াভাবে প্রতিনিয়ত বিষবাষ্প ছড়াচ্ছে আগুন সন্ত্রাসের এই সিন্ডিকেট। তাদের বিরুদ্ধে ইন্টারপোলের মাধ্যমে ব্যবস্থা নেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করেছে আইন প্রয়োগকারী সংস্থা।
বিজ্ঞজনদের মতে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রচেষ্টায় বাংলাদেশ এখন মধ্যম আয়ের দেশ। এখন বিশ্বব্যাংকসহ দাতাদের কাছে হাত না পেতে দেশ অনেক ক্ষেত্রেই স্বনির্ভর হয়েছে। শ্রীলঙ্কাসহ কয়েকটি দেশকে বাংলাদেশ ঋণ দিয়েছে। শেখ হাসিনার প্রচেষ্টায় দেশব্যাপী দৃশ্যমান উন্নয়নের পাশাপাশি প্রযুক্তিগত উন্নয়নে দেশ এখন ডিজিটাল যুগে প্রবেশ করছে। কিন্তু এর সুফল নিয়ে যাচ্ছে জামায়াত এবং যুদ্ধাপরাধী স্বাধীনতাবিরোধী অপশক্তি। ফেসবুক ও ইউটিউবের মাধ্যমে দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করতে এখন ভুঁইফোড় বহু পণ্ডিতের জন্ম হয়েছে। যদিও সাধারণ মানুষ এসব অশুভ শক্তিকে প্রত্যাখ্যান করেছে, এর পরও সরকারকে ঘায়েল করার অপকৌশল হিসেবে যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী অপশক্তি এখন সাইবার যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছে। আর এ যুদ্ধে সরকারের যেসব মন্ত্রণালয় তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা, তারা কার্যকর কোনো ভূমিকা রাখতে পারছে না। ফলে তাদের এই সাইবার যুদ্ধে সরকার এরই মধ্যে এক রকম আত্মসমর্পণ করেছে।
সাইবার সন্ত্রাসীদের বিষয়ে উষ্মা প্রকাশ করেছেন খোদ প্রধানমন্ত্রীও। ২৪ অক্টোবর নিউ ইয়র্কে যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগ আয়োজিত নাগরিক সংবর্ধনায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘কিছু লোক বিদেশে অবস্থান করে দেশের সমালোচনা করে এবং ভাবমূর্তি নষ্ট করে। আমরা কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে দেশকে একটি মর্যাদাপূর্ণ অবস্থানে উন্নীত করেছি। এখন তাদের লক্ষ্য হচ্ছে দেশের ভাবমূর্তি নষ্ট করা।’ প্রধানমন্ত্রী বলেন, “কিছু লোক আওয়ামী লীগ সরকারকে অবৈধ বলে অভিহিত করছে। আমার প্রশ্ন হলো, কী করে তারা এ শব্দগুলো উচ্চারণ করার সুযোগ পায়! আমরা বাংলাদেশকে ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ হিসেবে গড়ে তুলেছি বলেই তারা এটা বলার সুযোগ পেয়েছে। বিএনপি ও জামায়াতের কাছ থেকে সরকারের সমালোচনাকারীরা মোটা অঙ্কের অর্থ গ্রহণ করে। যদি তারা নীতিমান হয় এবং তাদের কোনো আদর্শ থেকে থাকে, তাহলে তারা আমাদের তৈরি ডিজিটাল সিস্টেমগুলো কেন ব্যবহার করে?”
প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের সূত্র ধরে অনুসন্ধানে দেশের বাইরে থাকা এক ডজন শীর্ষ সাইবার সন্ত্রাসীকে চিহ্নিত করা গেছে। তাঁরা হলেন—সুইডেনপ্রবাসী ও নেত্র নিউজের এডিটর ইন চিফ তাসনিম খলিল, কানাডাপ্রবাসী ও সাবেক সেনা কর্মকর্তা মেজর দেলোয়ার হোসেন, যুক্তরাজ্যে অবস্থানরত ও কোর্ট মার্শালে সাজাপ্রাপ্ত হয়ে অবসরে যাওয়া সেনা কর্মকর্তা কর্নেল শহীদ উদ্দিন খান, কানাডাপ্রবাসী অবসরপ্রাপ্ত ক্যাপ্টেন শহীদ ইসলাম, সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার সাবেক এপিএস ও বিসিএস ১৯৮৬ ব্যাচের কর্মকর্তা যুক্তরাষ্ট্রে আত্মগোপনে থাকা মোহাম্মদ শামসুল আলম, শিবির ক্যাডার ও কানাডাপ্রবাসী নাজমুস সাকিব, কানাডাপ্রবাসী কথিত ব্যারিস্টার এম রহমান মাসুম, কানাডাপ্রবাসী কথিত সাংবাদিক ও ইউটিউব ফেসবুকভিত্তিক ভুঁইফোড় চ্যানেল নাগরিক টিভির সিইও টিটো রহমান, পর্নোগ্রাফি নিয়ন্ত্রণ মামলার আসামি হয়ে বিদেশে আত্মগোপন করা সাংবাদিক কনক সারোয়ার, রাজাকারের সন্তান দাবিদার ও চাঁদাবাজির মামলায় আসামি হয়ে বিদেশে আত্মগোপন করা সাংবাদিক ইলিয়াস হোসেন, ধর্ষণ মামলার আসামি হয়ে যুক্তরাজ্যে আত্মগোপন করা প্রতারক সাংবাদিক জাওয়াদ নির্ঝর এবং বাংলাদেশ প্রতিদিনের ফিচার লেখকের ভুয়া পরিচয় দেওয়া কথিত সাংবাদিক হাসিনা আক্তার।
এসব সাইবার অপরাধী সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নানা অপপ্রচার ও গুজব রটিয়ে চলেছেন। তাঁদের বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে না পারায় বিটিআরসির (বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন) কর্মকাণ্ডে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন হাইকোর্ট। সম্প্রতি এক রিট আবেদনের শুনানিতে হাইকোর্ট বলেছেন, ‘বিটিআরসি কী করে? একই বিষয়ে কি বিটিআরসিকে প্রতিনিয়ত নির্দেশনা দিতে হবে? মনে হচ্ছে বিটিআরসি এ ধরনের ভিডিও ও ছবি দেখে আনন্দ পায়। তাদের ভালো লাগে, তারা এগুলো উপভোগ করে। আমরা সন্তান-সন্ততি, পরিবার নিয়ে থাকি না? তারা চাইলেই ব্যবস্থা নিতে পারে। কিন্তু তারা ব্যবস্থা নিচ্ছে না।’
বিদেশের মাটিতে বসে বাংলাদেশ, সরকার, বঙ্গবন্ধু, প্রধানমন্ত্রীর পরিবারকে নিয়ে বিভ্রান্তিকর মিথ্যা তথ্য দিয়ে মানুষকে বিভ্রান্ত করার বিষয়গুলো তদন্ত করে প্রমাণ পেয়েছে একাধিক গোয়েন্দা সংস্থা। এরই মধ্যে ইন্টারপোলকে চিঠি দিয়ে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার বিষয়টিও চূড়ান্ত হয়েছে। পুলিশ ও গোয়েন্দার দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা মনে করেন, এ চক্রের পেছনে আছে একাত্তরের পরাজিত শক্তি ও তাদের দোসররা। আর টাকা ঢালছে বাংলাদেশবিরোধী শক্তি। এই এক ডজন শীর্ষ সাইবার সন্ত্রাসীর মিথ্যা প্রচারণা থেকে জাতিকে সাবধান থাকতে হবে।
