পাল্টা-পাল্টি অভিযোগের মধ্যে চলেছে নির্বাচনের প্রচার প্রচারণা
বাদল সাহা, গোপালগঞ্জ প্রতিনিধি: শেষ মূহূর্তে জমে উঠেছে গোপালগঞ্জের কাশিয়ানী উপজেলার ১৪টি ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের প্রচার প্রচারনা। পাল্টা-পাল্টি অভিযোগের মধ্যে দিয়ে প্রার্থীরা দিন রাত চষে বেড়াচ্ছে ভোটের মাঠ। নির্বাচিত হলে এলাকার উন্নয়ন করাসহ বিভিন্ন প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন তারা। তবে যোগ্য প্রার্থীকে নির্বাচিত করার কথা জানিয়েছেন ভোটররা আর নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে শেষ করতে সব ধরনের প্রস্তুতির কথা জানিয়েছেন জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা।
জানাগেছে, দ্বিতীয় ধাপে ১১ নভেম্বর গোপালগঞ্জের কাশিয়ানী উপজেলার ১৪ টি ইউনিয়ন পরিষদের ভোটগ্রহন অনুষ্ঠিত হবে। এর মধ্যে ৭ টিতে দলীয় প্রতীকে ও অপর ৭ টিতে উন্মুক্ত ভাবে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। সময় যত ঘনিয়ে আসছে প্রার্থীদের দৌঁড় ঝাঁপ ততই বেড়েছে। দিন রাত চষে বেড়াচ্ছেন ভোটের মাঠ। যে যেভাবে পারছেন ভোটারদের কাছে টানার চেষ্ঠা করছেন। এলাকার উন্নয়ন, সুযোগ সুবিধা, মাদক নির্মূলসহ ভোটারদের নানান প্রতিশ্রুত দিচ্ছেন প্রার্থীরা। প্রার্থীদের প্রতীক সম্বলিত পোষ্টারে পোস্টারে ছেড়ে গেছে পুরো এলাকা। নির্বাচন নিয়ে চায়ের দোকানগুলোতে চলছে চুল ছেড়া বিশ্লেষন।
এ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে ৬২ জন প্রার্থী ভোট যুদ্ধে নেমেছেন। এর মধ্যে কাশিয়ানী সদর ইউনিয়নে ৩ জন (দলীয় মনোনয়ন), সাজাইল ইউনিয়নে ৪ জন (দলীয় মনোনয়ন), রাজপাট ইউনিয়নে ৩ জন (দলীয় মনোনয়ন), রাতইল ইউনিয়নে ৫ জন (দলীয় মনোনয়ন) পারুলিয়া ইউনিয়নে ৫ (দলীয় মনোনয়ন), মাহামুদপুর ইউনিয়নে ৭ জন (দলীয় মনোনয়ন), মহেশপুর ইউনিয়নে ৮ জন (দলীয় মনোনয়ন), ওড়াকান্দি ইউনিয়নে ৪ জন, নিজামকান্দি ইউনিয়নে ৩ জন, বেথুড়ী ইউনিয়নে ৪ জন, হাতিয়াড়া ইউনিয়নে ৪ জন, পুইশুর ইউনিয়নে ২ জন, সিংগা ইউনিয়নে ৪ জন ও ফুকরা ইউনিয়নে ৬ জন রয়েছেন।
সাধারন সদস্য পদে ৪০৩ জন ও সংরক্ষিত নারী সদস্য পদে ১২৮ জন প্রার্থী ভোট যুদ্ধে নেমেছেন। এরমধ্যে সাধারন সদস্য পদে ও সংরক্ষিত নারী সদস্য পদে ২জন করে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন।
উপজেলোর ১৪টি ইউনিয়নের মোট ভোটার ১ লক্ষ ৭৭ হাজার ১ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ৮৮ হাজার ২৭৭ জন ও নারী ভোটার ৮৮ হাজার ৫২৪ জন। মোট কেন্দ্র রয়েছে ১২৭টি আর মোট বুথ রয়েছে ৫৬৪ টি।
এদিকে, নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ৭টি ইউনিয়নে আওয়ামী লীগ ও স্বতন্ত্র প্রার্থীদের মধ্যে শুরু হয়েছে পাল্টা-পাল্টি অভিযোগ। দুইজন স্বতন্ত্র প্রার্থী আওয়ামী লীগ প্রার্থীর বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ এনে সম্প্রতি সংবাদ সম্মেলন করেছেন। এমনিক ওই প্রার্থীরা নির্বাচনী কাজে বাধা, অপপ্রচার নানা অভিযোগ করে জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার, জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা ও রিটার্নিং অফিসারের কাছে অভিযোগ করেছেন।
অপরদিকে, নির্বাচন শান্তিপূর্ন ও সহিংসতারোধ করতে উপজেলার ১৪টি ইউনিয়নের প্রার্থীদের সাথে মত বিনিময় সভা করেছে জেলা প্রশাসন ও জেলা নির্বাচন অফিস। গত বৃহস্পতিবার (৪ নভেম্বর) সকালে কাশিয়ানী উপজেলা পরিষদের হল রুমে অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন জেলা প্রশাসক শাহিদা সুলতানা। কাশিয়ানী উপজেলা নির্বাহি কর্মকর্তা রথীন্দ্র নাথ রয়ের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় পুলিশ সুপার আয়েশা সিদ্দীকা, জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মো: ফয়জুল মোল্যা, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো: খায়রুল আলম উপস্থিত ছিলেন।
