দেশে ফিরতে বাধ্য হয় ৬৭ শতাংশ অভিবাসী শ্রমিক
করোনা মহামারির প্রভাবে বিশ্বব্যাপী কাজ হারিয়ে দেশে ফিরেছে লাখ লাখ অভিবাসী শ্রমিক। এর মধ্যে গত জুন পর্যন্ত এক বছরে বেকার হয়ে দেশে ফিরেছেন প্রায় পাঁচ লাখ বাংলাদেশি প্রবাসী শ্রমিক। এদের মধ্যে ৬৭ শতাংশের বেশি শ্রমিককে দেশে ফিরে যেতে বাধ্য করা হয়।
আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) এক প্রতিবেদনে এমন তথ্য উঠে এসেছে। ‘দক্ষিণ এশিয়ার নির্বাচিত দেশগুলোতে জলবায়ু পরিবর্তন ও শ্রম অভিবাসনের মধ্যে সংযোগের ওপর কোভিড-১৯ এর প্রভাব’ শীর্ষক অনুসন্ধানমূলক গবেষণা প্রতিবেদনটি সম্প্রতি প্রকাশিত হয়।
আইএলওর গবেষণা দলের সহায়তায় অভিবাসন ইউনিট মাইগ্রেন্ট ও বাংলাদেশের অভিবাসন গবেষণা প্রতিষ্ঠান রামরুর (রিফিউজি অ্যান্ড মাইগ্রেটরি মুভমেন্টস রিসার্চ ইউনিট) প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারপারসন অধ্যাপক ড. তাসনিম সিদ্দিকী যৌথভাবে প্রতিবেদনটি তৈরি করেছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, করোনাকালে বাংলাদেশ, ভারত, নেপাল, পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কায় বড় সংখ্যক অভিবাসী শ্রমিক নিজ নিজ দেশে ফিরেছে।
২০২০ সালের মে মাসের প্রথম দিকে, নিক্কেই এশিয়ার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে দক্ষিণ এশিয়ায় কমপক্ষে ৯ লাখ অভিবাসী শ্রমিক ফিরে আসবে। যাদের বেশির ভাগই মধ্যপ্রাচ্য থেকে প্রত্যাবাসনের জন্য অপেক্ষা করছে।
আইএলও বলছে, করোনায় বাংলাদেশে আসা ৬৭ দশমিক ৩৪ শতাংশ অভিবাসী শ্রমিককে দেশে ফিরে যেতে বাধ্য করা হয়েছিল, ছুটিতে বাড়ি ফিরে আসে ৯ দশমিক ১৮ শতাংশ এবং ২৫ দশমিক ৫১ শতাংশ হয় স্বেচ্ছায় ফিরে আসে অথবা তাদের নিয়োগকর্তারা ফিরে যেতে সাহায্য করেছেন।
শুধু সৌদি আরব নয় কুয়েত, কাতার, সংযুক্ত আরব আমিরাত এমনকি মালদ্বীপ থেকেও বাংলাদেশিদের ফেরত পাঠানো হয়েছে। দেশগুলো জানায়, অনিয়মিত অভিবাসীদের পাঠিয়েছে তারা।
ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার করোনাকালে বিভিন্ন দেশে থাকা শ্রমিকদের জন্য বিশ্বের সবচেয়ে বড় প্রত্যাবাসন কর্মসূচির আয়োজন করে।
লকডাউনে বিভিন্ন মিশনে আটকে পড়া ভারতীয়দের ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ নেয় দেশটির সরকার। বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে ৬০ লাখ ৫৪ হাজার অভিবাসী শ্রমিক এবং তাদের পরিবারের সদস্যদের ফিরিয়ে এনেছে ভারত সরকার। মে মাসের প্রথম দিকে প্রায় ৪০ হাজার শ্রমিক শ্রীলঙ্কায় ফিরে আসে।
রামরুর তথ্য উল্লেখে আইএলওর প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশে কোভিড-১৯ মহামারির প্রথম তিন মাসে আন্তর্জাতিক অভিবাসী পরিবারের আয় ব্যাপকভাবে কমে যায়।
অভিবাসী পরিবারগুলো প্রতি মাসে গড় পারিবারিক খরচ ২৫০ ডলার থেকে ১০০ ডলারে কমিয়ে আনে। এসব পরিবারের ৭৪ শতাংশ তাদের মাংস খাওয়া কমিয়েছে, ৭২ শতাংশ তাদের বাচ্চাদের দুধ খাওয়া কমিয়েছে এবং ৪৩ শতাংশ তাদের ডিম খাওয়া কমিয়ে দেয়।
বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থার সহযোগিতায়, ২০২০ সালের মে এবং জুন মাসে দুই হাজার ৭৬৫ ফেরত অভিবাসী শ্রমিকের ওপর গবেষণা পরিচালনা করে।
যার মধ্যে এক হাজার ৪৮৬ জন আন্তর্জাতিক এবং এক হাজার ২৭৯ জন অভ্যন্তরীণ। এদের মধ্যে বিদেশ থেকে ফিরে আসা উত্তরদাতাদের ৫৫ শতাংশ জানায় তাদের অনাদায়ী ঋণ রয়েছে।
আরও পড়ুন
- সর্বশেষ খবর
- সর্বাধিক পঠিত