জানতে চাইলে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি এ এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক বলেন, ‘সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ইউটিউব বা ফেসবুক ব্যবহার করে আমাদের দেশের কিছু লোক দেশ-বিদেশে বসে শুধু নিজেদের স্বার্থে নানা ধরনের অপপ্রচার ও গুজব চালিয়ে যাচ্ছে। বিভিন্ন মাধ্যমে জানতে পেরেছি যুদ্ধাপরাধী রাজাকারদের সন্তান ও বংশধর, বরখাস্ত কিছু সেনা কর্মকর্তা, পলাতক বিএনপি নেতা, কিছু পলাতক সাংবাদিক লন্ডন, আমেরিকা, কানাডা, সুইজারল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়াসহ বিভিন্ন দেশে বসে দেশের উন্নয়নকে বাধাগ্রস্ত করা, দেশের শিল্পপ্রতিষ্ঠান ধ্বংস করা ও দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করার উদ্দেশ্যে অপপ্রচারমূলক ভিডিও প্রচার করছে। এ ভিডিওই নাকি তাদের আয়ের অন্যতম উত্স। এর থেকে অর্থ আয়ের পাশাপাশি তারা স্বাধীনতাবিরোধী শক্তির কাছ থেকেও বড় অঙ্কের অর্থ নিচ্ছে। তারা রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে কুত্সা রটনা করে আয় করছে অথচ আমরা তাদের কিছুই করতে পারছি না। শুধু তা-ই নয়, অপপ্রচারমূলক কনটেন্টগুলো আমরা সরাতেও পারছি না। আমাদের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রী ও সরকারি আমলারা যেন হাত-পা গুটিয়ে বসে আছেন। তাঁদের এ আচরণ নৈরাশ্যজনক।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক জিনাত হুদা বলেন, ‘সম্প্রতি দেখা যাচ্ছে কিছু লোক ইউটিউব চ্যানেল ও ফেসবুক পেজ খুলে নানা ধরনের ভিডিও প্রচার করছেন। এ সবের অধিকাংশই অপপ্রচারমূলক। সমাজে ও রাষ্ট্রে এর একটা বিরূপ প্রভাব পড়ছে। বহির্বিশ্বে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হচ্ছে। এসব ভিডিও-অডিও প্রচার বন্ধ না করা গেলে সামাজিক অবক্ষয় আগের তুলনায় আরো বাড়তে পারে এবং দেশের উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত হতে পারে বলে আশঙ্কা করছি।’ জিনাত হুদা বলেন, ‘রাজনৈতিক সরকারের বিরুদ্ধে যে কেউ যেকোনো ধরনের সমালোচনা করতে পারে। এতে কোনো সমস্যা নেই। তবে কেউ যদি সমালোচনার স্থলে মিথ্যাচার করে, গুজব ছড়ায়, অপপ্রচার কমর, সেখানেই সমস্যা। দেখা যাচ্ছে, এসব ব্যক্তি নিজ নামে চ্যানেল বা পেজ খুলে সরকার ও সরকারি দল এবং ব্যবসায়ীদের টার্গেট করে নানা ধরনের কুত্সা ও গুজব রটাচ্ছে। যারা রটাচ্ছে তারা সবাই বাংলাদেশি। কখনো কখনো মুক্তিযুদ্ধ এবং বঙ্গবন্ধুকে নিয়েও মিথ্যাচার করে। কিছু ভিডিওতে তো দেখা গেছে, একজন নিজেকে রাজাকার বা রাজাকারের সন্তান হিসেবে দাবি করেছে। এ ধরনের কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে উল্লেখযোগ্য কোনো ব্যবস্থা আমরা দেখতে পাইনি। ফলে এর মাধ্যমে কিন্তু সমাজে একটা বার্তা যায় যে আপনি যা খুশি তা-ই বলতে পারবেন, যা খুশি তা-ই করতে পারবেন, আপনার কিছুই হবে না! প্রকৃতপক্ষে এসব অন্যায়ের বিরুদ্ধে উল্লেখযোগ্য কোনো ব্যবস্থা না নেওয়ায় সামগ্রিকভাবে রাষ্ট্র ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। তাই সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও দপ্তরগুলোকে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে।’
বিশিষ্ট অপরাধবিজ্ঞানী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক অধ্যাপক জিয়া রহমান বলেন, ‘রাষ্ট্রের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্নের উদ্দেশ্যে মিথ্যা তথ্য, ভুয়া ছবি দিয়ে অডিও-ভিডিও তৈরি করে ফেসবুক ও ইউটিউবে ছড়িয়ে এসব চক্র আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছে। তাদের বিরুদ্ধে রাষ্ট্র ব্যবস্থা নিতে না পারলে ইন্টারন্যাশনাল ফোরামে রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে তাদের বিরুদ্ধে জনমত তৈরি করা দরকার। গ্লোবাল মুভমেন্ট ডেভেলপ করতে হবে। যদিও এসব গুজব ও অপপ্রচারের স্থায়িত্ব বেশি দিন থাকে না। সচেতনভাবে মানুষ এসব এড়িয়ে চললে স্বাভাবিকভাবে এগুলো এমনিতেই চলে যাবে। কিন্তু দায়িত্বশীল রাষ্ট্র হিসেবে আমরা বসে থাকতে পারি না। আমাদের উচিত তাদের আইনের আওতায় আনা। নিজস্ব আইনে তাদের বিরুদ্ধ আইনি ব্যবস্থা নেওয়া না গেলে আন্তর্জাতিকভাবে বিভিন্ন রাষ্ট্রকে সঙ্গে নিয়ে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। কাউন্টার মেজার বা কাউন্টার অ্যাটাক তৈরি করতে হবে।’