কাশিয়ানী সদর ইউনিয়নের আওয়ামী লীগের চেয়ারম্যান প্রার্থী মশিউর রহমান খান বলেন, গতবার আমি এ ইউনিঢনের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছি। এবার আওয়ামী লীগের প্রার্থী হয়ে নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করছি। আমি নির্বাচিত হয়ে বয়স্ক ভাতা, বিধবা ভাতা, প্রতিবন্ধি ভাতা, সড়ক উন্নয়নসহ অনেক উন্নয়ন করেছি। এছাড়া আমার অনেক কাজ চলমান রয়েছে। আমি নির্বাচিত হলে চলমান কাজ শেষ করার পাশাপশি নতুন নতুন কর্মপরিকল্পনা করে উন্নয়নের কাজ করে যাবো। আমার প্রতিদ্বন্দ্বি স্বতন্ত্র প্রার্থী আমার গনজোয়ার দেখে আমার বিরুদ্ধে নানা অপপ্রচার চালাচ্ছেন।
একই ইউনিয়নের স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী মোহাম্মদ আলী খোকন বলেন, বিগত সময়ে আমি এই ইউনিয়ন থেকে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছি। এলাকার অনেক উন্নয়ন করেছি। আশা করি ভোটারা আমাকে ভোট দিয়ে নির্বাচত করবে। নির্বাচিত হলে এলাকার উন্নয়নে কাজ করবো।
তিনি অভিযোগ করে বলেন, ১১ নভেম্বর অনুষ্ঠিত নির্বাচন নিয়ে একটি মহল আমার বিরুদ্ধে নানা ষড়যন্ত্রসহ অপপ্রচার চালাচ্ছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অপপ্রচার চালানো হচ্ছে। এমনকি, আমার নির্বাচনী প্রচার-প্রচারনাকে বাঁধাগ্রস্থ করে রাতের আধারে পোষ্টার, ব্যানার ও ফেস্টুন ছিড়ে ফেলা হচ্ছে। এতে তার কর্মী ও সমর্থকেরা শঙ্কিত। নির্বাচন সুষ্ঠ করতে জেলা নির্বাচন কমিশন ও আইনশৃংখলা বাহিনীর নিকট দাবী জানান তিনি।
সাজাইল ইউনিয়নের স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী মো: মাহাবুবুল আলম বলেন, আমি নির্বাচিত হলে একটি সুন্দর ও ডিজিটাল ইউনিয়ন হিসাবে গড়ে তোলার জন্য কাজ করবো। সড়কসহ যে সমস্যা রয়েছে তা সমাধানের চেষ্ঠা করবো।
তিনি আরো বলেন, নির্বাচনে আমার জনসমর্থন ও গণজোয়ার দেখে আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকের চেয়ারম্যান প্রার্থী কাজী জাহাঙ্গীর আলম ও তার লোকজন নানা ষড়যন্ত্র করেছে। নিজেরা নৌকা প্রতীক পুড়িয়ে ও ভেঙ্গে তার এবং সমর্থকদের নামে মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানী কারার ষড়যন্ত্র করছে। এমনকি, তার কর্মী সমর্থকদের নানা ভাবে হুমকী ধামকি দেয়া হচ্ছে এবং কয়েকজন সমর্থককে পিটিয়ে আহত করা হয়েছে।
এদিকে ভোটারা বলেছেন, যে প্রার্থী এলাকার উন্নয়ন করবে, বেকার সমস্যা সমাধানে কাজ করবে, নারীদের উন্নয়েনে কাজ করবে, মাদক ও সন্ত্রাস নির্মূলে কাজ করবে এমন প্রার্থীকে আমার ভোট দিয়ে নির্বাচিত করবো।
গোপালগঞ্জ জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মোহাম্মদ ফয়জুল মোল্যা, আগামী ১১ নভেম্বর কাশিয়ানী উপজেলার ১৪টি ইউনিয়নে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। নির্বাচন সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য করতে সকল প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। প্রতিটি কেন্দ্রে আইন শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনী নিয়োজিত থাকবে। কেউ যেন কোন প্রকার অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটাতে না পারে সে দিকে নজর দেয়া হচ্ছে।
আরও পড়ুন
- সর্বশেষ খবর
- সর্বাধিক পঠিত