তাসনিম খলিল : এক ডজন শীর্ষ সাইবার অপরাধীর মধ্যে তালিকার শীর্ষে আছেন সিলেটের বিশ্বনাথ উপজেলার বাসিন্দা নেত্র নিউজের এডিটর ইন চিফ ও সুইডেন প্রবাসী সাংবাদিক তাসনিম খলিলের নাম। তিনি নর্থসাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ছিলেন। ‘ডেইলি স্টার’ সম্পাদক মাহফুজ আনামের সহযোগী হিসেবে তিনি ২০০০ সালে ডেইলি স্টারে সাব এডিটর পদে যোগ দেন। ২০০৭ সালে ডেইলি স্টারের চাকরি চলে যাওয়ার পর তিনি খোদ তাঁর গুরু মাহফুজ আনামের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে বক্তব্য দিতে থাকেন। সরকারবিরোধী লেখার কারণে তাসনিম খলিলের দায়িত্বে বের হওয়া ‘ফোরাম ম্যাগাজিন’ নামে ম্যাগাজিনের একটি সংখ্যা বাজার থেকে তুলে নেয় ডেইলি স্টার কর্তৃপক্ষ। তিনি নিজস্ব ‘তাসনিম খলিল ব্লগ’-এ সরকার, সেনাবাহিনী, পুলিশসহ বিভিন্ন সংস্থার বিরুদ্ধে টানা বিষোদগার করেন। ধর্মীয়, সামাজিক ও রাজনৈতিক উসকানি ছড়ানোর অভিযোগে ২০০৭ সালের ১১ মে তাসমিন খলিলকে ধানমণ্ডির বাসা থেকে আটক করে আইন প্রয়োগকারী সংস্থা। তাঁর বাসায় অভিযান চালিয়ে কম্পিউটার, টেলিফোনসহ বিভিন্ন নথিপত্র জব্দ করে। এক মাস আত্মগোপনে থেকে ২০০৭ সালের ৬ জুন দেশ ত্যাগ করেন তাসনিম খলিল। রাজনৈতিক আশ্রয় নেন সুইডেনে। সেখানে গিয়ে তিনি ‘অষ্টকলাম নিউজ’ নামে একটি অনলাইন পত্রিকার সম্পাদক ও প্রকাশক হন।
দেশে ও বিদেশে অবস্থান করে তাসনিম খলিল আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমকে রাষ্ট্র, সরকার ও সেনবাহিনী নিয়ে নেতিবাচক বক্তব্য দিয়ে যাচ্ছেন। তিনি অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, যুক্তরাষ্ট্রসহ আরো কয়েকটি দেশের কূটনীতিকদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে তাঁদের ব্যক্তিগত ই-মেইলে ও মোবাইলে দেশবিরোধী তথ্য পাচার করেন।
তাসনিম খলিল বাংলাদেশবিরোধী শক্তি ডেভিড বার্গম্যানের দোসর। আলজাজিরা টেলিভিশনে প্রচারিত ‘অল দ্য প্রাইম মিনিস্টারস ম্যান’ ষড়যন্ত্রের নেপথ্য কুশীলব এই তাসনিম খলিল। যদিও অল্প কদিনের মধ্যে তাঁদের ষড়যন্ত্রের মুখোশ উন্মোচিত হয়ে গেছে, তবু তাসনিমরা থেমে নেই। নানা কৌশলে সাইবার দুনিয়ায় বাংলাদেশবিরোধী চক্রান্ত চালিয়ে যাচ্ছেন খলনায়ক খলিল। তাসনিম খলিল ইসলামী ছাত্রশিবিরের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন। এখন জামায়াতের অর্থায়নে আওয়ামী লীগবিরোধী এজেন্সি খুলেছেন। তিনি সিলেটে জামায়াতের বড় অর্থদাতা। ‘নেত্র নিউজ’ নামে তাঁর প্রতিষ্ঠানের রোজকার কাজ বঙ্গবন্ধু পরিবার, রাষ্ট্র ও দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনী এবং পুলিশ বাহিনীর বিরুদ্ধে অপপ্রচার।
মেজর দেলোয়ার হোসেন (অব.) : কানাডা প্রবাসী সাবেক সেনা কর্মকর্তা দেলোয়ার হোসেন। ২০২০ সালের ২০ আগস্ট তাঁকে সেনানিবাসে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করে সেনা কর্তৃপক্ষ। তাঁর জন্য সেনানিবাস ও সেনানিবাসের আওতাভুক্ত সব স্থাপনা এবং সেনানিবাসের বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা গ্রহণ সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। সিএমএইচে চিকিত্সাসেবা, অফিসার্স ক্লাব, সিএসডি শপ ইত্যাদিতে প্রবেশাধিকার নিষিদ্ধ দেলোয়ারের। সেনাবাহিনীর সাবেক এই কর্মকর্তা বর্তমানে বিএনপি-জামায়াতের পেইড এজেন্ট হয়ে তাদের গুজব সেলের একজন শীর্ষ সদস্য হিসেবে কাজ করছেন। এ কারণে তিনি দীর্ঘদিন ধরে রাষ্ট্র, দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনী ও সরকার নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় গুজব, অপপ্রচার চালিয়ে আসছেন। তাঁর বিরুদ্ধে বাংলাদেশে প্রচলিত আইন ও সেনাশৃঙ্খলা ভঙ্গের দায়ে মামলা রয়েছে। দেলোয়ার কানাডায় থেকে সরকারবিরোধী প্রচারণা চালাচ্ছেন।
মেজর দেলোয়ার হোসেন ১৯৮৯ সালের ২৩ জুলাই বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে ২০তম বিএমএ লং কোর্সে কমিশন লাভ করেন। তাঁর বাবা মৃত মোশারক হোসেন এবং মা মরহুমা মোছা. মজিদা বেগম। ১৮৬/৪ তেজকুনীপাড়া, তেজগাঁও, ঢাকা-১২১৫-এর বাসিন্দা দেলোয়ারের বর্তমান ঠিকানা অনটানো, টরন্টো, কানাডা। তাঁর শ্বশুর মেজর জেনারেল সাদিকুর রহমান চৌধুরীকে সেনাবাহিনী থেকে অশালীন বাধ্যতামূলক অবসর দেওয়া হয়।
মেজর দেলোয়ার হোসেন ২০০০ সালের ১৪ মার্চ সেনাবাহিনীর পদাতিক ডিভিশন থেকে অবসর গ্রহণ করেন। অবসর গ্রহণের পর তিনি মহাখালী ডিওএইচএসে ডেলটিক লিমিটেড নামে একটি প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজিং ডিরেক্টর এবং সিইও হিসেবে কর্মরত ছিলেন। তাঁর শ্বশুর মেজর জেনারেল সাদেকুর রহমান চৌধুরী টিকিউএ ৯৩ সাঁজোয়া ব্রিগেডের কমান্ডার থাকাকালীন ১৯৭৬ সালে ২২ ইস্ট বেঙ্গল কর্তৃক বিদ্রোহের সময় নেতৃত্বে ব্যর্থতার জন্য তদন্ত আদালত তাঁকে চাকরি থেকে অব্যহতির সুপারিশ করেন। কিন্তু তিনি প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের ১ ইস্ট বেঙ্গলে একত্রে চাকরি করার সুবাদে চাকরিতে বহাল থাকেন। জিয়া সরকারের আমলে ৩০ আগস্ট ১৯৭৮ থেকে ২৬ মার্চ ১৯৮২ পর্যন্ত এসএমপির দায়িত্ব পালন করেন সাদেকুর। তিনি এরশাদ সরকারের সময় পিএসও, সুপ্রিম কমান্ডার সদর দপ্তর এবং ডিজি বিডিআর হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
মেজর দেলোয়ার হোসেন (অব.) কানাডায় অবস্থান করে বর্তমান সরকারের বিরুদ্ধে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিভিন্ন নেতিবাচক মন্তব্য করে থাকেন। ‘ভারত কোনো দিন কথা রাখেনি, রাখবেও না। এসব বক্তব্য নির্বাচনের আগে হাসিনার একটি নাটক’ বলে ফেসবুক পেজে একটি মতামত দেন। সন্ত্রাস ও জঙ্গি দমনে পুলিশের নতুন ইউনিট অনুমোদন দেওয়ায় বাংলাদেশে অপরাধের আরেকটি শাখা সংযোজিত হলো। এর ভোগান্তি শুধু সাধারণ মানুষ ভুগবে—এই মর্মে ফেসবুকে আরেকটি মতামত দেন। ‘স্বাধীনতা তুমি রিমিক্স এবং অন্য আরেকটি কবিতার মাধ্যমে ফেসবুক পেজে বিভিন্ন ধরনের কটূক্তি করেন। সম্প্রতি পুলিশের গুলিতে নিহত মেজর সিনহা (অব.) হত্যাকে কেন্দ্র করে দেলোয়ার তাঁর ফেসবুক পেজে সেনাবাহিনীসহ সরকার সম্পর্কে বিভিন্ন উসকানিমূলক পোস্ট করেন।
এ ছাড়া দেলোয়ার সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হয়েও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে সামরিক পোশাক পরিহিত ছবি এবং সেনাবাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাসহ বিশিষ্ট রাজনীতিবিদকে উদ্দেশ করে সেনাবাহিনী ও সরকারবিরোধী নেতিবাচক পোস্ট শেয়ার করেন, যার পরিপ্রেক্ষিতে তাঁকে ১০ আগস্ট ২০২০ তারিখে সেনানিবাস এবং সেনানিবাসের আওতাভুক্ত এলাকায় অবাঞ্ছিত ঘোষণা করা হয়।
রাজনৈতিক ও সামাজিক উসকানি এবং বিদ্বেষ ছড়ানোর অভিযোগে ফেসবুক কর্তৃপক্ষ তাঁর বেশ কয়েটি আইডি ডিঅ্যাক্টিভ করে দিয়েছে।
কর্নেল শহীদ উদ্দিন খান : সাজাপ্রাপ্ত হয়ে অবসরে যাওয়া আরেক সাইবার সন্ত্রাসী চাকরিচ্যুত লে. কর্নেল শহীদ উদ্দিন খান। চাকরিচ্যুত হওয়ার পরও সেনাবাহিনীর নিয়মনীতি লঙ্ঘন করে পোশাক ব্যাজ পরা ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেন। চাকরিকালীন বিভিন্ন অনিয়মের কারণে তাঁর বিরুদ্ধে ২৮টি অভিযোগের চার্জ গঠন করা হয়। কোর্ট মার্শালে তাঁর বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগগুলো প্রমাণিত হওয়ায় তাঁকে চাকরি থেকে বহিষ্কার করা হয়। এখন এই সাবেক কর্নেল দিন-রাত পাকিস্তানপ্রেমীদের টাকায় বাংলাদেশের দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে কুত্সা রটনায় ব্যস্ত। কর্নেল শহীদের প্রতিটি কর্মকাণ্ড বাংলাদেশবিরোধী।
জানা গেছে, লে. কর্নেল (অবসরপ্রাপ্ত) মো. শহীদ উদ্দিন খান, পদাতিক ১০ জুন ১৯৮৩ তারিখে অষ্টম বিএমএ লং কোর্সে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে কমিশন লাভ করেন। তাঁর বাবা মৃত মো. মোজাফফর আলী খান এবং মায়ের নাম সেতারা বেগম। তাঁর বাবা জীবদ্দশায় রেলওয়ের সহকারী ট্রাফিক অফিসার ছিলেন। শহীদ উদ্দিন খানের স্থায়ী ঠিকানা ঝালকাঠি জেলার নলছিটি থানার চায়না রোডের সজল ভিলায়। বর্তমান ঠিকানা : ফ্ল্যাট ২/এ, বাড়ি-১৮৪, রোড-০২, বারিধারা ডিওএইচএস, ঢাকা সেনানিবাস। ১৯৬৪ সালের ৩ জানুয়ারি জন্ম নেওয়া লে. কর্নেল শহীদ উদ্দিন খানের শ্বশুর কাজী মশিউর রহমান জীবদ্দশায় একজন ব্যবসায়ী ছিলেন। তাঁর শ্বশুরবাড়ি কুমিল্লার কাপ্তানবাজার এলাকায়। ২০১০ সালের ৩০ মার্চ অবসরে যান শহীদ উদ্দিন। অবসর-পরবর্তী সময়ে ২০১৪ সালে উচ্চশিক্ষার অংশ হিসেবে সামরিক-বেসামরিক কর্মকর্তাদের সাক্ষাত্কার নেন তিনি। এ সময় তিনি উচ্চপদস্থ সামরিক কর্মকর্তাদের ব্যবহার করে অনৈতিক সুযোগ-সুবিধা গ্রহণ করতে থাকেন বলে অভিযোগ রয়েছে। এ ছাড়া শহীদ উদ্দিন খানের বিরুদ্ধে সশস্ত্র বাহিনীকে ব্যবহার করে বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর কার্যকলাপকে প্রভাবিত করা ও স্বাভাবিক সরকারি দায়িত্ব পালনে ব্যাঘাত ঘটানোর সুনির্দিষ্ট অভিযোগ আছে। তিনি প্রভাব খাটিয়ে বিভিন্ন সরকারি-বেসরকরি সদস্যদের বদলি, শাস্তি, চাকরি প্রদান, পদোন্নতি ইত্যাদি বিষয়ে হস্তক্ষেপের চেষ্টা করতেন। বিভিন্ন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাকে নিয়ে মনগড়া ও নেতিবাচক মন্তব্য করতেন। এসব কারণে ২০১৪ সালের ২১ ডিসেম্বর সেনাসদর, পিএস পরিদপ্তরের মাধ্যমে তাঁকে অবাঞ্ছিত (পিএনজি) করা হয়।
সেনাবাহিনীতে থাকাকালে ১৭ ইস্ট বেঙ্গলের অধিনায়ক হিসেবে ১৯ জুলাই ২০০১ থেকে ২৪ জানুয়ারি ২০০২ তারিখ পর্যন্ত কর্মরত থাকাকালীন অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচন বিএনপির পক্ষে প্রভাবিত করার সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালিয়েছিলেন। নির্বাচনের আগে তিনি সেনা নিয়মকানুন ভঙ্গ করে গণমাধ্যমে সাক্ষাত্কার দেন। তত্কালীন সময়ে বিএনপি নেতা সালাহউদ্দীন, তত্কালীন চাঁপাইনবাবগঞ্জে বিএনপির সংসদ সদস্য হারুন-অর-রশিদ এবং তাঁর স্ত্রী চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলা বিএনপি নেতা সৈয়দা আসিফা আশরাফী পাপিয়াসহ বিএনপি ঘরানার বিভিন্ন নেতা ও নেতৃস্থানীয় ব্যক্তির সঙ্গে তাঁর ব্যাবসায়িক সম্পর্ক রয়েছে। অবৈধ কর্মকাণ্ড পরিচালনা করার উদ্দেশ্যে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ যোগাযোগ রাখেন।
শহীদ উদ্দিন খান সুইডেনপ্রবাসী বাংলাদেশি সাংবাদিক তাসনিম খলিলের কাছে একটি সাক্ষাত্কার দেন, যেখান থেকে তিনি বাংলাদেশের বিভিন্ন সংস্থা ও সরকারের বিরুদ্ধে বিভিন্ন বিভ্রান্তিমূলক ও মিথ্যা তথ্য তুলে ধরেন।
লে. কর্নেল (অবসরপ্রাপ্ত) শহীদ উদ্দিন খান নিয়মিত ইউটিউব ও ফেসবুকে পোস্ট এবং ভিডিও প্রকাশ করেন। যেখানে তিনি সরকার সম্পর্কে বিভিন্ন নেতিবাচক মন্তব্য করেন, যা দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করেছে। অফিসার থাকার সময় ইউনিটে ছুটি ব্যতীত অনুপস্থিত থাকার অপরাধে জিওসি ৩৩ পদাতিক ডিভিশন কর্তৃক তিন মাসের জ্যেষ্ঠতা হরণ করা হয়। ৬ রাইফেল ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক হিসেবে কর্মরত থাকাকালীন তাঁর বিরুদ্ধে বিপুল পরিমাণ অর্থ আত্মসাৎ ও অবৈধ কার্যকলাপের অভিযোগ উঠেছিল। এ ছাড়া বেশ কিছু অভিযোগে তাঁর বিরুদ্ধে তদন্ত আদালত গঠন করা হয়। ২০০৪ সালের ২৮ নভেম্বর থেকে ২০০৫ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বিডিআর সদর দপ্তর পিলখানা ঢাকায় একটি এফজিসিএম অনুষ্ঠিত হয়। ওই অনুষ্ঠানে শহীদ উদ্দিন খানের বিরুদ্ধে ২৮টি অভিযোগ দাখিল করা হয়। ২৮টির মধ্যে ২১টি অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় ২০০৫ সালের ৩১ মে কোর্ট মার্শালের মাধ্যমে চাকরিচ্যুত করা হয়।
সাবেক এই সেনা কর্মকর্তা ১৯৮৯ সালের ৯ আগস্ট সিলেট রেলস্টেশনে ট্রেনচালকের কলার ধরে অশোভন আচরণ করায় অপ্রীতিকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। চলতি বছর ২০ জানুয়ারি পুলিশের সিটিটিসির একটি দল তাঁর বাসা থেকে জাল টাকা, অস্ত্র ও গোলাবারুদ, জিহাদি ও জঙ্গি সম্পর্কিত বই উদ্ধার করে বলে খবর ছড়িয়ে পড়ে। সর্বশেষ ২০১৮ সালের ১৮ জানুয়ারি তিনি বাংলাদেশে আসেন।
ইংল্যান্ডের জাতীয় দৈনিক দ্য সানডে টাইমসের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, অস্ত্র ব্যবসা ও জঙ্গিবাদসংক্রান্ত মামলার সাজাপ্রাপ্ত আসামি শহীদ উদ্দিন বাংলাদেশ থেকে পালিয়ে ইংল্যান্ডের টোরি পার্টির ফান্ডে ২০ হাজার পাউন্ড অনুদান দিয়েছেন। তাঁর ঢাকার বাসায় অভিযান চালিয়ে জিহাদি বই, অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার করে বাংলাদেশের কাউন্টার টেররিজম পুলিশ। ২০০৯ সাল থেকে ব্রিটেনের রাজধানী লন্ডনে বসবাস করছেন তিনি। সেখানে নিজের ও পরিবারের সদস্যদের বসবাস নিশ্চিত করতে কিনেছেন মাল্টি মিলিয়ন পাউন্ডের ‘গোল্ডেন ভিসা’। বাংলাদেশ পুলিশ বলছে, শহীদ উদ্দিন খানের ঢাকার বাড়িতে তারা বিস্ফোরক, অস্ত্র, আল-কায়েদার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট উগ্রবাদী বইপত্র এবং বাংলাদেশি জাল মুদ্রার সন্ধান পেয়েছে। তারা আরো বলেছে, শহীদ উদ্দিনের নামে ৫৪টি ব্যাংক অ্যাকাউন্ট আছে। এ বিষয়টিও পুলিশ উদ্ঘাটন করেছে। এসব অ্যাকাউন্ট অর্থপাচার ও সন্ত্রাসে অর্থায়নের বিষয়টি প্রমাণ করে।
ক্যাপ্টেন শহীদ ইসলাম
কানাডাপ্রবাসী সেনাবাহিনীর সাবেক ক্যাপ্টেন শহীদ ইসলাম। ইন্টারনেটভিত্তিক বিভিন্ন টক শোতে মিথ্যা তথ্য দিয়ে মানুষকে বিভ্রান্ত করাই তাঁর প্রধান কাজ। বিএনপি-জামায়াত সাইবার-চক্রের এই সদস্য সরকারবিরোধী তত্পরতায় লিপ্ত। কানাডায় থেকে তাঁরা একটি গ্রুপ গঠন করেছেন। এ গ্রুপের কাজ সরকারের বিরুদ্ধে প্রচারণা চালানো। ক্যাপ্টেন শহীদ ইসলাম (অব.) ১৯৭৯ সালের ২৩ ডিসেম্বর সেনাবাহিনীতে প্রথম বিএমএ লং কোর্সে কমিশন লাভ করেন। তাঁর বাবা মৃত মো. মোছলে উদ্দিন মিয়াজী ছিলেন কৃষক। তাঁর স্থায়ী ঠিকানা : বাড়ি-১৭৬, লেন-২, ইস্টার্ন রোড, ডিওএইচএস, মহাখালী, ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট এলাকায়। গ্রামের বাড়ি কুমিল্লার বরুড়া থানার বিজরাসংলগ্ন ঘোষপা গ্রামে। বর্তমানে তিনি কানাডার টরন্টোয় থাকেন। ক্যাপ্টেন শহীদের শ্বশুর শহীদ শেখ আবু তালেব জীবদ্দশায় যশোর সদর পৌরসভার সদস্য ছিলেন। ক্যাপ্টেন শহীদ ইসলাম (অব.) ১৬ মে ১৯৮৪ সালে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর অফিসার সেনা সদর অ্যাডমিন উইং থেকে অবসর গ্রহণ করেন। অবসর-পরবর্তী সময়ে তিনি যুক্তরাজ্যের লন্ডনে বাংলাদেশ হাইকমিশনের ফার্স্ট সেক্রেটারি (প্রেস অ্যান্ড পলিটিক্যাল) হিসেবে কর্মরত ছিলেন। লন্ডনে অবস্থিত দূতাবাসে কর্মরত থাকাবস্থায় ১৯৮৭ সালের ১৭ আগস্ট সেখানকার ভাড়া বাড়ি থেকে হঠাত্ উধাও হয়ে যান তিনি। পরে তিনি স্বেচ্ছায় লন্ডনের পুলিশের কাছে ধরা দিয়েছিলেন।
ক্যাপ্টেন শহীদ ইসলামের শ্যালক শেখ আতিকুর রহমান বাবু (৫২) বাংলাদেশে মুক্তিযোদ্ধা সন্তান কমান্ড কাউন্সিলের বর্তমান সভাপতি। তিনি যশোর-৩ আসনের এমপি কাজী নাবিল আহমেদের অনুসারী। মুক্তিযোদ্ধা সন্তান কমান্ড কাউন্সিলের পদ ব্যবহার করে বাবুর বিরুদ্ধে প্রতারণার মাধ্যমে অর্থ আত্মসাত্ করার অভিযোগ রয়েছে।
শহীদ ইসলাম একসময় ডেইলি স্টার পত্রিকায় কাজ করেছেন। ডেইলি স্টারে দায়িত্ব পালনকালে তিনি পত্রিকাটিতে সেনাবাহিনী সম্পর্কিত নেতিবাচক তথ্য প্রকাশ করেন। কানাডায় অবস্থান করে বর্তমান সরকারের বিরুদ্ধে ফেসবুকে বিভিন্ন নেতিবাচক মতামত/মন্তব্য করে থাকেন। অফিসারদের নিয়ে উল্লেখযোগ্য নেতিবাচক মন্তব্য করেন। ২০১৮ সালে তিনি প্রধানমন্ত্রীর ছবিসহ ফেসবুকে পোস্ট করেন ‘You don’t follow law, so we declare war on you… Sheikh Hasina, you destroyed our motherland, we will destroy you inshallah’.
এ ছাড়া চলতি বছর ১৫ ফেব্রুয়ারি বিতর্কিত সাংবাদিক কনক সরওয়ারের ইউটিউব চ্যানেল কনক সরওয়ার নিউজে ‘প্রাণনাশের হুমকিতে জেনারেল আজিজ : সেনাবাহিনীর প্রথম ব্যাচের অফিসার ক্যাপ্টেন শহীদ ইসলামের বিশ্লেষণ’ শিরোনামে একটি সরকার ও সেনাবাহিনী বিরোধী সাক্ষাত্কারে অংশ নেন। তিনি অনবরত সরকার, সেনাবাহিনী ও রাষ্ট্রবিরোধী বক্তব্য দিয়ে যাচ্ছেন বিভিন্ন ভুঁইফোড় অনলাইন, ফেসবুক ও ইউটিউব চ্যানেলে।
শহীদ ইসলাম মেস ওয়েটারকে লাথি মারার অপরাধে বিএএ সেকশন-৫৫ মোতাবেক ১৯৮০ সালের ৭ আগস্ট যশোর সেনানিবাসে ‘ভর্ত্সনা’প্রাপ্ত হন।
টিটো রহমান
কানাডাপ্রবাসী ক্রিমিনাল, কালপ্রিট ও সাইবার সন্ত্রাসীদের সংঘবদ্ধচক্রের মাস্টারমাইন্ড সাংবাদিক নামধারী টিটো রহমান। তাঁর পুরো নাম মোস্তাফিজুর রহমান টিটু ওরফে টিটো রহমান। দিনাজপুর পৌরসভার ইটগাঁও আবাসিক এলাকার বাসিন্দা টিটো রহমান ২০০৫ সালে ১৭ আগস্ট সিরিজ বোমা হামলার আসামি। জঙ্গিবাদের সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকা টিটো নিজেই বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার কারিগর আবদুস সালাম পিন্টুর ঘনিষ্ঠজন বলে দাবি করেন। কানাডায় একটি কারখানায় শ্রমিকের কাজ করেন তিনি। রাজনৈতিক আশ্রয় নিয়ে শ্রমিকদের জন্য বরাদ্দ দেওয়া একটি ফ্ল্যাটে থেকে সরকারের রিফিউজি ভাতা খান। আগের পরিচয় আড়াল করতে টিটো নিজেকে কানাডার নাগরিক টেলিভিশনের সিইও বলে নিজেকে জাহির করার চেষ্টা করেন। প্রবাসে থেকে ইউটিউব ও ফেসবুকভিত্তিক পেজ খুলে চালিয়ে যাচ্ছেন সরকারবিরোধী কর্মকাণ্ড। সস্তায় জনপ্রিয়তা পেতে তিনি সরকারবিরোধী চক্রকে সঙ্গে নিয়ে দেশের প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী ও শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে নানা গুজব, মিথ্যা তথ্য ও অপপ্রচার চালান।
কথিত এই ভুয়া সাংবাদিক টিটোর প্রধান উদ্দেশ্য দেশকে ব্যর্থ ও অকার্যকর রাষ্ট্র হিসেবে বহির্বিশ্বে প্রমাণ করা। দেশের উন্নয়নকে বাধাগ্রস্ত করে আগুনসন্ত্রাসের দোসরদের সঙ্গে নিয়ে দেশকে অস্থিতিশীল অবস্থায় নিয়ে যাওয়া। এ জন্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে স্বাধীনতাবিরোধীদের দোসর হিসেবে প্রতিনিয়ত রাষ্ট্রবিরোধী কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছেন তিনি। ২০১৮ সালে সরকারের বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীদের উসকানি দিয়ে সহিংসতার দিকে ঠেলে দেওয়ার মাস্টারমাইন্ড এই টিটো। তাঁর বিরুদ্ধে প্রবাসে বসে ব্ল্যাকমেইলিং ও চাঁদাবাজির অভিযোগ পাওয়া গেছে। শুধু তা-ই নয়, সরকারবিরোধী জামায়াত-বিএনপির অর্থ নিয়মিত তাঁর কাছে কানাডায় যায় বলে গোয়েন্দাদের কাছে তথ্য রয়েছে। টিটো রহমান প্রতিদিনই মেজর দেলোয়ার হোসেন, কর্নেল শহীদ উদ্দিন খান ও সাবেক ক্যাপ্টেন শহীদ ইসলামকে নিয়ে সরকারবিরোধী তত্পরতা চালাচ্ছেন।
মোহাম্মদ শামসুল আলম
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সাবেক এপিএস মোহাম্মদ শামসুল আলম সরকার ও রাষ্ট্রবিরোধী অপতত্পরতার সমন্বয় করছেন। যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্কে বসে শামসুল আলম সাইবার শীর্ষ সন্ত্রাসীদের সংগঠিত করার পাশাপাশি নিজেও নিয়মিত মিথ্যাচার করে চলেছেন প্রধানমন্ত্রীর পরিবারের বিরুদ্ধে। ঢাকা থেকে প্রশাসনের ভেতর লুকিয়ে থাকা একটি চক্র শামসুল আলমকে সহায়তা করছে বলে অভিযোগ রয়েছে। শামসুল আলমের বিরুদ্ধে সাইবার আইনে বাংলাদেশে কমপক্ষে ১০টি মামলায় গ্রেপ্তারি পরোয়ানা রয়েছে। শরীয়তপুর জেলার গোসাইরহাট থানার দাসেরজঙ্গল গ্রামের ইউসুফ আলী ও আজুফা খাতুনের ছেলে শামসুল আলম। তিনি ২০ সেপ্টেম্বর প্রধানমন্ত্রীর বিদেশ সফর নিয়ে মিথ্যা ও বিভ্রান্তিকর তথ্য দিয়ে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিদেশ সফর নিয়ে অপপ্রচার চালানোর অভিযোগে মোহাম্মদ শামসুল আলমকে লিগ্যাল নোটিশ পাঠান আওয়ামী লীগের তথ্য ও গবেষণাবিষয়ক উপকমিটির সদস্য অ্যাডভোকেট শওকত আলী পাটোয়ারী তুহিন। ২২ সেপ্টেম্বর সুপ্রিম কোর্টের অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ ওমর ফারুক আসিফের মাধ্যমে এই লিগ্যাল নোটিশ পাঠানো হয়। নোটিশে বলা হয়, ‘আপনি (মোহাম্মদ শামসুল আলম) জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর কন্যা বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মিথ্যা ও সম্পূর্ণ বানোয়াট কথা ফেসবুক স্ট্যাটাসে লিখেছেন। এর মাধ্যমে আপনি বহির্বিশ্বে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করেছেন। আপনার এই স্ট্যাটাসে লিখিত ঘৃণ্য বক্তব্য গোটা বাংলাদেশের মানুষের প্রতি অবমাননাকর। এই বক্তব্যে বাংলাদেশের মানুষ আপনার ওপর ক্ষিপ্ত ও বিক্ষুব্ধ। রাষ্ট্রবিরোধী এই ঔদ্ধত্যপূর্ণ স্ট্যাটাস বাংলাদেশের সব মানুষকে এবং বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রতিটি কর্মীকে আঘাত করেছে।’ নোটিশে আরো উল্লেখ করা হয়, ‘জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তাঁর সুযোগ্য কন্যা বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে উদ্দেশ্য করে জঘন্য মিথ্যাচার ও মানহানিকর বক্তব্য ফেসবুক আইডিতে আপলোড করায় রাষ্ট্রদ্রোহমূলক অপরাধ সংঘটিত হয়েছে। এটি ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন, ২০১৮ অনুযায়ী অপরাধ এবং অন্যান্য ফৌজদারি আইন অনুযায়ী অপরাধ।’ আইনি নোটিশের শেষে বলা হয়, ‘জনগণের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা না করলে ফৌজদারি ও দেওয়ানি অধিক্ষেত্রে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’
সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার এপিএস থাকার সময় তিনি নিয়োগ, বদলি বাণিজ্য, টেন্ডার নিয়ন্ত্রণসহ বিভিন্ন লোভনীয় ফাইল নানা কৌশলে আটকে অর্থ আদায় করেন। রাতারাতি গাড়ি-বাড়ির মালিক বনে যান। যে ব্যক্তির সংসার চালানো দায় ছিল, তিনি এপিএসের দায়িত্ব পেয়ে ক্ষমতার অপব্যবহার করে গুলশানের মতো জায়গায় বাড়ির মালিক হন। ৮৬ ব্যাচের ক্যাডার কর্মকর্তা শামসুল আলমের বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ অর্জনের মামলাও করে দুদক। প্রধানমন্ত্রীর এপিএস শামসুল আলমের ভয়ে তটস্থ থাকেন সচিব, যুগ্ম সচিব, উপসচিব, এমনকি রাজনৈতিক দলের নেতারাও। দুর্নীতির মাধ্যমে পাওয়া অর্থ বিদেশে পাচার করে এখন সেখানে বসে সরকারের বিরুদ্ধে নানা বিষোদগার করছেন শামসুল আলম।
নাজমুস সাকিব
কানাডাপ্রবাসী ও ছাত্রশিবিরের ক্যাডার নাজমুস সাকিব। কানাডায় বসে যুদ্ধাপরাধীদের নিয়ন্ত্রিত ইউটিউব চ্যানেলে দিন-রাত মিথ্যাচার করেন। তিনি শিবিরের ক্যাডার ছিলেন। তারেক রহমানের ক্যাডার পরিচয় দেওয়া নাজমুস সাকিবের বিরুদ্ধে বিএনপি-জামায়াতের কাছ থেকে অর্থ আদায়ের অভিযোগ রয়েছে। তাঁর সঙ্গে তারেক রহমান ও জামায়াতের ব্যারিস্টার রাজ্জাকের যোগাযোগ রয়েছে। বঙ্গবন্ধু পরিবারকে টার্গেট করে অপতত্পরতা ছড়ানোই তাঁর লক্ষ্য। জানা গেছে, নিউ ইয়র্ক ও লন্ডনে জামায়াতের যুদ্ধাপরাধী মীর কাসেম আলীর রেখে যাওয়া অর্থ নাজমুস সাকিবকে পাঠানো হয় প্রতি মাসে। এ ছাড়া লন্ডন থেকে যায় তারেক রহমানের অর্থ। এই টাকা দিয়ে নাজমুস সাকিব গং নাগরিক টিভি নামের একটি আইপি টিভি খুলে সরকারবিরোধী প্রচারণা পরিচালনা করছে।
এম রহমান মাসুম
কানাডাপ্রবাসী এবং ভুঁইফোড় অনলাইন নাগরিক টিভির আরেক বক্তা। নাজমুস সাকিব ও টিটো রহমানের সঙ্গে জুটি বেঁধে সরকারবিরোধী তত্পরতায় লিপ্ত। তিনি ২৯ সেপ্টেম্বর ইউটিউবে একটি ভিডিও আপলোড করে সরাসরি প্রধানমন্ত্রীকে হুমকি দিয়ে বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর কপালে শনি আছে। আপনারা আগুন লাগিয়ে দিয়েছেন, আগুন জ্বলছে কিন্তু…।’ এসব বক্তব্য দিয়ে তিনি প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে মারাত্মক বিদ্বেষ ছড়ান। ব্যারিস্টার পরিচয় দেওয়া এম রহমান মাসুম সারা দেশে ২০০৫ সালের ১৭ আগস্ট সিরিজ বোমা হামলার আসামি। কানাডাপ্রবাসী মাসুম সাইবার সন্ত্রাসীদের সংঘবদ্ধ চক্রের একজন। বাংলাদেশবিরোধী তত্পরতায় গভীরভাবে জড়িয়ে রয়েছে তাঁর নাম। বিএনপি-জামায়াতের অর্থায়নে তিনি তত্পরতা চালাচ্ছেন বাংলাদেশের বিরুদ্ধে। এম রহমান মাসুম ঢাকা মহানগর ছাত্রশিবিরের রাজনীতিতে জড়িত ছিলেন। তিনি তারেক রহমান ও জামায়াত থেকে নিয়মিত অর্থ পান বলে অভিযোগ রয়েছে। তবে তাঁর এসব প্রপাগান্ডা মানুষ ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করেছে। তাঁর লাইভগুলোতে ভিউ নেই বললেই চলে।
কনক সরওয়ার
পর্নোগ্রাফি মামলার আসামি হয়ে যুক্তরাষ্ট্রে পালিয়ে যাওয়া সাংবাদিক কনক সরওয়ার। তালিকার আট নম্বরে আছে যুক্তরাষ্ট্রপ্রবাসী এই সাংবাদিকের নাম, যিনি হাওয়া ভবনের আশীর্বাদপুষ্ট সাংবাদিক হিসেবেই বেশি পরিচিত। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিভিন্ন টক শোতে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে উসকে দেওয়া, সরকারবিরোধী প্রপাগান্ডা, বাংলাদেশের ইতিহাসকে বিকৃতি করা তাঁর প্রধান কাজ। লে. জেনারেল (অব.) চৌধুরী হাসান সারওয়ার্দীকে নিয়ে অনলাইন প্ল্যাটফর্ম ফেসবুক লাইভে এসে সরকার ও সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে নানা প্রপাগান্ডা চালান কথিত এই ড. কনক সরওয়ার। ওই ঘটনার পর সেনানিবাসে সারওয়ার্দীকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করা হয়। বেসরকারি একুশে টিভিতে কর্মরত অবস্থায় ২০১৫ সালে পর্নোগ্রাফি নিয়ন্ত্রণ আইনের মামলায় জেল খাটেন কনক সরওয়ার। তাঁর অপতত্পরতায় একুশে টেলিভিশন ধ্বংসের মুখে পড়ে। বিদেশে বসে সরকার পতনের স্বপ্ন দেখাই এখন কনক সরওয়ারের মূল কাজ। তাঁর গ্রামের বাড়ি ফেনী জেলায়। যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্কে বসে ইলিয়াস হোসেনকে সঙ্গে নিয়ে নেটওয়ার্ক গড়ে তুলেছেন। এই চক্রে রয়েছেন হাওয়া ভবনের শামসুল আলম, মুশফিক ফজল আনসারী, ফরিদ আলম, নারায়ণগঞ্জে গ্রেনেড হামলার দর্পণ কবীর ও সাংবাদিক মনির হায়দার চক্র। তারেক রহমানের পৃষ্ঠপোষকতায় তাঁরা এনসিএন নামে অনলাইন টেলিভিশন করেছেন নিউ ইয়র্কে। এই টেলিভিশনে কর্মরত ফরিদ আলম নিউ ইয়র্কে আওয়ামী লীগের সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী ও তাঁর পরিবার নিয়ে বাজে প্রশ্ন করে বিশৃঙ্খল পরিবেশ তৈরি করেন। এর সব কিছুর খলনায়ক কনক।
সম্প্রতি একজন বিএনপি নেতার কাছ থেকে প্রধানমন্ত্রীপুত্র ও সরকারের বিরুদ্ধে ভিডিও বানানোর অর্থ লেনদেনের একটি অডিও রেকর্ড সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। সেখানে ভিডিও বানানোর খরচের নামে কনককে চাঁদাবাজি করতে দেখা যায়। ২০২০ সালের ৮ ডিসেম্বর হাইকোর্ট এক আদেশে কনক সরওয়ারের দেশবিরোধী ভিডিও কনটেন্ট ব্লক করার জন্য স্বরাষ্ট্রসচিব ও বিটিআরসি চেয়ারম্যানকে নির্দেশ দেন।
ইলিয়াস হোসেন
আমেরিকাপ্রবাসী হলুদ সাংবাদিক ইলিয়াস হোসেনের গ্রামের বাড়ি চুয়াডাঙ্গায়। বাবা ছিলেন ১৯৭১ সালে রাজাকার। পাকিস্তানি সেনাদের সহযোগী। নিজেকে বুক ফুলিয়ে রাজাকারের সন্তান দাবি করা ইলিয়াসের মূল কাজ মিথ্যাকে মিষ্টি মিষ্টি কথায় সত্য বানানো। সাংবাদিক কনক সরওয়ারের মতো বাংলাদেশবিরোধী প্রচারণার নীলনকশার অংশীদার তিনি। দেশে সাংবাদিকতা করার সময় তাঁর বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির একাধিক অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছিল। বিদেশে বসে সাইবার স্পেস ব্যবহার করে সবাইকে নীতি-নৈতিকতার জ্ঞান দিয়ে থাকেন। ইলিয়াস হোসেন বাংলাদেশবিরোধী তত্পরতায় লিপ্ত। সরকারের, বিশেষ করে পুলিশ ও সিভিল প্রশাসনের কেউ কেউ তাঁকে সরকারবিরোধী তথ্য দিয়ে সহায়তা করছেন।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিদ্বেষ ও সামাজিক অস্থিরতা ছড়ানোর কারণে সম্প্রতি ফেসবুক কর্তৃপক্ষ তাঁর পেজ ব্লক করে দেয়। তিনি নতুন করে পেজ খুলে আবার অপতত্পরতা শুরু করেছেন।
জাওয়াদ নির্ঝর
গাজী টিভি থেকে চাকরিচ্যুত লন্ডনপ্রবাসী প্রতারক সাংবাদিক জাওয়াদ নির্ঝর, যাঁর বাবা আবু মোশারফ হোসেন পরিবার পরিকল্পনা অফিস থেকে চুরির দায়ে চাকরিচ্যুত হয়ে জেল খাটেন ছয় মাস। জাওয়াদের দুই বোন ঢাকা শহরে পতিতাবৃত্তির জন্য বিখ্যাত। জাওয়াদের বিরুদ্ধে আছে ধর্ষণের মামলা। এই জাওয়াদ সরকারবিরোধী কানাডার নাগরিক টিভি ও সুইডেনের নেত্র নিউজ, আমেরিকার কনক সরওয়ার, ইলিয়াস হোসেন গংয়ের সদস্য। লন্ডনে বসবাসরত তারেক রহমান তাঁকে অর্থায়ন করছেন। জাওয়াদ নির্ঝর করাপশন ইন মিডিয়া নামে একটি ফেসবুক পেজ খুলে বিশিষ্ট সাংবাদিক, সম্পাদকসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের বিরুদ্ধে মিথ্যাচার করে বেড়াচ্ছেন। তাঁর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে বিভিন্ন গণমাধ্যম থেকে চাকরিচ্যুত একটি চক্র।
হাসিনা আক্তার
হাসিনা আক্তার নামের এক নারী নাম লিখিয়েছেন সাইবার সন্ত্রাসীদের তালিকায়। তাঁর নিয়মিত কাজ সরকারবিরোধী তত্পরতা চালানো। এই হাসিনা আক্তার বিএনপি-জামায়াতের লোকজনের কাছ থেকে মাসোয়ারা নেন বলে অভিযোগ রয়েছে। হাসিনা আক্তার প্রধানমন্ত্রী, বঙ্গবন্ধু পরিবার, আইনমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, আইজিপিসহ বিভিন্নজনকে নিয়ে বিদ্রুপাত্মক মন্তব্য করেন। তাঁর ভুঁইফোড় ফেসবুক পেজে নিয়মিত অতিথি হিসেবে যান পাকিস্তানের পেইড দালাল তাজ হাসমি, ক্যাপ্টেন শহীদ ইসলাম, হলুদ সাংবাদিক ইলিয়াস হোসেন, বিতর্কিত আইনজীবী অ্যাডভোকেট মাসুদ সালাহ উদ্দিন, ব্যারিস্টার সরোয়ার হোসেনের মতো ব্যক্তিরা। তাঁরা সরকার, দেশপ্রেমিক বিভিন্ন ব্যবসায়ী ও শিল্পপতির বিরুদ্ধে বিষোদগার ছড়ান। তিনি সিএমএম টিভি ইউকে নামের একটি ভুঁইফোড় অনলাইন চালান। নোয়াখালীর বাসিন্দা এই নারী বর্তমানে লন্ডনপ্রবাসী। তিনি নিজেকে বাংলাদেশ প্রতিদিনের ফিচার লেখক পরিচয় দিলেও বাংলাদেশ প্রতিদিনের সঙ্গে তাঁর কোনো সম্পর্ক নেই। সূত্র: কালের কণ্ঠ।
আরও পড়ুন
- সর্বশেষ খবর
- সর্বাধিক পঠিত